শান্তিলতার অশান্তি – ৭

শোভন চৌধুরি আই. পি. এস. অফিসার। বয়স অল্প হলেও লালবাজারে যে দায়িত্ব তাঁকে বহন করতে হয়, সেটা গুরুভার। ফলে এই বয়সেই তাঁর মুখে একটা গাম্ভীর্যের ছাপ পড়তে পারত। সেটা পড়েনি। কানের পাশের চুলে পাক ধরতে পারত। তাও ধরেনি। তাঁর চলাফেরায় সব সময়েই একটা সতেজ স্ফূর্তি লক্ষ করেছি। চোখেও প্রায় সর্বদাই দেখেছি একটু কৌতুকের ছোঁয়া লেগে থাকে।

কিন্তু এই যে তিনি দ্বিতীয়বার এই ঘরে এসে ঢুকলেন, এখন তাঁর মুখ দেখছি মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো থমথমে। অন্য কারও দিকে দৃকপাত না-করে সরাসরি ভাদুড়িমশাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “পুলিশকে কি আপনি এখন একটুও বিশ্বাস করেন না?”

ভাদুড়িমশাই মৃদু হেসে বললেন, “কী ব্যাপার, হঠাৎ এ-কথা বলছ কেন?”

“বলার কারণ আছে বলেই বলছি। আপনি কি মনে করেন যে, নর্থ ক্যালকাটার এই খুনের ব্যাপারটায় আমরা হাত গুটিয়ে বসে আছি?”

“তা কেন মনে করব?”

“তা হলে এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রথম থেকেই আমরা যে এত খেটে যাচ্ছি, লোক্যাল থানার উপরে সবকিছু ছেড়ে না দিয়ে নর্থের ডি. সি.-কে বলে তাঁর একজন সেরা লোককে ওখানে লাগিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছি, তারপরেও আবার আপনি ওখানে লোক পাঠাতে গেলেন কেন? আপনি কি…’”

কথাটা শেষ না করেই ঘুরে দাঁড়ালেন শোভন চৌধুরি। কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বললেন, “পুলিশের লোক বলে নিজের পরিচয় দিয়ে বাইরের কেউ যে ওখানে গিয়েছিল, গিয়ে কল্যাণ রায়ের উইডোর সঙ্গে দেখাও করেছিল, তা তো আমি আগেই জানতে পেরেছি, এখানে এসে তা তোমাদের বলেছিও। একটু আগে, স্পটে যাকে পাহারায় রাখা হয়েছে, তার কাছে সেই লোকটার একটা ডেসক্রিপশানও পাওয়া গেল। লোকটার হাইট, কমপ্লেকশান আর কালো ফ্রেমের চশমার কথা তো পাহারাদারটি বলেছেই, থানার বড়বাবুকে সে এটাও বলেছে যে, লোকটার পরনে ছিল বাদামি ট্রাউজার্স আর কালো স্ট্রাইপের সাদা শার্ট।”

কৌশিক বলল, “তাতে কী প্রমাণ হল?”

“তাও বলে দিতে হবে?” শোভন চৌধুরি বললেন, “ছিছি কৌশিক, হাইট আর কমপ্লেকশান না হয় পালটানো যায় না, কিন্তু আশা করি তোমার অন্য রঙের ফ্রেমের আর-একজোড়া চশমাও আছে, আর শার্টও বোধকরি এই একটা মাত্রই নেই। তা স্পট থেকে ঘুরে এসে চশমা আর শার্টটা অন্তত পালটাতে পারতে। …এনিওয়ে, আসল কথায় আসি। ওখানে গেসলে কেন তুমি?”

ভাদুড়িমশাই সব সময়েই বলেন, ধরা পড়ে গেলে কথা বাড়াতে নেই, দোষটা স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। আর এ তো হাতেনাতে ধরা পড়ার ব্যাপার। কৌশিক অতএব কথা বাড়াল না! বলল, “গেসলুম স্পটটা একবার নিজের চোখে দেখতে।”

“এবং যথাসম্ভব তথ্য সংগ্রহ করতে।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “ভাবলুম, এমনকিছু হয়তো ওর চোখে পড়তে পারে, যা তোমাদের নজর এড়িয়ে যাওয়া কিছু বিচিত্র নয়। এমন তো মাঝে-মাঝে এড়িয়ে যায়।”

শোভন বললেন, “যায়, সেটা অস্বীকার করছি না। তবে একে তো এটা কিছু জটিল কেস নয়, তার উপরে কেসটা যিনি হ্যাড্ল করছেন, তিনি ঝানু লোক, চোখ-কান খোলা রেখেই তিনি এগোচ্ছেন, তাঁর চোখে কিছু পড়বে না কি কানে কিছু ঢুকবে না, এটা ভাবা শক্ত। আর তা ছাড়া…’”

কথাটা শেষ করলেন না শোভন চৌধুরি। প্রসঙ্গ পালটে বললেন, “ডঃ সান্যালকে দেখছি না যে?” কৌশিক বলল, “বাবার শরীরটা ক’দিন ধরে ভাল যাচ্ছে না। প্রেশারটা বড্ড ফ্লাকচুয়েট করছে, চুপচাপ শুয়ে আছেন। মা’র অর্ডার, এখন তিন দিন টানা রেস্ট নিতে হবে।”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “কাজের কথায় এসো, শোভন। কথা ঘুরিয়ো না। ‘আর তা ছাড়া’ বলেই থেমে গেলে কেন? কথাটা কী?”

“বাবা রে বাবা!” শোভন চৌধুরি অপ্রস্তুত হেসে বললেন, “এই পুলিশ-লাইনেই তো বেশ কয়েক বছর কেটে গেল, হরেক রকমের মানুষও এর মধ্যে কম দেখলুম না। কিন্তু, বিশ্বাস করুন, আপনার মতো হুঁশিয়ার মানুষ আমি আর একটিও দেখিনি। মুখ ফশকে একটা কথা বেরিয়েছে কি বেরোয়নি, সেটাও আপনি ঠিক মনে রেখেছেন।”

“সার্টিফিকেট দিতে হবে না, আসল কথায় এসো। তা ছাড়া কী?”

“বলছি, বলছি। কেসটা যিনি হ্যান্ডল করছেন, বলছিলুম না যে, তিনি বেশ ঝানু লোক?”

“হ্যাঁ, একটু আগেই বলেছ।”

“তো তিনিই জানিয়েছেন, বাইরে থেকে একজন নয়, নাক গলিয়েছে দু’জন লোক।”

“তাও তুমি বলেছ।”

“যা বলা হয়নি, সেটা এই যে, দু’জনের মধ্যে একজন তো কৌশিক, আর অন্যজন সম্পর্কেও আমাদের এই অফিসারটি যে একেবারেই কোনও আন্দাজ আমাকে দিতে পারেননি, তা নয়।”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “কী আন্দাজ দিলেন?”

“বললেন যে, কালো ফ্রেমের চশমা আর স্ট্রাইপওয়ালা সাদা শার্ট পরে যে লোকটি মহেশ ঘোষাল লেনে ঢুকে পাহারাদারটির কাছে পুলিশের লোক বলে নিজের পরিচয় দিয়েছিল, আর তারপর মহেশ ঘোষাল সেকেন্ড বাইলেনে কল্যাণ রায়ের বাড়িতেও গিয়ে ঢুকেছিল খানিকক্ষণের জন্যে, সে ওই পাড়া থেকে বেরিয়ে যাবার আগেই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে আর-একটি লোক মহেশ ঘোষাল লেনে এসে ঢোকে।”

“তা-ই?”

“হ্যাঁ, তা-ই। লোকটি গাড়িতে এসেছিল। দামি বিদেশি গাড়ি। মার্সিডিজ। গাড়িটা একটুও না থেমে সিধে সেকেন্ড বাইলেন পর্যন্ত এগোয়। বাইলেনে ঢোকেও, কিন্তু আধ মিনিটের মধ্যেই আবার ব্যাক করে মহেশ ঘোষাল লেনে পড়ে নিমেষে মুখ ঘুরিয়ে ফুল স্পিডে চলে যায় বড়রাস্তার দিকে।”

“গাড়িতে যে এসেছিল, পাহারাদার তাকে দ্যাখেনি?”

“দেখেছিল। নম্বরটা সে বলেওছিল আমাদের অফিসারকে। কিন্তু খোঁজ করে জানা গেল যে, কলকাতায় এমন নম্বরের কোনও গাড়ি নেই।”

“তার মানে ফল্স নাম্বার প্লেট!”

“সে তো বোঝাই যাচ্ছে।” শোভন চৌধুরি বললেন, “কৌশিক কিছু জানতে পারল?”

কৌশিক বলল, “কল্যাণ রায়ের বাড়িটা মোটামুটি দেখে এসেছি।”

“দুটো তলাই?”

“হ্যাঁ।”

“আশ্চর্য!” শোভন চৌধুরি বললেন, “না না, কিছু ভেবো না। কালো ফ্রেমের চশমা আর স্ট্রাইপড সাদা শার্ট পরা লোকটি যে কল্যাণ রায়ের বাড়িতে গিয়ে তার উইডোর সঙ্গে দেখা করেছিল, তা আমরা জানি। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি অন্য একটা কথা শুনে।”

“কী কথা শুনে?”

“এই কথা শুনে যে, কল্যাণ রায়ের উইডো সেই লোকটিকে…তার মানে তোমাকে একতলা থেকেই বিদেয় করে দেননি, দোতলায় উঠত দিয়েছিলেন।”

“সে কী, দোতলায় উঠতে দিতে বারণ ছিল নাকি?”

“হ্যাঁ, ছিল। আমরাই বারণ করে দিয়েছিলুম।”

কেন?”

“বলছি।” শোভন চৌধুরি বললেন, “তার আগে একটা অন্য কথা বলে নিই। কল্যাণ রায়ের জামার পকেটে বেশ কিছু টাকা ছিল, এটা জানো তো?”

“সে তো আপনার কাছেই শুনেছি।”

“কম টাকা নয়, আড়াই হাজার। তা যে-ই কল্যাণ রায়কে খুন করে থাকুক, টাকাটা সে নেয়নি। তাতেই আমাদের সন্দেহ হয় যে, ইট’স নট আ মার্ডার ফর মনিটরি গেইন, এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে। সেটা ব্যক্তিগত আক্রোশ হতে পারে, কিংবা ওই রকমের অন্য-কিছুও হতে পারে।”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “তাও তুমি বলেছ, শোভন। তোমার সন্দেহ যে একেবারেই অমূলক, তা নাও হতে পারে, তবে এটা যে মনিটরি গেইনের জন্যে খুন, এমন সম্ভাবনাকেও আমি রুল আউট করছি না।”

“ঠিক আছে,” শোভন বললেন, “সেটাকেও আমি হিসেবের মধ্যে রাখব। ইতিমধ্যে আর-একটা কথাও আপনাকে জানানো দরকার। এটা আগে বলিনি। কল্যাণ রায়ের পকেটে ওই আড়াই হাজার টাকার ব্রেক-আপটা হচ্ছে পাঁচখানা কারেন্সি নোট, প্রত্যেকটি নোট পাঁচশো টাকার।”

“জাল-নোট নয় তো?”

“না, সব ক’টাই জেনুইন। কিন্তু সেটা কোনও কথা নয়। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে প্রত্যেকটা নোটের এক কোণে খুবই খুদে হরফে ইংরেজি অ্যালফাবেটের দুটো অক্ষর লেখা রয়েছে। এম বি। একে তো অতি খুদে হরফ, তার উপরে আবার এত অস্পষ্ট যে, খালি চোখে ধরাই যায় না।”

“কী দিয়ে লেখা? কালি?”

“না, কাঠ-পেনসিল। ইরেজার দিয়ে ঘষলেই উঠে যাবে।”

“তা হলে ইরেজার দিয়ে ঘোষো না। আমি একবার দেখব।”

“নিশ্চয় দেখবেন। সেই সঙ্গে এক টুকরো কাগজও আপনাকে দেখাব।”

“কাগজ?” ভাদুড়িমশাই ভুরু কুঁচকে বললেন, “কীসের কাগজ?”

“ছোট্ট এক টুকরো কাগজ,” শোভন বললেন, “এটাও কল্যাণ রায়ের পকেটেই ছিল। তবে কারেন্সি নোটগুলো যেখানে পাওয়া গেছে, সেই পকেটে নয়। বুকপকেটের একপাশে অনেকে কাপড়টাকে একটু ত্যাড়চা করে কেটে একটা ছোট্টমতন বাড়তি-পকেট বানিয়ে নেয়…ওই যাতে অনেকে ঘড়ি রাখে আর কী। তো এই চিরকুটটা তারই মধ্যে ছিল। দেখুন তো, আপনি এর থেকে কিছু বুঝতে পারেন কি না।”

সোফার পাশে রাখা অ্যাটাচি কেসটা খুলে তার একটা খোপ থেকে একটুকরো কাগজ বার করে শোভন চৌধুরি সেটা ভাদুড়িমশাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিলেন।

ভাদুড়িমশাই মিনিট খানেক সেটা নিরীক্ষণ করে বললেন, “এও তো সাংকেতিক ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে। …কিরণবাবু, আপনি একবার দেখুন।”

কাগজটা আমার হাতে তুলে দিলেও একা আমিই যে সেটা দেখলুম তা নয়, আমার পাশ থেকে উটের মতো গলা বাড়িয়ে সদানন্দবাবুও সেটা বেশ ভালভাবেই দেখলেন। তারপর ডান হাতের তর্জনী দিয়ে নিজেরই কপালে একটা টোকা মেরে বললেন, “সংকেত ঠিকই, তবে কিনা কীসের সংকেত, সেটা বোজা শক্ত।”

বুঝতে আমিও পারলুম না। ছোট্ট একটুকরো কাগজ, তার মাঝ বরাবর দুটি লাইন। প্রতিটি লাইনে দুটি করে বাংলা অক্ষর। প্রথম লাইনে লেখা জচ, দ্বিতীয় লাইনে শম।

কাগজখানা শোভন চৌধুরির হাতে ফিরিয়ে দিলুম। তিনি সেটাকে ফের তাঁর অ্যাটাচি কেসে তুলে রাখলেন। তারপর কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এবারে তোমার কথায় আসি। তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে যে, বাইরের কাউকে কেন নীচ থেকেই বিদায় করতে আমি কল্যাণ রায়ের বউকে বলে দিয়েছিলুম। কেন তাঁকে বলেছিলুম যে, বাইরের লোককে তিনি কিছুতেই যেন দোতলায় উঠতে না দেন। আসলে, আজ সকালেই কল্যাণ রায়ের বাড়িটা আমরা একবার সার্চ করেছি। আমরা মানে লোকাল থানার লোক।”

কৌশিক বলল, “তারা কিছু পেয়েছে? …মানে এমন-কিছু, যাতে এই খুনের একটা সূত্ৰ মিলতে পারে?”

“না, তেমন-কিছু পায়নি। কিন্তু সার্চই কি আর ভালভাবে হয়েছে? যা হয়েছে, তা ওই ওপর-ওপর। তাই ভাবছি যে, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে একবার সার্চ করাব। আমার ধারণা…নেহাত ধারণাও নয়, স্থির বিশ্বাস…একটা থরো সার্চের ব্যবস্থা হলে ওই বাড়ির চিঠিচাপাটি কি কাগজপত্তরের ভিতর থেকে কিছু-না-কিছু ক্লু নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। ইন ফ্যাক্ট, সেই জন্যেই আমি চাইছি না যে, বাইরের কেউ ও-বাড়িতে ঢুকুক। বাইরের লোক ওখানে ঢুকুক আর একটা ক্লু পেয়ে গিয়ে সেটা গাপ করুক কি নষ্ট করে ফেলুক, তা নিশ্চয় আমরা চাইতে পারি না।”

একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন শোভন চৌধুরি। তারপর, হঠাৎই যেন জরুরি কথাটা মনে পড়ে গেছে এইভাবে বললেন, “বাই দ্য ওয়ে, তুমি ওখানে কী করে ঢুকলে? আমি নিষেধ করে দিয়েছিলুম, তা সত্ত্বেও ভদ্রমহিলা তোমাকে ঢুকতে দিলেন, এ তো বড় তাজ্জব ব্যাপার! কী করে ঢুকলে তুমি?”

কী করে ঢুকেছিল, কৌশিকের মুখে আমরা সেটা শুনেছি। ঢুকেছিল কল্যাণ রায়ের বউকে এই লোভ দেখিয়ে যে, লালবাজারের স্পেশ্যাল ফান্ড থেকে তাঁর জন্যে সে কিছু টাকা নিয়ে এসেছে। কিন্তু শোভন চৌধুরির কাছে সে-কথা বেমালুম চেপে গিয়ে সে বলল, “ওই মাসিমা-টাসিমা বলেই ঢুকে পড়লুম আর কী। তা ছাড়া, রোদ্দুরে ঘোরাঘুরি করে গলা শুকিয়ে কাঠ, তাই বললুম যে, মাসিমা, বড্ড তেষ্টা পেয়ে গেছে, একটু জল পেলে বেঁচে যাই। তা নীচে তো গুদামঘর, সেখানে জল কোথায়, অগত্যা আমাকে দোতলায় নিয়ে যেতেই হল।”

“তোমার কথার একটা বর্ণও আমি বিশ্বাস করছি না।” শোভন চৌধুরি বললেন, “তোমাকে চিনতে তো আমার বাকি নেই, নরাণাং মাতুলক্রমঃ বলে একটা কথাও আছে তো, সেটা নেহাত কথার কথা নয়, দিনে-দিনে তুমি তোমার মাতুলের মতোই সেয়ানা হয়ে উঠছ। কিন্তু প্লিজ একটা সত্যি কথা বলো, থানার লোকেরা তো ওখানে সার্চ করে কিছু পায়নি, তুমি কিছু পেলে?”

“সত্যি কিছু পাইনি।”

“অথচ আমার বিশ্বাস, কিছু যদি থাকে তো ওখানেই আছে। নইলে ভাবো, হঠাৎ ওই গলিতে এত লোকের আনাগোনা কেন? তোমার ব্যাপারটা বুঝি, তোমার মামাবাবু যে তাঁর ক্লায়েন্টের স্বার্থরক্ষার জন্যেই এই খুনের ব্যাপারটায় এত আগ্রহী হয়েছেন, সেটাও বুঝি। একই সঙ্গে এটাও আমি বিশ্বাস করি যে, তোমার মামাবাবু নিজেও এমন কিছু করবেন না বা তোমাকেও এমন কিছু করতে বলবেন না যাতে সত্যটা চাপা পড়ে কিংবা পুলিশের কাজে কোনও অসুবিধের সৃষ্টি হয়। বাট হোয়াট অ্যাবাউট দ্য আদার ম্যান?”

“আপনি কার কথা বলছেন?”

“ন্যাকামি কোরো না, কৌশিক।” শোভন চৌধুরি বললেন, “ওই যিনি একটা দামি গাড়িতে চড়ে মহেশ ঘোষাল লেনে এসে ঢুকেছিলেন, আমি যে তাঁরই কথা বলছি, তা তুমি খুব ভালই জানো। তিনি কে? সেকেন্ড বাইলেনেও ঢুকেছিলেন তিনি। কিন্তু ঢুকেই আবার সঙ্গে-সঙ্গে ওই গলি থেকে বেরিয়ে এলেন কেন? তিনিও সম্ভবত কল্যাণ রায়ের বাড়িতেই যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই আর-কেউ যে ওই বাড়িতে ঢুকেছে, সম্ভবত তা বুঝে গিয়েছিলেন বলেই তিনি আর না-এগিয়ে ফিরে যান। তাঁর গাড়িতে একটা ভুয়ো নাম্বার-প্লেট লাগানো ছিল। তার মানে তিনি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চান। কেন গোপন রাখতে চান? মতলবটা কী? এনি আইডিয়া?”

কৌশিক হেসে বলল, “প্রশ্নগুলি কি আপনি আমাকে করছেন, নাকি নিজেকে?”

“তোমাকেও না, নিজেকেও না। আমি অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে একটা পাথুরে দেওয়ালকে প্ৰশ্ন করছি।”

বলেই সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন শোভন চৌধুরি। সরাসরি ভাদুড়িমশাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “কিন্তু পাথুরে দেওয়ালকে কীভাবে কথা বলাতে হয়, তা আমি জানি!”

“তার মানে তুমি আমার ক্লায়েন্টের উপরে অকারণে একটা অভিযোগ চাপিয়ে দিয়ে আমাকে কথা বলাবার চেষ্টা করবে, এই তো?” ভাদুড়িমশাই হেসে বললেন, “তোমাদের এই কায়দাটা আমি বিলক্ষণ জানি, শোভন। কিন্তু ওতে কোনও কাজ হবে না!”

শোভন চৌধুরি দমে গেলেন না। বললেন, “অকারণ অভিযোগ নয়। ভাববেন না যে, ওই চিরকুটের সংকেত আমি ডিসাইফার করতে পারিনি। অন্তত একটা পেরেছি। ওই শম মানে তো শান্তিলতা মিত্র, তা-ই না?”

“আমি হ্যাঁ-ও বলছি না, না-ও বলছি না। কিন্তু ধরো যদি তা-ই হয়, তাতে প্রমাণটা কী হল?”

“এই প্রমাণ হল যে, নিহত মানুষটির পকেটে একটা চিরকুটে সংক্ষেপে যা লেখা ছিল, তা আসলে শান্তিলতা মিত্রের নাম। আদালতে আমরা বলব, কল্যাণ রায় খুন হবেন বলে আশঙ্কা করছিলেন বলে তাঁর সম্ভাব্য খুনির নামটা ওইভাবে সংক্ষেপে লিখে রেখেছিলেন। সেটা পরের কথা। আপাতত আমরা সন্দেহের বশেই আপনার ক্লায়েন্ট মিসেস শান্তিলতা মিত্রকে গ্রেফতার করতে পারি।”

“অবশ্যই পারো। কিন্তু সংকেত তো একটা নয়, দুটো। যেমন শম, তেমন জচ। তা একযাত্রায় পৃথক ফল হবে কেন, একজনকে অ্যারেস্ট করলে আর-একজনকেও করতে হয়। করবে না?”

শোভন চৌধুরিকে স্পষ্টতই বিব্রত দেখাল। ঘাড় চুলকে বললেন, “ওটা ডিসাইফার করতে পারিনি। জচ কে, আপনি জানেন?”

“শম যদি শান্তিলতা মিত্র হয়, তো জচ বোধহয় যুগল চৌধুরি।”

“যুগল চৌধুরি…যুগল চৌধুরি…” নামটা বার দুয়েক উচ্চারণ করে শোভন বললেন, “চেনা-চেনা ঠেকছে। অভিনয়-টভিনয় করেন?”

“না, বেহালা বাজান।”

“স্রেফ বেহালা বাজান? আর-কিছু করেন না?”

“করতেন। মিসেস মিত্র আর যুগল চৌধুরি, দুজনেই এককালে চাকরি করতেন ট্র্যাভল-স্টার কোম্পানির রবিনসন স্ট্রিটের হেড আপিসে। সে-চাকরি দুজনেই ছেড়ে দিয়েছেন।”

“যুগল চৌধুরিকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে জানেন?”

“সবই কি আমাকে জানতে হবে নাকি?” ভাদুড়িমশাই হেসে বললেন, “তুমি কিছু জানবে না?”

“ঠিক আছে, ও আমি জেনে নেবখন। কিন্তু একটা ব্যাপারে একটু ধাঁধা রয়ে গেল। যুগল চৌধুরির আক্রোনিম তো যচ হওয়া উচিত, কল্যাণ রায় তা হলে জচ লিখলেন কেন?”

“বানান জানত না বলে বর্গীয়-জ লিখেছে। অশিক্ষিতেরা অমন লিখে থাকে। কল্যাণ রায় যে একজন শিক্ষিত লোক ছিল, এমন কেন ভাবছ?”

“তা ভাবছি না। কিন্তু সাঁটে লেখা হলেও দু’জনের নাম যখন পাচ্ছি, তখন তো পুলিশের তরফে কিছু করা উচিত।”

“কী করবে?”

“দুজনকেই গ্রেপ্তার করতে পারি।”

“তা যদি করো, তা হলে ইউ উইল বি মেকিং আ ফুল অব ইয়োরসেল্ফ। খুনি সন্দেহ করে ওদের গ্রেফতার করবে তো? অথচ ওদের দুজনের একজনও কাল খুনের সময়ে মহেশ ঘোষাল লেনে ছিল না।”

শুনে শোভন চৌধুরি আবার সোফায় বসে পড়লেন। অবাক হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন ভাদুড়িমশাইয়ের দিকে। তারপর বললেন, “আর ইউ শিয়োর? নাকি এটা আপনার অনুমান মাত্ৰ?” ভাদুড়িমশাই হাসছিলেন! হাসিটাকে ধরে রেখেই বললেন, “শান্তিলতার ক্ষেত্রে অ্যাবসলুটলি শিয়োর। খুনটা কাল কখন হয়েছে?”

“ডাক্তারের রিপোর্টে বলা হয়েছে কাল রাত আটটা থেকে দশটার মধ্যে।”

“তা হলে জেনে রাখো, কাল রবিবার ওই সময়ে শান্তিলতার পক্ষে মহেশ ঘোষাল লেনে থাকা সম্ভব ছিল না। আরও স্পষ্ট করে বলি, এখন যেখানে তুমি বসে আছ, কাল রাত সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত ওই সোফাতেই বসে ছিল শান্তিলতা। একটানা বসে ছিল। মাঝখানে একবারও সে ওই সোফা ছেড়ে ওঠেনি।”

বিমূঢ় ভাবটা কেটে গিয়ে আবার খানিকটা সন্দেহ আর অবিশ্বাসের হাসি ফিরে এসেছিল শোভন চৌধুরির মুখে। বললেন, “আপনি একটা অ্যালিবাই তৈরি করলেন না তো? লোকে বলে, ক্লায়েন্টকে বাঁচাবার জন্যে হেন কাজ নেই, যা আপনি করতে পারেন না।”

“লোকে ঠিকই বলে।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “তবে তার আগে আমি নিশ্চিত হয়ে নিই যে, আমার ক্লায়েন্ট নির্দোষ। কিন্তু সে-কথা থাক। শান্তিলতা যে কাল রাত সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত এখানেই ছিল, কৌশিক ছাড়াও এঁরা দুজন, কিরণ চ্যাটুজ্যে আর সদানন্দ বসু, তা জানেন।”

সদানন্দবাবু বললেন, “দরকার হলে আদালতে দাঁড়িয়ে তা আমি বলবও।”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “সাক্ষী আরও আছে। তুমি হয়তো জানো না, দু’দুটো ডিকেটটিভ এজেন্সির গাড়ি একেবারে রাউন্ড দ্য ক্লক শান্তিলতাকে ফলো করছে। তা সেই গাড়ি দুটোর লোকেরাও জানে যে, শান্তিলতা কাল রাত সাতটা থেকে দশটা অব্দি এখানেই ছিল। দরকার হলে তাদেরও আমি সাক্ষী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেব।”

“আর যুগল চৌধুরি? সেও কি এখানে ছিল নাকি? ফ্রম সেন পি.এম. টু টেন পি. এম.?”

“না, যুগল এখানে ছিল না। তবে কিনা মহেশ ঘোষাল লেনেরও ধারে-কাছে ছিল না। গতকাল সারাটা দিন সে ছিল দুর্গাপুরে। আজ তার ফেরার কথা। তারও অতএব বেশ শক্তপোক্ত একটা অ্যালিবাই রয়েছে।”

“আপনি অনেক-কিছুই জানেন দেখছি।”

“অনেক-কিছু জানি না। অল্প-কিছু জানি। বাকিটা অনুমান করে নিই।”

একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন ভাদুড়িমশাই। তারপর সামান্য হেসে বললেন, “তবে জানোই তো, আমার অনুমান সাধারণত ভুল হয় না। আর হ্যাঁ, আমি যা করি, পুলিশের যে তাতে লাভই হয়, তাও তুমি জানো। তাই বলি যে, আমাকে আমার অনুমান-মতো কাজ করতে দাও। মাঝখান থেকে ভুলভাল লোককে অ্যারেস্ট করে একটা ঝঞ্ঝাট পাকিয়ে তুলো না। বরং আমাকে একটু সাহায্য করো। করবে?” কী জাদু ছিল ভাদুড়িমশাইয়ের কথায় জানি না। কিন্তু এটা লক্ষ করলুম যে, হঠাৎই পালটে গেছে শোভন চৌধুরির মুখচোখের চেহারা। সেই সঙ্গে কণ্ঠস্বর। দুদে পুলিশ-অফিসারের ভঙ্গিতে নয়, অতিশয় নম্র গলায় তিনি বললেন, “কী করতে হবে বলুন।”

“দুটো কাজ করতে হবে।” ভাদুড়িমশাই বললেন “প্রথমত, কল্যাণ রায়ের বাড়িটা আজ রাত্তিরের জন্যে আমাকে খালি করে দিতে হবে। ওখানে আমি আমার জনাকয় সঙ্গীকে নিয়ে রাত কাটাতে চাই। ইচ্ছে হলে তুমিও আমার সঙ্গে থাকতে পারো।”

“তা থাকব। কিন্তু কথা হচ্ছে কল্যাণের বউ আর দুই শালা তো ওখানে থাকে, তাদের সরিয়ে দেব কী করে?” একটুক্ষণ চিন্তা করে নিলেন শোভন চৌধুরি। তারপর বললেন, “ঠিক আছে। একটা কাজ তো করতেই পারি। বড়বাবুকে দিয়ে ওদের তিনজনকে থানায় ডাকিয়ে আনাব। ওদের বলা হবে যে, বড়বাবু কয়েকটা বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করতে চান। তারপর যতক্ষণ না ওই বাড়িতে আপনার কাজ শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ ওদের থানায় আটকে রাখা হবে। বাই দ্য ওয়ে, আপনি তো বললেন, ওখানে আপনি রাত কাটাতে চান। তা আপনার কাজ সারতে কি গোটা রাতই লেগে যাবে নাকি?

“তা তো এখুনি বুঝতে পারছি না।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “তল্লাশির কাজ। তাতে কতক্ষণ লাগবে, কী করে বলি! গোটা রাতও লেগে যেতে পারে। আবার এমনও সম্ভব যে, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে গেল।”

শোভন চৌধুরি একটু চিন্তিত গলায় বললেন, “মুশকিলটা কী হয়েছে জানেন, তল্লাশি শেষ করতে যদি গোটা রাতই আপনার লেগে যায়, তো ওদেরও সারা রাত থানায় আটকে রাখতে হবে।”

কৌশিক বলল, “তাতে মুশকিলটা কী হল? সারা রাত কি কাউকে আপনারা থানায় আটকে রাখেন না নাকি? আর এক্ষেত্রে তো বলতেই পারবেন যে, জেরার জন্যে আটকে রাখতে হয়েছিল। তাও ছোটখাটো ব্যাপার নয়, খুন নিয়ে জেরা। সেই জেরাও আবার একজনকে নয়, আলাদা-আলাদা করে তিনজনকে। তাতে রাত তো কাবার হয়ে যেতেই পারে।”

“বুঝলুম।” শোভন চৌধুরি বললেন, “কিন্তু সত্যিই আমি একটু চিন্তায় পড়ে যাচ্ছি। চিন্তার কারণ আর কিছুই নয়, আগে এ-সব ব্যাপার নিয়ে কেউ কোনও কথা বলত না, আজকাল বলছে। কাগজে লেখালিখি হচ্ছে। তার উপরে আবার ওই হিউম্যান রাইট্স কমিশন আছে না? সারাক্ষণ তাই সাবধানে পা ফেলতে হয়। তা ছাড়া আর-একটা ব্যাপারও ভাববার আছে।”

আমি বললুম, “কী নিয়ে?”

“যে-তিনজনকে সারা রাত থানায় আটকে রাখব, তাদের মধ্যে একজন আবার মহিলা। মানে কল্যাণ রায়ের উইডোর কথা বলছি। ছাড়া পাবার পর তিনি যদি বলে বসেন যে, রাত্তিরে কোনও পাহারাদার তাঁর সঙ্গে…ইয়ে…মানে অশালীন ব্যবহার করেছিল, তবেই তো চিত্তির। কাগজে অমনি তাই নিয়ে চেঁচামেচি শুরু হয়ে যাবে।”

সদানন্দবাবু বললেন, “কেন, ওখানকার থানায় লেডি-কনেস্টবল নেই?”

“নেই বলেই তো সমস্যা। অন্য জায়গা থেকে দু-একজনকে পাঠানো যায় ঠিকই, কিন্তু তাতেও তো সময় লেগে যাবে। এদিকে আজকে অনেক রাতও হয়ে গেছে, দশটা বাজতে চলল। তাই ভাবছিলুম যে, ব্যাপারটা একদিন পিছিয়ে দিলে ক্ষতি কী। আজ না-গিয়ে কাল রাতে ওই বাড়িতে গেলে হয় না?”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “হয়। কিন্তু তোমাকে দেখতে হবে যে, ইতিমধ্যে কেউ যেন ওই বাড়ি থেকে কোনও কাগজপত্তর সরিয়ে ফেলতে না পারে।”

শোভনের মুখ দেখে মনে হল, মস্ত একটা দুশ্চিন্তা তাঁর মাথা থেকে নেমে গেছে। বললেন, “ও নিয়ে ভাববেন না। লালবাজারে ফিরেই আমি থানার ওসি-কে ফোন করে বলে দেব, কল্যাণ রায়ের বাড়ির দরজায় তিনি যেন এখন থেকেই কড়া পাহারার ব্যবস্থা করেন। রাউন্ড দ্য ক্লক। ও-বাড়ি থেকে যে-ই বেরুবে, তাকেই যেন থরোলি সার্চ করা হয়। কেউ যেন ওখান থেকে কুটোটিও না সরিয়ে ফেলতে পারে। …আপনি তা হলে কাল কখন ও-বাড়িতে ঢুকতে চান?”

“পাড়ার লোকজন ঘুমিয়ে পড়ার পরে। এই ধরো রাত বারোটায়। আমরা খুব বেশি হলে পাঁচজন যাব। আর তুমি যদি যাও তো মোটামুটি ছ’জন।”

“ঠিক আছে।” শোভন চৌধুরি দ্বিতীয়বার তাঁর সোফা ছেড়ে উঠলেন। বললেন, “আজ তা হলে চলি।”

“দাঁড়াও।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “তোমাকে দুটো কাজ করতে হবে বলেছি। তার মধ্যে প্রথমটা হল ওই বাড়িতে ঢোকার ব্যবস্থা করা। সেটা তুমি করবে। এখন আর-একটা কাজের কথা বলব।”

“যাচ্চলে!” শোভন বসলেন না, দাঁড়িয়ে থেকেই বললেন, “ভুলে গেসলাম। তার জন্যে ক্ষমা চাইছি। এখন বলুন দ্বিতীয় কাজটা কী।”

“খুনটা যেখানে হয়েছে, তার ধারেকাছে সবগুলি লন্ড্রি আর ধোবিখানা হয়তো এত রাত্তিরে খোলা থাকবে না। যে-কটা খোলা থাকবে, তাতে আজ রাত্তিরেই খোঁজ করতে হবে। বাকিগুলিতে কাল সকালে।”

“কীসের খোঁজ?”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “একটা শার্টের কিংবা পাঞ্জাবির। খোঁজ নিতে হবে যে, কাল রাতে কিংবা আজ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে কেউ সেখানে একটা শার্ট কিংবা পাঞ্জাবি কাচতে দিয়েছে কি না।” শোভন চৌধুরির মুখ দেখে মনে হল তিনি চমকে গেছেন। পরক্ষণেই তিনি হাসলেন। পকেট থেকে সেলফোন বার করে বললেন, “ওখানে কাছাকাছি দুটো থানা আছে। দুটোতেই আমি খবর পাঠাচ্ছি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, এখুনি খোঁজ শুরু হয়ে যাবে।”