।। আঠাশ ।।
অম্বিকাচরণের মাতা কৃপাময়ী দেবী পুত্রের কথা শুনে তো একেবারে বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গেলেন কয়েকটা মুহূর্তের জন্য।
বিলেতে গিয়ে ইংরাজী শিক্ষা করবার জন্য ছেলে তাঁর ধর্মান্তর গ্রহণ করবেন। কৃপাময়ী বললেন——শুধু বিলেত যাবার জন্য তুই ধর্ম ত্যাগ করবি? তুই খেস্টান হবি?
আমি খ্রীস্টান হবই স্থির করেছি—না হলে আমি বড় হতে পারব না। বিলেত যেতে পারব না।
কৃপাময়ী বললেন—কেন রে, এ দেশে কি বড় নামকরা লোক খেস্টান না হয়েও হতে পারেনি? ওই যে সব এদেশে আছেন, কর্তা বলেন—ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দেবেন ঠাকুর, বাবু রামগোপাল ঘোষ, বাবু দিগম্বর মিত্র, প্যারীচাঁদ মিত্র—এঁরা বড় হননি? এঁদের পাণ্ডিত্য নিয়ে দেশের সকলে কি গর্ব করে না?
করুক। ওদেশ থেকে বিদ্যা অর্জন করে আনতে পারলে দেখো মা তোমার ছেলে আরো বড় হবে, তার পাণ্ডিত্যের খ্যাতি দেশের গর্ব হবে। লোকে বলবে অনাদি ঘোষালের পুত্র অম্বিকাচরণ—
তা যেতে চাস না হয় তোর ওই স্বর্গভূমি বিলেতে যা, কিন্তু তার জন্য ধর্ম খোয়াবি কেন? হিন্দুর ছেলে!
মাতা ও পুত্রের মধ্যে যখন তর্ক চলেছে আনন্দচন্দ্র এসে হাজির হল। ঘরে ঢুকে কৃপাময়ীর পদধূলি নিল আনন্দচন্দ্ৰ।
কৃপাময়ী বললেন—শুনেছো বাবা, অম্বিকা নাকি খেস্টান হবে। তোমরা ওকে একটু বুঝিয়ে বল বাবা-
আমরা বুঝিয়েছি খুড়ীমা, ও বুঝতে চায় না।
সবই আমার কপাল। চোখে আঁচল চাপা দিয়ে অদম্য অশ্রুকে রোধ করতে করতে কৃপাময়ী কক্ষ হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলেন।
দেখ অম্বিকা, আনন্দচন্দ্র বললে—সেদিন তোমার পিতাঠাকুরও আমার কাছে দুঃখ করছিলেন, আজ তোমার মাকে দেখলাম কাঁদছেন। মা-বাপের মনকে দুঃখ দিয়ে এ কাজ তুমি করো না। শুধু ওরাই নয়, তোমার সহধর্মিণীও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তুমি বলছিলে।
যা হবার তা হোক। আমি আমার মত ও পথ বদলাব না।
কিন্তু খ্রীস্টান হলে তোমার বাবা সমস্ত সম্পত্তি থেকে তোমাক বঞ্চিত করবেন বলছিলেন।
করুন। চাই না তাঁর সম্পত্তি।
কিন্তু বিলাত যেতে যে টাকার প্রয়োজন সে টাকা তুমি সংগ্রহ করবে কি করে, কোথা থেকে?
সে পরে ভেবে দেখব—
শেষটায় তোমারও দশা ওই মাইকেলের মত না হয়!
হবে না। এই আট-দশ বছরে দেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছে।
না। ওটা তোমার ভুল। শিক্ষায় সামাজিক একটা পরিবর্তন ঘটেছে বটে, কিন্তু আজও সংস্কারমুক্ত এ দেশের লোক হতে পারেনি। তার জন্য জেনো আরও অনেক অনেক বছরের দরকার।
পিতাঠাকুর মুখে যাই বলুন, আমার প্রতি তাঁর অতুলনীয় স্নেহের কথা আমার জানা। দেখো তুমি আনন্দ, আমাকে তিনি কখনোই সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। মাইকেলকেও তো তাঁর পিতাঠাকুর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ভয় দেখিয়েছিলেন প্রথমটায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করেছিলেন কি?
দেখ অম্বিকাচরণ, একটা কথা বলি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের যা সম্ভব তোমার সেটা সম্ভব নয়—
কেন নয়?
He was genious! একটা বিরাট প্রতিভা! তাঁর সেই বিরাট প্রতিভাই তাঁর প্রকৃতি ও স্বভাবকে অস্থির ও চঞ্চল করেছে, দিশেহারা করেছে। তবু তিনি মধুসূদন বলেই আজ দেশের একজন হতে পেরেছেন। তা সত্ত্বেও দেখো, এখন পর্যন্ত তাঁর সেই মিল্টনের দেশ ইংলন্ডে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এখানে বসেই তিনি নিজ প্রতিভাবলে নানান ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করে বিরাট হয়েছেন। আমাদের হিন্দু কলেজের তিনি একটি রত্ন ছিলেন। তা সত্ত্বেও বলবো-
কি?
মধুসূদন যদি ওই ভাবে ধর্মত্যাগ না করে—হিন্দু কলেজ থেকে নাম কাটিয়ে বিশপ কলেজে না ছুটে যেতেন, তিনি আরো বড় হতে পারতেন। সব চাইতে বড় কথা তিনি জীবনে শান্তি পেতেন, সুখ পেতেন
তা কি তিনি পাননি তুমি বলতে চাও আনন্দ?
না, পাননি। তাঁর অস্থির চঞ্চল প্রকৃতি তাঁকে এখনো ছুটিয়ে নিয়েই বেড়াচ্ছে। আমি হলফ করে বলতে পারি, তাঁর মনে শান্তি নেই—তৃপ্তি নেই—আনন্দ নেই। মা, বাবা ও স্ত্রীর মনে তুমি দুঃখ দিও না। বাপ-মায়ের তুমি একমাত্র সন্তান। পিতৃমাতৃঘাতী হয়ো না তুমি, সারাটা জীবন তাহলে তোমাকে দুঃখ পেতে হবে।
হিন্দুদের এই পৌত্তলিকতা আমার সহ্য হয় না, তাদের ওই যত প্রকার কুসংস্কার— বদলাবে, বদলাচ্ছে। সব ক্রমশ একদিন বদলাবে। বিলেত না গিয়ে সেই সংস্কারের ব্রতই তুমি নাও না কেন, সমাজের মধ্যে থেকে সমাজকে নতুন করে গড়বার ব্রত নাও না কেন?
তা কি সম্ভব?
কেন সম্ভব নয়? হিন্দুধর্মের ভিতর থেকে তুমি সুবিধা পাবে। হিন্দুধর্মকে ত্যাগ করে গেলে সে সুবিধা তুমি পাবে না। চল, আজ আমার সঙ্গে এক জায়গায় যাবে—
কোথায়?
ব্রাহ্মসমাজে-
সেখানে!
দেখ অম্বিকা যে খ্রীস্টধর্ম নেওয়ার জন্য তুমি উদ্গ্রীব হয়েছ, মূলত তার সঙ্গে দেখবে ব্রাহ্ম মতাবলম্বীদের কোন পার্থক্যই নেই। তাঁরাও পৌত্তলিকতা মানেন না—তাঁরা নিরাকার সত্যস্বরূপ পরমেশ্বরেরই উপাসনা করেন—তাঁদের ধর্মে ওই নিরাকার পরমেশ্বর ব্যতীত অন্য কোন দেবতার পূজা বা উপাসনা নেই
কি জানি কেন আনন্দচন্দ্রের কথার জবাব দেয় না অম্বিকাচরণ—চুপ করেই থাকে।
যাবো? চল না—
অম্বিকা কি যেন বলবার জন্য উদ্যত হয়েছিল, কিন্তু বলা হল না। অম্বিকার বাবা অনাদিচরণ ঘোষাল কক্ষমধ্যে এসে প্রবেশ করলেন।
বাবাকে ওই সময় ঘরে ঢুকতে দেখে অম্বিকাচরণ কেমন যেন একটু বিব্রতই বোধ করে। সে জানত তার খ্রীস্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছার কথাটা তার পিতৃদেবের কর্ণে প্রবেশ করেছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত পিতা ও পুত্রের মধ্যে সে সম্পর্কে কোন কথাই হয়নি সামনাসামনি।
যদিও অম্বিকাচরণ জানত পিতার মুখোমুখি তাকে শীঘ্রই একদিন দাঁড়াতে হবে! পিতা তার অত্যন্ত স্নেহপ্রবণ হলেও অসম্ভব সুকঠিন তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা—মানুষটি অত্যন্ত রাশভারী।
অনাদি ঘোষাল কক্ষে প্রবেশ করেই বললেন—শুনলাম তুমি নাকি আরো উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিলাত যেতে চাও?
অম্বিকা পিতার কথার কোন জবাব দেয় না। মাথাটা নীচু করে থাকে।
যেতে চাও সত্যি?
হ্যাঁ মানে—
ঠিক আছে, হিন্দু কলেজের শিক্ষা শেষ হলেই তোমাকে আমি বিলাত পাঠিয়ে দেব।
আপনি! বিস্ময়ে অম্বিকা পিতার মুখের দিকে তাকাল।
হ্যাঁ। পাঠিয়ে দেব।
সত্যি বলছেন বাবা?
হ্যাঁ। তোমাকে আমাকে হয়ত সমাজচ্যুত হতে হবে। তা হব—
বাবা!
কিন্তু একটা কথা—
বলুন।
ওই সব আজেবাজে কথা আর চিন্তা করবে না। ভ্রমেও মনে স্থান দেবে না।
না, আমার বিলেত যাবার ইচ্ছা—তা সে ব্যবস্থা যদি আপনিই করেন—
করব-
অম্বিকাচরণ এগিয়ে গিয়ে পিতার পদধূলি নিল। তার দু’চোখে আনন্দাশ্রু।
অনাদিচরণ কক্ষ হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলেন।
কি রে, মাথা ঠাণ্ডা হয়েছে? আনন্দচন্দ্র জিজ্ঞাসা করে।
হ্যাঁ। অম্বিকাচরণের মুখে হাসি।
চল্। ব্রাহ্মসমাজ থেকে ঘুরে আসি। যাবি?
যাব—
হ্যাঁ চল, আজ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও উপাসনার সময় থাকবেন।
আজ একটা কথা তোকে বলব আনন্দ, অম্বিকাচরণ বললে।
কি-রে-
আসলে আমি কোনদিনই খ্রীস্টধর্ম গ্রহণের জন্য ব্যাগ্র ছিলাম না। কথাটা বলে মৃদু মৃদু হাসতে থাকে অম্বিকাচরণ।
কেমন যেন এক বিস্ময়ে আনন্দচন্দ্র তাকিয়ে থাকে বন্ধুর মুখের দিকে। বলে—সে কি রে!
হ্যাঁরে আনন্দ তাই, আসল উদ্দেশ্য ছিল আমার সাগর পাড়ি দেবার–বিলেত যাবার। হাবভাবে সে কথাটা একবার বাবাকে বলেছিলামও-
তারপর?
কিন্তু বাবা—জানিস তো মনে মনে একজন গোঁড়া ব্রাহ্মণ, বাইরে যতই সাহেবী- আনা দেখান না কেন—তা ছাড়া আমি বুঝেছিলাম, বাবা প্রাণ থাকতে তাঁর একমাত্র পুত্রকে সাগরপাড়ি দিয়ে ম্লেচ্ছের দেশ ইংলন্ডে যেতে দিতে সম্মত হতেন না। অনেক ভেবে তাই এই পথটি আমি নিয়েছিলাম, যদি এতে করে বাবার মন ফেরাতে পারি। Now I am successful my mission is fulfilled. He has agreed. ছেলে খ্রীস্টান হয়ে যাবে—তিনি তাই অনন্যোপায় হয়েই সম্মতি দিলেন। কেমন চালটি চেলেছিলাম, বল্ তো!
আনন্দচন্দ্রের বিস্ময়ের ঘোর তখনো কাটেনি। সে বললে—ধন্যি ছেলে তুই অম্বিকা!
বিলেত—ইংলন্ড যাবো আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আনন্দ! মিল্টন, সেক্সপীয়ারের দেশ—my country of dream! সবাই ভয় খেয়ে গিয়েছিল দেখলি তো–বাবা, মা, বেচারী সুধাময়ী—সে তো আমার সংকল্পের কথা শোনা অবধি প্রায় আধখানা হয়ে গিয়েছে।
সত্যি রে অম্বিকাচরণ, আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি তোর মনে মনে এই ছিল—
তা তুইও তো বিশ্বাস করেছিলি—
করব না! তা ছাড়া অবিশ্বাস করব কেমন করেই বা বল্?
ইতিমধ্যে সংবাদটা বোধ হয় অনাদিচরণ অন্দরে গিয়ে তাঁর স্ত্রী কৃপাময়ীকে বলেছিলেন। অম্বিকাজননী কৃপাময়ী এসে কক্ষে প্রবেশ করলেন—হ্যাঁরে খোকা, কত্তা বলছিলেন তুই নাকি খেস্টান আর হবি না বলেছিস?
হ্যাঁ মা, তবে আমি বিলেত যাচ্ছি—বাবা সম্মতি দিয়েছেন।
ঠাকুর তোর মঙ্গল করুন।
তুমি খুশী হয়েছো তো মা?
হ্যাঁ বাবা—বামুনের ছেলে খেস্টান হবি—এ যে ভাবাও পাপ।
আনন্দচন্দ্র বলতে যাচ্ছিল অম্বিকাচরণের জননীকে সত্য কথাটা, কিন্তু চোখ ইশারায় নিষেধ করে দিল বন্ধুকে অম্বিকাচরণ।
আনন্দ, আজ এখানেই আহার করে যেও বাবা, আমি মায়ের মন্দিরে পুজো পাঠাচ্ছি।
না খুড়ীমা, আজ নয়, আর একদিন এসে খাব। আজ এক জায়গায় আমরা যাচ্ছি। আনন্দ বললে।
কোথায় আবার যাবে?
যাচ্ছি এক জায়গায় ধর্ম আলোচনা শুনতে। আনন্দচন্দ্র বললে।
কৃপাময়ী আর অনুরোধ করলেন না, কক্ষ হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলেন।
দুই বন্ধুতে তখন ব্রাহ্মসমাজের উদ্দেশে বের হয়ে পড়ল।
.
পথে বের হয়ে পথ চলতে চলতে এক সময় আনন্দচন্দ্র বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে— অম্বিকা, তুমি অক্ষয় দত্ত মশাইয়ের নাম নিশ্চয় শুনেছ?
শুনেছি বৈকি! তাঁর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাও দেখেছি। অম্বিকাচরণ বললে।
জান কি একটা কথা?
কি?
যে ব্রাহ্মসমাজে আমরা যাচ্ছি, সেই সমাজের ধর্ম আগে বেদান্ত ধর্ম ছিল?
জানব না কেন, জানি। অক্ষয়কুমার দত্ত মশাই তো প্রতিবাদ তোলেন সর্বপ্রথম। আর এও জানি আমাদের দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরমশাই শেষ পর্যন্ত বহু অনুসন্ধান ও চিন্তার পর অক্ষয়বাবুর অবলম্বিত পথই যুক্তিসিদ্ধ বুঝে বেদান্তবাদ ও বেদের অভ্রান্ততা বাদ দিয়েছেন। তারপরই একটু থেমে অম্বিকাচরণ বললে—আচ্ছা আনন্দ, গত বছর সেই যে সমাজে উপাসনার সময় হঠাৎ অক্ষয়বাবু মূর্ছিত হয়ে পড়ে যান, তা এখন তিনি কেমন আছেন জান কিছু?
তুমি তো দেখছি ব্ৰাহ্মসমাজের আসল খবরাখবরই রাখ অম্বিকাচরণ—
রাখি। আগে দুচারবার সেখানে আমি গিয়েছিও।
সত্যি?
হ্যাঁ-
অক্ষয়বাবু কোথায় আর সুস্থ হলেন! তাঁর যে সমস্ত উদার আধ্যাত্মিক একেশ্বরবাদ—তত্ত্ববোধিনীর পৃষ্ঠায় আর তো সে সব বের হতে দেখা যায় না। লিখতে পারেন না বোধহয় আজকাল আর।
কিন্তু আমি শুনেছিলাম—আমাদের যদুনাথকে তুমি চেনো?
কোন্ যদুনাথ?
আমাদের বেদান্তবাগীশের ছেলে। সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়ন করে, বোধহয় অলংকার ও সাহিত্য নিয়ে, বর্তমানে আমাদের পাড়াতেই থাকে—
তাই নাকি? হ্যাঁ। ছেলেটি যেমন মেধাবী—তেমনি জ্ঞানী—একদিন আলাপ করিয়ে দেব তোমার সঙ্গে। তার কাছেই শুনছিলাম—
কি?
জীবস্মৃত অবস্থাতেও তিনি এক পাণ্ডিত্যপূর্ণ মহাগ্রন্থ রচনায় ব্যাপৃত আছেন।
কি গ্রন্থ?
ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়ের ব্যাপার নিয়ে বিরাট এক গ্রন্থ রচনা করছেন তিনি।
লিখতে পারেন তাহলে এখনো?
না—মুখে তিনি বলে যান এবং অন্য একজন পাশে বসে লিখে যায়। আশ্চর্য!
.
ব্রাহ্মসমাজে তখন উপাসনা চলছিল।
আচার্য বেদীর উপর বসে এবং একজন তরুণ বক্তা সুমিষ্ট স্বরে বক্তৃতা দিচ্ছেন। শ্রোতৃমণ্ডলী গভীর মনোযোগ সহকারে সেই বক্তৃতা শুনছেন।
ওরা দুজনে কক্ষমধ্যে প্রবেশ করে এক পার্শ্বে উপবেশন করল। অম্বিকাচরণ ফিসফিস করে বন্ধুকে শুধাল—ঐ যে বক্তৃতা করছেন, উনি কে আনন্দ?
চেনো না? উনিই তো কেশবচন্দ্র সেন।
উনিই কেশব সেন মশাই!
হ্যাঁ।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখছি না তো আনন্দ, তিনি কি আসেন না আজকাল?
তিনি তো শহরে নেই।
নেই?
না। একান্তে ধ্যান-ধারণা করবার জন্য শুনেছি সিমলা পাহাড় গিয়েছেন। কেশবচন্দ্র সেন তো তাঁর অনুপস্থিতিতেই ব্রাহ্মসমাজের প্রতিজ্ঞাপত্র স্বাক্ষর করে ব্রাহ্মসমাজের সভ্যশ্রেণীভুক্ত হয়েছেন।
আচ্ছা, ওই যে বেদীর এক পাশে দীর্ঘকায় সুশ্রী যুবকটি—ও কে?
উনি তো দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যম পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর–কেশবচন্দ্র সেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু
আনন্দ—
কি?
তুমি বুঝি এখানে প্রায়ই আস?
হ্যাঁ।