ঋগ্বেদ ০৭।০৬৭

ঋগ্বেদ ০৭।০৬৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৭ম মণ্ডল সূক্ত ০৬৭

অশ্বিদ্বয় দেবতা। বসিষ্ঠ ঋষি।

১। হে নৃপতিদ্বয়! আমরা হব্যযুক্ত স্তোত্রের সহিত তোমাদের রথের স্তুতি করিবার জন্য গমন করিতেছি। হে স্তোত্ৰাৰ্হদ্বয়! পুত্র যেরূপ পিতাকে জাগরিত করে, সেইরূপ এই রথ তোমাদের দূতের ন্যায় লোককে জাগরিত করে। সেই রথ আমাদিগের অভিমুখে আগমন করিতে বলিতেছি।

২। আমাদের কর্তৃক সমিদ্ধ হইয়া অগ্নি দীপ্ত হইতেছেন। অন্ধকারের অন্তর প্রদেশও দৃষ্ট হইতেছে। প্রজ্ঞাপক সূৰ্য্য দ্যুলোক দুহিতার পূর্বদিকে শোভার্থ জাত হইয়া দৃষ্ট হইতেছেন।

৩। হে নাসত্য অশ্বিদ্বয়! সুহোতা এবং স্তুতি সমূহের বক্তা স্তোমদ্বারা তোমাদিগকে সেবা করিতেছেন। অতএব তোমরা পুৰ্ব্বপথে স্বর্গবিৎ ও ধনবান রথে আগমন কর।

৪। হে রক্ষক ও মধুর সোমার্হ অশ্বিদ্বয়! যেহেতু সোম অভিযুত হইলে, আমি তোমাদিগকে কামনা করিয়া ধনাভিলাষী হইয়া তোমাদিগকে স্তুতি করি, অতএব অদ্য তোমাদের প্রবৃদ্ধ অশ্বগণ তোমাদিগকে বহন করিয়া আনয়ন করুক। তোমরা আমাদিগের কর্তৃক অভিযুত মধুর সোম পান কর।

৫। হে অশ্বিদেবদ্বয়! তোমরা আমার ধনাভিলাষী সরল এবং হিংসারহিত বুদ্ধিকে লাভক্ষম কর, সংগ্রামেও আমাদের সমস্ত বুদ্ধিকে রক্ষা কর। হে শচাপতিদ্বয়(১)! স্তোত্র প্রযুক্ত আমাদিগকে ধন প্রদান কর।

৬। হে অশ্বিদ্বয়! এই কৰ্ম্মসমূহে আমাদিগকে রক্ষা কর, আমাদের রেতঃ অক্ষীণ এবং পুত্রাবশিষ্ট হউক। তোমাদের অনুগ্রহে পুত্র এবং পৌত্রে অভিমত ধন প্রদান করিয়া এৰং সুন্দর ধনবিশিষ্ট হইয়া আমরা যেন দেবলাভকর যজ্ঞে আগমন করি।

৭। হে মধুপ্রিয় অশ্বিদ্বয়! বন্ধুর জন্য পুরোগামী দূতের ন্যায় আমাদের সঙ্কল্পিত এই সোম নিধিস্বরূপ তোমাদের সম্মুখে স্থাপিত হইয়াছে। অতএব ক্ৰোধরহিত মনে আমাদের অভিমুখে আগমন কর, মনুষ্য প্রজা মধ্যে অবস্থিত হব্য ভক্ষণ কর।

৮। হে ভৰ্ত্তাদ্বয়! তোমাদের উভয়ের মিলন হইলে তোমাদের রথ গমনশীল সপ্ত নদী অতিক্রম করিয়া আগমন করে। সুজাত, দেবযুক্ত যে অশ্বগণ রথভারে তরণীস্বরূপ তোমাদিগকে বহন করে, তাহারা শ্ৰান্ত হয় না।

৯। তোমরা কোথায়ও আসক্ত হও না। যে ধনবানগণ ধনের নিমিত্ত দাতব্য হবিঃ প্রেরণ করে, যাহারা বন্ধুকে সুনৃত বাক্যদ্বারা প্রবর্দ্ধিত করে, যাহারা গো, অশ্ব এবং ধন দান করে, তোমরা তাহাদের জন্যই হইয়াছ।

১০। তোমরা অদ্য আমাদের আহ্বান শ্রবণ কর। হে নিত্যযৌবন অশ্বিদ্বয়! হব্যবিশিষ্ট গৃহে আগমন কর, রত্ন দান কর, স্তোতাকে বর্ধিত কর। তোমরা সর্বদা আমাদিগকে স্বস্তিদ্বারা পালন কর।

———-

(১) ঋগ্বেদে শচী অর্থে যজ্ঞ, শচীপতি অর্থে যজ্ঞপতি। ইন্দ্রকেই অনেক স্থানে শচীপতি অৰ্থাৎ যজ্ঞপতি বলা হইয়াছে। এই ঋকে মিত্র ও বরুণকে শচীপতি বলা হইয়াছে, অন্যান্য স্থানে অন্যান্য দেবকেও এই বিশেষণ দিয়া অভিহিত করা হইয়াছে। পৌরাণিক কালে লোকে শচী শব্দের প্রকৃত অর্থ ভুলিয়া যাইয়া ইন্দ্রকে শচীপতি বলিয়া ইন্দ্রের স্ত্রীর নাম শচী বিবেচনা করিলেন। এইরূপে পৌরাণিক গল্প সৃষ্ট হইয়াছে।

এই স্থান হইতে ৮টি সূক্তের দেবতা অশ্বিদ্বয়। তাঁহাদের কার্যসমূহের বিশেষ বিবরণ প্রথম মন্ডলের ১১২ ও ১১৬ সূক্তের টীকায় দেওয়া হইয়াছে।