ঋগ্বেদ ০৮।০০৬

ঋগ্বেদ ০৮।০০৬
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৮ম মণ্ডল  সূক্ত ৬
ইন্দ্র দেবতা, শেষ তিনটি ঋকে পরশুনামক রাজারপুত্র তিরিন্দিরের দানের প্রশংসা করা হইয়াছে বলিয়া তাহাই দেবতা। বৎস ঋষি।

১। বৃষ্টিমান পর্জন্যের ন্যায় যিনি বলে মহান, তিনি বৎসের স্তোমের দ্বারা বর্ধিত হন।

২। যখন নভোদেশপূৰ্ণকারী অশ্বগণ, যজ্ঞের প্রজা ইন্দ্রকে বহন করে, তখন বিদ্বানগণ যজ্ঞের প্রাপক স্তুতি দ্বারা স্তব করে।

৩। কণ্বগণ স্তোমদ্বারা ইন্দ্রকে যজ্ঞসাধক করিয়াছেন, অতএব লোকে আয়ুধকে আত্মীয় বলিয়া থাকে।

৪। সিন্ধুগণ যেরূপ সমুদ্রকে প্রণাম করে, সমস্ত মানব প্রজাগণ ইহার ক্ৰোধের ভয়ে ইহাকে স্বয়ং প্রণাম করে।

৫। যে বলদ্বারা ইন্দ্র, দ্যাবাপৃথিবী উভয়কেই চৰ্ম্মের ন্যায় সম্বৰ্ত্তিত করেন, তাহার সেই বল দীপ্ত হইয়াছিল।

৬। তিনি কম্পক বৃত্রের মস্তক শতপৰ্ব্ব বীৰ্য্যশালী বজ্রদ্বারা ছেদ করিয়াছিলেন।

৭। আমরা স্তোতাগণের অগ্ৰে অগ্নির দীপ্তির ন্যায় দীপ্যমান এই স্তোত্রসমূহ পুনঃ পুনঃ উচ্চারণ করিব।

৮। গুহাতে বর্তমান যে স্তুতিসমূহ স্বয়ং উপগত হইয়া দীপ্তি পায়, কণ্বগণ উহা উদকধারাযুক্ত করুন।

৯। হে ইন্দ্র! আমরা যেন গোযুক্ত, অশ্বযুক্ত ধন প্ৰাপ্ত হই এবং অন্যের পূর্বে জ্ঞানের জন্য অন্ন প্রাপ্ত হই।

১০। আমি পিতা ও সত্য ইন্দ্রের অনুগ্রহ লাভ করিয়াছি। আমি সূৰ্যের ন্যায় প্রাদুর্ভূত হইয়াছি।

১১। আমি কণ্বের ন্যায় নিত্য স্তোত্রদ্বারা বাক্যসমূহ অলঙ্কৃত করি, উহা দ্বারা ইন্দ্র বল ধারণ করেন।

১২। হে ইন্দ্র! যাহারা তোমাকে স্তুতি করে না ও যে ঋষিগণ তোমাকে স্তুতি করে এই সকলের মধ্যে আমার স্তোত্রে সুন্দররূপে স্থত হইয়া বৃদ্ধি প্ৰাপ্ত হও।

১৩। যখন ইহার ক্ৰোধ বৃত্রকে পর্বে দুই বিভাগ করতঃ শব্দ করিয়াছিল, তখন তিনি সমুদ্রাভিমুখে জল প্রেরণ করিয়াছিলেন।

১৪। হে ইন্দ্র! তুমি, উপক্ষপয়িতা শুষ্ণের প্রতি ধারয়িতব্য বজ্র আঘাত করিয়াছিলে। হে উগ্র! তুমি অভীষ্টবর্ষী বলিয়া বিদিত।

১৫। দ্যুলোকসমূহ ইন্দ্রকে বলদ্বারা ব্যাপ্ত করে না, অন্তরিক্ষসমূহ বজ্রধারীকে বযাপ্ত করে না, ভূমিসমূহ ব্যাপ্ত করে না।

১৬। হে ইন্দ্র! যে বৃত্র তোমার মহৎ জল স্তম্ভন করতঃ পরিব্যাপ্ত করিয়াছিল, তাহাকে গমনশীল জলের মধ্যে বধ করিয়াছিলে।

১৭। যে, এই মহতী, সংগতা দ্যাবাপৃথিবীকে আবৃত করিয়াছিল, হে ইন্দ্র! তাহাকে তমঃ সমূহদ্বারা সংবৃত করিয়াছ।

১৮। হে উগ্র ইন্দ্র! যে যতিগণ তোমাকে স্তুতি করে, যে ভৃগুগণ তোমাকে স্তব করে, তাঁহাদের মধ্যে আমার আহ্বান শ্রবণ কর।

১৯। হে ইন্দ্র! তোমার এই সত্যবর্ধয়িত্রী গাভীগণ ঘৃত এবং আশির দোহন করে।

২০। হে ইন্দ্র! প্রসবকারিণী গোসকল আস্যদ্বারা তোমার প্রদত্ত অন্ন ভক্ষণ করিয়া সূৰ্য্যের চতুর্দিকে জলের ন্যায় গৰ্ভ ধারণ করিয়াছিল।

২১। হে বলপতি ইন্দ্র! কণ্বগণ উকথদ্বারা তোমাকে বর্ধিত করিতেছে, অভিযুত সোমসমূহ তোমায় বর্ধিত করিয়াছিল।

২২। হে বজ্রবান ইন্দ্র! তুমি পথপ্রদৰ্শক হইলে উত্তম স্তুতি ও প্রবৃদ্ধ যজ্ঞ করা হয়।

২৩। হে ইন্দ্র! আমাদের জন্য মহান, গোমান অন্ন রক্ষা করিতে ও বীৰ্য্যবান পুত্ৰাদি দান করিতে ইচ্ছা কর।

২৪। হে ইন্দ্র! নহুষরাজার প্রজাগণের সম্মুখে শীঘ্রগামী অশ্বযুক্ত যে বল প্রদান করিয়াছ, আমাদিগকেও তাহা প্রদান কর।

২৫। হে ইন্দ্র! তুমি প্ৰাজ্ঞ, তুমি ইদানীং নিকট হইতে দর্শনীয় গোষ্ঠ বিস্তার কর ও আমাদিগকে সুখী কর।

২৬। হে ইন্দ্র! তুমি বলের ন্যায় আচরণ কর ও মনুষ্যগণের রাজা হও, তুমি বলদ্বারা মহান ও অনভিভবনীয়।

২৭। হে ইন্দ্র! তুমি, বিস্তীৰ্ণব্যাপী। হব্যবান লোকসকল সোমদ্বারা তোমাকে তৃপ্ত করিবার জন্য তোমার নিকট আগমন করিয়া স্তব করে।

২৮। পৰ্বতগণের প্রান্তদেশে নদীসকলের সঙ্গমস্থলে যজ্ঞক্রিয়া করিলে মেধাবী ইন্দ্র জন্ম গ্রহণ করেন।

২৯। সৰ্ব্বব্যাপী ইন্দ্র, যে লোকে বিহার করেন, সেই উৰ্দ্ধলোক হইতে বিদ্বান ইন্দ্র নিম্নমুখে সমুদ্র দর্শন করেন।

৩০। দ্যুলোকের উপরিভাগে ইন্দ্র যখন দীপ্তি লাভ করেন, তখনই পুরাতন জলপ্রদ ইন্দ্রের নিবাস জ্যোতিঃ লোকে দর্শন করে।

৩১। হে ইন্দ্র! সমস্ত কণ্বগণ তোমার বুদ্ধি ও বল বৰ্দ্ধন করিতেছে। হে বলবত্তম! তোমার বীরকৰ্ম্মও বর্ধন করিতেছে।

৩২। হে ইন্দ্র! তুমি আমাদের এই সুন্দরস্তুতি সেবা কর, আমাকে ভাল করিয়া রক্ষা কর, আমার বুদ্ধিকে প্রবর্দ্ধিত কর।

৩৩। হে প্রবৃদ্ধ বজ্রবান ইন্দ্র! আমরা মেধাবী, আমরা জীবনাৰ্থ তোমার জন্য স্তোত্র করিয়াছিলাম।

৩৪। কণ্বগণ স্তব করিতেছে, নিম্নাভিমুখে গমনশীল জলসমূহের ন্যায় রমণীয় স্তুতি আপনিই ইন্দ্রের সেবায় উপযুক্ত হয়।

৩৫। নদগণ যেরূপ সমুদ্রকে বৰ্দ্ধিত করে, উকথসকল ইন্দ্রকে সেইরূপ বৰ্দ্ধিত করিতেছে, ইন্দ্র জরারহিত, তাঁহার ক্ৰোধ কেহ নিবারণ করিতে পারে না।

৩৬। হে ইন্দ্র! দূরদেশ হইতে কমনীয় অশ্বে আরোহণ করতঃ আমাদের নিকট আগমন কর, অভিযুত সোম পান কর।

৩৭। হে সৰ্ব্বাপেক্ষা শত্ৰুনাশক ইন্দ্র! যে সকল লোক বর্হিঃ ছিন্ন করে, তাহারা অন্নলাভের জন্য তোমাকে আহ্বান করে।

৩৮। হে ইন্দ্র! চক্র যেরূপ অশ্বের অনুবৰ্ত্তন করে, দ্যাবাপৃথিবী উভয়েই সেইরূপ তোমার অনুবৰ্ত্তন করে, অভিযুত সোম সকল তোমার অনুবৰ্ত্তন করে।

৩৯। হে ইন্দ্র! শর্য্যণাদেশের পুষ্করিণীতে সমস্ত ঋত্বিকগণকর্তৃক আরব্ধ যজ্ঞে তৃপ্ত হও, পরিচর্যাকারীর স্তুতিদ্বারা আনন্দ লাভ কর। (১)

৪০। প্রবৃদ্ধ, অভীষ্টবৰ্ষী, বজ্রবান, অতিশয় সোমপায়ী বৃত্রহন্তা ইন্দ্র দ্যুলোকের সমীপে শব্দ করেন।

৪১। হে ইন্দ্র! তুমি পূৰ্ব্বজাত ঋষি, তুমি অদ্বিতীয় বলদ্বারা সকলের অধিপতি হইয়াছ। তুমি বারংবার ধন দান কর।

৪২। প্রশস্ত পৃষ্ঠবিশিষ্ঠ, শতসংখ্যক অশ্বগণ আমাদের অভিযুত সোম ও অন্নের উদ্দেশে তোমাকে বহন করুক।

৪৩। কণ্বগণ উকথদ্বারা এই পূর্বকৃতা, মধুর জলের বর্ধয়িত্রী যোগক্রিয়া বৰ্দ্ধিত করুন।

৪৪। দেবগণ বিশেষরূপে মহান, তাহাদের মধ্যে ইন্দ্রকেই মনুষ্যগণ ধনাভিলাষী হইয়া রক্ষণার্থ বরণ করে।

৪৫। হে বহুস্তুত ইন্দ্র! যজ্ঞপ্রিয় ঋষিগণ কর্তৃক স্তুত অশ্বদ্বয় সোমপানাৰ্থ তোমায় আমাদের অভিমুখে বহন করুক।

৪৬। যদুগণের মধ্যে পশুর পুত্র তিরিন্দিরের নিকট শত ও সহস্র ধন গ্রহণ করিয়াছি।

৪৭। তাহারা পর্জ্জকে ও সামকে তিনশত অশ্ব ও দশশত গো প্রদান করিয়াছিল।

৪৮। ইনি উন্নত হইয়া চার ধনভার যুক্ত উষ্ট্রসমূহ প্রদান করতঃ এবং যদুগণকে(২) দাসরূপে প্রদান করতঃ কীর্তিদ্বারা স্বর্গ ব্যাপ্ত করিয়াছিলেন।

 ————
(১) শর্ষ্যণা হ্রদতীরে যদুবংশীয় পরশুরাজার পুত্র তিরিন্দির নিবাস করিতেন। কণ্বগোত্রীয় বৎস তাঁহার পুরোহিত। ৮।৭।২৯ ঋকের টিকা দেখ।
(২) এখানে ও অন্যান্য স্থানে যদুগণের উল্লেখ আছে। কণ্বগণ তাঁহাদের পুরোহিত।