মধুমতী থেকে ভাগীরথী – ১১

॥ এগারো ॥

সুহাসিনী আবার বললে—কি গো আনন্দদাদা, আমার মুখের দিকে অমন করে চেয়ে আছ কেন?

আনন্দচন্দ্র সুহাসিনীর ওই অতর্কিত প্রশ্নের কি জবাব দেবে তখনো বুঝে উঠতে পারছে না। অন্নদাসুন্দরী সুন্দর, কিন্তু সুহাসিনীও তো কম সুন্দর নয়। তাছাড়া অন্নদাসুন্দরীর মধ্যে যে সহজ সরলতাটুকু আছে, যা তার সৌন্দর্যের উপরে একটা যেন স্নিগ্ধতা এনে দিয়েছে; সুহাসিনীর যেন সেটা নেই।—ওই মুহূর্তে মনে হয় আনন্দচন্দ্রের

সুহাসিনীও সরল, কিন্তু তার মধ্যে যেন একটা অকালপক্বতার প্রগল্ভতা আছে। হয়ত সে প্রগল্ভতা তার কিছুটা বেশী বয়সের দরুণ।

সুন্দর, দুজনেই সুন্দর। তবু কথাটা যেন আনন্দচন্দ্রের মুখ দিয়ে বের হয় না।

সুহাসিনী আবার বললে—বোবা হয়ে গেলে নাকি গো আনন্দদাদা। বল না গো, কে বেশী সুন্দর? তোমার বৌ না আমি? মন-রাখা কথা বললে চলবে না? সত্যি তোমার মনের কথাটাই কিন্তু আমি শুনতে চাই।

এতক্ষণে আনন্দচন্দ্রের ওষ্ঠপ্রান্তে একটা হাসির রেখা জেগে ওঠে। সে বললে-কি হবে তোমার সে কথা জেনে, সুহাস?

বাঃ, কি হবে কি! জানতে ইচ্ছা করে না বুঝি!

কি জানতে ইচ্ছা করে?

তোমার বৌ বেশী সুন্দর, না আমি বেশী সুন্দর

সে কথা জেনে তোমার কি লাভ হবে শুনি? কতকটা যেন কৌতুকের সঙ্গেই কথাগুলো এবারে বললে আনন্দচন্দ্ৰ।

সুহাসিনী ততক্ষণে বাঁধানো দীঘির চত্বরের উপর বসে পড়েছে। মাথাটা এদিক ওদিক মৃদু মৃদু দোলাতে দোলাতে বললে—হুঁঃ, বুঝেছি।

কি বুঝেছ?

নিশ্চয়ই তোমার বৌ সুন্দর, খুব সুন্দর! তা না হলে-

কি?

বিয়ে করতে গিয়ে এত দিন সেখানে থেকে এলে!

সে তো অন্য কারণও হতে পারে, সুহাস!

হুঁ, তা এবারে কি করবে?

কি করব মানে? সকৌতুকে প্রশ্ন করে সুহাসিনীর মুখের দিকে তাকায় আনন্দচন্দ্ৰ।

মানে বলছিলাম, এবারে তো তাহলে দেশেই ফিরে যাবে?

দেশে ফিরে যাব মানে!

ভারিক্কী গিন্নীর মত মাথা দোলাতে দোলাতে সুহাসিনী বললে—এখানে আর পড়াশুনায় কি মন তোমার বসবে?

মন বসবে না কেন?

সুন্দরী বৌ দেশে রইল আর তুমি রইলে এখানে –

তাতে কি হল?

খালি মনটা তোমার পালাই পালাই করবে।

আনন্দচন্দ্র কিশোরী সুহাসিনীর পাকা কথায় হেসে ওঠে।

হাসলে কি হবে, আমি জানি। বাবাও তো তাই বলছিল।

কি বলছিলেন মল্লিক জ্যাঠা?

বুড়ীর মত বললে সুহাসিনী—ভারতচন্দ্র এত অল্প বয়েসে ছেলের বিয়ে দিল—

তা আমার বয়েসে তো অনেকেই বিয়ে করে। চিরদিন করেও এসেছে।

সে তো কোন্ আদ্যিকালের কথা। আজকাল সে-রকমটা আর হয় নাকি?

যেন কত আদ্যিকালের বুড়ী সুহাসিনী, এমনি ভাবে কথা বলতে থাকে—তা  আনন্দদাদা—

কি?

বৌয়ের তোমার বয়স কত?

এই এক কুড়ি হবে আর কি।

ধ্যাৎ!

ধ্যাৎ কেন? হতে পারে না?

সে তো বুড়ী!

তা বুড়ীর সঙ্গে তো বিয়ে হতে পারে।

না। তাতে ভাল হয় না।

কি হয় না?

বয়স একজনের চাইতে অন্যজনের বেশী তফাৎ হওয়া ভাল নয়।

বুঝতে পারেনি আনন্দচন্দ্র প্রসঙ্গটা কোন্ খাতে বইছে। তাই প্রশ্ন করে—ভাল নয় কি করে বুঝলে?

এই আমারই—সবাই বলে দেখ না। বড় ছিল বলেই তো আমার বর অমন হুট করে মরে গেল। আমি আর এখন সংসারের কোন্ কাজটিতে লাগব বল!

ছিঃ ওসব কথা বলে না, ভাবতে নেই ওসব কথা।

আচ্ছা আনন্দদাদা, আমার কান্না না আসলে আমি কি করতে পারি বল! মা কাঁদে আর বলে, মুখপুড়ী, সব খেয়ে বসে আছিস এ বয়েসে, তবু রঙ্গ-মস্করা যায় না। হি হি করে হাসি যায় না। কর্তার যেমন ভীমরতিতে ধরেছে। বিধবা মেয়ে, তাকে পাড়অলা শাড়ি পরাচ্ছেন, গায়ে গহনা। কিন্তু বল তুমি, আমার দোষ কি! তার কথা তো একবারও আমার মনে হয় না।

আচ্ছা সুহাস, চৌধুরী মশাইয়ের কথা কি কিছুই মনে পড়ে না তোমার?

না।

একেবারেই মনে পড়ে না? কখনও মনে পড়ে না?

সুহাসিনী জবাব দেয় না। চুপ করে থাকে।

মনে কি পড়ে না আর! যথেষ্ট মনে পড়ে। ছয়-আট মাসের শ্বশুরঘরের স্মৃতি। মস্ত বড় ঘরটার এক কোণে একটা পালঙ্কের উপর একটা লোক শুয়ে সর্বক্ষণ। পেটটা একটা জয়ঢাকের মত, সরু সরু প্যাকাটির মত চর্মসার হাতপাগুলো। কোটরগত চক্ষু, ছোট ছোট কাঁচাপাকা চুল।

তার সেই কোটরগত দু’চোখের দৃষ্টি যেন আজও ভুলতে পারেনি সুহাসিনী। কখনও সে ঘরে ঢুকলে কেমন যেন লোভীর দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে থাকত ওর দিকে। মনে হত তার, চোখের দৃষ্টি তো নয়, যেন সেই দীঘির পাড়ে যে কালকেউটে ধরা পড়েছিল, তার সরু জিহ্বার মত হিলহিল করছে, এখনি বুঝি ছোবল হানবে।

গায়ের মধ্যে যেন শিরশির করে উঠেছে সুহাসিনীর, সে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে পালিয়ে এসেছে।

কিন্তু একদিন মানুষটা তার একটা হাত চেপে ধরেছিল হঠাৎ কিছু বুঝবার আগেই। লোহার মত কঠিন শক্ত বাঁকানো শীর্ণ হাড়সর্বস্ব আঙুলগুলো দিয়ে তার কবজিটা চেপে ধরে সামনের দিকে টেনে নিয়েছিল তাকে এক হ্যাঁচকা টানে। সামলাতে না পেরে সুহাসিনী আচকা একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল স্বামীর বুকের উপরে।

বৌ! তুমি আমার বৌ!

ছাড়ুন, ছাড়ুন। অসহ্য যন্ত্রণায় বিকৃত গলায় যেন ককিয়ে উঠেছিল সুহাসিনী। আরে—আরে মুখপুড়ী, অমন করিস কেন? এই—এই—

না। না—না—

একটা চিলের নখরের তলায় পড়ে একটা অসহায় চড়ুইপাখি যেমন ছট্‌ফট করে, তেমনি ছটফট করতে থাকে সুহাসিনী, কিন্তু নিজেকে মুক্ত করতে পারে না। মানুষটা যেন তাকে বুকের উপর জাপটে ধরে পিষে ফেলেছে।

দম বন্ধ হয়ে আসে, কেঁদে ওঠে সুহাসিনী–-এ কি করছেন! কি করছেন? ছাড়ুন, যেতে দিন আমাকে। যেতে দিন—

কিন্তু নিজেকে ছাড়াতে পারেনি, পারতও না হয়ত, যদি না ঠিক এ সময় ঘরের মধ্যে এসে সম্পর্কে বাড়ির বিধবা বড় বৌ সুখদা ঠাকরুন ঢুকতেন।

ওকি! ও কি হচ্ছে ঠাকুরপো?

সুখদা ঠাকরুনের কণ্ঠস্বর কানে যেতেই সঙ্গে সঙ্গে হাতের বন্ধন শিখিল হয়ে গিয়েছিল নবীনের। আর ভীতত্রস্তা হরিণের মত স্বামীর বাহুবন্ধন থেকে মুক্তি পেয়েই বিস্রস্ত-বসনা সুহাসিনী ঘরের মধ্যে থেকে ছুটে পালিয়েছিল।—

ত্রিশ-বত্রিশ বৎসর বয়স্কা বিধবা সুখদা নবীনের দূর-সম্পর্কীয়া ভ্রাতৃবধূ চৌধুরী বাড়িরই আশ্রিতাদের মধ্যে অন্যতম। বাড়ির মধ্যে কেউ না জানলেও নবীনের মা তারাসুন্দরী জানতেন, তাঁর পুত্রের সঙ্গে সুখদার একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। কিন্তু দুর্দান্ত প্রকৃতির পুত্রের জন্য সব কিছু জেনেও তিনি মুখ বুজেই থাকতেন। তা ছাড়া একমাত্ৰ সুখদাই অসুস্থ নবীনের পরিচর্যা করত।

সুহাসিনী বালিকা হলেও বোধ হয় বুঝতে পেরেছিল ব্যাপারটা, কিন্তু তার মনে কোন দাগই কাটতে পারেনি। কারণ নবীনের প্রতি কোন আকর্ষণই সে কখনো অনুভব করেনি।

প্রতি রাত্রেই যে সুধা ঠাকরুন নবীনের শয়নঘরে যেত তাও সুহাসিনীর অজ্ঞাত ছিল না। সে যাই হোক, সেদিনকার সেই স্মৃতি সুহাসিনীর মনের মধ্যে এমন একটা স্থায়ী দাগ কেটে বসেছিল যে তারপর যে ক’দিন নবীন বেঁচে ছিল সুহাসিনী তার ঘরের চৌকাঠও ডিঙোয়নি। নবীনের মৃত্যুর পর বাড়ির সবাই যখন উচৈঃস্বরে কাঁদছে, সুহাসিনী বাড়ির তিনতলার ছোট ঘরটায় গিয়ে চুপটি করে বসেছিল। তার অত বড় সর্বনাশেও তার চোখে এক বিন্দু জল আসেনি।

নবীনের মৃত্যুর পর তার দিকে কেউ বড় একটা তাকাতও না যেন। তারপর তার বাবা গিয়ে একপ্রকার জোর করেই শ্বশুরের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করে তাকে নিয়ে এলেন। নবীন তার জীবনে যেমন এসেছিল অকস্মাৎ একদিন, তেমনি অকস্মাৎ যেন চলে গিয়েছিল। নবীনের কথা মনে হলেই যেন মনের পাতায় ভেসে ওঠে সেদিনকার সেই যন্ত্রণার স্মৃতিটা। তাই আনন্দচন্দ্রের প্রশ্নের জবাবে চুপ করে থাকে সুহাসিনী।

নবীন যখন মারা যায় সুহাসিনীর বয়স তখন ছিল বোধ হয় বারো। আজ সে চোদ্দ বৎসর উত্তীর্ণ হতে চলেছে, বালিকা বয়স পার হয়ে কৈশোরও উত্তীর্ণ হতে চলেছে, দেহের অবশ্যম্ভাবী এবং প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মনেরও পরিবর্তন যে হয়ে চলেছে, সুহাসিনী সেটা ভিতরে ভিতরে অনুভব করত। তা ছাড়া অন্যান্য মেয়েদের চাইতে তার দেহের গঠনটাও ছিল একটু বাড়ন্ত।

হঠাৎ সুহাসিনী বললে—আমার কথা থাক আনন্দদা—তোমার কথা বল।

আমার কথা?

হ্যাঁ, তোমার কথা। তোমার বৌয়ের কথা।

বৌয়ের কথা?

হ্যাঁ। কি বললে তোমার বৌ তোমাকে?

কি আবার বলবে!

কিছু বলেনি? তোমাকে তার ভাল লেগেছে কিনা বলেনি?

আনন্দচন্দ্রের মানসপটে ভেসে ওঠে অন্নদাসুন্দরীর সরল সুন্দর শান্ত কচি মুখখানি। সে মৃদু হেসে বলে—না।

বলেনি!

না।

তুমি বলোনি?

কি বলব?

কেন, তোমার কেমন লাগল বৌকে। আচ্ছা, আনন্দদাদা—

কি?

বৌকে আদর করোনি?

আনন্দচন্দ্র সলজ্জ হাসি হাসে।

হাসছ কি?

ওসব কথা শুনে তোমার কি হবে বল তো, সুহাস!

বাঃ, শুনতে ভাল লাগে না বুঝি? শুনতে বুঝি ইচ্ছা হয় না? বল না গো!

সরো, বেলা হয়ে গেল। আমাকে আবার কলেজে যেতে হবে।

আহা, কলেজ তো আছেই, পালিয়ে তো যাচ্ছে না কোথায়ও। তা ছাড়া আজ আর কলেজে নাই বা গেলে।

না না, অনেক দিন কামাই হয়ে গেছে, পড়া অনেক এগিয়ে গিয়েছে। কথাগুলো বলতে বলতে আর দাঁড়াল না আনন্দচন্দ্র। সুহাসিনীকে একপ্রকার পাশ কাটিয়েই সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।

সুহাসিনী দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁটটা চেপে ধরে। চোখ দুটো তার জ্বালা করতে থাকে।

বেলা হয়েছে। ইতিমধ্যে মল্লিক বাড়ির অনেকই জেগে উঠেছে। বাড়ির মধ্যে দাসদাসী ও আশ্রিতজনদের কর্মতৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। রন্ধনশালা থেকে মঙ্গলা- দিদির কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে—ভৈরব, ওরে ভৈরব, গেলি কোথায়? হেঁসেলে একটা কাঠও নেই, এই যজ্ঞিবাড়ির রান্না কখন আর শুরু করব! এখনও তো একটা উনুনের বেশী ধরাতেও পারলাম না।

আনন্দচন্দ্র কুণ্ঠিত চরণে মঙ্গলার সামনে এসে দাঁড়াল।

মঙ্গলাও এ বাড়ির আশ্রিতাদের একজন। মল্লিক মশাইয়ের গ্রাম সম্পর্কে পরিচিত। স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে ভোলার হাত ধরে রাধারমণ মল্লিকের পদতলে এসে কেঁদে পড়েছিল। মল্লিক মশাই চিনতে পারেননি। শুধিয়েছিলেন—কে বাছা তুমি? চিনতে তো পারলাম না। কোথা থেকে আসছ?

আজ্ঞে, আমি কাসুন্দির চাটুজ্যেবাড়ির বৌ। যশোরের মেয়ে।

কার মেয়ে?

নিবারণ চক্রবর্তীর।

ও নিবারণ জ্যাঠার মেয়ে তুমি?

মঙ্গলা তখন তার দুঃখের কথা বলে, স্বামীর মৃত্যুর পর এই পনেরো বছরের ছেলে ভোলাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এখন মল্লিক মশাই তাকে একটু যদি আশ্রয় না দেন তো তার নদীর জলে ডুবে মরা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

মল্লিক মশাই অন্দরের ব্যাপারে কোনরকম মাথা গলাতেন না। সেখানে তাঁর মা-ই ছিলেন কর্ত্রী। তাই মায়ের কাছেই পাঠিয়ে দিলেন।

মল্লিক-গিন্নী মঙ্গলার দুঃখের কথা শুনে তাকে ফেলতে পারেননি। তা ছাড়া ব্রাহ্মণের অল্পবয়সী বিধবা, আশ্রয় দিলেন গৃহে

মঙ্গলাই অতঃপর রন্ধনশালার ভারটা স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। সে আজ প্রায় দীর্ঘ পনেরো বৎসর আগেকার কথা। এবং সেই যে মঙ্গলা রন্ধনশালার ভারটি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল, আজও তার দায়িত্ব সে বহন করে চলেছে।

রোগা, লম্বা, প্যাকাটির মত চেহারা, কিন্তু গাত্রবর্ণ যেন তপ্ত কাঞ্চনের মত! বয়েসকালে যে মঙ্গলা সুন্দরী ছিল সেটা যেন আজও তার দিকে তাকালে বুঝতে কষ্ট হয় না।

ভোলাকে মল্লিক মশাই অনেক চেষ্টা করেছিলেন লেখাপড়া শেখাবার। পাঁচসাতজন ছেলে তাঁর আশ্রয়ে থেকে পড়াশুনা করে। ভেবেছিলেন তাদের সঙ্গে ভোলাও পড়াশুনা করতে পারে। কিন্তু ভোলার ওই লেখাপড়ার ব্যাপারটাই যেন ভাল লাগল না।

হৃষ্টপুষ্ট জোয়ান তাগড়া চেহারা, তার উপরে মায়ের রূপ পেয়েছিল। দেখতে যেন কার্তিকের মত, কিন্তু ওই বাইরের চেহারাটাই যা—একটি মাকাল ফল। বাজে কাজে টো টো করে দিবারাত্র ঘুরে বেড়ায়। মধ্যে মধ্যে টুকটাক কাজও করে, কিন্তু কোথাও বেশীদিন টিকে থাকতে পারে না।

ভোলা থাকে আনন্দচন্দ্রের ঘরেই।

আনন্দচন্দ্র ওইদিন সকালে এসে ঘরে ভোলার দেখা পায়নি। মঙ্গলার সামনে এসে আনন্দচন্দ্র দাঁড়াতেই মঙ্গলা শুধাল—আনন্দ! কবে এলি বাবা?

আনন্দচন্দ্র মঙ্গলার পদধূলি নিতে নিতে বললে—এই তো সকালে, আজই। চারটি মুড়ি দাও না মঙ্গলাদিদি।

ক্ষিধে পেয়েছে বুঝি? আহা রে, তা পাবেই তো। দাঁড়া, আনছি। মঙ্গলা ভিতরে চলে গেল এবং একটু পরে ছোট একটা কুনকের মত ধামায় মুড়ি আর খেজুর গুড় এনে দিল।

হ্যাঁ রে, কলেজে যাবি তো?

হ্যাঁ, যাব। আনন্দচন্দ্ৰ বললে।

তা হ্যাঁ রে, ভোলা কি এখনও ঘুমুচ্ছে নাকি?

কই? ঘরে তো তাকে দেখলাম না!

ঘরে নেই? কাল রাত্রেও তো ভাত খেতে আসেনি। রাত বারোটা পর্যন্ত তার থালা বেড়ে বসেছিলাম। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি—

ভোলাদা কাল রাত্রে খেতে আসেনি মঙ্গলাদিদি?

না।

আনন্দচন্দ্র আর দাঁড়াল না। বহির্মহলে মুড়ির পাত্রখানি নিয়ে চলে এল। ঘরে ঢুকে দেখে এক কোণে মেঝেতে পাতা শয্যার উপর বসে হুঁকোতে তামুক খাচ্ছে ভোলা গুড়ুক গুড়ুক শব্দ তুলে।

আনন্দা নাকি রে!

হ্যাঁ, ভোলাদা!

তা কখন এলি?

এই সকালবেলা।

তা বিয়ে হয়ে গেল?

হ্যাঁ। কিন্তু তুমি রাত্রে কোথায় ছিলে?

খেমটা নাচ হচ্ছিল রে দত্তবাড়িতে। তাই দেখতে গিয়েছিলাম। কি বলব মাইরি, মাগীটা যা নাচে না!