কুশান প্লেটের খাবারের টুকরোটা দেখে বলল, তুমি দাবি করছ এটা সত্যিকার তিতির পাখির মাংস?
রিরা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। খাবারের টিনে পরিষ্কার লেখা আছে এটা সত্যিকার তিতির পাখির মাংস।
কুশান শুকনো রুটির টুকরোগুলো দেখিয়ে বলল, আর এগুলো সত্যিকার যবের রুটি?
হ্যাঁ। এগুলো সত্যিকার যবের রুটি। বিশাল একটা মাঠে এটা জনেছে। এটা কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় নি।
কুশান রুটির টুকরোর উপর মাখন লাগাতে লাগাতে বলল, আর এই মাখনটা সত্যিকারের মাখন?
সেটা নিয়ে একটু বিতর্ক আছে। দাবি করা হয় কৃত্রিম এবং সত্যিকারের মাখনের মাঝে এখন আর কোনো পার্থক্য নেই। কাজেই কোনটা সত্যি কোনটা কৃত্রিম বোঝার কোনো উপায় নেই।
কুশান রুটির টুকরোটা মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে বলল, কিন্তু একটা জিনিস জান রিরা
কী?
আমি কিন্তু খাবার সময় সত্যিকার যবের রুটির সাথে কৃত্রিম যবের রুটির মাঝে। কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছি না।
রিরা শব্দ করে হেসে বলল, এটা কাউকে বলো না, তা হলে সবাই তোমাকে ভাববে সাধারণ রুচির মানুষ। যাদের রুচি খুব উন্নত, তারা এই পার্থক্যগুলো ধরতে পারে।
কুশান বলল, তুমি বলেছিলে আমাদের এই ভোজের সময় আমরা কিহিতার সপ্তদশ সিম্ফনি শুনব।
হ্যাঁ। আমি সেটার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু সেখানে একটা ব্যাপার আছে।
কী ব্যাপার?
সপ্তদশ সিম্ফনি শুনে যদি তোমার ভালো নাও লাগে, তুমি সেটা বলতে পারবে না।
কুশান চোখ বড় করে বলল, বলতে পারব না?
না। তুমি ভান করবে তোমার খুব ভালো লাগছে।
কেন?
রিরা চোখে-মুখে একটা গাম্ভীর্য ফুটিয়ে বলল, এই সিম্ফনিটি আমার খুব প্রিয়। কেউ এটাকে অপছন্দ করলে আমিও তাকে অপছন্দ করি।
কুশান তিতির পাখির মাংসের ছোট টুকরো মুখে দিয়ে হাসতে হাসতে বলল, তুমি নিশ্চিন্ত থাক রিরা, তুমি যেটাকে ভালো বলবে আমি সেটাকে কখনো খারাপ বলব না। দরকার হলে আমার চোখ-কান বন্ধ করে আমি সেটাকে ভালো বলব।
ঠিক তো?
ঠিক।
রিরা গলা উঁচু করে বলল, প্রসেসর?
প্রসেসর তার নিষ্প্রাণ ধাতব কণ্ঠে বলল, বলো রিরা।
কিহিতার সপ্তদশ সিম্ফনিটা শুরু করে দাও।
খুব সূক্ষ্ম একটা সঙ্গীতের ধ্বনি ভেসে এল, প্রায় শোনা যায় না এরকম। আস্তে আস্তে সেটি ঘরের ভেতরে অনুরণিত হতে থাকে। মহাকাশের মাঝে যে বিশাল শূন্যতা, যে তীব্র নিঃসঙ্গতার বেদনা, সেটি যেন বুকের ভেতর হাহাকার করে যেতে থাকে। মনে হতে থাকে এই জগৎ, এই জীবন, এই বেঁচে থাকা সবকিছু মিথ্যে, সবকিছু অর্থহীন।
সিম্ফনিটা শেষ হবার পরও দুজন অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। রিরা নিজের চোখ মুছে জোর করে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলল, আমি আসলে খুব আবেগপ্রবণ, অল্পতেই খুব কাতর হয়ে যাই। তবে সেটা কখনো কাউকে দেখাই নি। মহাকাশ একাডেমিতে সবাই জানত আমি খুব শক্ত একটি মেয়ে!
আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়েও যেদিন তুমি ট্রিগার টান নি, আমি সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম যে তোমার ভেতরটা খুব নরম।
আর কী বুঝেছিলে?
আর বুঝেছিলাম তুমি—
আমি?
তুমি হয়তো জীবনে কষ্ট পাবে।
রিরা একটু অবাক হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখন মূল প্রসেসর বলল, রিরা।
বলো।
এইমাত্র একটা উদ্ধারকারী মহাকাশযান থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে।
রিরা চিৎকার করে উঠে দাঁড়াল, ছুটে গিয়ে কুশানকে জড়িয়ে ধরে বলল, শুনেছ? কুশান শুনেছ? আমাদের জন্য উদ্ধারকারী মহাকাশযান আসছে।
কুশীন মাথা নাড়ল, বলল, শুনেছি।
রিরা জিজ্ঞেস করল, প্রসেসর? কী বলছে উদ্ধারকারী মহাকাশযান?
এখনো কিছু বলে নি। তারা মহাকাশযানের আইডি কোড এসব মিলিয়ে নিচ্ছে। কিছুক্ষণের মাঝে সরাসরি যোগাযোগ করবে। কিন্তু–
কিন্তু কী?
তুমি শুধু তাদের কথা শুনতে পাবে। তাদেরকে কিছু বলতে পারবে না।
হ্যাঁ। রিরা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, এখানে আমরা একটা দুর্বল রিসিভার দাঁড় করিয়েছি কিন্তু আমাদের ট্রান্সমিটার ত্রিশ কিলোমিটার দূরে।
কুশান বলল, আমার মনে হয় সেটা কোনো বড় সমস্যা নয়। যখন সামনাসামনি দেখা হবে তখন তোমার ট্রান্সমিটার আর রিসিভার কিছুই লাগবে না!
রিরা মাথা নাড়ল, বলল, তুমি ঠিকই বলেছ। তারপর হাত নেড়ে উত্তেজিত গলায় বলল, আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে, সত্যি সত্যি আমাদের উদ্ধার করতে চলে আসছে! কী আশ্চর্য! তাই না কুশান?
কুশান খুব ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। রিরা উত্তেজিত হয়েছিল বলে লক্ষ করল না মাথা নাড়ার সময় কুশান খুব সাবধানে একটি দীর্ঘশ্বাস গোপন করেছে।
রিসিভারের কাছে সারাক্ষণ বসে থাকার প্রয়োজন নেই, তারপরেও রিরা কমিউনিকেশান ঘরে ধৈর্য ধরে বসে বইল। প্রাথমিক যোগাযোগের প্রায় তিন ঘণ্টা পর রিরা প্রথমবার উদ্ধারকারী দলের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। মহাকাশযানের ক্যাপ্টেন ভারী গলায় বললেন, মহাকাশযান ভেগা সাত সাত তিন চারের বেঁচে থাকা মহাকাশচারীদের উদ্দেশে বলছি। আমি আবার বলছি মহাকাশযান ভেগা সাত সাত তিন চারের অভিযাত্রীরা, আমরা তোমাদের পাঠানো জরুরি উদ্ধারবার্তা পেয়েছি। আবার বলছি, জরুরি উদ্ধারবার্তা পেয়েছি। তোমাদের বার্তা মূল মহাকাশ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে আমাদের জরুরি বার্তা। পাঠিয়ে তোমাদের উদ্ধার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি আবার বলছি, তোমাদের উদ্ধার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি তাই আমার মহাকাশযানের গতিপথ একটু পরিবর্তন করে এদিকে এসেছি। আমাদের একটা স্কাউটশিপ তোমাদের উদ্ধার করার জন্য রওয়ানা দিয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝে সেটা এই গ্রহটির কক্ষপথে পৌঁছে যাবে। স্কাউটশিপ থেকে জানানো হয়েছে তারা তোমাদের বিধ্বস্ত মহাকাশযানটি খুঁজে পেয়েছে এবং গ্রহে অবতরণ করেই সেখানে পৌঁছে যাবে।
ভারী গলার স্বরটি কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলল, তোমাদের পক্ষে যদি সম্ভব হয়
তা হলে আমাদের এই বার্তার প্রত্যুত্তর দাও। আবার বলছি, প্রত্যুত্তর দাও।
রিরা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রিসিভারের উপর আঘাত করে নিজের হতাশাটা প্রকাশ করে। বলল, কেমন করে দেব? আমি খালি শুনতে পাই, বলতে পারি না।
রিসিভারে ভারী কণ্ঠস্বরটি বলল, যদি প্রত্যুত্তর দেবার মতো সুযোগ না থাকে তা হলেও কোনো সমস্যা নেই। আমাদের স্কাউটশিপে উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে, তারা নিশ্চিতভাবেই তোমাদের উদ্ধার করবে। স্কাউটশিপের দায়িত্বে আছে ক্যাপ্টেন বিহান, গ্রহটির কক্ষপথে পৌঁছেই সে তোমাদের সাথে যোগাযোগ করবে। ব্যাপ্টেন রিহান আমাদের সবচেয়ে কর্মদক্ষ তরুণ অফিসার। সে আমাদের মহাকাশযানের বারো জন দক্ষ এবং সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীকে নিয়ে রওয়ানা দিয়েছে। আমি নিশ্চিত সে সাফল্যের সাথে তোমাদের উদ্ধার করতে পারবে। তোমাদের জন্য অনেক শুভ কামনা।
রিরা উতেজিত চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল, শুনেছ কুশান, সবচেয়ে কর্মদক্ষ তরুণ অফিসার আসছে আমাদের উদ্ধার করতে?
কুশান মাথা নাড়ল, বলল, শুনেছি।
তোমার কী মনে হয় কুশান, আমরা কি তাদের অভ্যর্থনা করার জন্য কিছু ব্যবস্থা করে রাখব?
কুশান একটু হেসে বলল, তোমার মহাকাশ একাডেমি এ ব্যাপারে তোমাদের কোনো কোর্স দেয় নি?
রিরা মাথা নাড়ল, বলল, না। মজার ব্যাপার হচ্ছে কীভাবে উদ্ধার করতে যেতে হয়, সেটার ওপরে দুটি কোর্স নিয়েছিলাম, কিন্তু উদ্ধার করতে এলে কী করতে হয় তার ওপরে একটি কোর্সও দেয় নি।
কুশান বলল, ক্যাপ্টেন বিহান যখন এসে দেখবে তুমি জীবিত, সুস্থ এবং আনন্দে চিৎকার করছ, সে এত খুশি হবে যে সেটাই হবে তার অভ্যর্থনা।
রিরা মাথা নাড়ল, বলল, তুমি ঠিকই বলেছ। একজন মানুষকে জীবিত উদ্ধার করতে পারাই খুব বড় একটা কাজ। মানুষের জীবন খুব বড় একটি ব্যাপার। অসম্ভব বড় একটি ব্যাপার। তাই না কুশান?
কুশান রিরার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল, তারপর ফিসফিস করে বলল, ঠিকই বলেছ। মানুষের জীবন খুব বড় একটি ব্যাপার।
ঘণ্টা দুয়েক পর গ্রহটির কক্ষপথ থেকে ক্যাপ্টেন বিহান একবার যোগাযোগ করে তার অবস্থানটি জানিয়ে দিল। কক্ষপথ থেকে রওয়ানা দিয়ে গ্রহটির বায়ুমণ্ডল ভেদ করে দ্বিতীয়বার যোগাযোগ করল আরো ঘণ্টাখানেক পর। এরপর সবকিছু ঘটতে লাগল খুব দ্রুত। তারা স্কাউটশিপটিকে মহাকাশযানের উপর দিয়ে গর্জন করে উড়ে যেতে দেখল, স্কাউটশিপটি বৃত্তাকার ঘুরে আবার তাদের কাছে ফিরে এল এবং বৃত্তটি ছোট করতে করতে একসময় মহাকাশযানের এক কিলোমিটারের কাছাকাছি একটি সমতল জায়গায় এসে অবতরণ করল। কোয়ার্টজের জানালা দিয়ে রিরা দেখল, উদ্ধারকারী দল নেমে আসছে। ছোটখাটো মানুষটি নিশ্চয়ই ক্যাপ্টেন রিহান, যোগাযোগ মডিউলে কথা বলতে বলতে সে তার দলটিকে প্রস্তুত করে নেয়। কিছু যন্ত্রপাতি, অস্ত্র, মেডিকেল টিম নিয়ে তারা দ্রুত মহাকাশযানটির দিকে ছুটে আসতে থাকে। রিরা হাত দিয়ে নিজের চুলগুলোকে বিন্যস্ত করে কুশানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কুশান, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
কুশান হেসে বলল, আমি তোমাকে আগেও বলেছি, তোমার গায়ের রঙ যদি পচা আঙুরের মতো না হত, তা হলে তোমাকে সুন্দরী বলে চালিয়ে দেওয়া যেত।
আকাশের জন্য নীল রঙ ভালো হতে পারে কিন্তু গায়ের জন্য পচা আঙুরের রঙ কিন্তু খারাপ না!
সেটা নিয়ে বিতর্ক করার সময় আরো পাবে, তুমি এখন যাও, মহাকাশযানের দরজাটা খুলে দাও। তা না হলে তারা ভেঙে ঢুকে যাবে!
রিরা বলল, ঠিকই বলেছ। একেবারে সত্যি কথা।
রিরা দ্রুত মহাকাশযানের দরজার কাছে ছুটে গিয়ে তার হ্যান্ডেলটা ঘুরিয়ে সেটা খুলতে শুরু করে। কয়েক মিনিটের মাঝেই উদ্ধারকারী দলটি মহাকাশযানের ভেতরে ঢুকল, সবার আগে ক্যাপ্টেন রিহান, তার পিছনে সশস্ত্র লোকজন। ক্যাপ্টেন রিহান এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে রিরার দিকে তাকিয়ে বলল, এই মহাকাশযানটি যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, তার ভেতরে কোনো জীবন্ত মানুষ খুঁজে পাব আমি একেবারে আশা করি নি।
রিরা তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আশার বাইরেও অনেক কিছু ঘটে যায়। উদ্ধার করতে আসার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ক্যাপ্টেন রিহান হাত মিলিয়ে বলল, আমি রিহান। ক্যাপ্টেন রিহান।
আমি রিরা। আর–কুশানকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য সে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল।
ঠিক তক্ষুনি সে একটা চিৎকার শুনতে পায়। কে একজন চিৎকার করে বলল, সর্বনাশ! নীলমানব।
কিছু বোঝার আগে রিরা বিস্ফারিত চোখে দেখতে পেল সশস্ত্র মানুষগুলো একসাথে তাদের অস্ত্রগুলো উপরে তুলেছে, একমুহূর্ত সময় লাগল তার ব্যাপারটি বুঝতে। যখন সে বুঝতে পারল তখন ভয়ংকর আতঙ্কে সে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠল, না—না–না–
কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। রিরার মনে হল তার চোখের সামনে অনন্তকাল নিয়ে মানুষগুলো অস্ত্রগুলো কুশানের দিকে তাক করেছে। মনে হল খুব ধীরে ট্রিগারে টান দিয়েছে। তার মনে হল লে বুলেটগুলোকে ছুটে যেতে দেখল। রিনার মনে হল সে দেখতে পেল একটি একটি বুলেট কুশানকে আঘাত করছে আর সেই আঘাতে তার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। রিরার মনে হল সমস্ত সৃষ্টিজগৎ বুঝি থমকে দাঁড়িয়েছে, বুঝি সময় স্থির হয়ে গেছে। তার মনে হল কুশান বুঝি দুই হাতে দেয়াল আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছে—পারছে না। রির দেখল তার বুকের কাছাকাছি কাপড়ে বিন্দু বিন্দু নীল রঙের ছোপ, দেখল কুশানের চোখে এক ধরনের বিস্ময়। রিরা দেখল কুশান খুব ধীরে ধীরে হাঁটু ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে তার মাঝে বুঝি অনন্তকাল পার হয়ে গেছে। রিরা ছুটে যেতে থাকে কুশানের কাছে মনে হয় সে বুঝি কখনোই আর তার কাছে পৌঁছতে পারবে না।
রিরা কুশানের মাথাটা দুই হাতে চেপে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কুশানের দুই ঠোটের মাঝখানে নীল একফেঁটা রক্ত, সে স্থির চোখে রিরার দিকে তাকিয়ে আছে। কুশানের ঠোঁট দুটি নড়ে উঠল। কিছু একটা বলছে সে। রক্তের ফোঁটাটি চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। আবার ঠোঁট দুটি নড়ল কুশানের, কিছু একটা বলছে সে, রিরা শুনতে পাচ্ছে না।
রিরা কুশানের মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে বলল, না। না কুশান, না… না…
কুশান ফিসফিস করে বলল, মনে নেই রিরা—আমি তোমাকে আমার ভাগ্যটা দিয়ে দিয়েছিলাম! দেখেছ সত্যিই দিয়ে দিয়েছি।
রিরা চিৎকার করে বলল, না, না, না।
কুশান বলল, রিরা, তুমি আমার দিকে তাকাও।
রিরা কুশানের দিকে তাকাল। কুশান বলল, আমার দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে আসছে। কিন্তু আমি যতক্ষণ দেখতে পারি, আমি তোমাকে দেখতে চাই রিরা। তুমি আমার হাত ধরে থাক—তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকি।
রিরা কুশানের হাত ধরে তার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে একদৃষ্টিতে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।
ক্যাপ্টেন রিহান এবং তা উদ্ধারকারী দল অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করল, অপরিচিত এই নীলমানবটি মারা যাবার পরও দীর্ঘ সময় মহাকাশচারী রিরা তার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।