ঋগ্বেদ ০৮।০২২

ঋগ্বেদ ০৮।০২২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল সূক্ত ২২
অশ্বিদ্বয় দেবতা। কণ্বের পুত্র সোভরি ঋষি।

১। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা সুন্দর আহ্বানযুক্ত ও রুদ্রবর্ত্মা, তোমরা সূৰ্য্যার জন্য যে রথে আরোহণ করিয়াছিলে, অন্য রক্ষাৰ্থ সেই দর্শনীয় রথ আহ্বান করিতেছি।

২। হে সোভরি! কল্যাণকর স্তুতিদ্বারা এই রথকে প্রসন্ন কর। ইহা প্ৰাচীনগণের পোষক, সুন্দর আহ্বানযুক্ত ও সকলের স্পৃহনীয়। ইহা সকলের রক্ষক, যুদ্ধে অগ্রগামী, সকলের পূজনীয়, শত্রুগণের দ্বেষকারী ও উপদ্রবরহিত।

৩। শত্রুদিগের অত্যন্ত পরাভবকারী, দ্যুতিবিশিষ্ট ও হব্যদায়ীর গৃহগামী, হে অশ্বিদ্বয়! এই কৰ্ম্ম রক্ষার্থে নমস্কার দ্বারা তোমাদিগকে আমাদের অভিমুখ করিব।

৪। তোমাদের রথের এক চক্র স্বৰ্গে গমন করে। অন্য চক্র তোমাদের সহিত গমন করে। তোমরা সকল কাৰ্য্যে প্রবৃত্তি প্রদান করিয়া থাক। হে জলপতিদ্বয়! তোমাদের কল্যাণকর বুদ্ধি ধেনুর ন্যায় আমাদের অভিমুখে আগমন করুক।

৫। হে অশ্বিদ্বয়! তোমাদের সাথে তিনটী বন্ধুর আছে, উহার বভ্রগা সুবর্ণনির্মিত। উহা প্রসিদ্ধ হইয়া দ্যাবাপৃথিবীকে পরিভব করে। হে নাসত্যন্বয়! তোমরা পূৰ্বোক্ত রথে আগমন কর।

৬। হে অশ্বিদ্বয়! পুরাতন দ্যুলোকস্থিত জল মনুকে প্রদান করতঃ তোমরা লাঙ্গল দ্বারা যব কর্ষণ করিয়াছ(১)। হে জলপতি অশ্বিদ্বয়! তোমাদিগকে অদ্য সুন্দর স্তুতিদ্বারা স্তব করিতেছি।

৭। হে অন্নধনবিশিষ্ট অশ্বিদ্বয়! যজ্ঞের পথে আমাদের নিকটে আগমন কর। হে অভিলাষ প্রদ দেবদ্বয়! এই পথে ত্রসদস্যুর পুত্র তক্ষিকে প্রভূত ধনদানদ্বারা তৃপ্ত করিয়াছিলে।

৮। হে নেতা অভিলাষপ্রদ, ধনবিশিষ্ট অশ্বিদ্বয়! তোমাদের জন্য প্রস্তরদ্বারা এই সোম অভিযুত হইয়াছে, সোম পানাৰ্থ আগমন কর, হব্যদায়ীর গৃহে পান কর।

৯। হে অভিলাষপ্রদ ধনবিশিষ্ট অশ্বিদ্বয়! তোমরা হিরন্ময় আয়ুধের আধাররূপ রথে আরোহণ কর।

১০। হে অশ্বিদ্বয়! যাহাদ্বারা পকৃথকে রক্ষা করিয়াছিলে, যাহাদ্বারা অধ্রিগুকে রক্ষা করিয়াছিলে, যাহাদ্বারা বভ্রু রাজাকে সোমপানে প্ৰীত করিয়াছিলে, সেই সমস্ত রক্ষার সহিত শীঘ্র ও সত্বর আমাদের নিকট আগমন কর। আর আতুরের চিকিৎসা কর।

১১। আমরা মেধাবী ও স্বকাৰ্য্যে ত্বরাবান, হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা স্বকাৰ্য্যে ত্বরাবান। তোমাদিগকে দিবসের এই কালে স্তুতিদ্বারা আহ্বান করিতেছি।

১২। হে বর্ষণশীল অশ্বিদ্বয়! সেই সমস্ত রক্ষার সহিত নানারূপবিশিষ্ট, সকলের বরণীয় আমাদের এই আহ্বানের অভিমুখে আগমন কর, তোমরা হব্যাভিলাষী, অতিশয় ধনদাতা, তোমার যুদ্ধে নানা ভাব ধারণ করা। যাহাদ্বারা কুপকে বৰ্দ্ধিত কর, তাহার সহিত আগমন কর।

১৩। দিবসের এই কালে সেই অশ্বিদ্বয়কে যে অভিবাদন করতঃ তাহাদিগকে স্তব করিতেছি, তাহাদের নিকটেই স্তোত্ৰদ্বারা যাচঞা করিতেছি।

১৪। তাহারা জলপতি ও রুদ্রবর্ত্মা। রাত্রে এবং প্ৰাতঃকালে প্রত্যহই তাহাদিগকে আহ্বান করিব। হে অন্নধন রুদ্রদ্বয়! মনুষ্যশত্রুর হস্তে আমাদিগকে প্রদান করিও না।

১৫। হে অশ্বিদ্বয়! লোকের সহিত মিলিত হওয়াই তোমাদের স্বভাব। আমি সুখের যোগ্য, প্ৰাতঃকালে আমার জন্য সুখ আনয়ন কর। আমি সোভরি, আমি পিতার ন্যায় তোমাদিগকে আহ্বান করিব।

১৬। মনের ন্যায় শীঘ্রগামী, অভিলাষপ্রদ, শত্রুগণের বিনাশক, অনেকের রক্ষক, হে অশ্বিদ্বয়! শীঘ্রগামী বহুসংখ্যক রক্ষাদ্বারা আমাদের রক্ষণার্থ নিকটবর্তী হও।

১৭। হে অশ্বিদ্বয়। তোমরা অত্যন্ত সোম পান করিয়া থাক। তোমরা নেতা এবং দর্শনীয়। আমাদের গৃহ অশ্ববিশিষ্ট, গোবিশিষ্ট ও হিরণ্যবিশিষ্ট করিয়া আগমন কর।

১৮। যাহার দান সুন্দর, যাহার বীৰ্য্য সুন্দর, যাহার সুন্দর রূপ সকলের বরণীয়, বলবান ব্যক্তি যাহা অভিভব করিতে পারে না, সেই ধন আমরা ধারণ করাতেছি। হে অন্নধন অশ্বিদ্বয়! তোমাদের আগমন হইলে সমস্ত ধন লাভ করিব।

————

(১) অর্থাৎ স্বর্গ হইতে বৃষ্টি প্রদান করিয়া মনুষ্যগণকে কৃষি কার্য শিক্ষা করাইয়াছে।