১০
চায়ের পাত্রে শেষ চুমুক দিলেন ভাদুড়িমশাই। পেয়ালাটাকে নামিয়ে রেখে একটা সিগারেট ধরালেন। তারপর প্রায় স্বগতোক্তির মতন করে বললেন, “তিন পুরুষের মধ্যে এমন মিল বড়-একটা দেখা যায় না। ঈশ্বর শুনেছি এক-একটা মানুষ তৈরি করেই ছাঁচটা সঙ্গে-সঙ্গে ভেঙে ফেলেন। অথচ এদের যেন একই ছাঁচে তৈরি করেছিলেন। আশ্চর্য!”
সদানন্দবাবু বললেন, “শ্যামনন্দনকে আমরা এখনও অব্দি দেকিনি, আর হরিনন্দন তো মারাই গেচেন, তাঁকে দেকার কোনও কতাই তাই ওটে না। ব্যাপারটা তা হলে কী দাঁড়াল? না আমরা দেকচি শুদু রঘুনন্দনকে। দিব্যি দেখতে মশাই। এখেনে আসার হপ্তাখানেক আগে টিভিতে একটা হিন্দি সিনেমা দেকলুম, লেড়কি হো তো অ্যায়সি। একদম তার হিরোর মতন চেহারা।”
কথাগুলো যে ভাদুড়িমশাইয়ের কানে ঢুকেছে, এমন মনে হল না। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “রঘুনন্দনকে বললুম বটে যে, এখানে আমার কাজটা কী, সেটাই এখনও বুঝে উঠতে পারছি না, কিন্তু সেটা ঠিক নয়।”
চমকে গিয়ে বললুম, “তার মানে?”
“মানে আর কিছুই নয়, অন্তত একটা কাজের কথা শ্যামনন্দনের ওই ইনকমপ্লিট চিঠির মধ্যেই রয়েছে। নিন, আর রাত্তির পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার নেই, চিঠিটা এখনই পড়ে ফেলুন। তবে হ্যাঁ, বাড়িতে এখন আর-কেউ না-থাকলেও জনার্দন রয়েছে, তাই দরজাটা বোধহয় বন্ধ করে দেওয়াই ভাল।”
সদানন্দবাবু সোফা থেকে উঠে গিয়ে দরজার ছিটকিনি তুলে দিলেন। ভাদুড়িমশাই ইতিমধ্যে তাঁর পকেট থেকে চিঠিখানা বার করে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ভাঁজ খুলে আমি সেটি পড়তে শুরু করলুম।
ইংরেজিতে লেখা ছোট্ট চিঠি। এখানে সেটি বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছি।
প্রিয় মিঃ ভাদুড়ি,
গোয়েন্দা হিসেবে আপনার খ্যাতির কথা আমার অজানা নয়। বস্তুত সেটা জানি বলেই দিন কয়েক আগে রঘুনন্দনকে আমি আপনার কাছে পাঠিয়েছিলুম। আজও সকালে ও বিকেলে দু’-দু’ বার তার সঙ্গে টেলিফোনে আপনার কথা হয়েছে। আমাদের সমস্যা কী, তার কাছেই তা আপনি শুনেছেন। কিন্তু রঘুনন্দন যা জানে না, তা এই যে, সমস্যা শুধু সেইটুকুই নয়, আসলে আমাদের পারিবারিক সম্মানও এর সঙ্গে জড়িত।
আমি জানি যে, আপনি ব্যস্ত লোক। তবু যে পুলিশে খবর না-দিয়ে আপনার সাহায্য চাইছি, তারও এই একই কারণ। আপনি তো শুধুই এক জন নামজাদা গোয়েন্দা নন, আমাদের পারিবারিক বন্ধুও বটেন। নিজে থেকে কথাটা আপনি জানাননি বটে, কিন্তু হরিনন্দনের কাছেই আমি জেনেছিলুম যে, একাত্তর সালের এপ্রিল মাসে সে যখন দেউলগিরি থেকে বোম্বাই আসছিল, তখন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনিই তার প্রাণরক্ষা করেছিলেন। এবারে আপনি আমাদের মানরক্ষা করুন।
আগামী কালই আপনার এখানে এসে পৌঁছবার কথা। ভেবেছিলুম, তখনই আপনাকে একান্তে সব কথা খুলে বলব। কিন্তু আমার শরীরের অবস্থা ভাল নয়। কাল পর্যন্ত সুস্থ থাকব কি না, কে জানে। তাই এখনই বলে রাখি যে, রঘুনন্দনের উপরে নজর রাখাই হবে আপনার প্রথম কাজ। সে জানে না, এবং তাকে জানাবার দরকারও নেই যে….
চিঠিখানা এখানেই শেষ। শেষ বাক্যটি সম্পূর্ণ হয়নি। চিঠির নীচে লেখকের সই নেই। উপরে তারিখ লেখা রয়েছে : ৪ এপ্রিল, ১৯৯৬।
ভাদুড়িমশাইয়ের হাতে অসমাপ্ত চিঠিখানা তুলে দিয়ে বললুম, “কী মনে হয়?”
“আমার যা মনে হয়, সে তো আপনাদেরও মনে হবার কথা। শরীর নিশ্চয় কিছুদিন ধরেই খারাপ যাচ্ছিল, তাই আর একটা দিনেরও ঝুঁকি নিতে চাননি, আমি এসে পৌঁছবার আগেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন ভেবে বেস্পতিবার রাত্তিরেই চিঠি লিখতে বসে যান। এটাও ভেবেছিলেন যে, চিঠির মধ্যেই সব কথা আমাকে খুলে বলবেন। কিন্তু তার আর সময় পাননি। তার আগেই তিনি এত অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, ডাক্তার ডেকে সেই রাত্তিরেই তাঁকে নার্সিং হোমে ট্রান্সফার করতে হয়।”
সদানন্দবাবু বললেন, “সে তো চিঠি পড়েই বোঝা যাচ্চে। কিন্তু ওই যে রঘুনন্দনের ওপরে আপনাকে নজর রাকতে বলেচেন, ওটার মানে কী?”
ভাদুড়িমশাই বললেন, “জানি না। জানতে হবে। রঘুনন্দন কী জানে না, আর তাকে জানাবার ও দরকার নেই, তাও আমাদের জানা চাই। কিন্তু সে তো পরের কথা। আপাতত আমি আর-একটা কথা ভাবছি।”
“কী?”
“চিঠিখানা এমন জায়গায় রাখা ছিল না, যাতে চট করে ওটা পাঁচ জনের নজরে পড়ে। কিন্তু তাই বলে যে কোনও গোপন জায়গায় ওটা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, তাও নয়। ওটা রেখে দেওয়া হয়েছিল বিছানার পাশে সাইড-টেবিলে রাখা একটা বইয়ের মধ্যে। কেন ওখানে রাখা হয়েছিল? না রাত্তিরে ওই বিছানায় যার শোবার কথা, বইখানার পাতা ওলটালেই চিঠিটা সে যাতে পেয়ে যায়।…আচ্ছা কিরণবাবু, আমরা কে কোন ঘরে শোব, কাল রাত্তিরে যখন তাই নিয়ে কথা হয়, তখন কি সেখানে আর-কেউ ছিল?”
বললুম, “কথা তো হচ্ছিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে। সেখানে রঘুনন্দন ছিল।”
“তা তো জানি। কিন্তু সে ছাড়া আর-কেউ ছিল কি না।”
“ছিল বই কী,” সদানন্দবাবু বললেন, “জনার্দনও ছিল। তবে একে তো সে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল, তার উপরে আবার আপনারা দু’ জনেই তার দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে কতা বলছিলেন তো, হয়তো সেইজন্যেই তাকে আপনারা দেকতে পাননি।”
ভাদুড়িমশাই বললেন, “বটে? প্রোফেসর মিশ্রের চিঠিখানা কে ওই বইয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছিল, তা হলে তো সেটা বুঝেই গেলুম।…সদানন্দবাবু, একটা কাজ করুন তো। রঘুনন্দন আর তার বউ, দু’ জনেই এখন বাড়ির বাইরে, এই ফাঁকে জনার্দনকে দু’-একটা কথা জিজ্ঞেস করা দরকার, তাকে একবার ডাকুন দেখি।”
ডাকতে হল না। ছিটকিনি নামিয়ে দরজা খুলতেই ঘরে ঢুকে জনার্দন জিজ্ঞেস করল, “কিছু লাগবে আপনাদের?”
জনার্দনকে ঢুকতে দেখেই একটু চমকে গিয়ে সদানন্দবাবু তিন পা পিছিয়ে এসেছিলেন। বললেন, “তুমি কি দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলে নাকি?”
“হাঁ, মালিক। ভাবলাম, যদি আপনাদের কোনও দরকার হয়।”
ভাদুড়িমশাই বললেন, “তোমাকেই দরকার। কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব।”
“পুছিয়ে, মালিক।”
“তুমি এদের কাছে…মানে মিশ্রজির কাছে কতদিন আছ?”
“আমার বচপন থেকেই আছি। লেকিন বুড়াবাবু আমাকে নোকরি দেননি। ওঁর পিতাজি দিয়েছিলেন।”
“তার মানে তো এদের চার পুরুষ ধরে তুমি এখানে কাজ করছ।”
“হাঁ, মালিক। বুড়াবাবুর বাবার কাজ করেছি, বুড়াবাবুর কাজ করেছি, বুড়াবাবুর ছেলের কাজ করেছি, আর এখন…”
“বুড়াবাবুর নাতির কাজ করছ। কেমন?”
“হাঁ, মালিক।”
“তার মানে তুমি এদের অনেক কালের পুরনো লোক।” ভাদুড়িমশাই হেসে বললেন, “একেবারে ঘরের লোক বললেই হয়। তাই না?”
শুনে জনার্দনের মুখেও হাসি ফুটল। সেই চতুর হাসি। বলল, “হাঁ, মালিক।”
“তা বুড়াবাবুর ছেলের কথা তোমার মনে পড়ে?”
হাসিটা যেমন হঠাৎ ফুটেছিল, তেমনি হঠাৎই আবার মিলিয়ে গেল। এক মুহূর্ত চুপ করে রইল জনার্দন। তারপর বলল, “আপনি কি হরিনন্দন-খোকাবাবুর কথা বলছেন?”
“হ্যাঁ।”
“রোজই মনে পড়ে, মালিক। তাকে আমি বড়-খোকাবাবু বলতুম। বড় খোকাকে আমি কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি, আর তার কথা মনে পড়বে না?”
“আমি যে তাকে চিনতুম, তা তুমি জানো?”
“জানি, মালিক,” জনার্দন বলল, “সে তো সাঁতার শিখে নাই, তাই জলে ডুবে মারা যেত, লেকিন আপনি তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।”
“এটা তুমি কোত্থেকে শুনলে?”
“বড়-খোকাবাবু নিজেই আমাকে বলেছিলেন। বুড়াবাবুর কাছেও শুনেছি।”
শুনে একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন ভাদুড়িমশাই। তারপরে, যেজন্যে জনার্দনকে ডেকে পাঠাতে বলেছিলেন, একেবারে সরাসরি সেই প্রসঙ্গে এসে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা, জনার্দন, কাল আমি তো পাশের ঘরে শুয়েছিলুম, সেখানে বিছানার পাশে একটা বইয়ের মধ্যে একখানা চিঠি পাই। চিঠিখানা কি তুমিই ওখানে রেখেছিলে?”
“হাঁ, মালিক।” জনার্দন বলল, “ওটা বুড়াবাবুর চিঠি। আপনাকে লিখা।”
“তুমি কি ইংরিজি পড়তে পারো?”
“না, মালিক।”
“তা হলে ওই চিঠি যে আমাকেই লেখা, তা তুমি জানলে কী করে?”
জনার্দন কোনও উত্তর দিল না। দেখলুম, খানিক আগে মিলিয়ে যাওয়া সেই চতুর হাসিটা তার মুখে আবার ফিরে এসেছে।
সদানন্দবাবু বললেন, “চুপ করে রইলে কেন, কী করে জানলে সেটা বলো।”
কথাটাকে এড়িয়ে গিয়ে জনার্দন বলল, “আপনাদের কি আর-একবার চা দেব মালিক? “ ভাদুড়িমশাই হেসে বললেন, “একটু আগেই তো চা খেলুম। তবে আর-একবার যদি দাও তো ভালই হয়।”
“ঠিক আছে।” জনার্দন বলল, “আমি রসুই-ঘরে গিয়ে চায়ের কথা বলছি। একবার বাজারেও যেতে হবে। সকালে মছলি মিলে নাই, বিকালের বাজারে মিলতে পারে। রাতে আপনারা কী খাবেন? চাউর না রোটি?”
সদানন্দবাবুকে দেখিয়ে বললুম, “ইনি রুটি খাবেন, আমরা ভাত।”
“ঠিক আছে, মালিক। মহারাজকে সেটা বলে দিয়ে যাচ্ছি।”
জনার্দন ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
সদানন্দবাবু বললেন, “মহারাজ আবার কে মশাই?”
ভাদুড়িমশাই বললেন, “রান্নার ঠাকুরকে এরা মহারাজ বলে।”
আমি বললুম, “কিন্তু আপনার শেষ কথাটার কোনও জবাবই তো জনার্দন দিল না।”
“না-দিলেও কোনও ক্ষতি হয়নি।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “আমার যা বুঝবার, তা আমি ঠিকই বুঝে গিয়েছি।”
“কী বুঝেছেন?”
“জনার্দন ইংরিজি পড়তে পারে, কিন্তু স্বীকার করছে না। আর নয়তো অসুস্থ হয়ে পড়ার আগে মিশ্রজি নিজেই ওকে এই চিঠিখানার কথা জানিয়ে রেখেছিলেন।
“এর মধ্যে কোনটা সত্যি বলে মনে হয়?”
“দ্বিতীয়টা। কথাটা এইজন্যে বলছি যে, মিথ্যে কথা বলাটা অনেকের ব্যাধি ঠিকই, তারা অকারণেও মিথ্যে কথা বলে, কিন্তু জনার্দনও যে সেই রকমের এক জন কমপালসিভ লায়ার, তা আমার মনে হয় না। সে আমার সব কথারই ঠিকঠাক জবাব দিয়েছে। তা হলে ইংরিজি জানার ব্যাপারেই বা মিথ্যে কথা বলবে কেন। কোনও কারণই তো নেই।…না না, ও মিথ্যে কথা বলেনি, সত্যিই ও ইংরিজি পড়তে পারে না।”
“কিন্তু মিশ্রজিই যে ওকে এই চিঠির কথা জানিয়ে রেখেছিলেন, এটাই বা আপনি ধরে নিচ্ছেন কেন? আর-কেউও হয়তো জানিয়ে থাকতে পারে।”
“আর কে জানাবে।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “দেখুন, আজ সকালে জনার্দন যখন বাগানে আমাকে চা দিতে এসেছিল, তখনই তার কাছ থেকে আমি একটা কথা জেনে নিয়েছি। সেটা এই যে, এদের বাড়িতে জনার্দনকে বাদ দিলে কাজের লোক মোট পাঁচ জন। এক জন ঠাকুর, এক জন বাবুর্চি, এক জন ঝাঁটপাট দেয়, বাসন মাজে, কাপড় কাচে, এক জন মালি আর এক জন ড্রাইভার। এই পাঁচ জনের মধ্যে চার জনই লোক্যাল লোক, কাজকর্ম সেরে রাত ন’টা নাগাদ তারা যে-যার বাড়ি চলে যায়। রাতে এখানে থাকে মাত্র দু’জন লোক, ড্রাইভার লছমন আর জনার্দন। তার মধ্যে আবার লছমন থাকে আউটহাউসের একতলায়। ভিতর-বাড়িতে বাইরের লোক বলতে শুধু জনার্দনই থাকে। ফলে আমাকে ধরে নিতে হচ্ছে যে, এই চিঠির কথা একমাত্র জনার্দনই জানত।”
দরজায় টোকা পড়ল। কিন্তু ‘কাম ইন’ বলতে হল না, তার আগেই পর্দা ঠেলে হাতে চায়ের ট্রে নিয়ে যে লোকটি ঘরে এসে ঢুকল, তার গলার ধবধবে পৈতে দেখে বুঝলুম, এই হচ্ছে এদের রান্নার ঠাকুর। ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চের সময় ডাইনিং হল-এ একে দেখিনি। পরিবেশনের কাজটা যেহেতু জনার্দনই করে, তাই বোধহয় রান্নাঘর থেকে তখনও এর বেরিয়ে আসার দরকার হয় না।
সেন্টার টেবিলে ট্রে’টা নামিয়ে রেখে লোকটি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নতুন করে আবার একটা সিগারেট ধরালেন ভাদুড়িমশাই। তারপর বললেন, “আসলে ব্যাপারটা কী জানেন? চিঠিখানা পড়ে যা বুঝতে পারছি, পরশু রাতে ডিনার শেষ করেই মিশ্রজি অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। তাঁর ভয় হয়, এর পরে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। সেক্ষেত্রে আমার সঙ্গে তার দেখাই হয়তো হবে না। তাই তখনই তিনি ঠিক করেন, তাঁর যা বলবার কথা, সেটা তিনি একটা চিঠি লিখে আমাকে জানাবেন। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি জনার্দনকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন যে, তিনি একটা চিঠি লিখে রাখছেন, যদি তিনি হঠাৎ খুব-বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তো জনার্দন যেন পরদিন সেটা আমার হাতে তুলে দেয়।”
এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন ভাদুড়িমশাই। তারপর বললেন, “এ-চিঠি যে আর-কারও হাতে পড়া চলবে না, এমনকি আদৌ যে তিনি আমাকে একটা চিঠি লিখেছেন তাও কারও জানা চলবে না, আমার ধারণা, সেটাও মিশ্রজি জনার্দনকে বলে রেখেছিলেন। আর তাই…’
সদানন্দবাবু বললেন, “আর তাই আপনি যে রাত্তিরে ও-ঘরে শোবেন, এটা শোনার পর জনার্দন ওই ঘরে ঢুকে এমন জায়গায় চিঠিখানা রেখে এসেছিল, যাতে চট করে ওটা আপনি পেয়ে যান।”
“ঠিক তা-ই,” ভাদুড়িমশাই বললেন, “কিন্তু চিঠিখানা মিশ্রজি শেষ করতে পারেননি। লিখতে-লিখতেই তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।”
বললুম, “অসুস্থ হয়ে না-পড়লে তো চিঠিখানা আপনার হাতে পৌঁছে দেবার কোনও দরকারই তাঁর হত না, যা বলার তা নিজের মুখেই তিনি আপনাকে বলতেন। কিন্তু একটা কথা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। চিঠির কথা রঘুনন্দনকে না-বলে তিনি জনার্দনকে বলতে গেলেন কেন?”
“তার উত্তর তো ওই ইনকমপ্লিট চিঠির মধ্যেই রয়েছে।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “যে-চিঠির মধ্যে তিনি রঘুনন্দনের উপরে নজর রাখতে বলছেন, সেইসঙ্গে এও বলছেন যে, রঘুনন্দন কোনও একটা বিষয়ে জানে না, আর সেটা তার জানারও দরকার নেই, সেই চিঠির কথা যে তিনি রঘুনন্দনের কাছে চেপে যাবেন, এটাই তো স্বাভাবিক।”
“কিন্তু রঘুনন্দন যা জানে না, সেটা কী?”
ভাদুড়িমশাইয়ের চোখ হঠাৎ সরু হয়ে এল। বললেন, “সেটা আমি আন্দাজ করেছি। কিন্তু আন্দাজটা নির্ভুল কি না, তা জানার জন্যে আমাকে গোটা কয়েক ফোন করতে হবে। কিন্তু তার আগে একটা ব্যাপারে রঘুনন্দনের সঙ্গে একটু কথা বলা দরকার।”