৩
আজ ৮ মার্চ, বুধবার। সেই যে গত রবিবার দুপুরে অরুণ সান্যালের কাঁকুড়গাছির ফ্ল্যাটে খাওয়া-দাওয়া সেরে সদানন্দবাবুকে নিয়ে আমাদের শেয়ালদা পাড়ার বাড়িতে ফিরে আসি, তার পর থেকেই ভদ্রলোক কেমন যেন পালটে গেছেন। আগে তো রোজ অন্তত একবার আমাদের বাড়িতে আসতেনই। আসতেন সাধারণত সকাল আটটা নাগাদ। থাকতেন কম করে তা প্রায় ঘন্টাখানেক। কাগজ পড়তেন, গল্প করতেন, চা খেতেন, কলকাতা শহরের গোল্লায় যাওয়া নিয়ে নিত্য কিছু আক্ষেপ করতেন, সাধারণভাবে গার্হস্থ্যধর্ম ও বিশেষভাবে স্বাস্থ্যরক্ষার ব্যাপারে কিছু না-কিছু পরামর্শ দিতেন, তারপর ‘আজ তবে চলি মশাই, আপনার অনেক সময় নষ্ট করে গেলুম’ বলে দরজার আড়ালে রাখা তাঁর গাঁটওয়ালা ও মাথায়-লোহার-বল-বসানো লাঠিখানি নিয়ে রাস্তার ও-পারে তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরে যেতেন। বলতে গেলে এটাই ছিল তাঁর বাঁধা রুটিন। এতে যে সত্যি আমার সময় নষ্ট হত, তা অস্বীকার করব না, কাজকর্মের যে ক্ষতি হত, তাও ঠিক, কিন্তু একইসঙ্গে এটাও স্বীকার করব যে, ভদ্রলোক না-আসা পর্যন্ত সকালটা কেমন যেন ফাঁকা-ফাঁকা লাগত। কথাটা সদানন্দবাবুকে একদিন বলেছিলুমও। তাতে তিনি একগাল হেসে বললেন, “আমিও সেটা খুব ফিল করি, মশাই।”
তা সেই সদানন্দবাবু পরপর দু’দিন আমাদের বাড়িতে আসেননি। একই গলির মধ্যে একেবারে সামনাসামনি দুটো বাড়িতে থাকি আমরা, তাও আসেননি। রোববারের কথা আলাদা। সকাল থেকে শুরু করে দুপুরটা গড়িয়ে যাওয়া অব্দি সেদিন কাঁকুড়গাছির ফ্ল্যাটে আড্ডা মেরেছি, সুতরাং বিকেলে যে তিনি আসবেন না, তা জানাই ছিল। কিন্তু সোমবার এলেন না কেন? মঙ্গলবার না-আসারই বা কারণ কী? আজ বুধবারও এলেন না। ভদ্রলোকের হল কী। গিন্নির গেঁটেবাত ফের বেড়েছে, তা জানি। কিন্তু তাই বলে তিনি এইভাবে ডুব দেবেন? এ তো ভাবাই যায় না। ভদ্রলোক নিজে অসুস্থ হয়ে পড়েননি তো? বাসন্তীকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে সে বলল, “আজ দুপুরেও তো ও বাড়িতে গেসলুম। কিন্তু কই, বোসমশাই যে অসুস্থ, তা তো মনে হল না। বাথরুমের দরজায় লোহার কব্জা বসাচ্ছেন।”
“আর বউঠান?”
“কুসুমদির বাতের ব্যথা কালকের চেয়ে আজ নাকি একটু কম।…ও হ্যাঁ, সেই যে লোকটা পুরনো একটা ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত টানতে এসেছিল, তাকে নাকি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই বলছে, লোকটা নাকি সিরিঞ্জ পালটাত না। সব বাড়ি থেকেই নতুন সিরিঞ্জের দাম নিত, কিন্তু রক্তই নিক আর ইঞ্জেকশনই দিক, কাজ চালাত পুরনো সিরিঞ্জ দিয়ে।”
শুনে আমি আঁতকে উঠলুম। তার কারণ, মাঝে মাঝে ব্লাড টেস্ট করাতে হয় আমাকেও, আর ওই লোকটাই এসে রক্ত নিয়ে যায়। অন্তত এতদিন নিয়েছে। সেই সঙ্গে কার শরীরের কী বিষ আমার শরীরে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে কে জানে। বললুম, “এ তো মহা বিপদ হল দেখছি।”
বাসন্তী আমার মনের কথাটা ঠিকই ধরতে পেরেছিল। বলল, “তুমি তো নিজের বিপদের কথা ভাবছ। কিন্তু তোমার শরীরে যে বিষ নেই আর সেই বিষ যে ও-লোকটা অন্যের শরীরে ঢোকায়নি, তা-ই কি বলা যায়?”
ঠিক কথা। কিছুদিন আগেই তো আমার হেপাটাইটিস-বি হয়েছিল। এই একই লোক তো তখন আমার রক্ত টেনে ল্যাবরেটরিতে দিয়ে আসত। কিন্তু আমার রক্ত নেবার পরে সেই একই সিরিঞ্জ দিয়ে যদি আর-কারও রক্ত ও নিয়ে থাকে, তা হলে সে তো ভয়ংকর কথা।
বললুম, “বোঝাই যাচ্ছে, ও-লোক আর ফিরবে না। কিন্তু কুসুম-বউঠানের কী হবে? তাঁকে তো শুনেছি ফি মাসে ব্লাড টেস্ট করাতে হয়।”
“ও নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।” বাসন্তী বলল, “বোসমশাই শুনলুম নতুন একটা ল্যাবরেটরির সঙ্গে ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। তারাই লোক পাঠিয়ে ব্লাড কালেক্ট করে নেবে। এক ডজন সিরিঞ্জও কিনে রেখেছেন তিনি। নাকি যখন যেটা দিয়ে রক্ত টানা হবে, সঙ্গে-সঙ্গে সেটা ভেঙে ফেলবেন। কিছু বুঝলে?”
“বুঝলুম। এও বুঝলুম যে, উনি যা করেছেন, আমাকেও তা-ই করতে হবে। উনি কোন ল্যাবরেটরির সঙ্গে ব্যবস্থা করেছেন, জানো?”
“তা জানি না। শুনলুম নেবুতলার ওদিককার একটা নতুন ল্যাবরেটরি। বাস।”
“দাঁড়াও, ওঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে। কিন্তু উনি তো এদিকে আসছেনই না। কী যে হল ভদ্রলোকের।”
“নিশ্চয় ব্যস্ত আছেন।” বাসন্তী বলল, “তা তুমিও তো ওঁদের বাড়িতে একবার যেতে পারো।…ঠিক আছে, যাবারও দরকার নেই, একটা ফোন করে খবর নিলেই তো হয়।”
সবে ফোনটা তুলেছি, এমন সময় ডোর-বেল বাজল। দরজা খুলে দেখি, সদানন্দবাবু। বললুম, “আরে আসুন, আসুন। কী ব্যাপার, একেবারে ভ্যানিশ করে গেলেন কেন?”
ভদ্রলোক ধীরেসুস্থে ঘরে ঢুকলেন। হাতের লাঠিখানা দরজার পাল্লার পিছনে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। তারপর আমার লেখার টেবিলের উল্টো দিকের চেয়ারে বসে বললেন, “আপনিও তো একটা খবর নিতে পারতেন। নিয়েছিলেন?”
বললুম, “আরে মশাই, আপনার কথাই হচ্ছিল, আপনি অনেক দিন বাঁচবেন।”
“আর বাঁচা!” সদানন্দবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “বাঁচার শখ মিটে গেছে, এখন ভালয় ভালয় যেতে পারলে হয়।”
“সে কী, এখুনি যাবার কথা উঠছে কেন? কী হল আবার?”
“যা হবে বলে ভয়ে-ভয়ে ছিলুম, তা-ই হয়েচে।”
“তার মানে?”
“বলচি।” ভদ্রলোক একটু দম নিলেন। তারপর বললেন, “গত রোববার যখন অরুণ সান্যাল মশাইয়ের বাড়ি থেকে রওনা হই, তখন ভাদুড়িমশাই কী বলেছিলেন, মনে আচে?”
“কী বলেছিলেন?”
“আপনার দেখচি কিচুই মনে থাকে না।” সদানন্দবাবু বিরক্ত গলায় বললেন, “বলেছিলেন যে, চাঁদনি স্টেশনের সেই লোকটা আবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।”
“করেছে?”
ঘরে শুধু আমি আর সদানন্দবাবু। এতক্ষণ বাসন্তী ছিল, এখন সেও নেই। রাত আটটা বাজে। গলির শব্দ ঝিমিয়ে পড়েছে। শুধু বড়রাস্তার দিক থেকে মাঝে-মধ্যে গাড়ির আওয়াজ শোনা যায়। এ-ঘরে আমাদের দুজনের মধ্যে যে কথাবার্তা হচ্ছে, কেউ যে তা শুনে ফেলবে, এমন কোনও সম্ভাবনা নেই। তবু, সদানন্দবাবু তো খুবই সাবধানী মানুষ, সম্ভবত সেই কারণেই গলার স্বর একেবারে খাদে নামিয়ে বললেন, “সে করেচে কি না জানি না। তবে হ্যাঁ, কাল রাত্তিরে একটা ফোন এসেছিল।”
“কে ফোন করেছিল?”
“নাম বলল না। প্রথমেই জিজ্ঞেস করল যে, মাল পাচার করা হয়েচে কি না।”
“কী মাল? কার মাল?”
“আরে মশাই, তা কি আমিই জানি। প্রথমে ভেবেছিলুম, রং নাম্বার। পরে ভাবলুম, কেউ বোধহয় ফিচলেমি করচে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ফোন নামিয়ে রাখি। কিন্তু নামিয়ে রাখার সঙ্গে-সঙ্গেই ফোন আবার বেজে ওঠে। এবারে যা বলে, সে তো আরও সাংঘাতিক।”
“কী বলে?”
“ধমকে বলে যে, লাইন কেটে দিয়ে লাভ নেই। চালাকি করলে লাশ ফেলে দেবে। তারপরেই জিজ্ঞেস করল যে, মাল পাচার হয়েচে কি না।”
“আপনি তা-ই শুনে কী বললেন? কোন মালের কথা হচ্ছে, জিজ্ঞেস করেননি?”
“করেছিলুম।” সদানন্দবাবু বললেন, “তাতে বলল, চাঁদনি স্টেশনে আমার পকেটে যে মাল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েচে, সেই মাল। এও বলল যে, ওই রকমের মাল আমাকে আরও দেওয়া হবে। সব পাচার করা চাই।”
বললুম, “ওই রকমের মাল মানে যে আরও কিছু জাল-নোট, সেটা বুঝতে পেরেছেন তো?”
“তা কেন পারব না? কিন্তু পাচার করার মানে কী?”
“মানে তো খুবই সোজা। নোটগুলো আপনাকে চালাতে হবে।”
“ওরেব্বাবা,” সদানন্দবাবু আঁতকে উঠে বললেন, “চালাতে গেলে তো পুলিশে ধরবে।”
সদানন্দবাবুর কথা শুনে মনে হল, ধরা পড়ার ভয় না-থাকলে জাল-নোট চালাতে, কিংবা চালাবার একটা চেষ্টা অন্তত করতে তাঁর কোনও আপত্তি ছিল না। বললুম, “ছিছি, শুধু পুলিশের কথা ভাবছেন? এতে যে দেশের সর্বনাশ, সেটা ভাবছেন না? এইসব জাল-নোট কারা বানাচ্ছে আর ছড়াচ্ছে সেটা অন্তত ভাবুন।”
“কারা বানাচ্চে?”
এ-লোককে কী বোঝাব? বললুম, “কারা বানাচ্ছে বুঝতে পারছেন না? এ-দেশের টাকাপয়সা সম্পর্কে এ-দেশের লোকের মধ্যে যারা সন্দেহ ছড়াতে চায়। জাগাতে চায় দেশ জুড়ে একটা আতঙ্ক। আতঙ্ক যে এরই মধ্যে এখানে-ওখানে জাগেনি,তাও তো নয়। জাল-নোট যত ছড়াবে, আতঙ্কও ততই বাড়বে। সেকেন্ড ওঅলর্ড ওয়রের সময় কী হয়েছিল মনে নেই?”
“কী হয়েছিল?”
“জার্মনরা তাদের প্লেন থেকে গোটা ব্রিটেন জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিল কোটি কোটি জাল পাউন্ড। ব্রিটেনের মনিটরি সিস্টেমটা যাতে ভেঙে পড়ে, আর সেইসঙ্গে ভেঙে পড়ে সেখানকার লোকের মনোবল।”
“অ্যাঁ?”
“হ্যাঁ। আমাদের দেশেও হঠাৎ এই যে জাল নোট ছড়াবার একটা হিড়িক দেখা যাচ্ছে, এরও সেই একই লক্ষ্য। এ-কাজ যারা করছে, আসলে তারাও চাইছে আমাদের দেশের কারেন্সি নোট সম্পর্কে একটা সন্দেহ ছড়িয়ে এখানকার মনিটরি সিস্টেমটাকে দুর্বল করে দিতে।”
“এ-কাজ কারা করচে?”
“যারা আমাদের ভাল চায় না, তারা।”
সদানন্দবাবু বললেন, “কিন্তু মশাই, কেউ আমাদের ভাল না-চাইবেই বা কেন। হিটলার যে ইংল্যান্ডে এরোপ্লেন পাঠিয়ে জাল নোট ছড়িয়েছিল, তার তো একটা পষ্ট কারণ রয়েচে। হিটলারের সঙ্গে ইংরেজদের তখন লড়াই হচ্চিল।”
“সে তো ঠিকই।”
“কিন্তু আমাদের সঙ্গে তো কারও লড়াই হচ্চে না।”
“তা হচ্ছে না, কিন্তু শত্রুর তো তাই বলে অভাব নেই। শত্রু যেমন বাইরে আছে, তেমনি ভিতরেও আছে। দেশটা তো একবার ভেঙেছে, এখন তারা আবার এটাকে ভাঙতে চায়। ভেঙে টুকরো-টুকরো করতে চায়। বাইরের শত্রুর কথা ছেড়েই দিচ্ছি, দেশের মধ্যেই এই যে এত টেররিস্ট অর্গানাইজেশন গজিয়ে উঠেছে, যারা এখানে-ওখানে হানা দিয়ে লোকজনদের তুলে নিয়ে গিয়ে নির্বিচারে খুন করছে, কী বলবেন এদের? এরা কি দেশের বন্ধু?”
সদানন্দবাবুর মুখ দেখে মনে হল, তিনি একটা ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছেন। কিছু বলতে চাইছেন, কিন্তু বলতে পারছেন না। মিনিট কয়েক নিস্তব্ধতার মধ্যে কাটল। সেই নৈঃশব্দ্য শেষ পর্যন্ত আমিই ভাঙলুম। বললুম, “সদানন্দবাবু, জাল-নোটের এই কারবারের পিছনে কাদের মাথা কাজ করছে, তা আন্দাজ করা খুব শক্ত নয়। কিন্তু একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না।”
“কী বুঝতে পারচেন না?”
“বুঝতে পারছি না যে, আপনাকে ধরে তারা টানাটানি করছে কেন।”
সদানন্দবাবুকে এতক্ষণ বিভ্রান্ত দেখাচ্ছিল, এবারে তাঁর কথা শুনে স্পষ্ট বুঝতে পারলুম, ভদ্রলোক ভয় পেয়ে গেছেন। ফ্যাসফেসে গলায় বললেন, “তাই তো, আমাকে কেন?… ও মশাই, আপনার কী মনে হয়? কী করব, বলুন তো?”
“কী করবেন, তা জানি না,” সদানন্দবাবুর দিকে তাকিয়ে আমি বললুম, “তবে কী করবেন না, সেটা বলতে পারি।”
“বেশ তো, কী করব না, সেটাই তা হলে বলুন।”
“ফোন করে কি অন্য কোনও ভাবে আপনাকে যতই ভয় দেখানো হোক, জাল-নোটটা চালাবার কি ওটা আর-কাউকে গছাবার কোনও চেষ্টা করবেন না।… আর হ্যাঁ, গত রোববার আমরা যারা অরুণ সান্যালদের বাড়িতে ছিলুম, তাদের মধ্যে একমাত্র মালতী আর ও-বাড়ির কাজের মেয়েটি ছাড়া বাদবাকি সব্বাই ওটা দেখেছি। তার আগে কি পরে কি আপনি আর-কাউকে ওটা দেখিয়েছেন?”
সদানন্দবাবু এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। তারপর দু’দিকে মাথা নেড়ে বললেন, “না।”
“তা হলে জানলেন কী করে যে, ওটা জাল-নোট?”
“জানতুম না তো।” সদানন্দবাবু বললেন, “অরুণ সান্যালদের বাড়িতে সেদিন অমিতাভর সেল-ফোনে ওই খবরটা আসার পর ভাদুড়িমশাই আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, সত্যিই আমার পকেটে একটা পাঁচশো টাকার নোট আচে কি না।”
“হ্যাঁ, আমার মনে আছে।” আমি বললুম, “উত্তরে আপনি কী বলেছিলেন, তাও।”
“আমি বলেছিলুম যে, পাঁচশো টাকার নোট একটা আচে ঠিকই, তবে সেটা জাল না খাঁটি, তা আমি জানি না। বলে পকেট থেকে নোটটা বার করে আমি ভাদুড়িমশাইয়ের হাতে তুলে দিই।”
“রাইট। আপনার হাত থেকে নোটটা নিয়ে ভাদুড়িমশাই তাঁর সোফা থেকে উঠে পুব দিকের জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তারপর নোটটাকে এগেনস্ট সানলাইট ধরে প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই ফিরে এসে বলেন, ‘জাল।’ কী করে সেটা বোঝা গেল, জিজ্ঞেস করতে যা বলেছিলেন তাও আমি ভুলিনি। আপনার মনে আছে?”
“আচে।” সদানন্দবাবু বললেন, “বলেছিলেন যে জলছাপে গণ্ডগোল আচে। তবে জলছাপ মেলাবারও নাকি দরকার নেই, স্রেফ সারফেসের উপরে আলতো করে হাত বোলালেই নাকি বোঝা যায় যে, এটা জেনুইন নয়, জাল, তাও খুব ক্রুড অ্যান্ড ক্লামজি ধরনের জাল।”
বললুম, “রাইট। সবই মনে রেখেছেন দেখছি। এখন বলুন দেখি, নোটটা যে জাল, ভাদুড়িমশাই বলবার আগে কি সত্যি তা আপনি জানতেন না?”
জবাব দেবার আগে আবার একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন সদানন্দবাবু। তারপর বললেন, “সে তো আমি বলেইচি। তবু আবার সেই একই কথা জিজ্ঞেস করচেন কেন? আমাকে বিশ্বেস করচেন না?” হেসে বললুম, “আরে ছিছি, আপনি তা-ই ভাবলেন? আরে মশাই, এটা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ব্যাপার নয়, আই জাস্ট ওয়ান্ট টু বি শিওর অ্যাবাউট ইট। তার কারণ, আমার ধারণা, পরে একটা সময়ে হয়তো বারবার এই প্রশ্নটা আপনাকে করা হবে, অ্যান্ড মাচ উইল ডিপেন্ড অন হোঅট ইউ সে।”
সদানন্দবাবুর বেজার ভাবটা তবু কাটল না। বললেন, “ঠিক আচে, ভাদুড়িমশাই বলার আগে পর্যন্ত সত্যিই আমি জানতুম না যে, ওটা জাল নোট। আবার বলচি, এটাই সত্যি কতা, যতবার আমাকে জিজ্ঞেস করা হোক, ততবার এই একই কতা আমি বলব।”
“ভেরি গুড। এখন আর-একটা কথা বলি। নোটটা কোথাও চালাবার কি কাউকে গছাবার চেষ্টা তো করবেন না-ই, কথাটা কাউকে জানাবেনও না। দিন কয়েক বাদেই তো ভাদুড়িমশাই আবার কলকাতায় আসবেন, এ-ব্যাপারে ডিসিশান যা নেবার, তখনই বরং নেবেন, তার আগে নয়।…এখন বাড়ি যান, এ নিয়ে আর এখন কিছু ভাববেন না।”
“এর মধ্যে যদি কেউ ফোন করে এই নিয়ে?”
“করলে বলে দেবেন, চালাবার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পেরে উঠছেন না।”
সদানন্দবাবু উঠে পড়লেন। দরজার পাল্লার পিছন থেকে লাঠিখানি নিয়ে ধীরে-ধীরে বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। ফোনটা এল তার ঠিক পনেরো মিনিট বাদে। সদানন্দবাবু। উত্তেজিত গলায় ভদ্রলোক বললেন, “সর্বনাশ হয়েচে।”
“কী হয়েছে?”
“বাড়ি ফিরে দেখি, কুরিয়ার সার্ভিসে আমার নামে একটা প্যাকেট এসেচে। প্যাকেটের মধ্যে দশ-দশ খানা পাঁচশো টাকার নোট। এ কী সর্বনাশ হল মশাই!”