ঋগ্বেদ ০৮।০৯৩

ঋগ্বেদ ০৮।০৯৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৯৩
ইন্দ্র দেবতা। সুকক্ষ ঋষি।

১। হে সূৰ্য্যরূপ ইন্দ্র! বিখ্যাত ধনৰিশিষ্ট, অভিলাষপ্রদ, নররহিতকর কৰ্ম্মযুক্ত, ঔদার্যবিশিষ্ট যজমানের চতুর্দিকে উদিত হও।

২। যিনি বাহুবলে নবনবতিসংখ্যক পুরীভেদ করিয়াছিলেন, যে বৃত্রহা অহিকে বধ করিয়াছিলেন।

৩। সেই কল্যাণকর, বহু ইন্দ্র আমাদিগের উদ্দেশে অশ্বযুক্ত, গোযুক্ত, যবযুক্ত ধন প্রভূত পয়োবিশিষ্ট গাভীর ন্যায় দোহন করুন।

৪। হে বৃত্রহা, সূৰ্যরূপ ইন্দ্র! অদ্য যৎকিঞ্চিৎ পদার্থের অভিমুখে প্রাদুর্ভূত হইয়াছ, অমনি সমস্ত জগৎ তোমার বশীভূত হইয়াছে।

৫। হে প্রবৃদ্ধ, সৎপতি ইন্দ্র! যদি আপনাকে অমর মনে কর, তবে তোমার সেই মনে করাই সত্য।

৬। দূরদেশে এবং নিকটবর্তী প্রদেশে যে সকল সোম অভিযুত হয়, হে ইন্দ্র! তুমি সেই সকলেরই অভিমুখে গমন কর।

৭। আমরা মহান্ বৃত্ৰকে হননার্থ সেই ইন্দ্রকেই অন্নদ্বারা বলবান্ করিব। ধনবর্ষী ইন্দ্র অভিলাষপ্রদ হউন।

৮। সেই ইন্দ্র ধনার্থ সৃষ্ট হইয়াছেন, তিনি সর্বাপেক্ষা ওজস্বী, তিনি সোমপানাৰ্থ স্থাপিত, অত্যন্ত যশস্বী, স্তুতিবান এবং সোমার্হ।

৯। স্তুতিবাক্যদ্বারা বজ্রের ন্যায় তীক্ষ্ণীকৃত, বল সহিত অনভিভূত, মহান, অহিংসিত ইন্দ্র ধনাদি বহন করিতে ইচ্ছা করেন।

১০। হে স্তুতিভোগী ইন্দ্র! হে মঘবান্! তুমি যদি আমাদের কামনা কর, তবে তুমি স্তূয়মান হইয়া দুর্গমস্থানে আমাদের পথ করিয়া দাও।

১১। হে ইন্দ্র! অদ্যাপিও কেহ তোমার বলের অথবা স্বকীয় রাজ্যের হিংসা করে না; দেবগণ হিংসা করে না এবং সংগ্রামে ত্বরমাণ ব্যক্তিও হিংসা করে না।

১২। হে শোভন হনুবিশিষ্ট ইন্দ্র! দ্যাবাপৃথিবী দেবীদ্বয় তোমার অপ্রতিরোধনীয় বলের পূজা করে।

১৩। তুমি, কৃষ্ণবর্ণ এবং রোহিতবর্ণ গোসমূহে এই দীপ্তিমান্ দুগ্ধ স্থাপন করিতেছ।

১৪। যখন সমস্ত দেবগণ অহির দীপ্তি হইতে পলায়ন করিয়াছিলেন এবং তাহারা মৃগরূপী অহি হইতে ভয় পাইয়াছিলেন।

১৫। তখন আমার ইন্দ্র বৃত্রাসুরের নিবারক হইয়াছিলেন, অজাত শত্রু, বৃত্ৰহা ইন্দ্র পৌরুষ প্রয়োগ করিয়াছিলেন।

১৬। হে ঋত্বিকগণ! প্রসিদ্ধ, বৃত্রহন্তা, বলস্বরূপ ইন্দ্রের স্তুতি করিয়া তোমাদিগকে প্রভূত ধন দান করি।

১৭। হে বহু নামবিশিষ্ট, বহু কর্তৃক স্তুত ইন্দ্র! যখন তুমি প্রত্যেক সোমে উপস্থিত হইয়াছ, তখন আমরা এই গবাভিলাষী বুদ্ধিযুক্ত হইব।

১৮। বৃত্রহন্তা, বহু অভিষবণযুক্ত ইন্দ্র, আমাদের অভিলষিত অবগত হউন, শত্রু আমাদের স্তুতি শ্রবণ করুন।

১৯। হে অভিষ্টবর্ষী! তুমি কোন অভিগমনের দ্বারা আমাদিগকে প্রমত্ত করিবে? কোন্ অভিগমনের দ্বারা স্তোতাগণকে ধন প্রদান করিবে।

২০। অভীষ্টবর্ষী, সেচনসমর্থ বৃত্রহা, নিযুৎবিশিষ্ট ইন্দ্র, কাহার যজ্ঞে সোমপানের জন্য ঋত্বিকগণের সহিত বিহার করিতেছেন?

২১। তুমি মত্ত হইয়া আমাদিগকে সহস্ৰসংখ্যক ধন দান কর, তুমি হব্য দাতার নিয়ন্তা বলিয়া অবগত হও।

২২। জলবিশিষ্ট এই সকল সোম অভিযুত হইয়াছে, ইন্দ্র পান করুন, এই অভিলাষে ইহারা ইন্দ্রের পানার্থে গমন করিতেছে। ইহারা ভক্ষিত হইলে প্রীতিকর হয়, ইহারা জলের নিকট গমন করে।

২৩। যজ্ঞে বর্ধনকারী, যজ্ঞকারী হোতাগণ যজ্ঞান্তে দিবসের অভিমুখে নিজ তেজোবিশিষ্ট হইয়া ইন্দ্রকে বিসর্জন করিতেছে।

২৪। প্রসিদ্ধ ইন্দ্রের সহিত প্রমত্ত, হিরন্ময় কেশযুক্ত অশ্বদ্বয়, হিতকর অন্নের অভিমুখে ইন্দ্রকে বহন করুক।

২৫। হে বিভাবসু! তোমার জন্য এই সোম অভিযুত হইয়াছে, কুশ আস্তীর্ণ হইয়াছে, অতএব স্তোতাদের জন্য সোমপানার্থ ইন্দ্রকে আহ্বান কর।

২৬। তুমি ইন্দ্রের উদ্দেশে, হব্যদায়ী ইন্দ্র তোমার উদ্দেশে দীপ্যমান বল প্রেরণ করুন, রত্ন প্রেরণ করুন, স্তোতাগণের জন্যও প্রেরণ করুন, তোমরা ইন্দ্রকে অর্চনা কর।

২৭। হে শতক্রতু! তোমার উদ্দেশে বীৰ্য্যবান্ সোম ও সমস্ত স্তোত্র সম্পাদন করিতেছি, হে ইন্দ্র! তুমি স্তোতাগণকে সুখী কর।

২৮। হে ইন্দ্র! যদি তুমি আমাদের সুখী করিতে চাও, তাহা হইলে হে শতক্রতু! তুমি আমাদের কল্যাণ সম্পাদন কর, অন্ন সম্পাদন কর ও বল সম্পাদন কর।

২৯। হে ইন্দ্র! যদি তুমি আমাদের সুখী করিতে চাও, তাহা হইলে হে শতক্রতু, তুমি সমস্ত মঙ্গল আমাদের জন্য আহ্বান কর ।

৩০। হে ইন্দ্র! যেহেতু তুমি আমাদিগকে সুখী করিতে ইচ্ছা কর, অতএব হে শ্রেষ্ঠ বৃত্রহা! আমরা অভিযুত সোমবিশিষ্ট হইয়া তোমাকে আহবান করিতেছি।

৩১। হে সোমপতি ইন্দ্র! হরিগণের সাহায্যে আমাদের অভিযুত সোমের নিকট আগমন কর, আমাদের অভিযুক্ত সোমের নিকট আগমন কর ।

৩২। শ্রেষ্ঠ বৃত্ৰহা, শতক্রতু ইন্দ্র দুই প্রকারে জ্ঞাত হয়েন। সেই তুমি হবিগণের সাহায্যে আমাদের অভিযুত সোমের নিকট আগমন কর।

৩৩। হে বৃত্রহা! যেহেতু তুমি এই সোমসমূহের পানকর্তা, অতএব হরিগণের সহিত অভিযুত সোমের নিকট আগমন কর।

৩৪। ইন্দ্ৰই অন্নার্থ দাতা ও অমর ঋভুক্ষাদেবকে (১) আমাদের দান করুন। বলবান ইন্দ্র রাজকে আমাদের দান করুন।

————

(১) ঋভুক্ষা অর্থে ঋভু, স্পষ্টই বোধ হইতেছে।