ঋগ্বেদ ০৮।০৪৩

ঋগ্বেদ ০৮।০৪৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ৪৩
অগ্নি দেবতা। অঙ্গিরার পুত্র বিরূপ ঋষি।

১। আমাদের এই স্তোতাগণ অগ্নির উদ্দেশে স্তুতি করিতেছেন। অগ্নি মেধাবী ও বিধাতা। তিনি কখন যজমানের হিংসা করেন না।

২। হে জাতবেদা সর্বদশী অগ্নি! তুমি দান করিয়া থাক, অতএব তোমার উদ্দেশে সুন্দর স্তুতি করিতেছি।

৩। হে অগ্নি! তোমার তীক্ষ্ণ শিখাসকল দীপ্তিমান, পশুগণের ন্যায় দন্তদ্বারা অরণ্য ভক্ষণ করিতেছেন।

৪। হরণশীল ও বায়ুপ্রেরিত ও ধুমচিহ্নিত অগ্নি সকল অন্তরীক্ষে পৃথক পৃথক গমন করিতেছেন।

৫। পৃথক পৃথক সমিদ্ধ এই অগ্নিসমূহ ঊষার প্রজ্ঞাপকের ন্যায় দৃষ্ট হইয়াছিল।

৬। যখন অগ্নি পৃথিবীতে শুষ্ক কাষ্ঠ আশ্রয় করেন, তখন অগ্নির গমনকালে পাংশু সকল কৃষ্ণ বর্ণ হইয়া যায়।

৭। অগ্নি ওষধি সকলকে অন্নস্বরূপ মনে করতঃ ভক্ষণ করিয়া প্রকাশিত হয়েন না, তরুণ ওষধির প্রতি ধাবমান হন।

৮। অগ্নি জিহ্বাদ্বারা বনস্পতিগণকে অত্যন্ত অবনত করিয়া তেজোবলে প্রজ্বলিত হইয়া বনে শোভা পাইতেছেন।

৯। হে অগ্নি! জলের মধ্যে তোমার প্রবেশের স্থান আছে, তুমি ওষধিগণকে অবরোধ কর, আবার তাহাদের গর্ভে জন্মগ্রহণ কর।

১০। হে অগ্নি! ঘৃত দ্বারা আহত জুহুর মুখ তুমি লেহন কর, তোমার শিখা শোভা পাইতেছে।

১১। যাঁহার হব্য ভক্ষণযোগ্য, যাঁহার অন্ন অভিলষণীয়, সেই সোমপৃষ্ঠ অভীষ্ট বিধাতা অগ্নির স্তোত্রদ্বারা পরিচর্যা করিব।

১২। হে দেবগণের আহ্বানকারী, বরণীয় প্রজ্ঞাযুক্ত অগ্নি! তোমাকে আমরা নমস্কারপূর্বক ও সমিধ প্রদানপূর্বক যাচঞা করিতেছি।

১৩। হে শুচি, আহুত অগ্নি! আমরা তোমাকে ভৃগুর ন্যায় এবং মনুর ন্যায় আহ্বান করিতেছি।

১৪। হে অগ্নি! তুমি বিপ্র, সাধু এবং সখা। তুমি বিপ্র, সাধু ও সখা অগ্নির সাহায্যে দীপ্ত হইতেছে।

১৫। হে অগ্নি! তুমি হব্যদায়ী বিপ্রকে সহস্রসংখ্যক ধন ও বীরযুক্ত অন্ন প্রদান কর।

১৬। হে ভ্রাত অগ্নি! হে বলের দ্বারা উৎপাদিত! হে রোহিত নামক অশ্বযুক্ত! হে শুদ্ধকর্মা! আমার স্তোত্র সেবা কর।

১৭। হে অগ্নি! আমার স্তুতিসকল তোমার নিকট গমন করিতেছে। এইরূপে গো সকল উৎসুক ও শব্দায়মান বৎসের উদ্দেশে গোষ্ঠে গমন করে।

১৮। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরাগণের মধ্যে শ্ৰেষ্ঠ। সমস্ত প্রজাগণ অভিলষিত সিদ্ধির জন্য তোমার প্রতি আসক্ত হয়।

১৯। মনীষী, প্রাজ্ঞ, মেধাবীগন অন্নলাভার্থ অগ্নিকে প্রীত করে।

২০। হে অগ্নি! তুমি বলবান, হব্যবাহী, হোতা ও প্রসিদ্ধ। যে স্তোতাগণ গৃহে যজ্ঞ বিস্তার করেন, তাহারা তোমার স্তব করিতেছে।

২১। হে অগ্নি! যেহেতু তুমি প্রভু, সকল দেহে সকল প্রজার প্রতি সমদৰ্শী, অতএব সংগ্রামে তোমাকে আহ্বান করিতেছে।

২২। যে অগ্নি ঘৃতদ্বারা আহুত হইয়া শোভা পাইতেছেন, যিনি আমাদের এই আহ্বান শ্রবণ করেন, সেই অগ্নিকে স্তব কর।

২৩। হে অগ্নি! তুমি জাতবেদা, তুমি শত্রু হিংসা কর এবং আমাদের আহ্বান শ্রবণ কর, অতএব আমরা তোমায় আহ্বান করিতেছি।

২৪। মনুষ্যগণের ঈশ্বর, মহান কৰ্ম্মসমূহের অধ্যক্ষ এই অগ্নিকে স্তুতি করি, তিনি শ্রবণ করুন।

২৫। সৰ্ব্বত্রগামী, বলযুক্ত বলবান, মনুষ্যের ন্যায় হিতকর অগ্নিকে অশ্বের ন্যায় বলবান করিব।

২৬। হে অগ্নি! তুমি হিংসকগণকে হিংসা করিয়া সৰ্ব্বদা রাক্ষসগণকে দহন করিয়া তীক্ষ্ণ তেজের দ্বারা দীপ্ত হও।

২৭। হে অঙ্গিরাগণের মধ্যে শ্ৰেষ্ঠ অগ্নি! মনুষ্যগণ তোমাকে মনুর ন্যায় দীপ্ত করে, তুমি মনুর ন্যায় অবগত হও।

২৮। হে অগ্নি! তুমি স্বর্গীয় ও অন্তরীক্ষজাত বলের দ্বারা উৎপাদিত, তোমাকে স্তুতিদ্বারা আহ্বান করি।

২৯। এই সকল লোক এবং প্রজাগণ তোমারই ভক্ষণার্থ পৃথক পৃথক অন্ন প্রেরণ করিতেছে।

৩০। হে অগ্নি! তোমারই অনুগ্রহে আমরা সুকৰ্ম্মবিশিষ্ট হইয়া প্রত্যহ সৰ্ব্বদর্শী হইয়া সমস্ত দুৰ্গম স্থান উত্তীর্ণ হইব।

৩১। অগ্নি হর্ষযুক্ত, বহুলোকের প্রিয়, যজ্ঞে শয়নকারী ও পবিত্র দীপ্তিযুক্ত, আমরা হর্ষযুক্ত মনে তাঁহার নিকট যাচঞা করিতেছি।

৩২। হে অগ্নি! তুমি বিভাবসু, তুমি উদিত সূর্য্যের ন্যায় রশ্মির দ্বারা বল বিস্তার করতঃ অন্ধকার নাশ করিতেছ।

৩৩। হে বলবান অগ্নি! তোমার যে দানযোগ্য বরণীয় ধন আছে, তাহা ক্ষীণ হয় না, আমরা তাহাই তোমার নিকট যাচঞা করি।