॥ ১॥
আজ এগারোই এপ্রিল, রবিবার। কৌশিককে সঙ্গে নিয়ে ভাদুড়িমশাই একটা তদন্তের কাজে বাঙ্গালোর থেকে দিন কয়েকের জন্য কলকাতায় এসেছেন। ফলে অরুণ স্যানালের কাকুড়গাছির ফ্ল্যাটে আজ ছুটির দিনের আজ্ঞা একেবারে জমজমাট। ঘড়িতে এখন সকাল দশটা বাজে। কিন্তু দুপুরের খাওয়াটা যেহেতু আমরা আজ এখানেই সেরে নেব, তাই আমারও বাড়ি ফেরার তাড়া নেই, সদানন্দবাবুরও না। তার উপরে আবার গতকাল রাত্তিরে যখন ভাদুড়িমশাইয়ের সঙ্গে টেলিফোনে আমাদের কথা হয়, সদানন্দবাবু তখন তাকে মনে করিয়ে দিতে ভোলননি যে, বাংলা বছরের এটাই হচ্ছে লাস্ট সানডে। কথাটার মধ্যে যে একটা গূঢ় ইঙ্গিত ছিল, ভাদুড়িমশা, সেটা ধরতে পেরেছে ঠিকই, তা নইলে আর টেলিফোনের মধ্যেও অমন হোহো করে তিনি হাসতে থাকবেন কেন? সুতরাং আশা করা যাচ্ছে যে, আজকের দ্বিপ্রহরিক খাওয়াটা বেশ ঢালাও রকমেরই হবে।
আড্ডা জমে যাবার অবশ্য আরও দুটো কারণ আছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হল, কৌশিকের চোখ এই সময় টিভির পর্দায় টি, এ. টির কার্টুন পিকচার্সে আটকে থাকার কথা, কিন্তু কলকাতার কেবল অপারেটররা যে-সব পে-চ্যানেলের ছবি দেখানো বন্ধ করে দিয়েছে, তার একটা হচ্ছে টি.এন.টি। কৌশিকও তাই টেলিভিশনের সুইচ অন করেনি, এবং কার্টুন ছবির হুল্লোড় বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন শব্দ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে, অন্যদিকে তেমনি আমাদের আড্ডাতেও কোনও ব্যাঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে না। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে সদানন্দবাবুর গল্প। গল্পটা ক্রমে-ক্রমে যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে মনে হয়, খুব শিগগিরই একটা রোমহর্ষক ঘটনা ঘটবে।
ঘটলও। সদানন্দবাবু বললেন, “আপনাদের আমি অনেক দিন ধরে দেকচি তো, যেমন কিরণবাবু, তেমনি এ-বাড়িরও কাউকে চিনতে আমার বাকি নেই, তেলপড়া, জলপড়া, তুকতাক, ঝাড়ফুক, বাটি চালান, ক্ষুর চালান কি ওই রকমের কিছুই যে আপনারা বিশ্বেস করেন না, মুক টিপে হাসেন আর মনে-মনে আমাকে একটা ড্যাম লায়ার ভাবেন, সে আমি খুব ভালই জানি। কিন্তু আমি তো নিজের চোকে দেকিচি, তাই কী করে অবিশেস করব বলুন?”
অরুণ সান্যাল বললেন, “আহা-হা, কী হল বলুন না, বাটিটা একটা ফ্লাইং সসার হয়ে আকাশে উড়ে গেল?”
“তা কেন উড়বে?” সদানন্দবাবু বললেন, “না না, তা ওড়েনি, কিন্তু যা হল, সেও চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। এই দেকুন, আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। বাটিটা তো এতক্ষণ নীলকণ্ঠ ঘোষের উঠোনের ওপরে একটা জিগজ্যাগ কোর্সে ঘোরাফেরা করছিল, হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই, দুম করে একেবারে….ওরে বাবা রে বাবা, সে এক বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড মশাই….ওই যাকে আপনারা বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা হয় না বলেন আর কী, সেই রকমের আনবিলিভেবল ইনসিডেন্ট!”
ভাদুড়িমশাই মিটিমিটি হাসছিলেন। বললেন, “খেলে যা! কী হল, সেইটে বলুন দেখি।”
“বলচি, বলছি।” সদানন্দবাবু বললেন, “বেন্দাবন মাঝির যে বাটি এতক্ষণ নীলকণ্ঠ ঘোষের কাঁচারি-ঘরের সামনেকার উঠোনের উপর হরাইজন্টালি ঘোরাফেরা করছিল, সেটা হঠাৎ ভার্টিক্যালি মাটির থেকে তা ধরুন দু-আড়াই ফুট নাপিয়ে উটে অ্যাব্রাগুলি একটা টার্ন নিয়ে কোতায় গিয়ে আটকে গেল জানেন?”
কৌশিকের চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছিল, কোটর থেকে যে-কোনও মুহূর্তে তারা বেরিয়ে আসবে। সোফা থেকে একটুখানি সামনে ঝুঁকে ঘড়ঘড়ে গলায় সে জিজ্ঞেস করল, “কোথায়?”
“নীলকণ্ঠের বুড়ি-শাশুড়ির মাজায়!”
“অ্যাঁ?” অরুণ সান্যাল প্রায় আঁতকে উঠে বললেন, “বাটিটা আর জায়গা পেল না? অব অল প্লেসেস…”
সদানন্দবাবু বললেন, “ইয়েস, মাজা! কী বলব মশাই, বুড়ি তো হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠল! কিন্তু যতই না কেন চেঁচাক, আর মাজা থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্যে টানা হাচড়া করুক, বাটি আর খোলে না! খুলবে কী করে, এ হল গে বেন্দাবন মাঝির বাটি! দশ-দশখানা গায়ের মধ্যে অমন গুনিন তো দুটি নেই! মন্তর পড়ে দিয়ে চালান করেছে কিনা, তাই চোরের মাজায় একেবারে জম্পেশ হয়ে সেঁটে আচ্চে। তো এই হচ্ছে ব্যাপার?”
কৌশিক বলল, “তার মানে নীলকণ্ঠ ঘোষের সোনা-বাঁধানো নস্যির ডিবে তার শাশুড়িই চুরি করেছিল?”
“তা করেছিল বই কী।“ সদানন্দবাবু বললেন, “অতি ধুরন্ধর জাঁহাবাজ মহিলা! তার উপরে ক্লিপ…ক্লিপ…ওই যে কী একটা কতা রয়েছে…”
“ক্লেপটোম্যানিয়াক?”
“রাইট! যেখেনেই যাক, হাতের কাঁচে দামি কিছু পেলেই হল, হাপিস করে দেবে।”
“নীলকণ্ঠ ঘোষ তা জানত।”
“অফ কোর্স জানত।” সদানন্দবাবু বললেন, “কিন্তু তার বউ সেকতা বিশ্বেস করত । বলত, ছিছি, মেয়ে-জামাইকে ভালবাসেন বলে বরাবরের জন্যে বেড়াতে এয়েছেন, আর তার নামে কিনা যা-তা সব বলচ। নীলকণ্ঠও এই নিয়ে আর কতা বাড়ায়নি। কিন্তু শেষকালে নস্যির ডিবে চুরি যেতে সে আর চুপ করে থাকতে পারল না….বেন্দাবনকে ডেকে পাটাল।”
অরুণ সান্যাল বললেন, “তা উদ্ধার হল সেই নস্যির ডিবে?”
সদানন্দবাবু বললেন, “হল বই কী, বাটি যেখেনে আটকে গে, সেখেন থেকেই হল। বুড়ির মাজায় ছিল থান-কাপড়ের কষির গিট, সেই গিঁটের ভেতর থেকেই নস্যির ডিবে বেরিয়ে পড়ল। সোনার পাতে মোড়া কষ্টিপাথরের ডিবে, তার ডালায় আবার পায়রার চোকের মতো টকটকে লাল চুনি বসানো, সে মানে দ্যাকবার মতো জিনিস।”
“তা কাপড়ের গিঁট থেকে জামাইয়ের নস্যির ডিবে বেরোতে বুড়ি কিছু বলল না?”
“বলল বই কী। বলল যে, সে যখন ঘুমুচ্ছিল, তখন জামাই-ই নির্ঘাত তার কাপড়ে ওটা বেঁদে রেকে গ্যাচে। চোর অপবাদ দিয়ে তাড়াতে চায় আর কী।”
ভাদুড়িমশাই বললেন, “তা বিদেয় হল শাশুড়ি?”
“তা-ই কখনও হয়?” সদানন্দবাবু বললেন, “নীলকণ্ঠের বউ দুগগামণি রয়েছে না? সে অমনি চোক পাকিয়ে বলল যে, মা’কে বিদেয় করলে সে আত্মঘাতী হবে, তারপর পেত্নি হয়ে নীলকণ্ঠর ঘাড় মটকাবে।”
“বাস্, নীলকণ্ঠ তাতেই কাত?”
“তাতেই কাত।” সদানন্দবাবু বললেন, “কাত না হয়ে উপায় কী! একে তো ব্যাটা ঘোর হেন-পেড, বউয়ের কতায় ওটে-বসে, তায় আবার অ্যায়সা ভূতের ভয় যে, সন্ধের পরে যতই ডাকাডাকি করুন, বাড়ির বাইরে বেরুবে না, যা বলার তা ওই ভেতর থেকেই বলবে।”
“শাশুড়ি-ঠাকরুন অতএব রয়েই গেল?”
“রয়েই গেল। তবে কিনা.. মানে এরপরে যা রটে গেল, সেই কাণ্ডটা তো আর আমার নিজের চোখে দ্যাকা নয়….নেহাতই শোনা কতা..তাই আপনারা বিশ্বেস করতেও পারেন, না-ও পারেন। তবে হ্যাঁ, যা রটে, তার সবটা না হোক, খানিকটে তো বটেই।”
“কী রটেছিল?”
“রটে গেল যে…মানে..” সদানন্দবাবু গলাটা একটু খাকড়ে নিয়ে বললেন, “এই ঘটনার পর থেকে রাত্তিরে ঘুমুবাব সময়েও নীলকণ্ঠ ঘোষ নাকি তার বাঁদানো দাঁতের পাটি খুলে রাখত না।”
কৌশিক বলল, “কেন, কেন?”
“সোনা দিয়ে বাঁদানো দাঁত তো।” সদানন্দবাবু বললেন, “নীলকণ্ঠের তাই ভয় ধরে গেল যে, দাঁতের পাটি খুলে যদি ঘুমোয়, তো শাশুড়ি সেটাও হাপিস করে দেবে।”
শুনে আমরা সবাই হো-হো করে হেসে উঠলুম। কিন্তু সদানন্দবাবু হাসলেন না। বললেন, “হাসছেন হাসুন, কিন্তু আসল কতাটা ভুলে যাবেন না। বেন্দাবন মাঝির বয়েস অ্যাদ্দিনে নব্বই ছাড়িয়েছে, কিন্তু সে মরে যায়নি। বলেন তো তাকে খবর পাটিয়ে আনিয়ে নেওয়া যায়।”
অরুণ সান্যাল বললেন, “তাকে আনিয়ে কী হবে?”
“বাঃ, ভাদুড়িমশাই যাদের ধরতে বেরিয়েছে, সেই চোরগুলোকে ধরতে হবে না?”
“বেন্দাবন মাঝি এসে চোর ধবে দেবে?”
“আহাহাহাহা, সদানন্দবাবু অসহিষ্ণু গলায় বললেন, “কতাটা দেকছি আপনারা ধরতেই পারেননি। বেন্দাবন কেন চোর ধরবে? দারোগাবাবু কি কক্ষনো নিজের হাতে চোর ধরে? চোর ধরে তার সেপাইগুলো। তা বিবেচনা করুন যে, বেন্দাবন হচ্চে গিয়ে দাবোগাবাবু। কিন্তু তার তো সেপাই-টেপাই নেই। থাকার মদ্যে আচে ওই বাটি।”
“বুঝেছি।” কৌশিক বলল, “ওই বাটি গিয়ে চোর ধরবে। নীলকণ্ঠ ঘোষের শাশুড়িকে যেমন ধরেছিল।…কী, ঠিক বুঝেছি তো?”
“কিচুই বোজোনি।” সদানন্দবাবু বললেন, “বাটি কি আর এমনি-এমনি চোর ধরবে নাকি? তার মদ্যে মন্তর পড়ে দিতে হবে না? বাটি-চালানের ওটাই হচ্ছে আসল কতা, ওই মন্তর। অবিশ্যি ভাদুড়িমশাই যদি চান তো বাটির বদলে ক্ষুর কি কাটারি-চালানের ব্যবস্থাও করা যায়। কিন্তু সেটা একটু রিস্কি ব্যাপার।”
“রিস্কি বলছেন কেন?”
কৌশিকের প্রশ্নের উত্তরে সদানন্দবাবু সস্নেহ হাস্য করলেন। তারপর বললেন, “বোকা ছেলে! এই সহজ কতাটাও বুজতে পারলে না? আরে বাবা, ক্ষুর কি কাটারি চালান করলে সে তো আর বাটির মন কারও মাজায় কি অন্য কোতাও গিয়ে সেঁটে বসবে না, কালপ্রিটের গলা অব্দি নাপিয়ে উটে আপনা থেকেই কোপ ঝেড়ে দেবো। না না, সে-সব রক্তারক্তি ব্যাপারের মদ্যে গিয়ে কাজ নেই। তার উপরে আবার মস্তরে ভুল থাকলে কালপ্রিটের বদলে অন্য কারও গলাতেও কোপ ঝেড়ে দিতে পারে। সে তো কেলেঙ্কারির একশেষ। তার চে বাটি-চালানই ভাল। ইন ফ্যাক্ট, ভাদুড়িমশাইকে সেই জন্যেই অ্যাডভাইস দিচ্ছিলাম যে, উনি বরং বাটি-চালানের ব্যবস্থা করুন। তা উনি গাই করচেন না।”
ভাদুড়িমশাইয়ের কাজের সূত্রেই কথাটা উঠেছিল বটে। কাজটা তদন্তের, এবং তদন্তটা চুরির।
এ সম্পর্কে ভাদুড়িমশাইয়ের কাছে যা শুনেছিলাম, সেটা খুব সংক্ষেপে বলছি। ভারত জুড়ে কারবার চালায়, এমন একটা মিউঁচুয়াল ফান্ড তাদের বাঙ্গালোরের সদর দফতর থেকে দেশের হরেক জায়গায় যে ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট পাঠায়, কলকাতার আমানতকারীদের অনেকের কাছেই তা ইদানীং পৌঁছচ্ছিল না। মাঝপথেই উধাও হয়ে যাচ্ছিল সেগুলি। শুধু তা-ই নয়, হরেক ব্যাঙ্কে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে ওয়ারেন্টগুলি ভাঙিয়েও নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ধরা যাচ্ছিল না, ঠিক কোন পয়েন্ট থেকে সেগুলি নিখোঁজ হচ্ছে। ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টগুলি ডাকে ফেলার পরে, না কোম্পানির আপিস থেকে সেগুলি ডাকঘরে পৌঁছে দেবার আগেই। গোটা ব্যাপারটা নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় চারু ভাদুড়ি ইনভেস্টিগেশনসকে। কোম্পানি থেকে যদিও শুধু ডাক বিভাগকে সন্দেহ করা হচ্ছিল, কিন্তু কাজটা হাতে নেবার পর হপ্তাখানেকের মধ্যেই ভাদুড়িমশাই বুঝতে পেরে যান যে, কোম্পানির ভিতরেই রয়েছে একটা দুষ্টচক্র, ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট হাপিস করা ও ব্যাঙ্কে জাল নামে জাল অ্যাকাউন্ট খুলে ঝটপট সেগুলো ভাঙিয়ে নেবার ব্যাপারে যাদের ভূমিকা একটা আছেই। কোম্পানির কলকাতা-আপিসের ডেসপ্যাঁচ-বিভাগের খাতাপত্র খুঁটিয়ে দেখে তার ধারণা আরও জোর পেয়ে যায়। সেই অনুযায়ী একটা রিপোর্টও তিনি তৈরি করে ফেলেছেন। বাঙ্গালোরে ফিরে কোম্পানির হেড আপিসে সেটা তিনি সাবমিট করবেন।
শুনে সদানন্দবাবু বললেন, “তা তো হল, কিন্তু চোরগুলো ধরা পড়বে তো?”
“পড়বে বলেই তো আশা করছি,” ভাদুড়িমশাই হেসে বললেন, “তবে কিনা চুরিটা যে বন্ধ হবে, আপাতত সেটাই বড় কথা। অবিশ্যি আমার রিপোর্ট অনুযায়ী যদি কাজ
কথাটা শুনে সদানন্দবাবু যে খুব খুশি হয়েছেন, তা মনে হল না। বেজার গলায় বললেন, “আমি হলে কিন্তু ফাস্ট অব অ ওই চোরগুলোকেই ধরে ফেলতুম মশাই।”
অরুণ সান্যাল বললেন, “কী করে ধরতেন?”
এই প্রসঙ্গেই এসেছিল বাটি চালানের কথা। সদানন্দবাবু হেসে বলেছিলেন, “সেটা তো অতি সহজ কাজ, মশাই। স্রেফ বেন্দাবন মাঝিকে ডাকিয়ে এনে বলতুম, বাটি চালাও!”
অরুণ সান্যাল গল্পের গন্ধ পেয়ে গিয়েছিলেন। অপ্রাকৃতে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস না থাকা সত্ত্বেও মুখেচোখে নকল কৌতূহল ফুটিয়ে বললেন, “বেন্দাবন মাঝি? হু ইজ হি? আ বোটম্যান?”
কৌশিক বলল, “অ্যান্ড হোয়াট ডাজ হি ডু উইথ আ বাটি?”
“বেন্দাবন ইজ অ্যান ওঝা।” সদানন্দবাবু গম্ভীর গলায় বললেন, “আর ওই বাটি হচ্চে তার ওয়েপন। তার বাটি চালানের ওস্তাদি তত আপনারা দ্যাকেননি। দেকলে আর মশকরা করতে হত না, সব্বাই থ মেরে যেতেন। ওরে বাবা রে বাবা, সে তো হুলুস্থুল কাণ্ড মশাই!”
বাস, শুরু হয়ে গেল বাটি চালানের গল্প। যে-গল্পের আদ্যন্ত আমরা একটু আগেই শুনেছি।
তা গল্প এক সময়ে শেষ হল। দু’চারটে কথাও হল তা-ই নিয়ে। অরুণ সান্যাল আর ভাদুড়িমশাই এমন দু’চারটে খোঁচা-মারা মন্তব্য করলেন, যাতে বোঝা গেল যে, বেন্দাবন মাঝির ভয়াবহ সব কীর্তিকলাপের একটি বর্ণও তারা বিশ্বাস করেননি। কৌশিক অবশ্য তার বাপ কিংবা মামার মতো গল্পটাকে একেবারে তুড়ি মেরে উড়িয়ে না দিয়ে বলল, “কী জানি বাবা, হতেও পারে।”
সদানন্দবাবু তাতে আরও রেগে গিয়ে বললেন, “হতে পারে কী হে, হয়েছিল। বলো তত বেন্দাবনকে ডেকে পাটাই, সে এসে নিজের মুকে সব বলুক। তা হলে তো বিশ্বেস হবে?”
কৌশিক এর উত্তরে কী বলত, তা আর শোনা হল না, কেন না সেই মুহূর্তে ফ্ল্যাটের কলিং বেল বেজে উঠল, আর তার একটু বাদে এ বাড়ির কাজের মেয়েটি এসে বলল, “একজন বাবু এয়েছেন, মামাবাবুর সঙ্গে দ্যাক করতে চান।”
.