বিগ্রহের চোখ – ২

॥ ২॥

কাজের মেয়েটি যে-ভদ্রলোকটিকে সঙ্গে করে ড্রয়িং রুমে পৌঁছে দিয়ে গেল, পঞ্চাশ থেকে পঁচাত্তরের মধ্যে যে-কোনও বয়সই তার হতে পারে। এই রকমের চেহারা আকছার চোখে পড়ে না, এইরকমের পোশাকও না। মানুষটি লম্বা প্রায় ফুট ছয়েক। শরীর অতিশয় কৃশ ও দড়ি-পাকানো টাইপের। মাথার সামনের দিকের চুল উঠে যাওয়ায় খুলির অনেকখানি অংশ কপালের দখলে এসে গেছে। মাথার বাদবাকি অংশের চুলের গোড়ার দিকটা সাদা, উপরের দিকটা লালচে। তাতে মনে হয়, ভদ্রলোক কলপ ব্যবহার করতেন, কিন্তু, যে-কোনও কারণেই হোক, এখন আর করেন না। গালের হাড় উঁচু। রং ফর্সা, কিন্তু ফ্যাকাশে। খাড়া নাকের নীচে পাকানো গোঁফ। গোঁফের দুই প্রান্তদেশ ছুঁচোলো ও ঊর্ধ্বমুখী। দৃষ্টিপাতের ধরনে কিছুটা সন্দেহের সঙ্গে খানিকটা আত্মম্ভরিতাও মিশে আছে। অক্ষিতারকা নীলবর্ণ, কিন্তু কিঞ্চিৎ ঘোলাটে। চোখের কোলে যে-পরিমাণ কালি জমেছে, তাতে রাত্রি-জাগরণের ছাপ স্পষ্ট। একই সঙ্গে সন্দেহ হয় যে, ইনি খুব একটা সুশৃঙ্খল ও নিয়মনিষ্ঠ জীবন যাপন করেন না।

ভদ্রলোকের পায়ে শুড়হোলা লপেটা। পরনে চুনোট করা কচি ধুতি ও ঊর্ধ্বাঙ্গে একটু লম্বা ঝুলের বর্ডার বসানো হালকা গোলাপি রঙের মেরজাই। হাতে রুপোবাঁধানো পাতলা ছড়ি। মেরজাইটিতে বোতাম নেই, সেটি বুকের একপাশে ফিতে দিয়ে বাঁধা। সব মিলিয়ে উনিশ শতকের কাপ্তান বাবু বলে ভ্রম হয়। এমনও সন্দেহ হয় যে, দীনবন্ধু মিত্রের ‘সধবার একাদশী’ কি অমৃতলাল বসুর ‘বিবাহ বিভ্রাট’ নাটকে অভিনয় করতে করতে ইনি রঙ্গালয় থেকে সরাসরি এখানে চলে এসেছেন। কিন্তু তার আগে সাজঘরে ঢুকে পোশাকটা পালটে আসেননি।

বুকের কাছে আড়াআড়ি করে ধরা ডান হাতের কব্জির উপর দিয়ে কোঁচার প্রান্তদেশ ঝুলিয়ে দেওয়া, ভদ্রলোক ঘরে ঢুকে অরুণ সান্যালের ইঙ্গিত অনুযায়ী সামনের সোফায় বসেই একটা ভুল করে বসলেন। ডান হাতের ছড়ির ডগাটি ভাদুড়িমশাইয়ের দিকে তুলে ধরে বললেন, “কাগজে আপনাব ছবি দেখেছি। আপনি নিশ্চয় মিঃ চারু ভাদুড়ি?”

ভাদুড়িমশাই তক্ষুনি তার প্রশ্নের জবাব দিলেন না। একেবারে স্থির চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর কেটে-কেটে, প্রতিটি শব্দকে পৃথকভাবে উচ্চারণ করে বললেন, “আপনি কি এইভাবেই সকলের সঙ্গে কথা বলেন নাকি?”

ভদ্রলোক যে হকচকিয়ে গেছেন, সেটা তার মুখচোখ দেখেই আমরা বুঝতে পারছিলাম। একটু বিভ্রান্ত ভঙ্গিতে বার দুয়েক ডাইনে-বাঁয়ে তাকিয়ে বললেন, “আপনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারছি না। এইভাবে মানে?”

“এইভাবে মানে যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন তার দিকে ছড়ি উঁচিয়ে বলেন?”

ভদ্রলোকের বিভ্রান্ত ভাব তখনও কাটেনি। বললেন, “আজ্ঞে হ্যাঁ, এইভাবেই তো বলি।”

“আর বলবেন না।” ভাদুড়িমশাই ঈষৎ হেসে বললেন, “বাড়িতে চাকরবাকরদের সঙ্গে যদি-বা বলেন, বাড়ির বাইরে কারও সঙ্গে বলবেন না।”

“কেন, এতে দোষ হয়?”

“আমার ধারণা, হয়। আর কথা যখন আমার সঙ্গে, তখন আমার যেটা ধারণা, সেই অনুযায়ী আপনাকে কথা বলতে হবে।….দিন, ছড়িটা আমাকে দিন।”

হাত বাড়িয়ে ভদ্রলোকের হাত থেকে ছড়িটা নিয়ে নিলেন ভাদুড়িমশাই। তারপর বললেন, “হ্যাঁ, আমিই চারু ভাদুড়ি। কিন্তু আপনাকে তো চিনতে পারলুম না।”

ছড়ি বেহাত হওয়ায় ভদ্রলোকের ব্যক্তিত্ব একটু চুপসে গিয়ে থাকবে। তার কণ্ঠস্বর থেকেই সেটা বোঝা গেল। নিচু গলায় বললেন, “আমার নাম বিমলভূষণ সেন।”

‘বিমলভূষণ…বিমলভূষণ…” নামটাকে ঈষৎ অস্পষ্টভাবে বার দুয়েক উচ্চারণ করলেন ভাদুড়িমশাই, তারপর বললেন, “নামটা চেনা-চেনা মনে হচ্ছে। আচ্ছা, মার্চের শেষে আপনিই কি আমাকে বাঙ্গলোরে ফোন করেছিলেন?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ, আমিই করেছিলুম,” বিমলভূষণ বললেন, “কিন্তু তখন আপনি দিল্লিতে ছিলেন, তাই কথা হয়নি। তবে কিনা বাঙ্গালোর থেকেই আমাকে বলা হয়েছিল, দিল্লি থেকে আপনি আর বাঙ্গালোরে ফিরবেন না, ওখানকার কাজ সেরে এপ্রিলের গোড়ায় কলকাতায় চলে আসবেন।”

“ঠিক বলেনি। দিল্লি থেকে একদিনের জন্যে বাঙ্গালোরে ফিরেছিলাম, তারপর সেখান থেকে কলকাতায় আসি। ইন ফ্যাক্ট, বাঙ্গালোরে ফিরেছিলুম বলেই আপনার কথা জানতে পারি। তো আপনার সমস্যা তো একটা হিরে নিয়ে, তাই না?”

“একটা নয়, দুটো হিরে।” বিমলভূষণ বললেন, “কিন্তু আপনার কলকাতার কাজ কি মিটেছে?”

“গতকালই মিটেছে। কিন্তু তাই বলে যে এক্ষুনি বাঙ্গালোরে ফিরব, তাও নয়। অনেক দিন বাদে এলুম তো, হাতে বিশেষ জরুরি কাজও নেই, তাই দিন কয়েক এখানে কাটিয়ে যাব ভাবছি।”

একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন ভাদুড়িমশাই, তারপর বললেন, “কিন্তু আমার কলকাতার ঠিকানা পেলেন কোথায়? বাঙ্গালোর আপিস থেকেই জানিয়েছিল?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ। ওরাই বলেছিল যে সম্ভবত দশ তারিখের পর থেকে আপনি একটু ফ্রি থাকবেন।”

“তাই আর কোনও ফোন-টোন না করে সরাসরি চলে এসেছেন?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ।” বিমলভূষণের চোখেমুখে যে একটা আত্মম্ভরিতার ছাপ দেখেছিলুম, খানিক আগেই সেটা চলে গিয়ে একটা হীনম্মন্যতার ভাব এসে গিয়েছিল। বললেন, “তবে আমাদের আদি বাড়ি তো চন্নননগরে, সেখান থেকে আসিনি। আসলে বাগবাজারেও একটা বাড়ি আছে আমাদের, অবিশ্যি সেখানে কেউ থাকে না, ওই যা আমিই মাঝে-মধ্যে এসে দু’চারদিন কাটিয়ে যাই, আপাতত সেখান থেকেই আসছি।”

“বাঙ্গালোরে ফোনটা করেছিলেন কোথা থেকে?”

“চন্নননগর থেকে।” বিমলভূষণ বললেন, “ওই যে বললুম, ওখানেই আমাদের আদিবাড়ি। মন্দিরও ওখানেই। মন্দির আমার প্রপিতামহ কালীভূষণ সেন বানিয়েছিলেন। বিগ্রহও তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন।…কেন, বাঙ্গালোরে যিনি ফোন ধরেছিলেন, তাঁকে তো আমি সবই বলেছি। তার কাছে আপনি কিছু শোনেননি?”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “শুনেছি। কিন্তু তখন তো আমার কলকাতায় আসার তাড়া ছিল। তাড়াহুড়োর মধ্যে শুনেছি বলে সব কথা আমার ভাল মনে নেই। আপনি বরং গোড়া থেকে সবটা আবার বলুন।”

বিমলভূষণ অতঃপর যা বললেন, তার মধ্যে আগাছা বিস্তর, অপ্রয়োজনীয় ডালপালাও নেহাত কম নয়, সে-সব হেঁটে ফেললে মোদ্দা ব্যাপারটা যা দাঁড়ায়, সেটা এইরকম :

কালীভূষণ ছিলেন ধনাঢ্য ভূস্বামীর একমাত্র সন্তান। পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে যে বিত্ত ও জমিজমা পেয়েছিলেন, নিজের বুদ্ধিবলে তিনি তা আরও বাড়িয়ে নেন। চন্দননগর ফরাসিশাসিত এলাকা, তাই ফরাসি পক্ষের সঙ্গে তিনি সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন; অন্যদিকে, চন্দননগরের চৌহদ্দির বাইরেও বিস্তর জমিজমা ছিল বলে ইংরেজদেরও পারতপক্ষে চটাতেন না। কালীভূষণের জন্ম ১৮৪০ সালে। বাল্যবয়সে বিবাহ করেছিলেন, কিন্তু তার বয়স যখন আটত্রিশ ও স্ত্রী শান্তিলতার তেত্রিশ, তখনও পর্যন্ত তাদের কোনও সন্তানাদি না হওয়ায় কালীভূষণ ধরেই নিয়েছিলেন যে, কোনও উত্তরাধিকারী না রেখেই তাকে ইহলোক থেকে বিদায় নিতে হবে। মোটামুটি সেই সময়েই এক রাত্রে তিনি একটি শিবমন্দির স্থাপনের জন্য স্বপ্নাদিষ্ট হন। স্বপ্নাদেশ পালনে দেরি হয়নি। চন্দননগরে তার বসতবাড়ির সংলগ্ন জমিতে ১৮৮০ সালেই তিনি মন্দির নির্মাণ করিয়ে তাতে হরপার্বতীর মূর্তি স্থাপন করেন। এর পরে-পরে যা ঘটে, স্বপ্নাদেশ পালনের সঙ্গে তার কোনও কার্যকারণের যোগ আছে কি না, বলা শক্ত, কিন্তু ঘটনা এই যে, এতকাল যাঁকে বন্ধ্যা রমণী বলে ভাবা হয়েছিল, সেই শান্তিলতা এর মাত্র দু’মাসের মধ্যেই সন্তানসম্ভবা হন, এবং ১৮৮১ সালে জন্মগ্রহণ করেন কীর্তিভূষণ। কালীভূষণ যে এই ব্যাপারটাকে দৈব অনুগ্রহ বলেই গণ্য করেছিলেন, তাতে সন্দেহ নেই। হরপার্বতীর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসেবে তার পরের বছরই তিনি তাদের তৃতীয় নয়নে দুটি হিরে বসিয়ে দেন। হিরে দুটি সংগৃহীত হয়েছিল এক গুজরাটি বণিকের কাছ থেকে। গুজরাত থেকে প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত একবার সে নাকি পূর্বভারতে মণিমুক্তা বিক্রি করতে আসত।

কীর্তিভূষণের বয়স যখন পাঁচ বছর, কালীভূষণের তখন মৃত্যু হয়। আকস্মিক মৃত্যু। তিনি প্রতিদিন গঙ্গাস্নান করতেন। চন্দননগরের ঘাটে স্নান করতে গিয়ে একদিন তিনি আর বাড়িতে ফেরেন না। হঠাৎ বন আসায় তিনি ভেসে গিয়েছিলেন, পাড়ে উঠে আসতে পারেননি। ঘটনার তিনদিন পর মাইল কয়েক উজানে তার মৃতদেহের সন্ধান মেলে।

বিমলভূষণের গল্প এই পর্যন্ত আসার পর অরুণ সান্যাল তাকে বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “কীর্তিভূষণই তো আপনার ঠাকুর্দা, তাই না?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ।” বিমলভূষণ বললেন, “আমার প্রপিতামহের তিনিই একমাত্র সন্তান। তার পরে আর আমার প্রপিতামহ কালীভূষণের অন্য কোনও পুত্রকন্যা হয়নি।”

“কালীভূষণও তো তার বাবার একমাত্র সন্তান?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ।”

“কীর্তিভূষণকে তা হলে পাঁচ বছর বয়েস থেকে বড় করে তুললেন কে? আর ওই সম্পত্তি? মানে কালীভূষণের সম্পত্তিও তো নেহাত কম ছিল না। সে-সবের দেখাশুনোই

বা কে করতেন?”

“সবই করতেন আমার প্রপিতামহী, অর্থাৎ শান্তিলতা দেবী।” বিমলভূষণ বললেন, “অবিশ্যি নায়েব-গোমস্তারা ছিল না, তা নয়। দূর-সম্পর্কের কিছু পোষ্যও ছিল। কিন্তু আমার প্রপিতামহীর অনুমতি ছাড়া কারও কিছু করার সাধ্য ছিল না। তা সে অনুমতিই বলুন আর হুকুমই বলুন। ছেলেবেলায় আমার ঠাকুর্দার কাছে অন্তত সেইরকমই শুনেছি।”

“তার মানে তিনি খুবই কড়া ধাতের মহিলা ছিলেন, কেমন?”

“আজ্ঞে তা বলতে পারেন।”

সদানন্দবাবু বললেন, “ওই যাকে ছুঁদে মেয়েছেলে বলে আর কী।”

ভাদুড়িমশাই এতক্ষণ পর্যন্ত মাথা নিচু করে চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছিলেন। একটাও কথা বলেননি। সদানন্দবাবুর মন্তব্য শুনে তিনি চকিতে একবার মুখ তুলে তার দিকে তাকালেন। যে-রকম ভুরু কুঁচকে তাকালেন, তাতে বুঝলুম, মন্তব্যটা তার পছন্দ হয়নি। ‘মেয়েছেলে’ শব্দটা তার কানে নিশ্চয় আপত্তিকর ঠেকে থাকবে।

তবে, যার প্রপিতামহী সম্পর্কে এই অশিষ্ট শব্দ প্রয়োগ, তার কোনও ভাবান্তর দেখলুম না। বরং সদানন্দবাবুর দিকে তাকিয়ে সমর্থনসূচক ভঙ্গিতে উপর-নীচে একবার শির-সঞ্চালন করে তিনি বললেন, “একেবারে খাঁটি কথাটাই বলেছেন। আমার ঠাকুমা অবিশ্যি তার শাশুড়ির কথা উঠলে উঁদে না বলে বলতেন জাহাবাজ মেয়েছেলে। তারই কাছে শুনেছি যে, আমার ঠাকুর্দার লাইফকে তিনি একেবারে হেল করে ছেড়ে দিয়েছিলেন!”

“কী-রকম, কীরকম?” উৎসাহিত হয়ে সদানন্দবাবু তার শরীরটাকে একটু এগিয়ে এনেছিলেন। সেই অবস্থায় মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন, “মায়ের পারমিশান না নিয়ে আপনার ঠাকুর্দার কিছু করার উপায় ছিল না বুঝি?”

“কিছু না।” বিমলভূষণ বললেন, “উঠতেও পারমিশান চাই, বসতেও পারমিশান চাই। মায়ের পারমিশান পাননি বলে নাকি জীবনে কখনও শ্বশুরবাড়িই যাওয়া হয়নি আমার ঠাকুর্দার। ঠাকুমার কাছে শুনেছি, তারও বাপের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।”

“অ্যাঁ?” সদানন্দবাবু ডুকরে উঠে বললেন, “বাপের বাড়ি যাওয়া বন্ধ?”

“বিলকুল। এ কি ভাবা যায়?”

“না, ভাবা যায় না।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “কিন্তু ও-সব বাদ দিয়ে এবারে কাজের কথায় আসুন। আপনার সমস্যা তো দুটো হিরে নিয়ে। তাব কী হল? ও দুটো কি চুরি হয়ে গেছে?”

প্রসঙ্গ একেবারে হঠাৎই পালটে যাওয়ায় বিমলভূষণ সম্ভবত ফের একটু বিভ্রান্ত বোধ করছিলেন, সেটা কাটিয়ে উঠে বললেন, “ও হ্যাঁ, হিরে। না, চুবি হয়ে যায়নি। কিন্তু হবে।”

“জানলেন কী করে?”

“আমাদের পুজুরি ঠাকুর বলছিলেন, গঙ্গার ঘাটে দু’জন লোককে তিনি এই নিয়ে বলাবলি করতে শুনেছেন।

“এটা কবেকার কথা?”

“মাসখানেক আগের। তার হপ্তা দুয়েক বাদেই আমি বাঙ্গালোরে ফোন করি।”

শুনে একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন ভাদুড়িমশাই, তারপর বললেন, “হরপার্বতীর মূর্তিতে কি সারা বছরই হিরে দুটো পরানো থাকে?”

“আজ্ঞে না,” বিমলভূষণ বললেন, “পরানো হয় শুধু চৈত্রসংক্রান্তির দিনে।”

“কিন্তু তার তো আর দেরি নেই।”

“আজ্ঞে না। আজ এগারোই এপ্রিল, চোদ্দো তারিখে সংক্রান্তি। মাঝখানে আর মাত্তর দুটো দিন। হিরে দুটো সিন্দুকে ভোলা আছে। চোদ্দো তারিখের সূর্যোদয়ের আগেই সিন্দুক থেকে বার করে হরপার্বতাঁকে পরিয়ে দেব।”

শুনে, আবার একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন ভাদুড়িমশাই, তারপরে বললেন, “আপনি চন্দননগরে ফিরছেন কবে?”

“আজই ফিরে যাব।”

“ভাল। আমি কাল সকালে যাচ্ছি। আপনি ঠিকানাটা লিখে দিয়ে যান।”

বিমলভূষণ একটা ছাপানো কার্ড বার করে ভাদুড়িমশাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “ঠিকানা এতেই আছে। তবে কিনা দরকার হবে না। চন্নননগরে গিয়ে যে কাউকে আমার নাম বললেই রাস্তা দেখিয়ে দেবে।”

ভাদুড়িমশাইয়ের হাত থেকে নিজের ছড়িখানা ফেরত নিয়ে, নমস্কার করে ভদ্রলোক বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে ভাদুড়িমশাই বললেন, “ও হ্যাঁ, একটা কথা ছিল।”

ঘুরে দাঁড়িয়ে ভদ্রলোক বললেন, “বলুন।”

“আপনি কলপ দেওয়া বন্ধ করলেন কেন?”

এতক্ষণে হাসলেন বিমলভূষণ। বললেন, “চামড়ায় একটা র‍্যাশ বেরোচ্ছিল। ডাক্তারের অ্যাডভাইসে বন্ধ করেছি।”

.