।। সাত।।
সেই রাত্রেই এক ব্যাপার।
সারাটা দিন মোহনকে খাটতে হয়েছে। সকালে মেঘা দরজা খুলে বলেছে, ভারী আমাদের রাজপুত্তুর এসেছেন! আমরা কেবল ওঁর সেবা করব। নে ওঠ।
ভয়ে ভয়ে মোহন উঠে পড়েছে।
আধপোড়া রুটি আর গুড় খাওয়া হতে, মেঘা তার হাতে একটা মাটির ঘড়া তুলে দিয়ে বলেছে, ওই পুকুর থেকে জল তুলে আমার বাগানে দে। কাজ কর। বসে থেকে থেকে হাত-পায়ে মরচে ধরে যাবে যে।
মোহনের প্রথমে ধারণা হয়েছিল, বার দুই-তিন জল ঢাললেই বুঝি কাজ শেষ হয়ে যাবে।
ডোবার পাশেই মেঘার বেগুনখেত। একটা খাটিয়া নিয়ে মেঘা বেগুনখেতের পাশে বসল। হাতে হুঁকো। কাজের তদারকি করাও হবে, আবার ছেলেটাকে নজরেও রাখতে পারবে।
তাল গাছের লম্বা সিঁড়ি। ভীষণ পিছল।
শ্যাওলা সরিয়ে ঘড়াতে জল ভরতে হবে, তারপর সেই ভারী ঘড়া বয়ে এনে বেগুনখেতে জল দেওয়া।
একটু দেরি হলেই মেঘার বজ্রকণ্ঠের চিৎকার, কী রে, মরলি নাকি! উঠব একবার?
প্রায় টানা দু-ঘণ্টা?
মেঘা যখন বলল, ব্যাস, আজ এই পর্যন্ত, তখন মোহনের দুটো হাত তুলবার ক্ষমতা নেই। কাঁধ পর্যন্ত টনটন করছে।
মনে মনে মোহন ভাবল, হায় রে, সৎমার কয়েকটা ফাইফরমাশ খাটবার ভয়ে দেশে কত কাণ্ড করেছে, অথচ এ খাটুনির তুলনায় সে তো কিছুই নয়। রোজ এইরকম খাটতে হয়, তাহলে কারো আর মোহনকে মারবার প্রয়োজন হবে না। সে এমনিতেই মরে যাবে।…
শেষবেলার দিকে চাটাইয়ের ওপর মোহন টান হয়ে শুয়ে ছিল, মেঘার মা এসে বলল, নে, উঠে চাল ক-টা বেছে দে, ছেলেমানুষ কি ওরকম শুয়ে থাকে?
ফলে রাতে যখন মোহন শুতে গেল, তখন তার গায়ে একটুও শক্তি নেই। চাটাইয়ের শোবার সঙ্গে সঙ্গেই গভীর ঘুম এসে গেল।
তারপর মাঝরাতে হঠাৎ কীসের শব্দ। একেবারে মোহনের কানের পাশে।
মোহন ক্লান্ত চোখ দুটো খুলে যা দেখল, তাতে তার মাথার চুল খাড়া হয়ে উঠল।
সারা ঘর জুড়ে গোটা চারেক সাপ। দুটো বড়ো, দুটো ছোটো। ফণা তুলে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে মেঝের ওপর ছোবল দিচ্ছে। বোধহয় এটাই খেলা। সেই সময় হিস হিস আওয়াজ হচ্ছে। ছোটোগুলোর গর্জন আরও বেশি।
মোহন শুয়ে ছিল, নড়াচড়া করলেই সাপের নজরে পড়ার সুযোগ বেশি, কিন্তু এতগুলো সাপের এত কাছাকাছি সে চুপ করে শুয়ে থাকবেই বা কী করে?
মোহন মরিয়া হয়ে দরজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণপণ শক্তিতে ধাক্কা দিতে শুরু করল। অনেকক্ষণ ধাক্কা দেবার পর দরজা খুলল।
মেঘার মা কুপি হাতে দরজা খুলেই গালাগাল শুরু করল, এ তো আচ্ছা জ্বালাতন! রাত্তিরেও একটু চোখ বোজবার উপায় নেই। কী হল কী, বল? আপদ এসে জুটেছে এক!
মোহনের সারা শরীর ঘামে ভিজে উঠেছে। কথা বলবার শক্তি নেই। কোনওরকমে উচ্চারণ করল, সাপ, অনেকগুলো সাপ। দিদিমা বাঁচাও।
মেঘার মা যখন ঘরের দিকে তাকাল, দেখল সাপগুলো এককোণে সরে গেছে। কিছুটা কুণ্ডলী পাকিয়ে একটু ফণা উঁচু করে রয়েছে। বোধহয় দরজার আওয়াজে তারাও একটু ভয় পেয়েছে।
মেঘার মা সব দেখে নিয়ে বলল, তোকে না বলেছি, ওসব বাস্তুসাপ, কোনও ক্ষতি করবে না। তবু মাঝরাত্তিরে চেঁচাবি?
মোহন দু-হাতে বুড়িকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল, আমার বড়ো ভয় করছে দিদিমা। আমি এ ঘরে শুতে পারব না।
শোনো কথা ছেলের! এ ঘরে শুবি না তো কোথায় শুবি? বুড়ির গলা যেন শেষদিকে একটু নরম হয়ে এল।
মোহন উত্তর দিল না।
বুড়ি কিছুক্ষণ কী ভাবল, তারপর বলল, ঠিক আছে, চল শুই গে।
চাটাইয়ে পাশাপাশি দুজনে শুল।
মোহনের তখনই ঘুম এল না, কিন্তু বুড়ি সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ল।
মোহন চোখ ঘুরিয়ে দেখল। আশ্চর্য কাণ্ড। সাপগুলো কোথাও নেই। বোধহয় ফাটলের মধ্যে ঢুকে গেছে।
হঠাৎই মোহনের মনে কথাটা এল। এই তো সুযোগ। বুড়ি অঘোরে ঘুমোচ্ছে। দরজা খোলা। এখন কোনওরকমে বের হতে পারলে রাতের অন্ধকারে অনেকটা পথ পালানো যাবে।
চারদিকে বেশ জঙ্গল। প্রহরে প্রহরে শেয়ালের ডাক মোহনের কানে এসেছে। আরও হিংস্র কোনও জন্তু আছে কি না তার জানা নেই।
জন্তুজানোয়ারের কবলে পড়বে কি না কে জানে। যা-ই কিছু হোক, এমন সুযোগ হারানো উচিত হবে না।
আস্তে আস্তে মোহন উঠে বসল। না, বুড়ি অসাড়ে ঘুমোচ্ছে। নাকের গভীর গর্জন।
মোহন দাঁড়াল। কুপির আলোয় ঘুমন্ত বুড়িকে বীভৎস দেখাচ্ছে।
কিন্তু মেঘা নিশ্চয় বাড়িতেই আছে। মোহনকে বের হতে দেখলে লাফিয়ে এসে টুঁটি চেপে ধরবে। দেখাই যাক। কপালে যা আছে হবে!
মোহন আর এভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। পা টিপে টিপে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
বাইরে মিশকালো অন্ধকার। একহাত দূরের কিছু দেখার উপায় নেই। মাঝে মাঝে শুধু ঝোপের ফাঁকে জোনাকির আলো। নানারকম শব্দ ভেসে আসছে। মোহনের গা ছমছম করে উঠল।
পিছন ফিরে মোহন একবার দেখল, বুড়ি ঘুমোচ্ছে। দুটো সাপ ফাটল থেকে বের হয়ে মেঝেতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মোহন আর অপেক্ষা করল না। বাইরে পা বাড়াল। তার মনে আছে, তিনটে সিঁড়ির ধাপ; তারপরই মাটি।
মাটিতে পা রেখে একটু দাঁড়াল সে। কোনদিক থেকে এখানে এসেছিল আন্দাজ করার চেষ্টা করল, কিন্তু রাতের অন্ধকারে তা সম্ভব হল না।
এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাও ঠিক হবে না। মোহন ছুটতে আরম্ভ করল।
উঁচু-নিচু জমি। অন্ধকারে কাঁটাঝোপকে আলাদা করে চেনার কোনও উপায় নেই। অনেকবার মোহন ঝোপের ওপর গিয়ে পড়ল। কাঁটার আঘাতে গা ক্ষতবিক্ষত হল। অন্ধকারে ঠিক বোঝা গেল না, দু-জায়গায় বোধহয় রক্তও বেরিয়েছে।
অনেকটা ছোটার পর চোখের সামনে একটা দৃশ্য দেখে মোহনের রক্ত হিম হয়ে গেল।
দুটো চোখ জ্বলজ্বল করছে। অন্ধকারে জন্তুদের চোখ ঠিক এমন করেই জ্বলে।
নীল আর হলদে-মেশানো আলো। দেশের বাড়িতে আচমকা ঘুম থেকে উঠে কত রাতে জানলা দিয়ে দেখেছে, উঠোনে অনেকজোড়া এই ধরনের চোখ ঘোরাফেরা করছে।
মোহন জানত, সেসব শেয়ালের চোখ। পুকুরের পাশে বাঁশবনের মধ্যে শেয়ালের গর্ত। রাত হলেই তারা দলে দলে বেরিয়ে আসে। লোকেদের উঠোনে হাঁস-মুরগির লোভে ঘোরাফেরা করে।
জঙ্গলের মাঝখানে এভাবে তাদের মুখোমুখি মোহনকে কোনওদিন দাঁড়াতে হয়নি। শেয়াল কামড়ায় এ কথা শুনেছে। তাদের গাঁয়ে কাকে একবার কামড়েছিল।
মোহন মাটিতে বসে পড়ল। দু-হাতে মাটির ঢেলা কুড়িয়ে নিল। তারপর সেই চোখ লক্ষ করে ঢেলাগুলো ছুড়তে আরম্ভ করল।
অনেকগুলো লাগল না, তবে চোখের আলো এদিক-ওদিক সরে গেল। তারপর একটা ঢিল লাগতেই ঘেউ করে একটা শব্দ হল।
মোহন একটু নিশ্চিন্ত হল। অন্য জন্তু নয়, কুকুর। কিন্তু বুড়ো কুকুর যদি হয়, তাহলে মোহন ছুটলেই তো তেড়ে এসে কামড়াতে পারে।
মোহন কিছুটা পথ আস্তে আস্তে হেঁটে পার হল। তারপর আবার ছুটতে লাগল।
অনেকটা সময় কাটল। মোহনের মনে হল, আর সে পারবে না, এবার সে মাঠের ওপর অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়বে। সারা দেহ ঘামে ভিজে গেছে। অসহ্য যন্ত্রণা হাত-পায়ে, গাঁটে গাঁটে। কপালটা কেটে গিয়ে রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়ে একটা চোখ প্রায় বন্ধ হবার জোগাড়।
ঠিক এই সময়ে চোখে পড়ল, বেশ একটু দূরে কয়েকটা আলো জ্বলছে। তার মানে গ্রাম। কোনওরকমে ওখানে পৌঁছাতে পারলে একটা আশ্রয় মিলতে পারে। তবে ও গ্রামও খুব কাছে মনে হল না।
মোহন একটু দম নিয়ে দ্বিগুণ বেগে ছুটতে লাগল। আলো লক্ষ করে।
কয়েক পা মাত্র গিয়েছে, এমন সময় চারদিক কাঁপিয়ে শাঁখের শব্দ। এরকম বুক- কাঁপানো শাঁখের শব্দ মোহন এর আগে আর শোনেনি। আওয়াজে বুকের ভিতরটা গুরগুর করে উঠল।
একটু পরেই এদিকে-ওদিকে মানুষের হাঁকডাক। মশালের আলো জ্বলে উঠল। মোহন সামনের একটা গাছে উঠে পড়ল।
ওঠবার সময় হাত-পা আবার নতুন করে ছড়াল। বেশ ঝাঁকড়া গাছ। পাতার আড়ালে লুকোবার খুব সুবিধা।
মোহন দেখল, প্রায় ত্রিশ-চল্লিশটা মশাল চারদিক থেকে এগিয়ে আসছে। অন্ধকার আর নেই। দিনের আলোর মতন সব পরিষ্কার।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মশালগুলো খুব কাছে এগিয়ে এল। কালো কালো ষণ্ডামার্কা লোক। মাথায় লাল কাপড়ের ফেট্টি বাঁধা। খালি পা। মশালগুলো উঁচুতে তুলে ধরে গাছের ওপরে পর্যন্ত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
গাছের ডালে বসে মোহন থরথর করে কাঁপতে লাগল। এবার ধরা পড়লে এরা বোধহয় মশালের আগুনেই পুড়িয়ে মারবে।
মোহন যে গাছের ওপরে ছিল, তার তলায় তিনজন লোক এসে দাঁড়াল। তিনজনেই হাঁপাচ্ছে। ঘামে চকচক করছে তাদের গা।
একজন বলল, তা-ই তো, শয়তানটা গেল কোথায়?
আরেকজন বলল, ঝোপেঝাড়ে নিশ্চয় কোথাও বসে আছে।
যাবে কোথায়? গাঁ এখান থেকে সাত ক্রোশ। তৃতীয়জন বলল, যেমন করে হোক খুঁজে বের করতেই হবে, নইলে সর্দার আমাদের কারো মাথা রাখবে না।
চল, ওদিকটা দেখি। এগুতে যাবার মুখেই একজন থেমে গেল। মশালটা আবার উঁচু করে বলল, ওরে, ওই পাতার আড়ালে দেখ, কী একটা নড়ছে!
বাকি দুজন তাদের মশাল তুলে ধরল, হ্যাঁ হ্যাঁ, ওই তো ওই তো।
মোহনের হাত-পা অবশ হয়ে গেল। তার মনে হল পাকা ফলের মতন টুপ করে সে মাটির ওপর লুটিয়ে পড়বে।
এই, ভালোয় ভালোয় নেমে আয় বলছি, না হলে গাছে আগুন ধরিয়ে দেব। জ্যান্ত পুড়ে মরবি।
এরা না পারে এমন কাজ নেই। আস্তে আস্তে মোহন নেমে আসতে লাগল।
পুরোপুরি নীচে পর্যন্ত তাকে পৌঁছাতে হল না। যখন সে মাটি থেকে হাত পাঁচ-ছয় উঁচুতে, তখন একজন তাকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে আনল। নামিয়েই প্রচণ্ড এক চড়।
লোকটা ধরে না থাকলে মোহন ঘুরে পড়েই যেত।
লোকটা বলল, খুব বেশি ওস্তাদ হয়ে গেছিস, না? আমাদের চোখে ধুলো দেবার চেষ্টা?
আরেকটা লোক বলল, উঃ, কম হয়রানি হয়েছে আমাদের!
আর-একজন মোহনের চুলের মুঠি ধরে জোর টান দিল।
যন্ত্রণায় মোহন ককিয়ে উঠল।
যে লোকটা মোহনের হাত ধরেছিল, সে তাকে কাঁধে ফেলে দৌড়াতে আরম্ভ করল।
.
মোহনকে যখন ওরা বন্দি করে নিয়ে আসছে, তখন অনেকে মেঘার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে জটলা করছিল।
একপাশে মেঘার বুড়ি মা হাউমাউ করে কাঁদছে। তার সামনে মেঘা।
মেঘার মা বলছিল, উঃ, কী সর্বনেশে ছেলে বাবা! আমি কাছে যেতেই আমার গলা টিপে ধরল। এত জোরে যে, আমি চোখে অন্ধকার দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। সেই ফাঁকে ছেলেটা হাওয়া।
মেঘা ধমক দিয়ে উঠল, থাম থাম, আর কাঁদতে হবে না। ও যাবে কোথায়? লোকেরা ঠিক ওকে ধরে নিয়ে আসবে।
মেঘার মা কিন্তু থামল না। সে বলতে লাগল, তারপর ঘোর কাটতেই আমি উঠে শাঁখটা বাজিয়ে দিলাম।
মেঘার মা-কে আর বলতে হল না। সবাই চেঁচিয়ে উঠল, পাওয়া গেছে, পাওয়া গেছে।
মেঘা বসে ছিল, উঠে দাঁড়াল। বলল, পাওয়া গেছে? কই, কোথায়?
কে একজন আঙুল দিয়ে দেখাল। ততক্ষণে মোহনকে নিয়ে সেই লোক তিনটে কাছে এসে নামিয়ে দিয়েছে।
মেঘার বুড়ি মা আবার হাত নেড়ে নেড়ে তার গলা টিপে ধরার মিথ্যা কাহিনিটা বর্ণনা করতে শুরু করল।
মেঘা তখন সোজা মোহনের সামনে গিয়ে হাজির হল।
মোহন মাটিতে পড়ে আছে। তার ওঠবার ক্ষমতা নেই।
যাক, সর্দারের কাছে মুখরক্ষা হল। আজই সর্দারের আসবার কথা। শয়তানটাকে ঘরের মধ্যে তালাবন্ধ করে রাখ। ওর শাস্তি সর্দারই দেবে। তোরা সব ভোরের দিকেই এখানে চলে আয়। খুব জরুরি কাজের জন্য সর্দার ডেকে পাঠিয়েছে। এখন অনেক রাত হয়েছে, একটু চোখ বুজে নিই।
হাই তুলে মেঘা নিজের ঘরের দিকে চলে গেল। পিছন পিছন মেঘার মা।
নে ওঠ। সেই লোকটা মোহনকে টেনে দাঁড় করাল, চল।
মোহন চলতে গিয়ে বুঝতে পারল তার আর চলবার শক্তি নেই। দুটো পা-ই ঠকঠক করে কাঁপছে। যন্ত্রণায় পা ফেলতে পারছে না। তবু সে কোনওরকমে টলতে টলতে চলতে লাগল।
আবার সেই পুরোনো ঘর, পুরোনো চাটাই। তার মধ্যে মোহনকে ঠেলে দিয়ে বাইরে থেকে দরজায় তালাবন্ধ হয়ে গেল।
হামাগুড়ি দিয়ে মোহন গিয়ে চাটাইয়ের ওপর শুয়ে পড়ল। মুখ দিয়ে মা, মা গো— করুণ সুর বেরুল।
এতদিন পর নিজের মায়ের কথা মনে পড়ল তার। পৃথিবীতে যার নিজের মা নেই, তার বুঝি কেউই নেই। সারা পৃথিবী তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
আজ মোহনের নিজের মা বেঁচে থাকলে তাকে এই কষ্ট ভোগ করতে হত না। বাড়ি থেকে পালাবারই কোনও প্রশ্ন উঠত না।
সকালে সর্দার আসবে। তখন মোহনের শাস্তি হবে। এবার নিশ্চয় দারুণ শাস্তি হবে।
মেঘার মা ইনিয়েবিনিয়ে কেঁদে কেঁদে যেসব মিথ্যা কথাগুলো বলছিল, সবই মোহনের কানে গিয়েছে। মোহন তার গলা টিপে ধরে তাকে নাকি অজ্ঞান করে ফেলে পালিয়েছিল। এ ধরনের ছেলেকে সর্দার অল্পে ছাড়বে এরকম মনে হয় না।
যা হবার হবে, মোহন আর ভাবতে পারে না। দুটো হাত সামনে বাড়িয়ে মোহন চোখ বুজল। ক্লান্ত দেহে ঘুম আসতে মোটেই দেরি হল না।
মোহন অকাতরে ঘুমিয়ে পড়ল।
বাইরে অন্ধকার ক্রমশ আবছা হয়ে আসছে।