মধুমতী থেকে ভাগীরথী – ১৮

॥ আঠারো ॥

রাধারমণের মুখের দিকে তাকিয়ে জলদবালা মৃদু হাসল।

রাধারমণ জলদবালার মুখের দিকে তাকালেন কিছু বলবার জন্যই, কিন্তু বলতে পারলেন না। জলদবালা তাঁরই মুখের দিকে তখনো তাকিয়ে আছে দীর্ঘায়ত দুটি চক্ষু নিয়ে।

দেওয়ালের সেজবাতির আলো জলদবালার মুখের উপর পড়ায় তার মুখখানি বেশ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।

পরস্পর পরস্পরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে নিঃশব্দে। তারপর হঠাৎই যেন জলদবালা তার দু চোখের দৃষ্টি ভূমিতলে নিবদ্ধ করে। সিক্ত কেশের কয়েকগাছি কপাল বেয়ে কিছুটা বিশৃঙ্খল ভাবে নেমে এসেছে।

জলদবালা নিঃশব্দে উঠে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

দুর্গাপূজার আর বেশী দেরি নেই। মল্লিকবাড়ির নাটমন্দিরের এক পাশে লক্ষ্মণ পাল প্রতিমা গড়ার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। দু’ একদিনের মধ্যেই রংয়ের কাজ বোধ করি শুরু করবে। আজই এখানে আসার সময় নাটমন্দির অতিক্রম করে আসতে আসতে প্রায় সমাপ্ত প্রতিমার দিকে রাধারমণ মল্লিকের নজর পড়েছিল একবার।

লক্ষ্মণ পালের হাতের কাজ বড় সুন্দর। নিখুঁত প্রতিমার গড়ন হয় তার হাতের কৌশলে। তার হাতে গড়া মাটির প্রতিমায় রঙ পড়লে যেন একেবারে জীবন্ত হয়ে ওঠে। মৃন্ময়ী মা দশভূজা যেন সাক্ষাৎ চিন্ময়ী মা দশভূজায় পরিণত হয়।

সেই দশভূজার মুখখানিই যেন রাধারমণের মানসলোকে ভেসে ওঠে। ওই যে মেয়েটি এইমাত্র চলে গেল ঘর থেকে, যে এতদিন জানকী দত্তর রক্ষিতা ছিল, সমাজের মধ্যে যার কোন স্থান নেই –তার মুখের দিকে তাকালে কেন মনে হয় রাধারমণের, সেই মুখের কোথাও কোন পাপের চিহ্নমাত্রও নেই। কোন পাপ কোন অন্যায়ই যেন ওকে স্পর্শ করতে পারে না।

রূপের মোহে রাধারমণ মল্লিকের দুটি চক্ষু তখন ধাঁধিয়ে গিয়েছে। অন্যায় জেনেও বুকের মধ্যে তখন তার কি এক পুলকের ঢেউ উঠছে থেকে থেকে।

একবারও রাধারমণ মল্লিকের মনে হল না, জলদবালা একজনের রক্ষিতা ছিল, চরিত্রহীনা এক মেয়েমানুষ সে।

কলকেতে তামাক ভরে টিকেয় আগুন দিয়ে ফুঁ দিতে দিতে জলদবালা একটু পরে ঘরের মধ্যে এসে প্রবেশ করল। মধ্যে মধ্যে প্রজ্বলিত কলকের আগুনের রক্তাভা জলদবালার চোখেমুখে ছড়িয়ে পড়ছে। দত্ত মশাইয়ের জন্য তামুকের সব সরঞ্জাম গৃহমধ্যে সর্বদা প্রস্তুতই থাকত। কলকেতে তাই তামুক সেজে আনতে জলদবালার কোন অসুবিধে হয়নি।

ঘরের এক কোণে একটি জলচৌকির উপরে গড়গড়াটি বসানো ছিল। গড়গড়ার মাথায় কলকেটি বসিয়ে গড়গড়ার নলটি সযত্নে জলদবালা রাধারমণ মল্লিকের হাতে তুলে দিল।

কোনরকম আর প্রতিবাদ না করে জলদবালার হাত থেকে গড়গড়ার নলটি নিয়ে প্রসন্ন দৃষ্টিতে রাধারমণ নলটি মুখে তুলে নিলেন।

তামুক সেবন করতে লাগলেন রাধারমণ। জলদবালা অদূরে মাটিতে বসে রাধারমণের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

কিছুক্ষণ পরে জলদবালা কথা বললে, আমাকে তাহলে এবারে কোন তীর্থস্থানে পাঠাবার ব্যবস্থা করুন দয়া করে মল্লিক মশাই।

তীর্থস্থানে!

হ্যাঁ। তা না হলে একা-একা এখানে থাকব কি করে?

কিন্তু তুমি তো একা-একাই এ বাড়িতে থাকতে জলদ। রাধারমণ বললেন।

হ্যাঁ, তবে মাথার ওপরে দত্তমশাই অভিভাবক ছিলেন। এখন আমাকে আর কে দেখবে!

কেন, আমি তো আছি।

আপনি!

হ্যাঁ, কেন? আমার উপরে তুমি ভরসা করতে পারছ না? তা ছাড়া আমি যতদূর জানি, এ বাড়িটা তো জানকী তোমার নামেই লেখাপড়া করে দিয়ে গিয়েছে।

তা দিয়ে গিয়েছেন। অত্যন্ত স্নেহ করতেন দত্ত মশাই এই হতভাগীকে। কিন্তু আপনিই বলুন, বাড়িঘর দিয়ে আমি কি করব!

বিষয়-সম্পত্তি মানুষ করে কেন? ভাল নিশ্চিন্ত ভাবে জীবন কাটাবার জন্যই তো। তুমি কিছু ভেবো না জলদ, আমি যতক্ষণ আছি, তোমার কোন চিন্তা নেই।

জলদবালার দু’ চোখের কোণ বেয়ে অশ্রুর ধারা নামে।

কাঁদছ কেন জলদ! রাধারমণ শুধালেন। কথাগুলো বলে রাধারমণের ইচ্ছা হয় উঠে গিয়ে জলদবালার চোখের অশ্রু মুছিয়ে দেন, কিন্তু কেমন যেন একটা সঙ্কোচ বোধ করেন।

জলদ নিজেই এক সময় পরিধেয় শাড়ির অঞ্চল-প্রান্ত দিয়ে চোখের অশ্রু মুছে নিল। রাত ক্রমশ বাড়তে থাকে। ঘরের মধ্যে একজন চৌকির উপরে, অন্যজন ভূমিতলে অল্প ব্যবধানে বসে থাকে। কারো মুখেই কোন কথা নেই।

কোথায় যেন পেটা ঘড়িতে ঢং ঢং করে রাত্রি দশটা ঘোষণা করল।

রাত অনেক হল মল্লিকমশাই, এবার বাড়ি যাবেন না?

হ্যাঁ, হ্যাঁ—যাব। যেতে হবে বৈকি। যাও তুমি আহারাদি সেরে নাও, তারপর আমি যাব।

রাত্রে আমি বিশেষ কিছু আহার করি না, সামান্য দুধখই খাই।

কেন? প্রশ্নটা করে রাধারমণ জলদবালার মুখের দিকে তাকালেন।

আমার অনেক দিনের অভ্যাস। সেই অল্পবয়সে বিধবা হবার পর থেকে—

তোমার বিয়ে হয়েছিল নাকি?

হ্যাঁ, নয় বৎসর বয়সে! আর আমার যখন তেরো বৎসর—মানে চার বৎসরের মধ্যেই স্বামী মারা গেলেন।

তারপর?

আমার শ্বশুরবাড়ি ছিল মূলাজোড়ে। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারে নানা দিক থেকে অভাব দেখা দিল। একমাত্র রোজগেরে মানুষ ছিলেন তো আমার স্বামী, শ্বশুরঠাকুর নানা ব্যাধিতে ভুগে ভুগে অত্যন্ত রুগ্‌ন ছিলেন। কাজকর্মের ক্ষমতা ছিল না—আমাকে নিয়ে শ্বশুরমশাই কোনমতে এই কলকাতা শহরে এসে দত্ত মশাইয়ের পায়ে আশ্রয় ভিক্ষা করলেন। গাঁয়ের তো উনিই জমিদার ছিলেন।

জানকী দত্ত তোমাদের আশ্রয় দিল বুঝি!

হ্যাঁ। এই বাড়িতেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করলেন।

এই বাড়িতে?

হ্যাঁ। তারপর?

এখানে এসে সেই যে শ্বশুরমশাই বিছানা নিলেন, আর উঠলেন না। বৎসর দুয়েক তারপর বেঁচে ছিলেন। দত্ত মশাই প্রায়ই আসতেন আমাদের খোঁজখবর নিতে। তা শ্বশুরমশাইয়ের মৃত্যুর পর আমাকে কাঁদতে দেখে দত্ত মশাই বললেন, কাঁদছ কেন জলদ, আমি তো আছি। তাঁর ঋণ আমি কি কোনদিন শোধ করতে পারব!

প্রথম প্রথম কেউ কোন কথা বলেনি। বৈকালের দিকে আসতেন, সন্ধ্যারাতে চলে যেতেন। মধ্যে মধ্যে ফিরতে মধ্যরাত হয়ে যেত। তাঁর সংসারে অশান্তি শুরু হল। কিন্তু তিনি এতটুকু বিচলিতও হননি। শেষটায় আপনিও জানেন, এই অভাগীর জন্য সংসারই ত্যাগ করলেন। সে দুঃখ আমার কোনদিনই যাবে না মল্লিক মশাই যে শেষ পর্যন্ত তিনি এই গৃহেই শেষ নিঃশ্বাস নিলেন।

গৃহে প্রত্যাবর্তন করতে সে রাত্রে রাধারমণ মল্লিকের মধ্যরাত্রিও উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কেবল সেই রাত্রিই নয়, তারপর প্রতি রাত্রেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে লাগল।

আর কারোর সেদিকে দৃষ্টি না পড়লেও রাধারমণ মল্লিকের স্ত্রী অন্নপূর্ণার সেদিকে দৃষ্টি পড়েছিল। প্রথমটায় অন্নপূর্ণা বিশেষ কিছু মনে করেনি। কোন বিশেষ কাজ হয়ত পড়েছে, তাই ফিরতে রাত্রে দেরি হচ্ছে ক’দিন। কিন্তু পরপর ক’দিনই রাত্রে গৃহে প্রত্যাবর্তন করে আহার না করায় প্রতি রাত্রেই জিজ্ঞাসা করেছে অন্নপূর্ণা, খাবে না।

না। জবাব দিয়েছেন রাধারমণ।

খাবে না কেন?

ক্ষিদে নেই।

শরীর খারাপ হয়নি তো?

না, না—শরীর ভালই আছে। কোনমতে যেন স্ত্রীর প্রশ্নোত্তর এড়িয়ে পালিয়ে বেঁচেছেন রাধারমণ মল্লিক।

সত্যি কথা বলতে কি, রাধারমণ যেন ওই সতীসাধ্বী স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাতে পারেননি। কেমন যেন একটা কুণ্ঠা ও লজ্জা তাঁকে পীড়ন করেছে।

কিন্তু চতুর্থ দিনেও প্রায় মধ্যরাত্র পার করে গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর দেখতে পেলেন, স্ত্রী অন্নপূর্ণা প্রতি রাত্রের মত তখনো জেগেই আছে স্বামীর অপেক্ষায়। অন্নপূর্ণা

যখন প্রশ্ন করল, এত রাত হল যে?

রাধারমণ কেমন যেন একটু বেশী রকমই বিব্রত বোধ করেন নিজেকে। কোনমতে আমতা আমতা করে জবাব দেন, মানে এই একটু কাজে—

কি এমন কাজ পড়ল তোমার যে প্রতি রাত্রেই দেখছি, আজ ক’দিন ধরে এত রাত করে বাড়ি ফিরছ!

রাধারমণ তাকালেন এবারে স্ত্রীর মুখের দিকে। অন্নপূর্ণার চক্ষু দুটি তাঁর মুখের প্রতি স্থিরনিবদ্ধ।

আজ চারদিন রাত্রে ঘরে ফিরে কোন কিছু আহার পর্যন্ত করছ না!

তা, ক্ষুধা না থাকলে—

তাই, না রাত্রে কোথাও থেকে আহার করে আস?

কোথা থেকে আবার আহার করব!

সে তুমিই জান।

আমি অত্যন্ত পরিশ্রান্ত বড়বৌ।

আজও কি তাহলে আহার করবে না?

না, তুমি আহার শেষ করে এস। কথাগুলো বলে রাধারমণ গামছাটা কাঁধে ফেলে ঘরের বাইরে চলে গেলেন।

অন্নপূর্ণা কিছুক্ষণ প্রস্তর-প্রতিমার মত দাঁড়িয়ে থেকে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। যেতে যেতে দেখল অন্নপূর্ণা, তার স্বামী দাওয়ার একধারে বসে গাড়ুর জলে হাতমুখ ধুচ্ছেন।

অন্নপূর্ণা সোজা রন্ধনশালার দিকে গেল।

মঙ্গলা রান্নাঘরেই এক পাশে আঁচল পেতে মেঝেতে শুয়েছিল। বাড়ির কর্তা এখনো ফেরেননি। কর্তা ও গিন্নীর কারো আহার হয়নি। যদিও আজ ক’দিন থেকে কর্তা অধিক রাত্রে গৃহে প্রত্যাবর্তন করে আহার করছেন না, সেই সঙ্গে অন্নপূর্ণাও আহার করছে না।

মঙ্গলা অতশত বোঝেনি। দুজনের একজনও যে রাত্রে আহার করছে না, সে ব্যাপারে কোন মাথাই ঘামায়নি মঙ্গলা।

অধিক রাত্রে আজ ক’দিন থেকেই মঙ্গলাকে ডেকে তুলে অন্নপূর্ণা বলেছে, মঙ্গলাদিদি, তুমি এবারে শুয়ে পড় গে।

কর্তাবাবু ফেরেননি? ফিরেছেন।

আহার করবেন না?

না।

তা তুমি?

আমার ক্ষুধা নেই। কথাটা বলে অন্নপূর্ণা আর দাঁড়ায়নি, চলে গিয়েছে। আজও অন্নপূর্ণা এসে রন্ধনশালায় মঙ্গলাকে ডেকে তুলল, মঙ্গলাদিদি!

মঙ্গলার খুব পাতলা ঘুম। এক ডাকেই উঠে বসল। বললে, কর্তা ফিরেছেন? হ্যাঁ।

গরম করি সব?

না, তুমি যাও—গিয়ে শুয়ে পড়।

তা তুমিও কি আজ কিছু খাবে না?

না।

এয়োস্ত্রী মানুষ রোজ রোজ রাত্রে উপবাস দিচ্ছ!

যা বললাম তাই কর, যাও শুয়ে পড় গে। অন্নপূর্ণা আর দাঁড়াল না, ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেল।

বাড়ির মধ্যে আর একটি মানুষ ব্যাপারটা তৃতীয় দিনই জানতে পেরেছিল, তৃতীয় রাত্রে যখন গত দু-রাত্রির মতো গৃহে প্রত্যাগমন করে অন্নপূর্ণার প্রশ্নোত্তরে রাধারমণ বলেছিলেন, কিছু খাবেন না, ক্ষিধে নেই!

সে সুহাসিনী। রাধারমণের কন্যা।

তার পরদিন সকালে এক সময় সুহাসিনী মঙ্গলাকেই প্রশ্ন করে, মঙ্গলাদিদি, রাত্রে কি বাবা আহার করেননি?

না। শুধু কর্তা কেন, গিন্নীও তো আজ তিন-রাত্রি উপবাস দিচ্ছেন!

সে কি? মাও রাত্রে কিছু খায় না?

না, তিন-রাত্রি উপবাস করছেন।

মাকে কোন প্রশ্ন করতে সুহাসিনীর সাহস হয়নি। মাকে সে বরাবরই একটু ভয় করে।

পরের রাত্রে সে সজাগই ছিল। পাশের ঘরেই তো সুহাসিনী শয়ন করে, পিতা যে গৃহে ফিরেছেন তা সে টের পেয়েছিল। বাপ আর মায়ের মধ্যে যে সব কথাবার্তা হয় তাও সে রাত্রে তার জানা হয়ে গিয়েছিল। মা ঘর থেকে বের হয়ে যাবার পর সুহাসিনী এসে মায়ের শয়নকক্ষে প্রবেশ করলো।

একটু পুরেই রাধারমণ এসে কক্ষে প্রবেশ করলেন। অত রাত্রে কন্যা সুহাসিনীকে ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাধারমণ একটু বিস্মিতই হলেন। বললেন, এ কি মা, এত রাত্রে তুই?

বাবা!

কি রে?

আপনি আজও কিছু খাবেন না?

ক্ষুধা নেই মা—

আপনি রাত্রে আজ ক’দিন ফিরে এসে কিছু আহার করছেন না, মাও উপবাসী থাকে।

সে কি? কেন? বড়বৌ উপোস করে কেন?

আপনি না খেলে মা তো কোনদিনই আহার করে না।

ছিঃ ছিঃ, এ বড় অন্যায়। দেখ্‌ তো—

আপনার কি শরীর অসুস্থ, বাবা?

না মা, ঠিক তা নয় –

তবে?

এত রাত্রে ফিরে আর কিছু আহার করতে ইচ্ছা করে না।

কিন্তু আগেও এমন কত রাতই বিলম্ব করে গৃহে ফিরে আহার করেছেন!

হঠাৎ ওই সময় মেয়ে ও বাপ অন্নপূর্ণার কণ্ঠস্বর শুনে দরজার দিকে ঘুরে তাকাল। অন্নপূর্ণা বললে, সুহাস, তুই এখনো জেগে?

না মা, বাবাকে একটা কথা বলতে এসেছিলাম।

তা এত রাত্রে মানুষটা খেটেখুটে এসেছে, কাল সকালে বললে চলত না তোর কথা? যা শোগে যা!

সুহাসিনী ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

বড়বৌ! রাধারমণ ডাকলেন।

অন্নপূর্ণা স্বামীর মুখের দিকে তাকাল।

খাওয়া হয়েছে তোমার?

রাত অনেক হয়েছে, এবার শুয়ে পড়। অন্নপূর্ণা বললে।

তুমি আজ ক’রাত্রি উপবাসী থাকছ!

কে বললে?

যেই বলুক, কথাটা সত্য কিনা!

একটা কথার জবাব দেবে?

কি কথা?

আজ ক’দিন ধরেই এত রাত হয় কেন তোমার ফিরতে? সত্যি জবাব দাও।

জানকীর সব কিছু দেখাশোনা করতে হচ্ছে—

সে তো দিনের বেলাও হতে পারে। অন্নপূর্ণার গলার স্বর শান্ত।

তা হতে পারে, কিন্তু রাত্রে করলেই বা তোমার আপত্তিটা কিসে?

দেখ, কোন দিন কখনো তোমাকে প্রশ্ন করিনি—

তা আজই বা করছ কেন? কেউ কিছু বলেছে?

না।

তবে?

থাক, আমি জবাব চাই না।