জাল-ভেজাল – ৯

খাওয়া আমার মাথায় উঠে গিয়েছিল। খবরে স্পষ্ট করে লেখা হয়েছে যে, মৃত লোকটির কপালে রয়েছে একটি পুরনো ক্ষতচিহ্ন। তার মানে কি এ সেই লোক? ভাদুড়িমশাই নিশ্চয় সেই রকমই মনে করেন। তা নইলে আর তিনের পাতার ছোট্ট এই খবরটিকে তিনি আলাদা করে দাগ দিয়ে রাখবেন কেন? তিনি এও বলেছেন যে, পদ্মর আগে এই লোকটারই মরার কথা ছিল। কেন? সদানন্দবাবুর পকেটে যে-লোকটা চাঁদনি স্টেশনে সে-দিন জাল পাঁচশো টাকার নোট গুঁজে দিয়েছিল, তার কপালে একটা কাটা দাগ রয়েছে, এটা জানাজানি হয়ে গেছে বলে? আর পুলিশের পক্ষে সেইজন্যে তাকে ধরে ফেলা সহজ হবে বলে?

কী খাচ্ছি সে-দিকে মন নেই, খেতে-খেতে শুধু এইসবই আমি ভেবে যাচ্ছিলুম। একটা কথা তো জলের মতো পরিষ্কার। সেটা এই যে, দেশের নানান জায়গা থেকে এই যে জাল-নোটের খবর আসছে, এ-সব নোট ছাপানো আর এখানে-ওখানে ছড়িয়ে দেওয়া কারও একার কাজ নয়। নোটগুলি বিদেশে ছাপা হলেও কারা কীভাবে সেগুলি এ-দেশে নিয়ে আসছে? আর হ্যাঁ, এ-দেশে সেগুলি পৌঁছেই বা দেওয়া হচ্ছে কাদের কাছে? যাদের কাছেই পৌঁছোক, তারাই নিয়েছে এ-দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই জাল-নোটগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ।

অর্থাৎ এটা একটা চক্রের কাজ। কপালে-কাটা-দাগওয়ালা লোকটা সেই চক্রের হয়ে কাজ করছে। সে নেহাতই একটি চুনোপুঁটি। কিন্তু তাকে নিয়েও বিপদ আছে। পুলিশ যদি তাকে ধরে তো হাজতে ঢুকিয়ে উত্তম-মধ্যম দিলে সে হয়তো ফাঁস করে দেবে যে, কারা তাকে এই কাজে লাগিয়েছে আর কাদের কাছ থেকে সে পেয়েছে এই জাল টাকা। চক্রের লোকগুলোকে ধরে ফেলাও তখন পুলিশের পক্ষে মোটেই শক্ত হবে না।

চক্রটা যারা চালাচ্ছে, এই রকমের আশঙ্কা তো তাদের হতেই পারে। হয়েওছে নিশ্চয়। আর তা যদি হয়ে থাকে তো একটা কাজই তাদের পক্ষে করা স্বাভাবিক। কাজটা আর কিছুই নয়, পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই কপালে-কাটা-দাগওয়ালা লোকটাকে এই ধরাধাম থেকে সরিয়ে দেওয়া। যাতে সে কিছুই ফাঁস করতে না পারে। ঠিক তা-ই তারা করেছে। তারা জানে যে, মরা লোক কথা বলে না।

খাব কী, প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করতে-করতে এই সব কথাই আমি ভাবছিলাম, প্লেট থেকে আর মুখে কিছুই পৌঁছচ্ছিল না। ভাদুড়িমশাই সেটা লক্ষ করে থাকবেন। বললেন, “কী ব্যাপার, খিদে নেই বুঝি? কিছুই তো খাচ্ছেন না?”

বললুম, “না…মানে ভাবছিলুম যে…”

“আরে মশাই, ভাবনাচিন্তা করার সময় তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। যা ভাববার, পরে ভাববেন। এখন খেতে বসেছেন, অন্য ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে মন দিয়ে খেয়ে যান।”

“কী জ্বালা, খাওয়ায় মন দিতে পারছি কোথায়? লোকটা যদি মরেই গিয়ে থাকে…আই মিন যদি সে খুনই হয়ে থাকে, তা হলে তো আর কোনও আশাই নেই!”

“কীসের আশা নেই?”

“যাদের হয়ে ও কাজ করছিল, তাদের খোঁজ পাবার।”

“তা ঠিক।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “লোকটা বেঁচে থাকলে তাদের খোঁজ পাওয়া যেত। বেঁচে নেই, অতএব তাদের খোঁজ পাওয়া যাবে না। এটা আপনি একেবারে টু হানড্রেড পার্সেন্ট ঠিক কথা বলেছেন। কিন্তু এখন আর তা নিয়ে ভেবে কী হবে। এখন খেয়ে নিন। তারপর ভেবেচিন্তে দেখা যাবে যে, অন্য কোনও উপায়ে তাদের নাম-ঠিকানা বার করা যায় কি না।”

যে-ভাবে, যে-রকম হাল্কা গলায় এই কথাগুলি ভাদুড়িমশাই বললেন, তাতে আমার মনে হল, এর মধ্যে কোথাও কিছু একটা রহস্য রয়েছে, যেটা উনি এখুনি ভাঙতে চান না। বললুম, “কী ব্যাপার বলুন তো। এ-লোকটা কি সেই লোক নয়? অবশ্য কপালে কাটা দাগ থাকলেই যে সেই লোক হতে হবে, এমনও কোনও কথা নেই। ও-রকম দাগ কি পুরনো জখমের চিহ্ন অন্য লোকেরও থাকতে পারে।”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “খাওয়া শেষ করে দোতলায় উঠে আমার ঘরে আসুন। তখন এ নিয়ে কথা হবে।”

একটা ব্যাপার লক্ষ করে একটু বিস্ময়বোধ করছিলুম। ভাদুড়িমশাইয়ের সঙ্গে এই যে আমার এত কথা হল, সদানন্দবাবু এর মধ্যে একটিবারও মুখ খোলেননি। গম্ভীর মুখে চুপচাপ তিনি খেয়ে যাচ্ছিলেন। অথচ এমনটা কখনও হয় না। যে প্রসঙ্গে তাঁর কোনও বক্তব্য থাকার কথাই নয়, তাতেও তিনি গোঁত্তা মেরে ঢুকে পড়েন, নিজের কোনও মতামত প্রকাশ না-করলেও মাঝেমধ্যে দুটো-একটা ফোড়ন কাটেন। আর এ তো বলতে গেলে তাঁরই প্রসঙ্গ। যে-লোকটা উপকার করার ছলে তাঁর মস্ত অপকার করে গেছে, এবং ডিস্টিংগুইশিং মার্কটা দেখে রেখেছিলেন বলে যাকে একমাত্র তাঁর পক্ষেই শনাক্ত করা সম্ভব, সেই লোকটার মৃত্যু নিয়ে কথা হচ্ছে, অথচ সদানন্দবাবু নীরব, এটা কী করে হয়?

বললুম, “কী হল সদানন্দবাবু, চুপ করে আছেন কেন?”

ভদ্রলোক তাতে মুখ নিচু করে, যেমন খাচ্ছিলেন, তেমন খেতে-খেতেই ভাদুড়িমশাইয়ের কথার পুনরক্তি করে বললেন, “খেয়ে নিয়ে উপরে চলুন, তখন কথা হবে।”

খাওয়া শেষ করে দোতলায় উঠে ভাদুড়িমশাইয়ের ঘরে ঢুকে দেখি, তাঁর মুখচোখের চেহারা এখন একেবারে অন্যরকম। হাসতে-হাসতে বললেন, “আপনি তো অটো নিয়ে দিব্যি একটা চক্কর দিয়ে এলেন। তো সেই ফাঁকে আমিও কয়েকটা কাজ সেরে নিলুম।”

“আপনি তো বলেছিলেন, গোটা কয়েক চিঠি লিখে ফেলবেন।”

“চিঠি লিখেছি, ফোনও করেছি।”

“কাকে?”

“লালবাজারের শোভন চৌধুরিকে। কলকাতার কাগজ দিল্লিতে আমাদের এই আস্তানায় এসে পৌঁছবার পরই শোভনের কাছ থেকে আসল খবরটা পেয়ে যাই।”

কিছুই বোধগম্য হচ্ছিল না। বললুম, “কীসের খবর?”

“কালু মল্লিকের খবর।” ভাদুড়িমশাই হাসছিলেন। হাসতে-হাসতেই বললেন, “কলকাতার আন্ডার-ওয়ার্ল্ড যাকে ন্যাটা কালু বলে চেনে।”

ধাঁধা আরও বেড়েই যাচ্ছিল। বললুম, “প্লিজ মিস্টার ভাদুড়ি, যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়, যা বলার স্পষ্ট করে বলুন, আর দগ্ধে মারবেন না। হু ইজ দিস কালু মল্লিক?”

“বলছি, বলছি, সবই বলছি,” মুখের হাসিটাকে ধরে রেখেই ভাদুড়িমশাই বললেন, “বাইপাসের ধারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওই যে একটা ডেডবডি পাওয়া গেছে…এই মানে যার কপালে একটা পুরনো ক্ষতচিহ্ন রয়েছে, সেটা এই কালু মল্লিকের।”

“তার মানে…”

“তার মানে এই ন্যাটা কালুই চাঁদনি স্টেশনে আমাদের সদানন্দবাবুর পকেটে জাল-নোটটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল।”

এতক্ষণে সদানন্দবাবু মুখ খুললেন। রীতিমত উত্তেজিত ভঙ্গিতে বললেন, “সেইসঙ্গে আমার পাঁচশো টাকার জেনুইন নোটটা যে হাপিস করে দিয়েছিল, সেটাও বলুন।”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “এই ন্যাটা কালু হচ্ছে একটি পাকা পকেটমার। জাল নোটের চক্রটা যারা চালায়, সম্ভবত সেই জন্যেই তারা একে রিক্রুট করেছিল। লোকটা যেহেতু পকেটমার, তাই তারা বুঝেছিল যে, একে দিয়ে এই কাজটা করিয়ে নেওয়া খুবই সহজ হবে।”

বললুম, “এই কাজ মানে নিরীহ মানুষদের পকেটে জাল টাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার কাজ?”

“রাইট।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “কিন্তু কালু তো জাত-পকেটমার। তাই, শুধু জাল-টাকা ঢুকিয়ে সে খুশি থাকবে কেন, একই সঙ্গে সুযোগমতো সে আসল টাকা সরিয়ে ফেলত।”

সদানন্দবাবু বললেন, “যেমন আমার আসল টাকা সরিয়েছিল।”

“আর ওটাই করেছিল বিশাল ভুল। বলতে গেলে এ একেবারে নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারার মতো ব্যপার। ন্যাটা কালু স্রেফ ওই একটা ভুলের জন্যেই ফেঁসে গেল।”

ভাদুড়িমশাই যে এ-সব কথা কেন বলছেন, কী এর তাৎপর্য, কিছুই আমি বুঝতে পারছিলুম না। অথচ সদানন্দবাবু দেখলুম মিটিমিটি হাসছেন। তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে, ভাদুড়িমশাইয়ের দিকে তাকিয়ে অগত্যা আমাকে কবুল করতে হল যে, কিছুই আমার মাথার মধ্যে ঢুকছে না। দু’হাত জোড় করে বললুম, “দয়া করে একটু যদি বুঝিয়ে বলেন তো বড্ডই ভাল হয়।”

“বলছি, বলছি।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “কিন্তু তার আগে ব্যাপারটা একবার আদ্যন্ত ভেবে দেখুন তো। সদানন্দবাবুর পকেটে এই লোকটা যে গত চৌঠা মার্চ তারিখে পাঁচশো টাকার একটা জাল নোট ঢুকিয়ে দিয়েছিল, তা আমরা জানি।”

সদানন্দবাবু বললেন, “সেইসঙ্গে হাতিয়ে নিয়েছিল আমার পাঁচশো টাকার আসল নোটখানা।”

“তাও জানি। ওটা খুবই ভাইটাল ব্যাপার, তবে ওটার কথায় একটু পরে আসব। তার আগে ওই জাল নোটের কথাটা একটু ভেবে দেখুন।”

বললুম, “কী ভাবব?”

“ভাববার আছে, ভাববার আছে।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “লোকটা যে একটা পকেটমার, শোভনের কাছ থেকে তা আমরা জেনেছি। কিন্তু পকেটমাররা তো নেহাতই অল্প জলের মাছ, স্রেফ চুনোপুঁটি। তারা লোকের পকেট হাল্কা করে, কিন্তু জাল-নোট বানায় না। যারা বানায়, ন্যাটা কালুর মতো চুনোপুঁটিদের তারা কাজে লাগিয়েছে। কাজটা কী? না নিরীহ গোবেচারা গোছের লোকদের পকেটে জাল নোট গুঁজে দিতে হবে। সেই বাবদে কিছু টাকাও পাবে তারা। তা সদানন্দবাবুর পকেটে ওই যে পাঁচশে টাকার একখানা জাল নোট গুঁজে দিয়েছিল, কালুকেও সেই বাবদে কিছু টাকা নিশ্চয় তারা দিয়েছে। কত টাকা? তা এই ধরুন, দশ বিশ কি পঞ্চাশ টাকা, ফর ইচ অ্যান্ড এভরি ফাইভ হান্ড্রেড রুপি ফেক নোট। কী, ঠিক বলছি তো?”

“বলে যান। তারপর?”

“পার জাল-নোট কালু কত ফি পেত, দ্যাট’স নট ইম্পর্ট্যান্ট। আসল কথা হচ্ছে, লোক বেছে-বেছে পাচার করার জন্যে কালুকে কি আর নিতান্ত একখানাই জাল-নোট দেওয়া হয়েছিল? তা নিশ্চয় নয়। আরও অনেক জাল-নোট তাকে দেওয়া হয়ে থাকবে। আর, যেমন আমাদের সদানন্দবাবুর পকেটে ঢুকিয়েছে, তেমন নিশ্চয় আরও কিছু লোকের পকেটে কালু ঢুকিয়ে দিয়েছে আরও বেশ কিছু জাল নোট।”

একটুক্ষণের জন্যে চুপ করলেন ভাদুড়িমশাই। একটা সিগারেট ধরালেন। তাতে লম্বা একটা টান দিয়ে ধোঁয়াটাকে মুখের মধ্যে আটকে রাখলেন কয়েক সেকেন্ড। তারপর মুখ খুলে ধোঁয়াটাকে গলগল করে বার করে দিয়ে বললেন, “মজা কী জানেন, যে-চক্রটা এর পিছনে রয়েছে, একা কালুকেই যে তারা কাজে লাগিয়েছে, তা নয়, আর একা সদানন্দবাবুর পকেটেই যে তারা জাল-নোট ঢুকিয়ে দিয়েছে, তাও আমি বিশ্বাস করি না, অথচ এই সর্বনাশা খেলার যারা ভিকটিম…আই মিন যাদের পকেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে জাল-নোট, পুলিশকে তারা কেউই কিছু জানায়নি। না জানিয়েছেন সদানন্দবাবু, না অন্য কেউ।”

বললুম, “তার মানে তো সুরিন্দর কাল ওই যে শোভনকে ফোন করেছিল, তার আগে পর্যন্ত কলকাতার পুলিশ এ-ব্যাপারে কিছুই জানত না। বাই দ্য ওয়ে, আপনিও তো আজ শোভনকে ফোন করেছিলেন।”

“করেছিলুম। কিন্তু করে দেখলুম, ওখানকার পুলিশ সবই জানে। ইন ফ্যাক্‌ট সদানন্দবাবুর জেনুইন নোটখানাকে হাপিস করে দিয়ে যে সেখানে জাল-নোট ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাও তারা জানত। কবে থেকে জানত জানেন?”

“কবে থেকে?”

“গত শনিবারের আগের শনিবার থেকে। তার মানে চৌঠা মার্চ থেকে। তবে সুরিন্দরের কাছে শোভন সে-কথা ফাঁস করেনি।’

আমার ধাঁধা কাটছিল না। বললুম, “কিন্তু সদানন্দবাবু তো তাঁর পকেটমার হবার কথা পুলিশকে জানাননি। পুলিশ তা হলে এত সব ডিটেলস জানল কী করে?

ভাদুড়িমশাই হেসে বললেন, “কিরণবাবু, কলকাতা-পুলিশের এফিসিয়েন্সি যে আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে, সেটা ঠিক। কিন্তু তাই বলে তাদের যতটা অপদার্থ আপনারা ভাবেন, একে তো তারা ততটা অপদার্থ নয়, তাদের ইনফর্মেশান-সোর্সের নেটওয়ার্কটা যতই ধসে গিয়ে থাক, তার কিছু-কিঞ্চিৎ এখনও অবশিষ্ট আছে, আর তার উপরে আছে লাক বলে একটা ফ্যাক্টর।”

“লাক…মানে ভাগ্য?”

“হ্যাঁ, ভাগ্য।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “নইলে ভাবুন, তার মনিবের আসল নোটটা যে পকেটমার হয়েছে, আর তার বদলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে একটা জাল-নোট, এই কথাটা শুনে ফেলার পরে, ট্যাংরার বস্তিতে ফেরার আগে, পদ্মদাসী আবার সেই ওষুধের দোকানে যাবে কেন, আর সেখানে গিয়ে তার শোনা-কথাটা সবাইকে বলবেই বা কেন?”

সদানন্দবাবু বললেন, “সে কী, পদ্ম আবার ওষুধের দোকানে ফিরে গিয়েছিল? কই, আমি তো সে-কথা জানতুম না।”

“কী করে জানবেন? পদ্ম এই যে দ্বিতীয়বার সেদিন ওষুধের দোকানে গিয়েছিল, তার পরে তো সে আর আপনাদের বাড়িতে ফিরে যায়নি। সেখান থেকেই সে চলে গিয়েছিল তার ট্যাংরার বস্তিতে।”

“কিন্তু পদ্ম আবার ওষুধের দোকানে গিয়েছিল কেন?”

“গিয়েছিল তার মনিবের মান বাঁচাতে। দোকানের লোকদের বলতে যে, তার মনিব জেনেশুনে একটা জাল-নোট চালাবার মতো খারাপ লোক নন, তাঁর পকেটমার হয়ে গিয়ে আসলের জায়গায় নকল নোট এসে গেসল, আর সেই নকল নোটকেই তিনি আসল নোট বলে ধরে নিয়েছিলেন।”

সদানন্দবাবু আর কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। ফলে, প্রশ্নটা আমাকেই করতে হল। বললুম, “লালবাজার তা হলে ওই ওষুধের দোকান থেকেই খবরটা পেয়ে যায়?”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “সরাসরি পায়নি। দেশে যে একটা জাল নোটের কারবার গজিয়ে উঠেছে, কাগজে তো তার খবর কিছু কম বেরোয় না, সে-সব খবর দোকানের মালিকের চোখেও নিশ্চয় পড়ে থাকবে, তিনি তাই আর দেরি না করে পদ্মদাসীর কথাটা লোকাল থানাকে জানিয়ে দেন, আর লোকাল থানাও আঁচ করে যে, এর মধ্যে একটা চক্রের হাত থাকা কিছু বিচিত্র নয়। ফলে তারা আর ঝুঁকি না নিয়ে লালবাজারের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টকে সব জানিয়ে দেয়।”

“শোভনই আপনাকে এ-সব কথা বলল?”

“শোভন বলল, শোভনের ওপরওয়ালাও বললেন। তবে কোনও রাখঢাক না করে তিনি জানালেন যে, চক্রটাকে ভাঙবার জন্যে বাছাই-করা জনাকয় লোককে নিয়ে একটা টিম গড়া হয়েছে ঠিকই, আর টিমের প্রত্যেকটি লোকই খুব খাটছে বটে, বাট ইয়েস, দে মাস্ট গিভ দ্য ক্রেডিট হোয়্যার ইট’স ডিউ, এ-ব্যাপারে শোভনের কৃতিত্বই সবচেয়ে বেশি।”

“এ-ব্যাপারে শোভন আসছে কোত্থেকে?”

“যে-টিমটা গড়া হয়েছে, তারা কাজ করছে শোভনেরই লিডারশিপে, আর শোভন এগোচ্ছে আমি যে লাইনের কথা আপনাদের বলেছি, একেবারে সেই লাইনে।”

ভাদুড়িমশাই যে কোন লাইনের কথা আমাদের বলেছিলেন, তক্ষুনি সেটা মনে করতে পারলুম না। বললুম, “লাইনটা কী?”

“বাঃ মনে নেই?” ভাদুড়িমশাই অসহিষ্ণু ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ওই যে সদানন্দবাবুর আসল নোটখানা সরিয়ে ফেলেছিল, ওটাই হয়ে গেল তার মস্ত ভুল। ব্যাটা লোভ সামলাতে পারল না। ফলে যা হয় আর কি, লোভে পাপ, ব্যাটা সেই পাপের ফলে পস্তাল। নিজেই ফাঁস করে দিল ওর আইডেন্টিটি। আমি বুঝে গেলুম, এ-লোকটা পকেটমার। আপনাদের কি তা বলিনি? আমি তো বলেইছি যে, জাল-নোটের চক্র এ-কাজে পকেটমারদের লাগিয়েছে।”

বললুম, “আপনি তো সেটা বুঝেছেন। কিন্তু শোভন বুঝল কী করে?”

“বুঝল, কারণ, পদ্ম ওই যে দ্বিতীয়বার ওষুধের দোকানে গিয়ে বলেছিল যে, তার মনিবের পকেট থেকে আসল নোট সরিয়ে নিয়ে জাল নোট ঢোকানো হয়েছে সেই কথাটাই তো ওষুধের দোকান থেকে লোকাল থানা হয়ে লালবাজারে পৌঁছয়, আর গোটা ব্যাপারটার মোডাস অপারেন্ডি থেকেই শোভন বুঝে যায়, এটা কোনও পাকা পকেটমারের কাজ। ইট’স অ্যাজ সিম্পল অ্যাজ দ্যাট।”

রহস্যটা আস্তে-আস্তে পরিষ্কার হয়ে আসছিল। বললুম, “তারপর?”

ভাদুড়িমশাই হেসে বললেন, “তার পরের ব্যাপারটা বোঝার আগে দুটো কথা জেনে রাখুন। প্রথমত, বড়-বড় সব শহরেই পকেটমারদের মধ্যে এরিয়া ভাগ করা থাকে। যে-গ্যাঙের যেটা এরিয়া, সেই গ্যাঙের লোকেরা সেই এরিয়ার বাইরে পারতপক্ষে নাক গলায় না। বলতে পারেন আন্ডারওয়ার্ল্ডে এটা একটা চুক্তির মতো। ভদ্রলোকেব চুক্তি। না না, অবাক হবেন না। নিজেদেরই স্বার্থে এই চুক্তিটা তারা করে নিয়েছে, যাতে এক গ্যাঙের তল্লাটে আর-এক গ্যাঙের লোক না ঢুকে পড়ে, আর তার পরিণামে না তাদের নিজেদের মধ্যেই একটা লাঠালাঠি লেগে যায়। তো এই হচ্ছে প্রথম কথা।”

সদানন্দবাবু উদ্‌গ্রীব হয়ে সব শুনছিলেন। ভাদুড়িমশাই চুপ করতে বললেন, “দ্বিতীয় কথাটা কী?”

“দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, সব শহরের পুলিশই এটা জানে। জানে কলকাতার পুলিশও। আর জানে বলেই শহরের হরেক এরিয়ার পকেটমারদের এই গ্যাংগুলোর কাজ-কারবারের খোঁজ যাতে ঠিকমতো পাওয়া যায়, পুলিশকে তার জন্যে পুষতে হয় কিছু ইনফর্মার। …না না, আবার বলছি, অবাক হবেন না। আরে মশাই, এমন কথা কি কখনও শোনেননি যে, চৌরঙ্গির কোনও সিনেমা-হল কি হোটেলের সামনে কারও একটা দামি কলম কি হাজার কয়েক টাকা পকেটমার হল, আর তিনি গিয়ে লালবাজারে সে-কথা জানাবার পরে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পুলিশ সেটা উদ্ধার করে দিল…কী, কখনও শোনেননি এমন ঘটনার কথা?”

বললুম, “শুনেছি। এই রকমের একটা ঘটনার খবর তো কিছুকাল আগে কাগজেও বেরিয়েছিল। একজন বিদেশি ছাত্র…যদ্দুর মনে পড়ছে জাপানি ছাত্র, নাম তাকাহাসি…কলকাতায় বেড়াতে এসে যখন ঘোরাঘুরি করছে, তখন ওই চৌরঙ্গিতেই তার টাকাপয়সা আর পাসপোর্ট খোয়া যায়। কখন যে কে তার পকেট থেকে নিঃশব্দে সে-সব তুলে নিয়েছে, বেচারা কিচ্ছু টের পায়নি। অবস্থাটা একবার ভেবে দেখুন। একে তো পকেট বিলকুল ফাঁকা, তার উপরে বিদেশে-বিভুঁইয়ে পাসপোর্ট খোয়া যাওয়া মানে তো মাথার উপরে আকাশ ভেঙে পড়া! তা পুলিশে সে-কথা জানাবার পরে মাত্র ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই কিন্তু তারা তার সবকিছু উদ্ধার করে দিয়েছিল।”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “কী করে উদ্ধার করতে পেরেছিল বলে আপনার মনে হয়?”

“ওই ইনফর্মারদের কল্যাণে?”

“রাইট। স্রেফ ওই ইনফর্মারদের কল্যাণে।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “তারাও তো আন্ডারওয়ার্ল্ডেরই লোক, তারাই পুলিশকে সব জানিয়ে দেয়।”

ভাদুড়িমশাই আবার একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর ফের একটা সিগারেট ধরিয়ে, গোটাকয়েক টান মেরে সেটাকে অ্যাশট্রেতে পিষে দিয়ে বললেন, “ভাগ্যের কথা বলছিলুম না? শোভন ইজ আ লাকি চ্যাপ। পদ্মদাসীর কথাটা ওই যে ওষুধের দোকান থেকে লোকাল থানা হয়ে লালবাজারে পৌঁছল, তাতেই শোভন বুঝে গেল যে, লোকটা নির্ঘাত পকেটমার। তারপর বুধবার আটুই মার্চ কলকাতা থেকে কিরণবাবুর ফোন পাবার পরে আমিও আর দেরি না-করে বাঙ্গালোর থেকে শোভনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি। কালপ্রিটের ডিস্টিংগুইশিং মার্কটার কথা তো তার আগে রবিবার…মানে পাঁচুই মার্চ তারিখে…সদানন্দবাবুর মুখেই শুনেছিলাম, শোভনকে সেটাও জানিয়ে দিই। ফলে তার কাজ আরও সহজ হয়ে যায়। আন্ডারওয়ার্ল্ডের ইনফর্মারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে জানিয়ে দেয় যে, কাজটা হয়েছে চাঁদনি স্টেশনে, সুতরাং কালপ্রিট নিশ্চয় এমন গ্যাঙের লোক, চাঁদনি স্টেশন যাদের অপারেশনের এরিয়ার মধ্যে পড়ে। আর হ্যাঁ, তার কপালে একটা কাটা দাগ রয়েছে।”

“তারপর?”

“তারপর আর কী, ইনফর্মারদের কাছ থেকে একেবারে সঙ্গে-সঙ্গেই মিলে গেল তার হদিশ। লোকটার নাম কালু, ডান হাতের তুলনায় বাঁ হাত বেশি চলে, লেফ্‌টি, তার থেকেই ক্রমে ন্যাটা কালু নামটা চালু হয়ে যায়।”

সদানন্দবাবু বললেন, “পুলিশ তাকে অ্যারেস্ট করেচে নিশ্চয়?”

আমি বললুম, “অ্যারেস্ট করবে কী, সে তো মারা গেছে! কাগজে তো তারই খবর দেখলুম।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “দাঁড়ান, সবটা আগে শুনুন।…না, পুলিশ তাকে অ্যারেস্ট করেনি। তবে তাকে ওয়াচে রেখেছিল। সারাক্ষণ তাকে শ্যাডো করে যাচ্ছিল। দেখছিল, সে কোথায় কোথায় যায় আর কারাই বা তার কাছে আসে। ন্যাটা কালু ইজ আ স্মল ফ্রাই, তাকে অ্যারেস্ট করে তো আর মস্ত কোনও লাভ হবে না, পুলিশ তাই তার মারফতে চেষ্টা করছিল জাল-টাকার চক্রের পিছনে যারা রয়েছে, সেই রাঘব-বোয়ালদের কাছে পৌঁছতে।”

“পৌঁছতে পারা গেছে?”

“এখনও পারা যায়নি।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “তার কারণ, পুলিশের নজর এড়িয়ে এরই মধ্যে একদিন তিলজলার ওদিকে একটা বস্তি-এরিয়ায় সে হঠাৎ ভ্যানিশ করে যায়। পুলিশ তাকে সেখানে ঢুকতে দেখেছিল, কিন্তু তারপরে আর বেরিয়ে আসতে দেখেনি।”

“এ-ব্যাপারে শোভন কী বলছে?”

“শোভনের ধারণা, পুলিশ যে তাকে শ্যাডো করছে, এটা আঁচ করে ন্যাটা কালু নিজেই গা ঢাকা দেয়, আর নয়তো ন্যাটা কালু নিজে কিছুই আঁচ না-করলেও জাল-চক্রের পাণ্ডারা বুঝতে পেরে যায় যে, ন্যাটা কালুর পিছু নিয়ে পুলিশ আসলে তাদেরই কাছে পৌঁছতে চাইছে। আর তা যদি তারা বুঝতে পেরে থাকে তো কালুকে গুম করে দিয়েছে তারাই।”

আমি বললুম, “এত আন্দাজ করেও শোভন চৌধুরি হাত গুটিয়ে বসে রইল?”

“মোটেই না।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “শোভন কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবার ছেলে! লোকাল থানাকে সঙ্গে-সঙ্গেই সে জানায় যে, তাদের এলাকায় একজন ‘ওয়ান্টেড পার্সন’ গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। জানায়, লোকটির কপালে আছে কাটা দাগ। জানায়, ওই এলাকা থেকে সে যেন কিছুতেই সরে পড়তে না পারে। সেইসঙ্গে বাইপাসে বাড়িয়ে দেয় পুলিশ-পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা।”

“তাতে কাজ হয়?”

ভাদুড়িমশাই উত্তর দেবার আগেই ঘরের টেলিফোন বেজে উঠল। ফোন ধরে অদুড়িমশাই বললেন, “ইয়েস?…হ্যাঁ, আমিই কথা বলছি।…এটা কখন এল?…তা হুমকি যে ফের দেওয়া হবে, সে তো জানাই ছিল। ভয় পেয়ো না। বরং এক কাজ করো। এখন তো সাড়ে তিনটে বাজে। বাড়ি ফিরবে কখন?…ঠিক আছে, বাড়ি যাও, তারপর সেখান থেকে ছ’টা নাগাদ এখানে চলে এসো।”

ফোনটাকে ক্রেডলে নামিয়ে রেখে ভাদুড়িমশাই আমাদের দিকে তাকাতেই আমি বললুম, “অমু?”

“হ্যাঁ। ফের হুমকি দিয়ে বলেছে যে, মুন্নার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে কোনও লাভ হবে না। উইদিন অ্যনাদার টু ডেজ হোর্ডিংগুলো যদি নামিয়ে না নেয়, আর কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া যদি বন্ধ না করে তো দুপুরবেলায় বাড়িতে ঢুকে মুন্নাকে খুন করে যাবে। তো ও-কথা এখন থাক, আপনি কী যেন জিজ্ঞেস করছিলেন?…ও হ্যাঁ, শোভন যে-সব ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে কাজ হচ্ছে কি না, এই তো?”

“হ্যাঁ।”

“তা হলে শুনুন,” ভাদুড়িমশাই বললেন, “লোকাল থানা থেকে কয়েকটা বস্তিতে হানা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কালুকে তারা খুঁজে বার করতে পারেনি। তবে, বাইপাসে পুলিশ-পেট্রোলিং বাড়াবার ফলে যে কাজ হয়েছে, সেটা মানতেই হবে।”

“কী রকম?”

“বলছি, গত শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ একটা পুলিশের জিপ টহল দিতে বেরিয়ে দেখতে পায় যে, একটা অ্যাম্বাসাডর গাড়ি পার্ক সার্কাস কানেক্টর থেকে দারুণ স্পিডে এসে মোড়ের আইল্যান্ডটাকে চক্কর না-দিয়েই ডাইনে বাঁক নিয়ে বালিগঞ্জ কানেক্টরের দিকে ছুটতে থাকে। পুলিশের জিপের লোকেদের সন্দেহ হয়, অ্যাম্বাসাডরটা নিশ্চয়ই অ্যাকসিডেন্ট করে পালাচ্ছে। তারাও স্পিড বাড়িয়ে পিছু নেয়। কিন্তু অ্যাম্বাসাডরটাও, সম্ভবত পুলিশ পিছু নিয়েছে বুঝতে পেরেই, ছুট লাগায় একেবারে দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্যের মতো। আর সেই ছুটন্ত অবস্থাতেই একটা লোককে পথের ধারে ছুড়ে ফেলে দিয়ে উধাও হয়ে যায়।”

সদানন্দবাবু বললেন, “সে কী, পুলিশ তাদের উধাও হতে দিল?”

“হ্যাঁ, দিল। না-দিয়ে উপায় ছিল না।” ভাদুড়িমশাই বললেন, “কোনটা বেশি জরুরি কাজ সদানন্দবাবু? অ্যাম্বাসাডরটাকে ধরা? নাকি সেই গাড়ি থেকে যাকে রাস্তার ধারে ছুড়ে ফেলা হয়েছে, তখনও সে বেঁচে আছে কি না, সেটা দেখা?”

আমি বললুম, “কিন্তু একটা কথা যে আমি বুঝতে পারছি না।”

“কোন কথাটা?”

“আপনি যা বলছেন, তাতে মনে হয়, ঘটনাটা ঘটেছে পুলিশের চোখের সামনেই। এটা আপনাকে কে বলল? শোভন নিশ্চয়?”

“হ্যাঁ, শোভন।”

“এদিকে কাগজে লিখেছে, পুলিশের এটা ধারণা। তার মানে তো ব্যাপারটা তারা স্বচক্ষে ঘটতে দেখেনি, অনুমান করে নিয়েছে মাত্র। কোনটা ঠিক?”

ভাদুড়িমশাই হোহো করে হেসে উঠলেন। তারপর হাসি থামিয়ে বললেন, “শোভন যা বলেছে, সেটাই ঠিক।”

“তা হলে কাগজে ও-কথা লিখল কেন?”

“লিখল, তার কারণ কাগজকে ওইভাবেই খবরটা খাওয়ানো হয়েছে। …আর হ্যাঁ, লোকটাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, এটাও সত্যি নয়, পুলিশ থেকে খাওয়ানো মিথ্যে খবর। যাতে হাত-পা বাঁধা ন্যাটা কালুকে যারা মেরে ফেলতেই চেয়েছিল, কিন্তু পুলিশ তাড়া করায় একেবারে মেরে ফেলতে পারেনি, প্রচণ্ডভাবে জখম করে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল গাড়ি থেকে, তাদের মনে একটা ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়। যাতে তারা ধরে নেয় যে, ন্যাটা কালু মারাই গেছে, সে আর কিছু ফাঁস করতে পারবে না। আ ডেড ম্যান টেলস নো টেল।”

বিস্ময়ের ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠে বললুম, “কালু মারা যায়নি?”

“না, সে বেঁচে আছে, তার চিকিৎসা হচ্ছে, সে একটু-একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছে, আর হ্যাঁ, পুলিশকে সে জানিয়ে দিয়েছে এই জাল-চক্রের পাণ্ডাদের গোপন ডেরার খবর। পুলিশ সেখানে খুব শিগগিরই হানা দেবে।”

আবার ফোন বেজে উঠল। সেল-ফোন। পকেট থেকে বার করে ভাদুড়িমশাই বললেন, “ইয়েস?…হ্যাঁ, অমিতাভ ফোন কেরছিল। …কী বললে? ট্রেস করতে পেরেছ?…এক্সেলেন্ট! এক কাজ করো। অমিতাভ এখানে। তুমিও যত তাড়াতাড়ি পারো চলে এসো।”