আংটি রহস্য – ১১

১১

হেডলাইটের আলোয় একটু দূর থেকেই আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল, এখন ভিতরে ঢুকে দেখলুম বিশাল ব্যাপার। এই ধরনের বাড়ি দিল্লির গল্ফ লিঙ্কে মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে বটে, আজকাল আমাদের সল্ট লেকেও দু’-চারখানা দেখছি, তবে একটা প্রাইভেট বাড়ির সংলগ্ন এত বড় লন এর আগে আর কোথাও দেখেছি বলে আমার মনে পড়ল না। বাড়িটি দোতলা। তার গাড়িবারান্দার তলায় কেদারেশ্বরের গাড়ি থেকে নেমে সদানন্দবাবু চাপা গলায় মন্তব্য করলেন, “এ তো হিউজ কারবার মশাই!” আমার মনে হল, সদানন্দবাবু এই প্রথম কোনও অত্যুক্তি করলেন না। ড্রাইভের দু’দিকে ছড়ানো এই লনের আয়তন বিঘে দুইয়ের কম হবে না, কিছু বেশিও হতে পারে। লনের দুই অংশের প্রতিটিরই ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে বাতিস্তম্ভ, তা ছাড়া জমি থেকে যৎসামান্য উঁচুতে ছড়িয়ে আছে বিজলি-বাতির অজস্র ডোম। এর জন্যে যে মাটির তলা দিয়ে কেসিং করে ইলেকট্রিকের অসংখ্য লাইন টানতে হয়েছে, আর তার জন্য যে খরচ হয়েছে বিপুল-পরিমাণ, তাতে সন্দেহ নেই, তবে লনের বাহার যে তাতে চতুর্গুণ বেড়েছে, তাও ঠিক। সদানন্দবাবু পুনশ্চ চাপা গলায় বললেন, “একেবারে ইন্দ্রপুরী করে ছেড়েচে!” দেবরাজ ইন্দ্র শুনেছি বিলাস-ব্যসন খুবই পছন্দ করেন, তবে স্বর্গে তাঁর বাড়িটি যে কেমন এবং সেখানেও এই রকমের মসৃণ-ভাবে-ছাঁটা ঘাসের এত বড় একটি লন তিনি বিশ্বকর্মাকে দিয়ে বানিয়ে নিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে আমার কোনও আবছা ধারণাও নেই, সদানন্দবাবুরও না-থাকাই সম্ভব, তবু কী জানি কেন মনে হল যে, এবারেও তিনি অত্যুক্তি করেননি।

অনুপমা আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। বললেন, “কেমন দেখছেন?”

 সদানন্দবাবুর কথাটাই আমার মুখে এসে গেল। হেসে বললুম, “ইন্দ্রপুরী।”

“ছেলেকে নিয়ে আমার দেওর বিলেতে ফিরে যাবার পরের দিনই আমার খুড়শ্বশুর আমাকে ডেকে বলেন, ‘দ্যাখো বউমা, এই বিশাল বাড়িতে লোক বলতে এখন শুধু আমি আর ডোরা। বড্ড হাঁফ ধরে যায়। ডোরারও যে একটু নিঃসঙ্গ লাগে, তা বুঝি। তা আমি বলি কী, ডোরা যে-ক’টা দিন আছে, ও-বাড়িতে তালা লাগিয়ে তোমরাও এখানে এসে থাকো না কেন?’ তা দিন কয়েক এসে ছিলুমও। কিন্তু বড় অস্বস্তি লাগত।”

সদানন্দবাবু বললেন, “অস্বস্তি কীসের, এ তো দিব্যি জায়গা।”

“কিন্তু নিজের হাতে কোনও কাজই করতে পারতুম না যে।” অনুপমা দেবী হাসতে-হাসতে বললেন, “আমি নিজের হাতে রান্না করতে ভালবাসি। কিন্তু রান্নাঘরে ঢুকলেই ঠাকুর হাঁ-হাঁ করে ছুটে আসে। নিজের হাতে ঘরদোর পরিষ্কার করতে ভালবাসি। কিন্তু ঝাড়ন হাতে টেবিল কি আয়নার ধুলো সাফ করতে যেতেই ছুটে আসে তিন-চারটে ঝি-চাকর। অস্বস্তি হবে না?”

উত্তর দেওয়া হল না। কেননা এই সময়েই দোতলা থেকে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে এক ভদ্রমহিলা নীচে নেমে এলেন। এসেই অনুপমা দেবীকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “ও দিদি, আমি স্নান করছিলুম, তাই তোমরা যে এসে গেছ তা জানতে পারিনি। তা তোমরা নীচে দাঁড়িয়ে আছ কেন? চলো চলো, উপরে চলো।”

অনুপমা দেবী আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন, “এই হচ্ছে ডোরা, আমার দেওর শঙ্করের বউ। সম্পর্কে আমার জা হয় বটে, কিন্তু বয়েস এত কম যে, জা না-হয়ে মেয়ে হলেই ঠিক হত।”

ডোরা বললেন, “কী যে বলো দিদি, আমার বয়েস কত তুমি জানো না, পুরো বিয়াল্লিশ।”

দেখে অবশ্য বিয়াল্লিশ বলে মনে হয় না, আরও অন্তত পাঁচ-সাত বছর কম বলে ভ্রম হয়। ভদ্রমহিলা হয়তো ডাকসাইটে সুন্দরী বলে গণ্য হবেন না, তবে রীতিমতো লাবণ্যময়ী। চোখের রং হালকা বাদামি, গায়ের রং ইংল্যান্ডের মেমসায়েবদের মতো ফ্যাকাসে সাদা নয়, বরং ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী ইউরোপীয় দেশগুলির মেয়েদের মতো অলিভ-ঘেঁষা। হাসলে দু’গালে টোল পড়ে। লাবণ্যের মাত্রা তাতে বেড়েছে। চিবুকের পাশে যে বড় সাইজের বিউটি-স্পটটি দেখছি, ওটা আঁকার কোনও দরকারই এঁর ছিল না।

ভাদুড়িমশাইকে নিয়ে কেদারেশ্বর খানিক আগেই উপরে উঠে গিয়েছিলেন। ডোরার সঙ্গে আমরাও এবারে দোতলায় উঠে এলুম। এ-বাড়িতে ঢুকেই মহেশ্বর ফুকনের ঐশ্বর্য সম্পর্কে যা ধারণা করে নিয়েছিলুম, উপরে উঠে সেটা আরও পাকা হল। ঢালাই-সিমেন্টের তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না, এমনকী ঢালাই-মোজাইক বা টালির চিহ্নও কোথাও চোখে পড়ল না। যেমন মেঝে, তেমন সিঁড়ির ধাপ, তেমন সার-সার রোমান কলামের মতন পিলার, সর্বত্র মার্বলের কাজ। গোটা বাড়িটাই যেন মার্বল-এ মুড়ে রাখা হয়েছে।

বাড়ির সামনের দিকে, যেমন একতলায় তেমন দোতলায়, ফুট-বারো চওড়া টানা বারান্দা বারান্দার সামনে লন। লন পেরোলে সড়ক। রাত্তিরে এখন ভাল চোখে পড়ছে না, তবে শুনেছি, সড়কের পরে খানিকটা ফাঁকা জমি পেরোলেই ব্রহ্মপুত্র। শহরের মূল কেন্দ্র থেকে এই বাড়ি বেশ খানিকটা দূরে বলে জনবসতি সম্ভবত এদিকে খুবই কম। হয়তো সেই কারণে সামনের সড়কে লোকজনের যাতায়াত বিশেষ দেখছি না, গাড়িঘোড়াও অনেকক্ষণ বাদে-বাদে এক-আধটা আসছে-যাচ্ছে।

সিঁড়ি দিয়ে দোতলার বারান্দায় পৌঁছে ডাইনে মোড় নিয়ে যে ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালুম, তার ভিতর থেকে কেদারেশ্বর বেরিয়ে এসে আমাদের দেখতে পেয়ে বললেন, “কী কান্ড, আপনারা এতক্ষণ নীচে দাঁড়িয়ে ছিলেন? আসুন, আসুন, কাকা আপনাদের খোঁজ করছিলেন, তিনি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে চান। …না না, তিনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ, ও নিয়ে ভাববেন না।”

অনুপমা দেবীকে নিয়ে ডোরা ইতিমধ্যে সিঁড়ির বাঁ-দিকে চলে গিয়েছিলেন। আমরা ডান দিকের ঘরে ঢুকলুম। বিশাল ঘর। একদিকে একটি ডাবল খাট, আর অন্যদিকে একটি আরাম-কেদারা ঘিরে গদি-আঁটা খানকয়েক চেয়ার। তা ছাড়া এই ঘরে অন্য-কোনও আসবাবপত্র চোখে পড়ল না। এমনকী একটা ওয়ার্ডরোব কিংবা ড্রেসিং টেবিলও না। দেওয়ালে একটি মাত্র ছবি। একটা ল্যান্ডস্কেপ। কার আঁকা জানি না। তবে পাকা হাতের কাজ। যদি শুনি কনস্টেবল কি গেসবরোর প্রিন্ট, অবাক হব না। বারান্দার দিকে দেওয়ালে পরপর তিনটি বড় মাপের জানলা। উলটো দিকের দেওয়ালেও তা-ই। জানলাগুলির কাচের পাল্লা অবশ্য বন্ধ। মাথার উপরে যে-দুটি ফ্যান রয়েছে, তারও ব্লেড ঘুরছে না। ঘোরার কোনও দরকার নেই, কেন না ঘরখানা এয়ার-কন্ডিশনড।

আরাম-কেদারায় যিনি বসে আছেন, তিনিই যে মহেশ্বর ফুকন, তা আর বলে দিতে হয় না। তাঁর সামনে ও ডাইনে-বাঁয়ে পাতা চেয়ারগুলোতে বসে আছেন ভাদুড়িমশাই ও অন্য দুই ভদ্রলোক। মহেশ্বর ফুকন আমাকে ও সদানন্দবাবুকে নমস্কার করে বললেন, “আপনারা বসুন।” তারপর কেদারেশ্বরের দিকে তাকিয়ে : “তুমিও বোসো, কেদার।” প্রতি-নমস্কার করে আমরা দুজনে বসে পড়লুম। কেদারেশ্বর বললেন, “আমি আর এখন বসছি না, কাকা। যেমন চারুদাকে তুমি নামেই চিনতে, তেমন এঁদের দুজনের কথাও তোমাকে বলেছি। তুমি এখন এঁদের সঙ্গে কথা বলো, আমি ততক্ষণে রান্নার কাজ কদ্দুর কী হল, একটু খোঁজ করে আসি।”

টাকটা বোধহয় ধুবড়ির এই ফুকন-পরিবারের বংশগত ব্যাপার। যেমন ভ্রাতুষ্পুত্র কেদারেশ্বরের, খুল্লতাত মহেশ্বরের টাকও তেমন তাঁর মাথার একেবারে সর্বাংশের দখল নিয়ে বিরাজ করছে, সামনে পিছনে ডাইনে কিংবা বাঁয়ে কোথাও এক বর্গ ইঞ্চি জায়গাও ছেড়ে দেয়নি। এমন ঝকঝকে আয়নার মতন টাক বড়-একটা চোখে পড়ে না। মহেশ্বর ফুকনের বয়স যে এখন পঁচাশি সেটা জানি বলেই তাঁর চোখ দুটি দেখে অবাক মানলুম। এই বয়সের অনেক আগেই স্বাভাবিক দীপ্তি হারিয়ে মানুষের চোখ একটু ঘোলাটে হয়ে যায়। কিন্তু এঁর চোখের ধারালো ভাবটা দেখলুম কিছুমাত্র কমেনি; কারও দিকে যখন তাকান, তখন মনে হয় যেন তার অন্তস্তল অব্দি স্পষ্ট দেখে নিচ্ছেন। বসে আছেন বলে দৈর্ঘ্যটা ঠিক আন্দাজ করতে পারলুম না, তবে মনে হল, মানুষটি সম্ভবত একটু বেঁটেই হবেন। নাকটি টিকোলো, শরীর হালকা-পলকা, গায়ের রং দুধের সঙ্গে খানিকটা আলতা মেশালে যেমন দাঁড়াবে, সেই রকম। অর্থাৎ সিঁদুরে আমের মতো।

যে দুই ভদ্রলোক আমাদের অচেনা, মহেশ্বর ফুকন যে-ভাবে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তাতে বুঝলুম, যাঁরা বিপুল বিত্ত সঞ্চয় করেছেন ও অন্যের জীবন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ধরেন, অধীনস্থ কিংবা প্রসাদপ্রার্থী মানুষদের প্রতিও যে বাক্যে কিংবা আচরণে—অন্তত অপরিচিত লোকের সামনে—কিছুটা সৌজন্য রক্ষা করা দরকার, তা তাঁরা বিশ্বাস করেন না। যে ভদ্রলোকের ডানপাশে আমি বসে আছি, তাঁর বয়স মোটামুটি চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, পরনে চকোলেট রঙের ট্রাউজার্স ও সাদা শার্ট। মহেশ্বর ফুকন তাঁকে দেখিয়ে বললেন, “ইনি বীরেশ্বর চৌধুরি, ধুবুড়িতে আমাদের ব্যাবসা কিছুমাত্র বাড়াতে পারেননি, অথচ এরই মধ্যে বঙ্গাইগাঁও স্টেশনের কাছে এমন একটি সম্পত্তি কিনেছেন, যা এঁর বৈধ রোজগারের টাকায় কেনা সম্ভব নয়।” আর অন্যজন, যাঁর বয়েস ৫০-৫৫ বলে মনে হল ও যিনি সাদা প্যান্টের সঙ্গে হালকা নীল শার্ট পরেছেন, চোখে সরু সোনালি ফ্রেমের চশমা, তাঁকে দেখিয়ে বললেন, “ইনি অনাদি হাজরিকা, আর্কিটেক্‌ট অ্যান্ড বিলডিং কন্ট্রাকটর, হালে এই ধুবুড়িতেই আমাদের কোম্পানির হয়ে একটা সিনেমা হল বানিয়ে দিয়েছেন, ধড়িবাজ লোক, তার জন্যে আমাদের ঘাড় ভেঙে যে টাকা আদায় করেছেন তাতে বোধহয় বেনামে এঁরও একটা সিনেমা-হল হয়ে গিয়ে থাকবে। আগে বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখন দেখছি যাঁর খাচ্ছেন তাঁরই পিঠে ছুরি বসাতে এঁর জুড়ি নেই।”

শুনে, দু’জনেরই প্রতিবাদ করা উচিত ছিল, কিন্তু একজনও করলেন না, বরং দুজনেই দেখলুম হেঁ-হেঁ করতে লাগলেন।

একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন মহেশ্বর। তারপর ভাদুড়িমশাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আর হ্যাঁ, আমার ভাইপো কেদার, তার এক নিখোঁজ বন্ধুকে খুঁজে বার করার জন্যে কলকাতা থেকে যে কিনা আপনাদের এখানে ছুটিয়ে এনেছে, তার সম্পর্কে তো যত কম বলা যায়, ততই ভাল। আরে, তুই তোর সেই আধ-পাগলা দেড়েল ফ্রেন্ড…কী যেন নাম তার…ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে, সুশান্ত চৌধুরি…তো তার কথা ভেবে তোর ঘুম হচ্ছে না, এদিকে আমার কথা তুই একটুও ভাবছিস কই। আমি বুড়ো মানুষ, তোর তো এখন আমার পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত, নইলে এই যে দুই মহাপুরুষের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিলুম, এইসব হাঙর-কুমিরের হাত থেকে আমাকে বাঁচাবে কে? আমার ছেলে বিদেশে পড়ে আছে, সেখানে সে যে কোন্ রাজকার্য করছে তা আমি জানি না, তবে কিনা সে যে আর দেশে ফিরবে, এমন আশা আমার নেই। তা সে না-ফেরে তো না-ই ফিরুক, তুই তো আছিস, তুই আমার ভাইপো, তুই ছেলের চেয়ে কম কীসে, তাই বারবার ব্যাটাকে বলেছি যে, ওরে কেদার, আদ্দেক ব্যাবসা আমি তোর নামে লিখে দিচ্ছি, তুই আমার ঘাড় থেকে অন্তত খানিকটা বোঝা নামিয়ে সেটা নিজের ঘাড়ে তোল, কিন্তু বাবু তাতে রাজি নন। মহাত্মা সাজার শখ হয়েছে, তাই বলছেন যে, না না, যা নাকি তার প্রাপ্য নয়, তা সে নেবে না। ব্যাটা এক নম্বরের ইডিয়েট!”

কেদারেশ্বর ইতিমধ্যে ঘরে ঢুকেছিলেন। মহেশ্বরের শেষের দিকের কথাগুলি তাঁর কানে গিয়েছিল নিশ্চয়। তাই বললেন, “এখন আর তুমি ও-সব নিয়ে ভাবছ কেন কাকা? শঙ্কর ঠিকই ফিরে আসবে, আর ফিরে এসে তোমার ব্যাবসার ভারও সে তার নিজের হাতে তুলে নেবে। আর তা ছাড়া, একটা কথা তুমি ভেবে দ্যাখোনি।”

“কী ভাবিনি?” মহেশ্বর ফুকন খানিকটা রাগ ও খানিকটা অভিমান মেশানো গলায় বললেন, “তোকে যা বলেছিলুম, তা সব দিক ভেবেই আমি বলেছিলুম।”

কাকা-ভাইপোর কথাবার্তার মধ্যে পারিবারিক প্রসঙ্গ এসে যাচ্ছে দেখে বীরেশ্বর ও অনাদি সম্ভবত অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করেছিলেন। অনাদি হাজরিকা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “আপনারা কথা বলুন, আমি বরং ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসছি।”

প্রায় একই সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন বীরেশ্বর চৌধুরিও। মহেশ্বর তাঁদের প্রায় ধমক দিয়ে বললেন, “বসুন! এই যে আমার ছেলে বিদেশ থেকে ফিরতে চায় না, আড়ালে-আবডালে তো এই নিয়ে অলোচনার অন্ত নেই, গুজুর গুজুর যে আপনারা দুজনেও করে থাকেন, তা কি আমার কানে যায় না নাকি? আর সামনা-সামনি কথাটা উঠতেই লজ্জায় একেবারে মরে যাচ্ছেন! যতসব ভন্ড! হিপোক্রিট! বসুন!”

ধপ করে দুজনেই আবার যে-যাঁর চেয়ারে বসে পড়লেন। এবারে কেদারেশ্বরের দিকে তাকিয়ে মহেশ্বর বললেন, “নে, এখন বল যে, কোন্ কথাটা আমি ভাবিনি।”

কেদারেশ্বর বললেন, “নাহক তুমি উত্তেজিত হচ্ছ। ডাক্তার কী বলেছেন, মনে নেই?”

“ডাক্তারের কথা ছেড়ে এখন যা বলছিলি বল। কোন্ কথাটা ভেবে দেখিনি আমি?”

“এই সহজ কথাটা ভেবে দ্যাখোনি যে, আমার বয়েসও এখন সত্তর বছর।” কেদারেশ্বর হেসে বললেন, “তোমার বয়েস যেহেতু চুরাশি, তাই আমাকেও তুমি ছেলেছোকরা ভাবো। তাই এখনও আমাকে তুমি তোমার ব্যাবসার মধ্যে টানতে চাইছ। কিন্তু আমার কি আর এখন একটা নতুন দায়িত্ব নেবার মতো ক্ষমতা আছে না উদ্যম আছে?”

শুনে হোহো করে হেসে উঠলেন মহেশ্বর। আমি দেখলুম, হেসে ওঠার সঙ্গে-সঙ্গেই যেন মহেশ্বরের চোখমুখের চেহারা নিমেষে পালটে গেছে, তাঁকে যেন হঠাৎ অনেক সতেজ ও নবীন দেখাচ্ছে। মিনিট খানেক ধরে তিনি শুধু হেসেই গেলেন। তারপর হাসি থামিয়ে বললেন, “ওরে গাধা, সত্তর বছর কি একটা বয়েস? ওই বয়েসে আমি দু-দুটো নতুন ব্যাবসা—প্রিন্টিং আর ডাটা-প্রসেসিং—শুরু করেছিলুম, তা জানিস? আর এই যে এখন ডোরার পাল্লায় পড়ে নিজেরই বাড়ির মধ্যে বন্দি হয়ে আছি, বিছানায় শুয়ে শুয়েই এখনও এই চুরাশি বছর বয়েসেও আমি ভেবে যাচ্ছি যে, ব্যাবসাটাকে কীভাবে আরও বাড়ানো যায়! সত্তর বছর! হুঁ!”

কেদারেশ্বর বললেন, “কার সঙ্গে কার তুলনা!”

“তার মানে!”

“তাও বুঝিয়ে বলতে হবে? চুরাশি তো চুরাশি, চুরানব্বুই বছর বয়েসেও তুমি যে একজন ইয়াংম্যানই থেকে যাবে, আর হ্যাঁ, গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ নাম না-তুলিয়ে ছাড়বে না, সে তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু একটা কথা তো তুমিও মানবে, সেটা এই যে, সত্তরের তুলনায় বিয়াল্লিশ অনেক কম বয়েস। ওই বয়সে মানুষের রক্তের তেজ অনেক বেশি থাকে, ফলে ঝুঁকি নিতে সে ভয় পায় না। কাকা, তুমি নিজের কথাই একবার ভেবে দ্যাখো। এখনও তুমি ঝুঁকি নিচ্ছ ঠিকই, কিন্তু বিয়াল্লিশ বছর বয়েসে কি তোমার ঝুঁকি নেবার সাহস আজকের তুলনায় আরও অনেক বেশি ছিল না?”

মহেশ্বর বললেন, “ছিল তো বটেই। কিন্তু তাতে কী হল? তুই কী বলতে চাইছিস, একটু স্পষ্ট করে বল তো।”

“বেশি-কিছু বলতে চাইছি না।” কেদারেশ্বর বললেন, “আমি শুধু একটা কথাই তোমাকে মনে করিয়ে দিতে চাইছি। সেটা এই যে, শঙ্করের বয়েস এখন বিয়াল্লিশ বছর। তুমি তোমার ব্যাবসা আরও বাড়াতে চাইছ। বাড়াবার জন্যে যে ঝুঁকি নেওয়া দরকার, তোমার এই সত্তর বছরের ভাইপোর চেয়ে বিয়াল্লিশ বছরের ছেলে সেটা আরও অনেক সাহস আর দাপটের সঙ্গে নিতে পারবে।”

“কিন্তু সে তো ফিরবে না।”

কেদারেশ্বর হেসে বললেন, “এবারেও যাবার সময়ে শঙ্কর তা-ই বলে গেছে বটে, কিন্তু সে ফিরবে। ডোরার সঙ্গে এই নিয়ে কালও আমার কথা হয়েছে। সে বুদ্ধিমতী মেয়ে। একবার যখন বুঝতে পেরেছে যে, শঙ্করের এখানে ফেরা দরকার, তখন যেমন করেই হোক তাকে সে না-ফিরিয়ে ছাড়বে না। তুমি দেখে নিয়ো।”

অনুপমাকে নিয়ে ডোরা এসে ঢুকলেন। ঢুকে কেদারেশ্বরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “দাদা, কী নিয়ে লেকচার দিচ্ছিলেন জানি না, তবে বক্তৃতাটা এবারে বন্ধ রাখতে হবে, খেতে দেওয়া হয়েছে।”

“খাব তো,” কেদারেশ্বর একটু দ্বিধাজড়িত ভঙ্গিতে বললেন, “এদিকে চন্দ্রকান্ত শ‍ইকিয়া আর সুকুমার চলিহা তো এখনও এলেন না।”

কথাটা শেষ হতে-না-হতেই এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক ঘরে ঢুকে মহেশ্বর ফুকনকে জোড় হস্তে নমস্কার করে তারপর কেদারেশ্বরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি এসে গেছি।”

কেদারেশ্বর বললেন, “এত দেরি হল যে?”

“চন্দ্রকান্তর সঙ্গে আসব ভেবেছিলুম। কিন্তু তার বাড়িতে গিয়ে শুনি, জ্বরে পড়েছে। শুনেই তো আর চলে আসতে পারি না। বাইরের ঘরে বসে তার ছেলের সঙ্গে খানিকক্ষণ কথা বলতে হল। তা নইলে সময়-মতোই আসতে পারতুম।”

আরাম-কেদারা থেকেই মহেশ্বর বললেন, “ওহে সুকুমার, আমার দিকে একবার ঘুরে দাঁড়াও তো।”

সুকুমার চলিহা ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকে কিছু বললেন?”

“বিলক্ষণ। বাপু হে, ও-সব জ্বর-ফর সব বাজে কথা। চন্দ্রকান্ত আসলে ভয় পেয়েছে যে, তার মেয়ের বিয়ের সময় তোমার সামনেই ওই যে তাকে পঁচিশ হাজার টাকা দিয়েছিলুম, এখনও সেটা শোধ করেনি বলে খাওয়ার নাম করে ডাকিয়ে এনে আমি তার বাপান্ত করে ছাড়ব। তা তাকে বলে দিয়ো যে, ফেরত পাব আশা করে টাকাটা আমি দিইনি। সে যেন ধরে নেয় যে, তার মেয়েকে ওটা আমি যৌতুক দিয়েছি।’

‘ডোরা বললেন, “দাদা, আপনি এবারে এঁদের সবাইকে নিয়ে খেতে চলুন, আর দেরি করবেন না।”

মহেশ্বর তাঁর আরাম-কেদারা থেকে উঠে পড়েছিলেন। দ্রুত পায়ে অনুপমা তাঁর সামনে এসে বললেন, “কষ্ট করে আপনার আর ডাইনিং হলে যাবার দরকার নেই, কাকা। আপনার খাবার আমরা বরং এখানেই এনে দিচ্ছি।”

“তাই কখনও হয়?” মহেশ্বর হেসে বললেন, “চলো, আমিও তোমাদের সঙ্গে যাচ্ছি। কিন্তু ব্যবস্থাটা কীরকম করেছ তোমরা?… মানে টেবিলে বসিয়ে খাওয়াবে, না বুফে?”

“ডোরার কাছে শুনলুম বুফে। তবে আজ আর একতলার বড় ঘরটায় ব্যবস্থা করার দরকার হয়নি। দোতলার কোণের ঘরটাতেই দিব্যি কুলিয়ে যাবে। লোকজন তো আজ অনেক কম।”

সত্যিই কম। বাড়ির লোক আর বাইরের লোক, সব মিলিয়ে জনা দশেক। দোতলার কোণের ঘরটা আসলে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে বাঁয়ে ঘুরে সবশেষের ঘর। একে তো এ-ঘরটা দিব্যি বড়, তার উপরে, এয়ারকন্ডিশন্ড বলে জানলাগুলো বন্ধ থাকা সত্ত্বেও, পাল্লার কাচে চোখ চালিয়ে বোঝা গেল, কোণের ঘর বলেই এ-ঘরটার তিন দিক খোলা। একদিকে দেওয়াল ঘেঁষে লম্বা টেবিল, তার উপরে এক ধারে হরেক রকমের ধাতব পাত্রে আমিষ ও নিরামিষ পদগুলি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি পাত্রের তলায় জ্বলছে স্পিরিট ল্যাম্প, যাতে খাবারগুলি ঠাণ্ডা হয়ে না যায়। একই টেবিলের অন্য ধারে, মাঝখানে খানিকটা জায়গা ছেড়ে দিয়ে, রাখা হয়েছে কাচের প্লেট ও কাঁটা-চামচ। এটার পাশে আর-একটা টেবিলে সাজানো রয়েছে পায়েসের একটি বৃহৎ পাত্র ও তিন-চার রকমের মিঠাই। উলটো দিকের দেওয়াল ঘেঁষে পাশাপাশি খান দশ-বারো চেয়ার। যদিও বুফে, তবু কাউকে যাতে না প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে খেতে হয়, তারই জন্যে এই ব্যবস্থা।

আরাম-কেদারায় বসে ছিলেন বলে এতক্ষণ বুঝতে পারিনি, কিন্তু যে রকম স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে মহেশ্বর ফুকন তাঁর শয়নকক্ষ থেকে এই খাবার-ঘরে এলেন, তাতে বুঝলুম, হাঁটাচলায় তাঁর কোনও অসুবিধে নেই। তাতে অবশ্য অবাক হলুম না, কেননা ইতিপূর্বেই আমরা কেদারেশ্বরের কাছে শুনেছি যে, তাঁর এই চুরাশি বছর বয়সের পিতৃব্যটি এখনও রোজ সকালে মাইল-চারেক হাঁটেন। ইতিমধ্যে তিনি একটি চেয়ারে বসে পড়েছিলেন। ডোরা একটি প্লেট নিয়ে তাতে এক চামচ সাদা ভাত, এক চামচ ডাল, একটা ফিশ-ফ্রাই, এক টুকরো মাংস ও চামচ দুয়েক স্যালাড তুলে তাঁর দিকে এগোতেই একজন কাজের লোক তড়িঘড়ি একটা নিচু ছোট সাইড-টেবিল এনে মহেশ্বর ফুকনের সামনে বসিয়ে দিল। ডোরা তার উপরে প্লেটটা নামিয়ে রেখে বললেন, “ড্যাড, আজ একটু অনিয়ম করতে পারো, ডাক্তারবাবুর কাছে আমি অনুমতি নিয়ে রেখেছি। তবে যা দিয়েছি, তাতেই খুশি থাকতে হবে, সেকেন্ড হেল্পিং পাবে না।” কাজের লোকটি একটা তোয়ালে হাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। ডোরা সেটা তার হাত থেকে নিয়ে মহেশ্বরের হাঁটুর উপরে বিছিয়ে দিলেন।

বীরেশ্বর ও সুকুমার চটপট তাঁদের প্লেটে কিছু খাবার তুলে নিয়ে ইতিমধ্যে মহেশ্বরের দু’পাশের দুটি চেয়ার দখল করে ফেলেছিলেন। ক্ষমতাবান মানুষটির পাশে বসার লোভ সম্ভবত অনাদি হাজরিকারও ছিল। কিন্তু খাদ্যের প্রতিও একই রকমের লোভ থাকায় তিনি আর দৌড়ের প্রতিযোগিতায় তাঁদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারলেন না। ফলে, খানিক দূরের একটি চেয়ারে বসে তিনি তাঁর প্লেটভর্তি খাবারে মনোনিবেশ করাই শ্রেয় জ্ঞান করলেন।

প্লেট একেবারে ভর্তি করে খাবার নিয়েছিলেন সদানন্দবাবুও। দেখলুম, হাজরিকার পাশের চেয়ারটির দখল নিয়ে তিনি খাওয়ার ফাঁকে-ফাঁকে ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ জমাবার চেষ্টা করছেন, কিন্তু অন্য তরফ থেকে খুব-একটা উৎসাহ পাচ্ছেন না। ওদিকে বীরেশ্বর চৌধুরি—একটু আগেই মহেশ্বর ফুকন আমাদের সামনেই যাঁকে ‘ঘোর ফাঁকিবাজ’ বলেছেন, সেই সঙ্গে এমনও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, টাকাপয়সার ব্যাপারে লোকটি আদৌ সাধু নয়—মহেশ্বরকে নিচু গলায় কিছু বলছেন, আর মহেশ্বর বেশ মনোযোগ দিয়ে সেটা শুনছেনও। সুকুমার চলিহাও যে তারই মধ্যে এক-আধটা মন্তব্য করছেন না তা নয় তবে মহেশ্বরের আগ্রহের দখল নেবার ব্যাপারে বীরেশ্বরের তুলনায় তিনি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছেন। বীরেশ্বর নিজেও অবশ্য খুব বেশিক্ষণ তাঁর এগিয়ে থাকার সুবিধেটাকে ভোগ করতে পারলেন না। তাড়াতাড়ি করে তাঁর উপরওয়ালার পাশের আসনটির দখল নেবার গরজে তিনি প্রথমবারে তাঁর প্লেটে বিশেষ-কিছু তুলতে পারেননি, এবারে বাদ-পড়া আইটেমগুলি সংগ্রহ করার জন্য যেই তিনি তাঁর আসন ছেড়ে খাবারের টেবিলের দিকে এগিয়েছেন, অনাদি অমনি—সম্ভবত এই সুবর্ণ-সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলেন তিনি—প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে বীরেশ্বরের ছেড়ে যাওয়া চেয়ারটিতে গিয়ে বসে পড়লেন। এই মানুষটির পরিচয় দিতে গিয়ে মহেশ্বর একটু আগে বলেছিলেন যে, ইনি ধড়িবাজ লোক, যাঁর খাচ্ছেন তাঁরই পিঠে ইনি ছুরি বসিয়ে দেন। অথচ এখন দেখছি, এঁর সঙ্গেও মহেশ্বর দিব্যি হেসে-হেসে কথা বলছেন। দেখে মনে হল, এঁরা সব পুতুল মাত্র, আর মহেশ্বর ফুকন পুতুল-নাচের এক মস্ত কারিগর। তিনি এঁদের ইচ্ছেমতো নাচিয়ে যাচ্ছেন। হাতের সুতোয় টান মেরে তিনি এখন যে এঁদের কাকে কাছে টানবেন আর কাকে দূরে ঠেলে দেবেন, তার কিচ্ছু ঠিক নেই।

কেদারেশ্বর ইতিমধ্যে সেকেন্ড হেল্পিংয়ের জন্যে বারান্দা থেকে ঘরের মধ্যে চলে এসেছিলেন। প্লেটে কিছু খাবার তুলে নিয়ে ফের বারান্দার দিকে পা বাড়িয়েও আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। বললেন, “ঠিকমতো সব খাচ্ছেন তো?”

হেসে বললুম, “প্রতিটি আইটেমই তো ফাটাফাটি রকমের। না-খেয়ে পারা যায়?”

“ভেরি গুড। তবে হ্যাঁ, একটা কথা বলি। আপনার ব্লাড শুগার কত জানি না, তবু বলছি, অন্য কোনও মিষ্টি খান বা না-ই খান, এ-বাড়ির পায়েসটা কিন্তু খাবেনই। এই একটা ব্যাপারে এদের রাঁধুনি মেয়েটির কোনও জুড়ি কোথাও খুঁজে পাবেন না।”

“ঠিক আছে, খাব। কিন্তু আমাদের ভাদুড়িমশাই কোথায় গেলেন?”

“চারুদা?” কেদারেশ্বর বললেন, “ওরা বারান্দায়। আপনিও আসুন না।”

বাইরে বারান্দায় বেরিয়ে এলুম। বারান্দা থেকে ভিতরে ঢুকতে যাচ্ছিলেন অনুপমা। কেদারেশ্বর তাঁকে আটকে দিয়ে বললেন, “শোনো, কাকার প্লেট দেখলুম প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে। হয়তো উনি দু-একটা আইটেম ফের নিতে চাইবেন, কিন্তু তুমি দিয়ো না। মিষ্টি তো একেবারেই দেবে না। খুব যদি জেদ করেন তো বরং পায়েসটা দিয়ো, তাও এক চামচের বেশি কিছুতেই নয়। ডাক্তারের নিষেধ।”

অনুপমা হেসে বললেন, “ঠিক আছে, তা-ই হবে। কিন্তু তারপরে কী করব?”

‘তোমাকে কিছু করতে হবে না। ওঁর খাস-বেয়ারা তো ওখানেই রয়েছে, সে-ই ওঁর হাতমুখ ধুইয়ে দিয়ে ওঁকে ফের বেডরুমে নিয়ে যাবে। তার পরে যা করার ডোরা-ই করবে। ডোরা সব জানে, তবু ওকে একবার বলে আসছি।”

বারান্দার অন্য প্রান্তে ডোরা আর ভাদুড়িমশাই কথা বলছিলেন। কেদারেশ্বর সেখানে গিয়ে ডোরাকে কিছু বলে আবার ফিরে এলেন আমার কাছে। বললেন, “এর মধ্যে আবার আর-এক কান্ড হয়েছে।”

বললুম, “আবার কী হল?”

“ডোরার একটা আংটি হারিয়ে গেছে। এটা আজ সকালের ব্যাপার। ওর শোবার ঘরের সঙ্গে যে অ্যান্টি-রুমটা রয়েছে, সেখানে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে আংটিটা রেখে বাথরুমে স্নান করতে ঢুকেছিল। ফিরে এসে আর সেটা পাচ্ছে না। সকালে নাকি এই নিয়ে বেশ হই-চইও হয়েছিল। আমি অবশ্য একটু আগে অনুপমার কাছে শুনলুম।”

“দামি আংটি?”

“সোনার আংটি যখন, তখন দামি তো বটেই। তবে দামটা কোনও ব্যাপার নয়, আসল কথাটা হল, এটা একটা এয়্যারলুম, ডোরার মা তো বেঁচে নেই, শুনলুম মারা যাবার আগে তিনি আর-পাঁচটা জিনিসের সঙ্গে এটাও ওকে দিয়ে গেছেন।”

“সব জায়গায় খুঁজে দেখা হয়েছিল?”

“স-ব জায়গায়। এমনকি, কাকা তার খাস-বেয়ারাটিকে দিয়ে কাজের লোকদের প্রতিটি ঘর আর তাদের প্রত্যেকের বাক্স-প্যাঁটরা সার্চ করিয়ে ছেড়েছেন। কোত্থাও পাওয়া যায়নি। ডোরা ইজ রাদার আপসেট।

“হতেই পারেন,” আমি বললুম, “সাধারণ একটা আংটি তো নয়, মায়ের স্মৃতিচিহ্ন। হারিয়ে গেলে যে-কোনও লোকই আপসেট হবে। তা ভাদুড়িমশাইকে উনি সেই কথাই বলছেন নাকি?”

কেদারেশ্বর বললেন, “তা তো বলছেই, তবে চারুদার এখন আংটি নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় কোথায়? একটু আগে বলছিল যে, কাল সকালেই আপনাদের নিয়ে কোকরাঝাড়ে যেতে চায়।”

ডোরার সঙ্গে কথা বলতে-বলতে ভাদুড়িমশাই আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছিলেন। কাছে এসে বললেন, “কী হল, প্লেট তো দেখছি দুজনেরই খালি, আর-কিছু খাবেন না?”

বললুম, “শুধু মিষ্টিটাই বাকি। অনুপমা দেবীর মুখে এ-বাড়ির পায়েসের যা প্রশংসা শুনেছি, ওটা না-খেয়ে ছাড়ছি না।”

“চলুন, ওটা আমিও খাব। এমনিতে অবশ্য মিষ্টি আমি বড়-একটা খাই না। চলো হে, কেদার।”

আমরা ভিতরে ঢুকে দেখলুম, মহেশ্বর ফুকন চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছেন। ডোরা ইতিমধ্যে তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। বললেন, “চলো ড্যাড, আমি তোমাকে তোমার শোবার ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি।” ডোরাকে সঙ্গে নিয়ে মহেশ্বর ফুকন ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। দরজার কাছাকাছি গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভাদুড়িমশাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “রাত্তিরে আজ আপনারা তিনজন যে এ-বাড়িতেই থাকছেন, সেটা জানেন তো?”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “হ্যাঁ, কেদার আমাদের বলেছে।”

“কেদার আর অনুপমাকেও থাকতে বলেছিলুম, কিন্তু ওরা রাজি হল না।”

“কী করে রাজি হই বলো,” কেদারেশ্বর বললেন, “বাড়ি একেবারে খালি পড়ে থাকবে।”

“ঠিক আছে, আমি কি আর তোদের জোর করে আটকে রাখতে পারব?” মহেশ্বর ফুকন বললেন, “তবে যাবার আগে মিঃ ভাদুড়িকে ওঁদের ঘরগুলো দেখিয়ে দিয়ে যাস।… আমি তা হলে চলি মিঃ ভাদুড়ি, আজ আর আপনাদের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছে না। সাড়ে ন’টার মধ্যে আমাকে শুয়ে পড়তে হয়, ডাক্তারের হুকুম।”

ডোরা আর মহেশ্বর ফুকন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। তারপরে একে-একে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন বীরেশ্বর, অনাদি আর সুকুমার। মহেশ্বর চলে যাওয়ায় তাঁদেরও ওখানে থাকার আকর্ষণ ফুরিয়ে গিয়েছিল।

অনাদি হাজরিকার সঙ্গে আলাপ জমাবার প্রাথমিক উদ্যোগ ব্যর্থ হবার পর সদানন্দবাবু এর মধ্যে যে আর-কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলার বিশেষ চেষ্টা করেছেন, এমন মনে হল না। সম্ভবত তিনি বুঝে গিয়ে থাকবেন যে, একমাত্র মহেশ্বর ফুকন ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথা বলতে এঁরা, অর্থাৎ বাইরের এই তিন ব্যক্তি বিশেষ উৎসাহী নন। ফলে হাতের লক্ষ্মীর প্রতিই তিনি মনোনিবেশ করেছিলেন। অতিশয় নিবিষ্ট চিত্তে খেয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বারান্দা থেকে আমরা এসে ঘরে ঢোকার পরেও যে তিনি আরও দু’বার ভাত, ফিশফ্রাই ও চিকেন দিয়ে তাঁর প্লেটটি পুনর্বার পূর্ণ করে নিলেন, তাও আমার চোখ এড়াল না। অন্যান্য মিষ্টি ছাড়া পায়েসও খেলেন দু’বাটি। তারপর হঠাৎই আমার উপরে চোখ পড়ে যাওয়ায় ইষৎ লাজুক হেসে বললেন, “প্রতিটি আইটেমই অতি উপাদেয় হয়েচে, মশাই।”

বললুম, “আপনার খাওয়া দেখে তা-ই তো মনে হল।”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “বাঃ, খাবেন বই কী। ভাল করে খেয়েছেন, এবারে ভাল করে ঘুমোবেন। লং জার্নি, ধকল নেহাত কম যায়নি, আজ ওঁর একেবারে নিটোল একটি ঘুম দরকার।

কথাটা যে নিতান্ত জার্নির ধকলের কথা ভেবে বললেন না, তখন সেটা বুঝিনি। বুঝলুম আমাদের শোবার ঘরে যাবার পর। সে-কথায় একটু বাদেই আসছি।

মহেশ্বর ফুকনকে তাঁর শয়নকক্ষে পৌঁছে দিয়ে ডোরা ইতিমধ্যে আবার আমাদের কাছে ফিরে এসেছিলেন। অনুপমা বললেন, “শুধু কাজের লোকদেরই খাওয়া বাকি। ওরা কি এখানেই খেয়ে নেবে? নাকি নীচের তলায়?”

“আজ এখানেই খেয়ে নিতে বলেছি।” ডোরা বললেন, “খাওয়া শেষ হলে ঘরটা পরিষ্কার করে বাসনপত্র নিয়ে নীচে নেমে যাবে।”

“শ্বশুরমশাইকে যা-যা ওষুধ খাওয়াতে হয়, খাইয়ে দিয়েছ?”

ডোরা হেসে বললেন, “ওষুধ খাইয়ে একেবারে শুইয়ে দিয়ে এসেছি। এতক্ষণে হয়তো ঘুমিয়েও পড়েছেন। দাদাকেও আর আটকে দিচ্ছি না, এঁদের ঘরগুলো আমিই দেখিয়ে দেবখন।”

অনুপমা বললেন, “তা হলে আমরা এবারে যাই, ডোরা।”

“তা যাও,” ডোরা বললেন, “কিন্তু কাল সকালে একবার আসবে না?”

“কী করে আসব? এঁরা তো এখানে ব্রেকফাস্ট করে আমাদের বাড়িতে চলে আসবেন। তারপর শুনছি আমাদের ওখানে তাড়াতাড়ি লাঞ্চ করে নিয়ে চলে যাবেন কোকরাঝাড়ে। তা হলে আর সকালে এখানে আসি কী করে?”

কেদারেশ্বর আর অনুপমা আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নীচে নেমে গেলেন। ডোরা বললেন, “চলুন, এবারে আপনাদের ঘরগুলো দেখিয়ে দিয়ে আসি।”

মহেশ্বর ফুকন যে-ঘরে থাকেন, তার ঠিক পাশেই দুটো ঘরে আমাদের শোবার ব্যবস্থা হয়েছে। অ্যাটাচড বাথরুম রয়েছে দুটো ঘরেই। তা ছাড়া এ-দুটো ঘরও এয়ার-কন্ডিশনড। ভাদুড়িমশাই বললেন, “বাঃ, অতিথি সৎকারের তো একেবারে রাজসিক আয়োজন করে রেখেছেন দেখছি।”

ডোরা বললেন, “একটাই অসুবিধে। আপনাদের মধ্যে যে-কোনও দুজনকে একটা ঘর শেয়ার করতে হবে।”

সদানন্দবাবু বললেন, “ও নিয়ে ভাববেন-না। দুটো ঘরেই তো দেকচি ডবল-খাট, তা হলে আর অসুবিদের কী আচে? একটা ঘরে ভাদুড়িমশাই থাকবেন অখন, অন্য ঘরটায় কিরণবাবু আর আমি থাকব।”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “এ-বাড়ির একতলায় কেউ থাকে না?”

ডোরা বললেন, “আগে শুনেছি কাজের লোকেরা থাকত। এখন তো তাদের জন্যে এ-বাড়ির পিছনে পরপর কয়েকটা ঘর করে দেওয়া হয়েছে, সেখানেই থাকে তারা।”

“তার মানে একতলাটা ফাঁকা পড়ে থাকে?”

“একতলার একদিকে কিচেন, স্টোর আর ডাইনিং হল। অন্যদিকে ড্রয়িং রুম আর লাইব্রেরি। শোবার ব্যবস্থা নেই। রাত্তিরে ঘরে-ঘরে তালা পড়ে যায়। তাই দিনের বেলায় কাজের লোকজন থাকলেও রাত্তিরে কেউ থাকে না।…যাক, আপনারা শুয়ে পড়ুন।…ও হ্যাঁ, আপনি যা চেয়েছিলেন, এই নিন।”

ভাদুড়িমশাইয়ের হাতে ছোট্ট একটা বটুয়া তুলে দিলেন ডোরা। তারপর হেসে বললেন, “চলি তা হলে। শুভরাত্রি।”

ডোরা চলে যাওয়ার পরেই সদানন্দবাবু মস্ত একটা হাই তুলে বললেন, “চমৎকার মেয়ে। একটা ইন্ডিয়ান ফ্যামিলিতে কীরকম মানিয়ে নিয়েচে দেকুন, মেমসাহেব বলে তো চেনাই যায় না।”

আমি বললুম, “কেদারশ্বেরের কাছে তো আজ দুপুরেই আমরা শুনলুম যে, মা মেমসায়েব হলেও ও ইন্ডিয়ান বাপের মেয়ে। তার উপরে আবার নিজেও বিয়ে করেছে একজন ইন্ডিয়ানকে। তা বাপ আর স্বামী, দুজনেরই কাছে যদি ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি-লাইফের কিছু কেতা-কানুনের শিক্ষা পেয়ে থাকে, তাতে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই।”

সদানন্দবাবু আবার একটা হাই তুলে বললেন, “হ্যাঁ, সেটা একটা কতা বটে। তা ছাড়া আমাদের ল্যাঙ্গুয়েজটাও গড়গড় করে বলচে।”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “আপনার ঘুম পেয়ে গেছে, বোসমশাই। যান, এবারে গিয়ে শুয়ে পড়ুন। কাল আবার সুশান্তর খোঁজ নিতে কোকরাঝাড়ে যেতে হবে। ফলে কালও রেস্ট পাবেন না।”

“ঠিক আছে, যাচ্চি।” সদানন্দবাবু বললেন, “আপনিও আর দেরি করবেন না, কিরণবাবু।”

এ-ঘরটায় ভাদুড়িমশাই থাকবেন, পাশের ঘরে আমরা। সদানন্দবাবু পাশের ঘরে গিয়ে ঢুকলেন। তিনি চলে যাবার পরে ভাদুড়িমশাই বললেন, “আপনাকে একটা কাজ করতে হবে।”

“বলুন।”

“সদানন্দবাবুকে নিয়ে চিন্তা নেই। একে তো ক্লান্ত, তার উপরে ঘুমকাতুরে মানুষ, তার উপরে আবার গান্ডেপিন্ডে খেয়েছেন। শুলেই ঘুমিয়ে পড়বেন। এদিকে খাওয়া-দাওয়া সেরে বাসনপত্র নিয়ে কাজের লোকেরা দোতলা থেকে নেমে যে-যার ঘরে চলে যেতে-যেতে তা ধরুন আরও ঘন্টাখানেক। তারপরে আরও এক ঘন্টা যোগ করছি। এখন দশটা বাজে, বারোটা নাগাদ কাজের লোকেরা ঘুমিয়ে পড়বে। জেগে থাকবে শুধু সদর-ফটকের দরোয়ান। তখন, মানে বারোটা নাগাদ আপনি পাশের ঘর থেকে আমার ঘরে চলে আসতে পারবেন?”

“তা কেন পারব না?”

ভাদুড়িমশাই বললেন, “ঠিক আছে, তা হলে চলে আসুন।”

“তা তো হল,” আমি বললুম, “কিন্তু আপনার ঘরে এসে আমি করবটা কী?”

“আগে আসুন তো।” ভাদুড়িমশাই মৃদু হেসে বললেন, “পরের কথা পরে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, আপনি ও-ঘর থেকে আসার সময় সদানন্দবাবুর ঘুম যেন না ভেঙে যায়।”

সদানন্দবাবুর ঘুম কিন্তু সত্যিই ভেঙে গেল। কিংবা এমনও হতে পারে যে, আদৌ তিনি ঘুমোচ্ছিলেন না, ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিলেন মাত্র। রেডিয়াম-লাগানো হাতঘড়িতে বারোটা বাজতেই নিঃশব্দে খাট থেকে নেমে সবে রাবারের চটিতে পা গলিয়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে ছিটকিনি নামিয়ে পাল্লাটা খুলতে যাচ্ছি, চাপা গলায় সদানন্দবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যাচ্চেন?”

খাটের কাছে ফিরে এসে আরও নিচু গলায় বললুম, “বিপদ!”

“অ্যাঁ, কীসের বিপদ?”

“মস্ত বিপদ, প্রাণ নিয়ে টানাটানি, কথা বলবেন না, চুপ করে শুয়ে থাকুন, নয়তো বিপদ আরও বেড়ে যাবে।”

আর কিছু বলতে হল না, সদানন্দবাবু বিছানার উপরে উঠে বসেছিলেন, আমার কথা শেষ হবার আগেই চাদরটা টেনে নিয়ে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়ে ফের শুয়ে পড়লেন। ঘর থেকে বারান্দায় বেরিয়ে এ-দিক ও-দিক দেখে নিলুম। গোটা বাড়ি নিঃশব্দ। ঝুঁকে পড়ে দেখলুম, একতলা অন্ধকার। সেখান থেকেও কোনও কথা কি শব্দ ভেসে আসছে না। বারান্দার আলো নিবিয়ে দিয়ে, পা টিপে-টিপে ঢুকে পড়লুম ভাদুড়িমশাইয়ের ঘরে।

ঘরের মধ্যে শুধু নাইট-ল্যাম্পটা জ্বলছে। তার আবছা আলোয় ভাদুড়িমশাইকে দেখে আমার চমকে ওঠার কথা, কিন্তু এই পোশাকে ওঁকে আগেও একাধিকবার দেখেছি বলে চমকালুম না। পরনে কালো মোজা, কালো জুতো, কালো পায়জামা, দু’হাতে কালো দস্তানা, গায়ে কালো রঙের পুরোহাতা টাইট গেঞ্জি। আমি গিয়ে ঘরে ঢোকার পর পাতলা রবারের কালো মুখোশটিও পরে নিয়ে নিচু গলায় বললেন, “আমার জায়গায় এবারে আপনি এসে শুয়ে পড়ুন। একদম নড়াচড়া করবেন না। আমি একবার একতলা থেকে ঘুরে আসছি।”

“কতক্ষণ বাদে ফিরবেন?”

“আমার মাথার মধ্যে একটা অঙ্ক আছে, আগাথা ক্রিস্টির গোয়েন্দা অ্যার্কুল পোয়ারোর মতো যদি সেটা মিলিয়ে দিতে পারি, তা হলে দশ-পনরো মিনিটের বেশি লাগবে না।”

কথাটা বলে ভাদুড়িমশাই বেরিয়ে গেলেন। ফিরেও এলেন মিনিট পনরোর মধ্যে। ঘরে ঢুকে বললেন, “এবারে আপনি স্বচ্ছন্দে আপনার ঘরে চলে যেতে পারেন।”

অঙ্কটা মিলেছে কি না জিজ্ঞেস করতে, পোশাক পালটাতে-পালটাতে যেভাবে হাসলেন, তাতে বুঝলুম, মিলেছে। এও বুঝলুম যে, এখন আর কিছু বলবেন না। নিজেদের ঘরে ফিরে দেখলুম, ভদ্রলোককে যতই ভয় পাইয়ে দিয়ে থাকি, তাতে তাঁর নিদ্রার কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি, সদানন্দবাবু নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছেন।