জংলীতে লগ্নজিতা

জংলীতে লগ্নজিতা

এতটা রাস্তা ড্রাইভ করতে হবে বলেই বাড়ির ড্রাইভার বিজয় কাকুকে ডেকে নিয়েছে লগ্নজিতা। বাবা বিন্দাস মুডে বললো, ওদিকে শুনেছি মাওবাদী আছে। পুলিশ অফিসার চিনতে পারলে আর রক্ষে থাকবে না। মুক্তিপণের এত টাকা দেবো কোথা থেকে! তাই সাবধানে থাকবি। মায়ের কপালে যথারীতি দুশ্চিন্তার ভাঁজ সুস্পষ্ট। মা করুণ গলায় বললো, খুব কি দরকার ছিলো ওখানে যাওয়ার? তোর চাকরি তো কলকাতায়? তাহলে তুই বাইরে কেন যাবি?

লগ্নজিতা একই টেকনিক অ্যাপ্লাই করে মায়ের ওপরে বারংবার। মায়ের কপালে একটা নরম চুমু খেয়ে বললো, তোমার মেয়ে একজন পুলিশ অফিসার মা। লোকে তাকে ভয় খায়, স্পেশাল ট্রেনিং প্রাপ্ত অফিসার। তুমি বাবার লেগপুলিংয়ে এতটা কেন উত্তেজিত হয়ে যাও বলবে? আমি বনপলাশীর কোথায় যাচ্ছি সব বাবাকে বলে যাচ্ছি। তুমি জাস্ট কুল থাকো। আমি পরশুই হয়তো ফিরে আসবো। তোমায় পৌঁছেই কল করছি। তুমি এ দুদিন বাবার সঙ্গে জমিয়ে ঝগড়া করো। আমি ফিরে এর বিচার করবো।

মায়ের মুখে একটুকরো হাসি দেখেই গাড়িতে উঠলো লগ্নজিতা। রাস্তা থেকেই বর্ণিতাকে পিক আপ করার কথা আছে।

.

হ্যালো শোনো, ডোন্ট ওয়ারি। আমি আসছি বনপলাশীতে। গিয়ে বলছি সবটা।

ফোনটা রাখার আগেই কমলিনীদেবী মেয়ের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন, আমি যদি ভুল না হয়ে থাকি তাহলে কি তুই অব্যয়ের সঙ্গে কথা বলছিলি?

ফুলকপির তরকারি আর রুটির প্লেটটা টেবিলে নামিয়ে দিয়ে বললেন, বনপলাশীতে তার মানে ঘুরতে যাচ্ছিস না, তাই তো?

মায়ের চাঁচাছোলা কথার সামনে একটু অসহায় হয়ে যায় বর্নি। ঠিক যেমন কোনো লম্বাটে মুখের অভিনেত্রী আবদারের সুরে বলেন, আমার মুখটা পানপাতার শেপের করে দিন না। মেকআপে তো আজকাল সব হচ্ছে! বর্ণিতা রূঢ় গলায় বলতে পারে না, ম্যাডাম আপনি প্লাস্টিক সার্জারি নয় মেকআপ করাচ্ছেন!

এমন অনেক অসহায়তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা বোধহয় ও বোধ করে যখন অব্যয় নিজে মুখে বলে সে বিপদে পড়েছে। এটা আমার নতুন নম্বর, পারলে কল করো- এই মেসেজটা দেখেই বর্ণিতার সিক্সথ সেন্স বলেছিলো এটা অব্যয়ের নম্বর।

বার তিনেক রিং করার পরে ফোনটা রিসিভ করেছিলো অব্যয়। আলতো গলায় বলেছিলো, বর্নি বিপদে আছি। হেল্প করো প্লিজ। আর কাউকে বিশ্বাস করে কল করতে পারিনি। আমি বোধহয় লাবণ্য খুনের মামলায় জড়িয়ে গেছি। বিশ্বাস করো, আমি কাউকে খুন করিনি।

বর্ণিতা সবটুকু বলেছিলো। লগ্নজিতা ভট্টাচার্যের বারবার জেরা। বন্ধুদের মিটিং, অব্যয়ের কলেজ থেকে মিসিং ডায়রি করা।

অব্যয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলো, লাবণ্যর মৃত্যুর খবরটা আমি প্রথম কাগজেই পেয়েছিলাম। কেমন যেন ভয় করেছিলো। তাই কাউকে কিছু না বলেই একলা থাকবো বলে পালিয়ে এসেছিলাম এখানে। এখন দেখছি তাতে পুলিশের সন্দেহ বেড়েছে। কলকাতা ফিরতে চাই, কিন্তু বুঝতে পারছি না কি করা উচিত। একটা হিমেল স্রোত সর্বদা বয়ে যাচ্ছে মেরুদন্ড বরাবর। কি করবো বর্নি?

অব্যয় ওকে এক্সিবিশনে না ডাকতেই পারে, কিন্তু বিপদে যে ওকেই একমাত্র মনে পড়েছে এটাই ওর অপেক্ষার পুরস্কার। বর্ণিতা আলতো গলায় বলেছিলো, ভালোবাসতে লাবণ্যকে?

অব্যয় থমকে দাঁড়িয়ে বলেছিলো, ও বাসতো, যেমন তুমি বাসো তেমনই। আমি বাসতাম কি না জানি না।

তুমি তো জানো নিজেকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে শিখিনি আমি। লাবণ্যের শিল্পসত্ত্বার প্রেমে পড়েছিলাম বলতে পারো। বর্ণিতা এই জন্যই ভালোবাসে অব্যয়কে। নিজেকে ঢাকার আপ্রাণ প্রচেষ্টা নেই। বরং অকপটে বলতে পারে নিজের দোষটুকুকে।

তখনই ভেবেছিলো, লগ্নজিতাকে বলতে হবে বিষয়টা হাতের বাইরে চলে যাবার আগেই।

.

বললি না তো, কি করতে যাচ্ছিস বনপলাশীতে? কে কে যাচ্ছে তোর সঙ্গে?

বর্ণিতা মিথ্যে বলায় একেবারে পারদর্শী নয়। তাই কোনোমতে বললো, এক বান্ধবী যাচ্ছে।

অব্যয় ওখানেই আছে তাহলে গা ঢাকা দিয়ে। আর তুই নিজের কাঁধে বিপদ নিয়ে এগিয়ে চলেছিস? কি আছে এই ছেলেটার মধ্যে আমায় একটু বলবি? না মানে বয়েস তো আমারও কম হলো না। এটুকু জানার অধিকার বোধহয় মা হিসাবে আমার আছে তাই না? মেয়ে ঠিক কেন এতোদিন ধরে একতরফা ভালোবেসে যাচ্ছে একজন উন্নাসিক মানুষকে সেটুকুই জানতে চাইছি মাত্র।

বর্ণিতা খাবারটা তাড়াতাড়ি শেষ করে বললো, যে কারণে তুমি আমার জন্য সবসময় চিন্তা করো, সেরকমই এক নিয়ম না মানা অনুভূতির বশবর্তী হয়েই আমিও ভালোবাসি অব্যয়কে।

কমলিনী হেসে বললেন, তুই আমার সন্তান বর্নি। আমার থেকেই তোর সৃষ্টি।

বর্নি বললো, শুধু সৃষ্টি বলেই ভালোবাসো একথা মানতে পারলাম না। এই তো কপির তরকারিটাও তোমার সৃষ্টি, এর প্রতি কি তুমি এতোটাই যত্নশীল যতটা আমাকে নিয়ে! আসলে কি বলতো, আমাদের মনের মধ্যে ওই অবাধ্য অনুভূতির তাড়নায় চালিত হই আমরা। কমলিনী গম্ভীর স্বরে বললেন, সাবধানে থাকিস, পারলে পৌঁছে কল করিস।

বর্ণিতা ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে এলো রাস্তায়। শীতের ধোঁয়াশা সকালে এখনও সূর্য ওঠেনি। তাই উষ্ণতা এখন কষ্ট কল্পনা। ব্ল্যাক জ্যাকেট আর জিন্সে অবশ্য শীতলতাকে পরাজিত করেছে। তবুও গলার কাছের উলেন স্কার্ফটা ভালো করে বেঁধে নিলো বর্ণিতা। গাড়িটা এসে সামনে দাঁড়ালো। ভেজা কাঁচ খুলে লগ্নজিতা বললো, উঠে আসুন।

গুগল তো বলছে ঘন্টা চারেকের মধ্যে পৌঁছে যাব, কে জানে! লগ্নজিতা কথাটা বলেই বললো, অব্যয় আর যোগাযোগ করেছিলো নাকি? আপনি বলেননি তো আমি আসছি?

বর্ণিতা অন্যমনস্ক গলায় বললো, না বলিনি। সেই জন্যই চিন্তা হচ্ছে। যদি অব্যয় আমাকে ভুল বোঝে! যদি ভাবে আমি ওর অসময়ের সুযোগ নিয়ে পুলিশ দিয়ে ওকে ধরিয়ে দিতে চাইছি, তখন কি করবো বলুন তো? লগ্নজিতা আস্তে আস্তে বললো, আমি অব্যয়কে অ্যারেস্ট করতে যাচ্ছি না বর্ণিতা। আমি শুধু লাবণ্যের খুনের তদন্তে নেমেছি। তাই ওর চারপাশে থাকা লোকগুলোকে বড্ড দরকার। অব্যয় তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। যাকে লাবণ্য নিজে বিশ্বাস করতো। রানীবালাদেবী থেকে সাবিত্রী, গোপালদা পর্যন্ত স্বীকার করেছে লাবণ্য ভালোবাসতো প্রফেসরকে। অব্যয় হয়তো ওর কাছে যেত শিল্পের টানে, কিন্তু লাবণ্য প্রফেসরকে যে যথেষ্ট বিশ্বাস করতো তার অনেক প্রমাণ আমি পেয়েছি। তাই এই কেসে অব্যয়ের বয়ান খুব গুরুত্বপূর্ণ বর্ণিতা। ডোন্ট ওরি, অব্যয় যাতে আপনাকে ভুল না বোঝে সে দায়িত্ব আমার। আপনার মত নিঃস্বার্থ ভালো হয়তো নাই বাসতে পারি, তবে শব্দটার অর্থ বুঝি না এমন কিন্তু নয়।

কথাটা বলার সময়েই তন্ময়ের সঙ্গে ব্রেকআপের পরে নিজের মানসিক অবস্থাটা মনে পড়ে গেলো লগ্নজিতার। কিছুদিনের জন্য মনে হয়েছিলো, এ পৃথিবীর সব শূন্য। তারপর ধীরে ধীরে বুঝেছে, ‘তোমায় ছাড়া বাঁচবো না’ কথাটা বড্ড আপেক্ষিক। তখন থেকেই নিজের কাজকে আপন করে নিয়েছে ও। এ কাজে জয়-পরাজয় অবশ্যই আছে। সব মিশন সাফল্য পায় না ঠিকই, কিন্তু নির্লজ্জের মত বেইমানি অন্তত করে না।

কলকাতা যে ছাড়িয়ে এসেছে গাড়ি সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ইট, পাথরের জঙ্গল ছেড়ে গাড়ির জানলায় এখন লম্বা গাছের সারি। লগ্নজিতা সেদিকে তাকিয়ে বললো, আপনাদের শিল্পীদের কিন্তু মাঝে মাঝেই নিজের সঙ্গে একলা হওয়ার জন্য তিলোত্তমা ছেড়ে বেরিয়ে পড়া উচিৎ। আপনারা হলেন ক্রিয়েটিভ মানুষ। আমাদের মত চোর-ডাকাত ধরা লোক তো আর নন। তাই আপনাদের মনগুলোকে সবসময় সতেজ রাখাটা জরুরি। বর্ণিতা জানলা দিয়ে বাইরের চলন্ত দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে বললো, লাবণ্য যে অব্যয়কে ভালোবাসতো, সেটা অব্যয় স্বীকার করেছে আমার কাছে। তবে ও বাসতো কিনা জানি না। লাবণ্য নামটা যতবার উচ্চারণ করেছে ততবার গলার স্বরে কাঁপন ধরেছে ওর, আমি লক্ষ করেছি।

লগ্নজিতা হেসে বললো, হয়তো আপনার নামটা উচ্চারণ করার সময়ও ওনার স্বরে কাঁপন থাকে। তাই বোধহয় স্বর্ণদীপ সহ্য করতে পারে না অব্যয়কে, তাই না বর্ণিতা?

বর্ণিতা একটু উদাস হেসে বললো, সকলে তো তাই বলে। অব্যয় নাকি মারাত্মক দুর্বল আমার প্রতি, তবুও কখনো স্বীকার করতে চায় না। পাছে ও ভালোবাসা নামক একটা ভিজে ভিজে শব্দের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে তাই। লগ্নজিতা আবার সচেতনভাবে বললো, আর স্বর্নদীপ?

বর্ণিতা হেসে বললো, ওই এক পাগল। যতই বোঝাই জোর করে ভালোবাসা যায় না, মনের গতিকে নদীর মত বাঁধ দিয়ে অন্যদিকে ঘোরানো যায় না, তবুও বোকার মত আমার প্রতি মোহ কমলো না ওর।

লগ্নজিতা বললো, এক্ষেত্রেও তো একই সূত্র খাটে বর্ণিতা। ওর মনের গতিও সেই কলেজ লাইফ থেকেই অপরিবর্তিত। বর্ণিতা আনমনে বললো, হ্যাঁ ওই জন্যই তো মনীষার সঙ্গে ডিভোর্সটাতে আমার নিজেকে দোষী মনে হয়। কারণ মনীষা একদিন আমাকে বলেছিলো, তুমি ওর অন্তরের গভীরে বসে আছো বর্ণিতা, আমি বাইরে যতই আদরে সিঞ্চিত করার চেষ্টা করি ওর মন ভিজবে না।

লগ্নজিতা বললো, বড় বিচিত্র আমাদের মন, তাই না! যেটা সহজলভ্য সেদিকে কিছুতেই ধাবিত হয় না। বরং অসম্ভবের দিকে তার ছুটে চলা।

বর্ণিতা নিজের চুলের মধ্যে আঙুল চালিয়ে বললো, আর সেই ছুটে চলাতে নিজেকে বারংবার ক্ষতবিক্ষত করেই যেন তার তৃপ্তি।

লগ্নজিতা একটু হালকাভাবে একটা কঠিন প্রশ্নকে উড়িয়ে দিলো বন্ধ গাড়ির মধ্যে। আচ্ছা বর্ণিতা, আপনার কি মনে হয়, স্বর্ণদীপ আপনাকে পাওয়ার জন্য খুন করতে পারে?

একটু যেন চমকে উঠলো বর্ণিতা! চোখের পলক না ফেলে বললো, মানে? লাবণ্যকে স্বর্ণদীপ খুন করেছে?

অব্যয়কে ফাঁসিয়ে দিয়ে, আমার চোখে ওকে নিচু করে দিয়ে ও কি মনে করেছে আমি ওর হয়ে যাবো?

লগ্নজিতা ওর উত্তেজনাকে প্রশমিত করার জন্য বললো, বর্ণিতা আমি জাস্ট কেসটা নিয়ে লাট্টুর মত ঘোরাচ্ছি। বলতে পারো স্পিন গেম খেলছি। তিরটা যেদিকে যাচ্ছে সেখানে স্ক্র্যাচ করে দেখতে চাইছি কি আছে। আমি জানি না, আদৌ এই কেসে স্বর্ণদীপ জড়িত কিনা, তবে ওর মোটিভ এই একটাই, আপনাকে পাওয়া। একমাত্র অব্যয় আপনার চোখে নিচু হয়ে গেলেই সেটা সম্ভব। তাই একটু বাজিয়ে দেখে নিতে চাইছি মাত্র! কি মনে হয় স্বর্ণদীপ এটা করতে পারে?

বর্ণিতা ঘাড় নেড়ে বললো, অব্যয়ের ওপরে ওর বড্ড রাগ। গুঞ্জা, রক্তিম, কুণাল সকলেই অব্যয়কে একটু অন্য চোখে দেখে, একটু সম্ভ্রমের চোখে। সেটা স্বর্ণদীপ একেবারেই পছন্দ করে না। অব্যয় মিসিং হবার পরে আমাকে বহুবার বলেছে, এরপরেও আমি অব্যয়কে ঘৃণা করবো কি না! আমার নতুন করে ভাবা উচিত নিজের জীবনটা নিয়ে। অব্যয়কে ভুলে শুরু করা উচিত।

লগ্নজিতা মোবাইলের দুটো মেল চেক করে নিয়ে বললো, স্বর্ণদীপ ঠিক কেন রানীভবনের ওই অনামী কো-অপারেটিভ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলো সেটাই আশ্চর্যের বিষয়। ও ব্যাংকে যেত শুনেই আমি স্টেটমেন্টের জন্য মেল করেছিলাম। আজকে পেলাম, ওর একটা অ্যাকাউন্ট রয়েছে ওখানে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে সেখানে হয়তো নামে মাত্র টাকা ফেলে রেখেছে। শুধু রানীভবনে যাবার রাস্তা ক্লিয়ার করার জন্যই এই অ্যাকাউন্ট, এটা আমার কাছে পরিষ্কার।

বর্ণিতা বিস্মিত হয়ে বললো, তার মানে স্বর্ণদীপ জানতো যে অব্যয় ওখানে যায়। তারপরেও আমায় জাস্ট কিছু বলেনি! এ ঘটনায় অব্যয় আমার চোখে না নামলেও স্বর্ণদীপ অনেকটা নেমে গেলো ম্যাডাম। ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করতে এরা শেখেনি, না পাওয়াকে মেনে নিয়ে ভালোবাসতে জানে না। শুধু ছিনিয়ে নেওয়াকেই জয় ভাবে! ছিঃ, স্বর্ণদীপ এভাবেও….

লগ্নজিতা বললো, আমরা আর একঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবো। আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে অব্যয় অনেক কিছু জানে লাবণ্যর সম্পর্কে।

বর্ণিতা বললো, অব্যয় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে বলতে পারে না, এটা আমি খেয়াল করেছি। তাই ও যদি সত্যিই কিছু জেনে থাকে সেটা অবশ্যই স্বীকার করবে।

লগ্নজিতা বললো, জানেন বর্ণিতা আপনাকে যত দেখছি ততো অবাক হচ্ছি। অনেকটা রবিঠাকুরের গল্পের নায়িকাদের মত। নিজের ভালোবাসার প্রতি কি মারাত্মক আত্মবিশ্বাস! এভাবে যে একতরফা ভালোবাসা যায় এটাই তো আমি জানতাম না। আমার মত কঠিন মনের খুনি ধরা পুলিশ অফিসারকেও আপনি কাত করে দিলেন মশাই!

বর্ণিতা হেসে বললো, এইটুকুই তো সম্পদ, তাই আগলে রাখি। অব্যয়ের শত অবহেলার মাঝেও এই টুকরো পাওয়াগুলো বড্ড আপন আমার কাছে। এই যে এমন একটা বিপদের দিনে ওর শুধু আমাকেই মনে পড়লো। অথবা আমার ওর কলেজে সারপ্রাইজড ভিজিটগুলোর দিনে আমি দেখেছি ও উচ্ছ্বসিত হয়ে যেত। ও বলতো, কেউ তো আছে বিনা আমন্ত্রণে আমার খোঁজ নিতে আসে! লগ্নজিতা লক্ষ করলো বর্ণিতার মুখে অভিমান ভরা অধিকারবোধ স্পষ্ট। ওরা যখন বনপলাশীতে পৌঁছোলো তখন শীতের সূর্যও বেশ গনগন করছে। গায়ের উলেন জ্যাকেটগুলো বিদ্রোহ করে চলেছে চামড়াতে। চিড়বিড়ে গরম করছিলো বেশ।

জংলী রিসর্টের একটু আগেই গাড়ি থেকে নেমে পড়লো দুজনে। লগ্নজিতা নিজের ব্যাগের মধ্যে ভরে নিলো লাবণ্যের মায়ের চিঠিগুলো আর ওর দুটো অ্যালবাম। যে পোস্টঅফিসের স্ট্যাম্প রয়েছে লাবণ্যর মায়ের চিঠিতে সেটা সম্ভবত বনপলাশীর কাছাকাছি কোনো জায়গার। খোঁজ নিতে হবে।

লগ্নজিতা বর্ণিতাকে বললো, আমি রিসর্টের রিসেপশনে বসবো, আপনি গিয়ে মিট করুন অব্যয়ের সঙ্গে। তারপর আমায় পিং করবেন আমি যাবো। আমি চাইছি ও আপনার কাছে আগে নিজেকে খুলে ধরুক তারপর আমি যাবো।

বর্ণিতা মৃদু হেসে বললো, আপনাকে পুলিশ কম বন্ধু বেশি মনে হচ্ছে, আমি কি ভুল করছি?

লগ্নজিতা ইশারায় হেসে বললো, ভবিষ্যৎ বলবে।

.