মেহেরউন্নিসার দিকে তাকিয়ে কিরীটী পুনরায় প্রশ্ন শুরু করে।
দেখুন আপনি কি কখনো সিনেমায় নেমেছেন, কোন ছবিতে?
মেহেরউন্নিসা কয়েকটা মুহূর্ত কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদুকণ্ঠে বলে, হ্যাঁ।
এখন মনে পড়েছে। কোন একটা কাগজে আপনার ছবি কয়েকদিন আগেই মাত্র দেখেছি। কিরীটী বলে।
চিত্রালীতে—চিত্রালী আমার ছবি ছেপেছে কিছুদিন আগে।
মেহেরউন্নিসা মৃদু কণ্ঠে বলে।
জাহানারার সঙ্গে আপনার কি সম্পর্ক?
সে—
বলুন কি সম্পর্ক? আপনার সঙ্গে যে রক্তের তাঁর সম্পর্ক আছে বুঝতে পেরেছি, অতএব ঢাকবার চেষ্টা করবেন না।
সে আমার দিদি। দিদি!
মায়ের পেটের বোন আপনার?
হ্যাঁ।
কতদূর লেখাপড়া করেছেন আপনি?
আমি গত বৎসর বি.এ. পাস করেছি।
কোন্ কলেজ থেকে?
বহরমপুর থেকে।
সেখানেই বরাবর থাকতেন?
হ্যাঁ, আমাদের কাকার কাছেই সেখানে থাকতাম। কলকাতায় এসে অবধি এখানে।
কলকাতায় কতদিন এসেছেন?
মাস ছয়েক হল।
এখানেই, মানে এই বাড়িতেই নিশ্চয়ই আছেন?
না, মধ্যে মধ্যে আসি। থাকি আমি শ্যামবাজার—আমার এক মাসীর কাছে।
কটা বইতে অভিনয় করেছেন?
খান তিনেক বইতে।
সবটাতেই নায়িকা?
না, শেষটায় নায়িকা।
হুঁ—আচ্ছা বোরখা ব্যবহার করা আপনার অভ্যাস নয়–তাই না?
আমি বোরখা ব্যবহার করি না।
তবে যে বোরখা এখন পরেছিলেন?
মেহেরউন্নিসা চুপ। বোবা।
আমাদের সামনে এসে দাঁড়াতে চাননি, তাই কি?
মেহেরউন্নিসা নীরব।
মানিকবাবু!
আজ্ঞে?
মোতি দাসীকে ডাকুন তো একবার।
মানিক চাটুয্যে তখুনি বের হয়ে গেল।
মেহেরের দিকে অতঃপর তাকিয়ে কিরীটী বলে, একটা কথার সত্যি জবাব দিন—আপনার এখানে এ ভাবে আসা—আপনার দিদি নিশ্চয়ই পছন্দ করছিলেন না–
মেহেরউন্নিসা পূর্ববৎ নীরব।
অবিশ্যি পছন্দ না করারই কথা—বিশেষ করে যখন তিনি চোখের উপরে নবাব সাহেবের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারটা
এসব আপনি কি বলছেন? কিরীটীকে বাধা দিলেন নবাব সাহেব।
কথাটা কি মিথ্যা বলেছি নবাব সাহেব?
চকিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে জবাব দিল কিরীটী। কণ্ঠস্বর তার তীক্ষ্ণ, আপনার সঙ্গে ওঁর ঘনিষ্ঠতা একটা নেই বলতে চান—অস্বীকার করতে চান আপনি কথাটা এখন?
অত স্পষ্ট করে কিরীটী মুখের উপর কথাটা বলবে হয়ত ভাবতে পারেননি নবাব সাহেব।
মোতি এসে ঘরে ঢুকল ঐ সময়।
নবাব সাহেব তখন চুপ করে আছেন।
মোতি!
বাবুর্জী?
ঐ বোরখাটা তোমার?
হঠাৎ যেন কেমন থতমত খেয়ে যায় মোতি–ফ্যালফ্যাল করে সকলের মুখের দিকে তাকায়।
কি—চুপ করে আছ কেন, জবাব দাও।
কিরীটী ধমকে ওঠে মোতিকে।
আজ্ঞে—
বল–তোমার কি না?
জী।
তোমার?
জী।
কখন দিয়েছ ওঁকে?
আপনার আসবার পর।
মানে আজই সকালে–কিছুক্ষণ আগে?
জী।
মোতি!
বাবুজী?
তুমি আমার কাছে মিথ্যা কথা বলেছ। ঝুট বলেছ—
মিথ্যা–ঝুট বলেছি?
হ্যাঁ–তুমি বলনি কাল রাত্রে-রাত বারোটার পর নবাব সাহেব হলঘর থেকে বের হয়ে যান?
জী—ঠিকই তো বলেছি।
কিন্তু নবাবু সাহেব বলছেন রাত দশটায় তিনি বের হয়ে গিয়েছিলেন হলঘর থেকে।
নেহি বাবুজী নেহি ঝুটনবাব সাহেব রাত বারোটায়ই–