ঋগ্বেদ ০৭।০০১

ঋগ্বেদ সংহিতা – সপ্তম মণ্ডল
১ সূক্ত।

অগ্নি দেবতা। বসিষ্ঠ ঋষি।

১. প্রসস্ত, দূরে দৃশ্যমান, গৃহপতি ও গমনবিশিষ্ট অগ্নিকে, নেতাগণ অরণিদ্বয়ে হস্তগতি ও অঙ্গুলিদ্বারা উৎপাদন করেন।

২. যিনি গৃহে নিত্য পূজনীয় ছিলেন, সেই সুদর্শন অগ্নিকে সর্ব্বপ্রকার (ভয়) হইতে রক্ষার্থে বসুগণ (১) গৃহে নিহিত করিয়াছিলেন।

৩. হে যুবতম অগ্নি! তুমি প্রকর্ষরূপে সমদ্ধ হইয়া অজস্র জ্বালার সহিত আমাদের পুরোভাগে প্রদীপ্ত হও; বহুঅন্ন তোমার নিকটা উপগত হইতেছে।

৪. সুজাত নেতাগণ যে অগ্নির নিকটা সমাসীন হন, লৌকিক অগ্নিসমূহ অপেক্ষা অধিক দীপ্তিমান, কল্যাণকর, পুত্রপৌত্রপ্রদ, সেই অগ্নিসমূহ বিশেষরূপে দীপ্তি পান।

৫. হে অভিভবকুলশ অগ্নি! শত্রু হিংসাযুক্ত হইয়া যাহা বাধা দিতে পারে না, সেই কল্যাণকর, পুত্রপৌত্রপ্রদ, সুন্দর অপত্যযুক্ত শ্রেষ্ঠ ধন, তুমি স্তোত্রপ্রযুক্ত হইয়া আমাদিগকে দান কর।

৬. হব্যযুক্তা যুবতী জুহূ দিবারাত্র সুদক্ষ (অগ্নির) নিকট আগমন করে, স্বকীয় দীপ্তি ধনাভিলাষী হইয়া তাঁহার নিকট আগমন করে।

৭. হে অগ্নি! তুমি তেজের দ্বারা পরুষ শব্দকারীকে দগ্ধ করিয়া থাক, সেই তেজবলে সমস্ত শত্রুগণকে দগ্ধ কর। তুমি উপতাপ দূর করতঃ রোগ নাশ কর।

৮. হে বসিষ্ঠ শুভ্র, দীপ্ত, পাবক অগ্নি! যাহারা তোমাকে সমিদ্ধ করে, তাহাদিগের ন্যায় আমাদিগেরও এই স্তোত্রে তুষ্ট হইয়া এই যজ্ঞে অবস্থান কর।

৯. হে অগ্নি! যে পিতৃহি, মর্ত্ত্য নেতাগণ তোমাদের তেজঃ বহুদেশে বিভক্ত করিয়াছেন; (তাহাদিগের ন্যায় আমাদেরও এই স্তোত্রে) প্রসন্ন হইয়া এই যজ্ঞে অবস্থান কর।

১০. যাহারা আমার শ্রেষ্ঠ কর্ম্মের স্তুতি করেন, (সেই) এই শূর নেতাগণ সংগ্রামসমূহে সমস্ত মায়া অভিভব করুন।

১১. হে অগ্নি! আমার শূন্য (গৃহে) বাস করিব না, (অন্য) মনুষ্যের (গৃহে) বাস করিব না। হে গৃহের হিতকর (অগ্নি)! আমরা পুত্রশূন্য ও বীরশূন্য; আমরা তোমার পরিচর্‍য্যা করতঃ প্রজাযুক্ত গৃহে বাস করিব।

১২. অশ্ববান্‌ (অগ্নি) যে যজ্ঞের (আশ্রয়ভূত গৃহে) গমন করেন, আমাদিগকে সেই ভৃত্যাদিযুক্ত, সুন্দর অপত্যবিশিষ্ট এবং ঔরসজাত পুত্রের দ্বারা বর্দ্ধমান গৃহ (দান কর)।

১৩. হে অগ্নি! আমাদিগকে অপ্রীতিকর রাক্ষস হইতে রক্ষা কর, অদাতা, পাপেচ্ছুক হিংসক হইতে রক্ষা কর। আমি তোমার সাহায্যে পৃতনাকাম ব্যক্তিদিগকে অভিভূত করিব।

১৪. বলবান্‌, দৃঢ়হস্ত, বহু অন্নবিশিষ্ট, তনয়, ক্ষয়রহিত (স্ত্রোত্র) দ্বারা যে (অগ্নির) পরিচর্য্যা করে, সেই অগ্নি অন্য অগ্নিকে অভিভূত করুক।

১৫. যিনি প্রবোধককে হিংসা ও পাপ হইতে রক্ষা করেন, যাঁহাকে সুজন্মা বীরগণ পরিচর্য্যা করেন, তিনিই অগ্নি।

১৬. যাঁহাকে সমৃদ্ধ ও হব্যযুক্ত ব্যক্তি সম্যক্‌রূপে দীপ্ত করেন, যাঁহাকে হোতা যজ্ঞে পরিগমন করেন, সেই এই অগ্নি বহুদেশে আহুত হন।

১৭. হে অগ্নি! আমরা ধনেশ্বর হইয়া তোমার উদ্দেশ্যে নিত্য স্তোত্র ও শস্ত্রদ্বারা যজ্ঞে প্রভূত হব্য দান করিব।

১৮. হে অগ্নি! তুমি অনবরত দেবগণের নিকট এই অত্যন্ত কমণীয় হব্য বহন কর এবং গমন কর। (দেবগণের) প্রত্যেকে আমাদের এই সুরভি (হব্য) কামনা করুন।

১৯. হে অগ্নি! আমাদিগকে অপুত্রতা প্রদান করিও না, মন্দ বস্ত্র প্রদান করিও না, অমতি আমাদিগকে প্রদান করিও না, আমাদিগকে ক্ষুধা প্রদান করিও না, রাক্ষসের হস্তে প্রদান করিও না। হে সত্যবান্‌ অগ্নি! আমাদিগকে গৃহে হিংসা করিও না, বনে হিংসা করিও না।

২০. হে অগ্নি! আমার অন্ন বিশেষরূপে শোধিত কর। হে দেব! তুমি যজ্ঞবান্‌দিগকে অন্ন প্ররণ কর। আমরা উভয়ে যেন তোমার দানে থাকি; তোমরা সর্ব্বদা আমাদিগকে স্বস্তিদ্বারা পালন কর।

২১. হে বলেরপুত্র, অগ্নি! তুমি সুন্দর আহ্বানবিশিষ্ট ও রমণীয় দর্শন, তুমি শোভনদীপ্তির সহিত প্রদীপ্ত হও। তুমি সহায় হও এবং ঔরসপুত্র দগ্ধ করিও না; আমাদের মনুষ্য হিতকর পুত্র যেন ক্ষয় প্রাপ্ত না হয়।

২২. হে অগ্নি! তুমি অসহায় হও এবং ঋত্বিক্‌গণ কর্ত্তৃক সমিদ্ধ অগ্নিগণকে বলিও, যেন তাঁহারা আমাদিগকে সুখে ভরণ করেন। হে বলেরপুত্র অগ্নিদেব! তোমার নিগ্রহ বুদ্ধি ভ্রমেও যেন আমাদিগকে ব্যাপ্ত না করে।

২৩. হে সুতেজা অমর্ত্ত অগ্নি! যে ব্যক্তি তোমাকে হব্য প্রদান করে, সে-ই মর্ত্তে ধনবান্‌ হয়। যাঁহার নিক স্তোতা অর্থী জিজ্ঞাসা করতঃ গমন করে, সেই অগ্নিদেব যজমানকে ধারণ করেন।

২৪. হে অগ্নি! তুমি আমাদের মহৎ কল্যাণকর (কর্ম্ম) অবগত আছ। হে বলপুত্র! আমরা তোমার স্তোতা, আমরা যদ্দ্বারা, অক্ষীণ, পূর্ণায়ূঃ এবং কল্যাণকর পুত্রপৌত্রবিশিষ্ট হইয়া হৃষ্ট হইতে পারি, আমাদিগকে এরূপ মহৎ ধন দান কর।

২৫. হে অগ্নি! আমার অন্ন বিশেষরূপে শোধিত কর; হে দেব! তুমি যজ্ঞবান্‌দিগকে অন্ন প্রেরণ কর। আমরা উভয়ে যেন তোমার দানে থাকি, তোমরা সর্ব্বদা আমাদিগকে স্বস্তিদ্বারা পালন কর।