১১. এই সময় শেয়াল ডেকে উঠল

এই সময় শেয়াল ডেকে উঠল। চা বাগানে শেয়াল কিছু নতুন নয়, কিন্তু একসঙ্গে অনেক প্রায় কুকুরের মতো একনাগাড়ে চিৎকার করার ঘটনা সচরাচর ঘটে না।

দারোগা কান খাড়া করে কিছুক্ষণ শুনে বললেন, খুব বেশি দূরে নয়। লেটস গো।

ভানু ব্যানার্জি একটু আপত্তি করলেন, শেয়াল ডাকছে বলে যেতে চাইছেন কেন?

দারোগা হাঁটতে-হাঁটতেই বললেন, অনেক সময় শেয়ালেরা কুকুরের মতো আচরণ করে। বাংলাদেশের গ্রামে অনেকে শেয়াল পুষেছে বলে শুনেছি। ডেডবডি নিয়ে ওরা যদি পালাতে চায় তা হলে শেয়ালগুলো হাঁকাহাঁকি করতেও পারে।

কিন্তু রাস্তা পেরিয়ে বাগানের মধ্যে কিছুটা যাওয়ার পরেও মৃত দেহের কোনও হদিস পাওয়া গেল না। প্রথমত, রাত্রে যে-কোনও জিনিস লুকিয়ে রাখা বেশ সহজ। দ্বিতীয়ত, এই বিশাল চা বাগানের মধ্যে অনুসন্ধান চালাতে গেলে প্রচুর লোকবল দরকার। ওরা বাংলোয় ফিরে এল। এবার ভানু ব্যানার্জি জিজ্ঞেস করলেন, মিসেস দত্ত কেমন আছেন?

অর্জুন মাথা নাড়ল, অনেকটা ভাল। কথা বলতে চাইছিলেন, আমি রাজি হইনি। কিন্তু ভানুদা, দ্বিতীয় কোনও ডাক্তারকেও পেলেন না?

ভানু ব্যানার্জি অস্বস্তিতে পড়লেন, আমাদের এদিকে ওই একটাই অসুবিধে। একটু বাড়াবাড়ি রকমের অসুখ হলেই ছুটতে হয় জলপাইগুড়ি, নয় শিলিগুড়ি। পুরো বাগান নির্ভর করে থাকে একজন ডাক্তারের ওপর। যাহোক, গাড়ি আছে ভাঙা ব্রিজের ওপাশে। মিসেস দত্তকে কোনওমতে টেম্পোতে করে বাগানের পথটুকু পার করে নিতে হবে। তোমার কী মনে হয়, টেম্পোতে বসতে পারবেন না?

ভানু ব্যানার্জি অন্যমনস্ক হয় স্কুটার ট্যাক্সিকে টেম্পো বলছেন কিন্তু অর্জুনের মনে হলো টেম্পো বলাটাই ঠিক। ওইরকম নড়বড়ে সবল বস্তুটিকে ট্যাক্সির মর্যাদা দেওয়া বাড়াবাড়ি। অৰ্জন জবাব দিল, বোধ হয় পারবেন।

বাংলোর দরজা ইতিমধ্যে বন্ধ। তিন-চাকার যানটিতে ড্রাইভার নেই। দরজায় ধাক্কা মারতে বৃদ্ধ এসে সেটাকে খুলল। ঘরে ঢুকে অর্জুন অবাক। একটা টুলের ওপর খাবারের প্লেট সাজিয়ে মেজর চোখ বন্ধ করে খেয়ে যাচ্ছেন। এখন বিশাল ডি ওমলেট পড়ে আছে প্লেটে। সে না জিজ্ঞেস করে পারল না, আপনি খাচ্ছেন?

মেজর চোখ খুললেন, ম্যাডামকে দুঃখ দিতে পারি না। তিনি অতিথিসেবা করতে চান। তা ছাড়া শেষ কখন খেয়েছি তা তুমি জান। ওমলেট কাটলেন মেজর, ডেডবডি পাওয়া গেল?

ভানু ব্যানার্জি মাথা নাড়লেন, না।

অ্যাঁ? ওয়ার্থলেশ, পুলিশ ফোর্স ভাই এ-দেশেব! একটা মৃতদেহ পালিয়ে গেল, তাকেও ধরতে পারলেন না!

দারোগা উত্তপ্ত হলেন, আপনি একটু সংযত হয়ে কথা বলুন।

মেজর আধচেবানো ওমলেট মুখে নিয়ে বললেন, কেন? হোয়াই? হোয়াট ইজ ইওর কনট্রিবিউশন? আপনি এখানকার ইনচার্জ। এই বাগানে পর-পর এত খুন হয়ে গেল, আপনি কী করেছেন? একজন অসহায় মহিলা এখানে একা পড়ে আছেন তাঁর নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা করেছেন? বলুন। খুন হওয়ার পরেও তো আপনাদের দেখা যায় না। যায়?

দারোগা সোজা মেজরের প্রায় নাকের ডগায় পৌঁছে গেলেন, হু আর ইউ?

মেজর একটু পেছনে হেলে বসলেন, মানে?

এই সব প্রশ্ন করার আপনি কে? আমি কী করছি না করছি তার জবাবদিহি আপনাকে দেব কেন? আমাকে অপমান করার জন্য আপনাকে আমি অ্যারেস্ট করতে পারি তা জানেন? যত দোষ নন্দ ঘোষ? এই বিশাল জঙ্গল আর চা বাগানের কোনখানে কে খুন হল তা আমি থানায় বসে হাত গুনে বলতে পারব? খবর পেয়ে আমরা ছুটে আসি না? না জেনেশুনে যা-তা বলে যাচ্ছেন?

ভানু ব্যানার্জি হাত তুললেন, ঠিক আছে, শান্ত হোন আপনারা। এটা ঝগড়া করার সময় নয়। মিসেস দত্তকে নিয়ে যেতে হবে।

মেজর মাথা নাড়লেন। তারপর দারোগাকে বললেন, আপনি একটু সরে দাঁড়ান তো! লেট মি ফিনিশ মাই ডিনার। গুড। মুখে ওমলেট তুললেন, তিনি, কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই যে, একজন পুলিশ অফিসার ডেডবডি খুঁজে পাবে না।

দারোগা খিঁচিয়ে উঠলেন, আমাকে কী ভেবেছেন? ট্রেইন্ড ডগ? গন্ধ শুকে ডেডবডির কাছে পৌঁছে যাব? মিস্টার ব্যানার্জি, এই লোকটাকে আপনি একটু বলে দিন আমার সঙ্গে যেন উলটোপালটা কথা না বলে।

ভানু ব্যানার্জি বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করলেন, মিসেস দত্ত কি ঘুমোচ্ছেন?

নেহি।

তা হলে বল, একটু দেখা করব।

বৃদ্ধ ওপরে চলে গেল। মেজর খাওয়া শেষ করলেন। পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলে বললেন, জান মধ্যম পাণ্ডব, সিক্সটি সেভেনে মেক্সিকোর জঙ্গলে একটা ঘোড়াকে সাবাড় করে দিয়েছিল মাংসখেকো পিঁপড়ের দল। সন্ধেবেলায় যে ঘোড়াটাকে আমরা গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলাম, সকালে উঠে দেখি দড়িতে তার কঙ্কালটা বাঁধা রয়েছে। তুমি ভাবতে পাব ব্যাপারটা?

ভানু ব্যানার্জি বললেন, হ্যাঁ। এরকম একটা ঘটনার কথা যেন আমি কোথায় পড়েছি।

মেজরের দিকে তাকিয়ে দারোগা জিজ্ঞেস করলেন, আপনি মেক্সিকোর জঙ্গলে-মানে?

অর্জুন জানাল, উনি পৃথিবীর সব দেশেই অভিযান করেছেন। একবার উত্তর মেরুতে জাহাজড়ুবি থেকে বেঁচে গিয়েছেন।

দারোগা হতভম্ব। স্পষ্টতই তাঁর চোখে মুখে বিস্ময় এবং শ্রদ্ধা ফুটে উঠছিল।

মেজর সেদিকে লক্ষই করলেন না। বললেন, ধরো, কাল সকালে দরোয়ানের ডেডবডি পাওয়া গেল। তবে শুধু কঙ্কালটি আছে। এমন তো

ঘটতেই পারে।

সঙ্গে-সঙ্গে দারোগা সোজা হলেন, না। পারে না। এখানে ওইসব মাংসখেকো পিঁপড়ে থাকে না। ম্যানইটারও নেই।

তা হলে নেকড়ে নেই, হায়েনা নেই চিতা নেই। নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। মেজর কথা শেষ করতেই বৃদ্ধ ফিরে এল। না এলে আবার গোলমাল পাকাত। বৃদ্ধ এসে জানাল মেমসাহেব অপেক্ষা করছেন।

মেজর উঠলেন না। বাকিরা ধীরে ধীরে ওপরে উঠে এল। দরজায় নারী দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের দেখে সে মিসেস মমতা দত্তের মাথার পাশে সরে গেল।

মিসেস দত্ত বালিশে ঠেস দিয়ে আধশোয়া হয়ে রয়েছেন। তাঁর মুখের স্বাভাবিক চেহারা এখনও ফিরে আসেনি। মহিলাকে অত্যন্ত ক্লান্ত এবং নীরক্ত মনে হচ্ছিল। দারোগা বললেন, নমস্কার মিসেস দত্ত। খানিক আগে আমি খবরটা পেলাম।

মিসেস দত্ত মাথা নাড়লেন। তাঁর ঠোঁট ঈষৎ কাঁপল। কিন্তু কথা বললেন।

ভানু ব্যানার্জি এগিয়ে গেলেন সামান্য, মিসেস দত্ত, পুরো ব্যাপারটার জন্য আমরা খুব দুঃখিত। কিন্তু আপনাকে এখনই কোনও ভাল ডাক্তারের কাছে। নিয়ে যাওয়া উচিত। একটা ব্যবস্থাও হয়েছে। আপনি কি ধীরে-ধীরে নীচে নামতে পারবেন?

এবার খুব দুর্বল গলায় মিসেস দত্ত বললেন, আমি কোথাও যাব না।

ভানু ব্যানার্জি বোঝাবার চেষ্টা করলেন, আমি আপনার সেন্টিমেন্টের প্রতি সম্মান জানিয়েই বলছি, এইস আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন।

মিসেস দত্ত হাত নেড়ে না বলে নিশ্বাস ফেললেন।

অর্জুন চুপচাপ শুনছিল এতক্ষণ। এবার বলল, আপনি কি কথা বলার মতো অবস্থায় আছেন?

মিসেস দত্ত অর্জুনের দিকে তাকালেন, আপনি আপনারা কি আমার কেস নেবেন?

অর্জুন ফাঁপরে পড়ল। জলপাইগুড়ি থেকে সে অমলদার নির্দেশে এসেছিল মিসেস দত্তকে জানিয়ে দিতে যে, কেস নিতে পারছে না। কিন্তু এখানে এসে পরিস্থিতি যেভাবে বাঁক নিয়েছে তাতে না বলতে বিবেকে লাগল। সে বলল, হ্যাঁ। আপনি যা চাইছেন তা হবে।

ভদ্রমহিলাকে এবার একটু শান্ত বলে মনে হল। তিনি বললেন, আমার দরোয়ানের মৃতদেহ কি খুঁজে পাওয়া গেল?

দারোগা বললেন, না ম্যাডাম। এই রাত্রে চা বাগানের মধ্যে বেশি খোঁজাখুজি সম্ভব হল না। আমি কাল সকালে আরও লোক নিয়ে এসে ভালভাবে সার্চ করব।

মিসেস দত্ত চোখ বন্ধ করে বড় নিশ্বাস ফেললেন, আপনারা কিছুই পারবেন না। আমাকে এইভাবে পড়ে-পড়ে মার খেতে হবে।

কথাটা এমন স্বরে বললেন যে, ঘরে বিষাদের ছায়া ছড়াল। অর্জুন বুঝল এর পরে কথা এগোলে মিসেস দত্ত মেজরের কথাগুলোই বলে ফেলবেন। সেক্ষেত্রে দারোগা ব্যাপারটাকে খুবই অপছন্দ করবেন। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই দারোগা একটা চেয়ার টেনে বিছানার পাশে গিয়ে বসলেন, আপনি যখন বলছেন কথা বলতে পারবেন, তখন কর্তব্যের প্রয়োজনেই কয়েকটা প্রশ্ন করতে হচ্ছে। বুঝতেই পারছেন আজ এখানে একটা খুন হয়েছে এবং আততায়ীরা কাছে-পিঠেই আছে। এই ঘটনার অন্যতম সাক্ষী আপনি। আশা করি আমার কথা আপনি বুঝতে পারছেন।

হুঁ।

ব্যাপারটা কখন ঘটেছিল?

দুপুরে। দুটো নাগাদ।

কতজন লোক ছিল?

ছ-সাতজন।

আপনার বাংলোর দরজা বন্ধ ছিল না?

ছিল। কিন্তু ওরা ডাকাডাকি করতে আমি দরোয়ানকে পাঠিয়েছিলাম ব্যাপারটা কী জানার জন্য। ওরা ভদ্রভাবে ঢুকেছিল। কিন্তু সিঁড়ির মুখেই দরোয়ানের সঙ্গে মারপিট শুরু করে দেয়। আমরা কোনও মতে সদর দরজা বন্ধ করে দিই। আমি বুঝতে পারি ওরা আমার সন্ধানে এসেছে। তাই এদের বলি পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে। এরা আমার অত্যন্ত বিশ্বস্ত। অনেকদিন আছে। প্রথমে আমাকে একা রেখে যেতে চায়নি। আমি বাধ্য করি। তারপর ওপরে উঠে যাই। মিসেস দত্ত হাঁপাতে লাগলেন।

দারোগা জিজ্ঞেস করলেন, ওরা বাংলোয় ঢুকল কীভাবে?

পেছনের দরজা দিয়ে। এরা যেদিক দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করার কথা সে-সময় আমার খেয়াল হয়নি।

বাংলোয় ঢুকে ওরা আপনাকে খুঁজে পায়নি। কেন?

সিলিঙের ওপর একটা চোরাকুঠুরি আছে। নীচে থেকে চট করে বোঝ যায় না। কিন্তু ওখানে সোজা হয়ে বসে থাকা খুব শক্ত। আমি কোনওমতে ওখানে উঠে গিয়েছিলাম। ওরা আমাকে খুঁজতে বাংলো তোলপাড় করে শেষ পর্যন্ত ভাবল আমিও পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছি।

এই লোকগুলোর কাউকে চেনেন?

মিসেস দত্ত একমুহূর্ত ভাবলেন। তারপর বললেন, কারও নাম জানি না।

মুখ দেখলে আবার চিনতে পারবেন?

হ্যাঁ পারব। কিছুদিন হল ওরা এই বাগানে ঘোরাফেরা করছে। যাতায়াতের পথে এদের দু-একজনকে আমি দেখেছি।

ওরা কখন চলে গেল?

ঘণ্টাখানেকের পর আর গলা শুনিনি।

আপনি নেমে এলেন না কেন?

মৃত্যুভয়ে। ওই এক ঘণ্টায় আমার নার্ভ চলে গিয়েছিল। ওখানে বসে থাকা যায় না। শুতে পারছিলাম না ইদুরের জ্বালায়। সামান্য শব্দ হলে আমি ধরা পড়ে যেতাম। ওইভাবে মাথা গুজে বসে থাকতে-থাকতে আমার শক্তি চলে গিয়েছিল। আমার ভয় করছিল ওরা হয়তো কাছেপিঠে আমার জন্য ওত পেতে আছে।

হুঁ। এই লোকগুলোর কাউকে চেনা যায় এমন কোনও চিহ্ন বলতে পারেন?

আমি ওদের দেখেছি জানলা দিয়ে। দূর থেকে। বাংলোয় ওরা যখন ঢুকেছিল তখন আমি চোরাকুঠুরিতে। সেখান থেকে ওদের দেখতে চাইলে আমার ডেডবডিও আপনারা খুঁজে পেতেন না। ওঃ ভগবান! ভদ্রমহিলা আবার চোখ বন্ধ করলেন।

দারোগা এবার উঠে দাঁড়ালেন, আমি আপনার কর্মচারী দুজনকে জিজ্ঞেস করব। তুমি নীচে এসো। নারীর উদ্দেশে শেষ কথাগুলো বলে দারোগা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। নারী এবং ভানু ব্যানার্জি দারোগাকে অনুসরণ করলেন। কিন্তু অর্জুন দাঁড়িয়ে রইল। তার কেবলই মনে হচ্ছিল দারোগা ঠিকঠাক প্রশ্ন করলেন না। আর ভদ্রমহিলাও প্রশ্নের জবাবে কোনও বাড়তি কথা বললেন না। সে নির্জন ঘরের সুবিধে নেওয়ার জন্য দারোগার চেয়ারটিতে গিয়ে বসল।

ভদ্রমহিলা তাকালেন। তাঁর চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি কি নিশ্চিত যে, ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন নেই?

আমার শরীর বেশ খারাপ। কিন্তু আমি কোথাও যাব না।

অর্জুন একটু চুপ করে থেকে বলল, আপনি এতক্ষণ যা বললেন শুনেছি। কিন্তু এমন কথা কি কিছু আছে যা আপনি ওঁকে বলেননি?

কী কথা?

আমি জানি না। এমনিই জিজ্ঞেস করছি।

আমার মনে পড়ছে না।

মনে করে দেখুন। তা হলে আমাদের তদন্তে সুবিধে হবে।

ওরা এতদিন আমাকে ভয় দেখিয়েছে। বাগানের লোককে খুন করেছে। ওরা ভেবেছিল ভয় পেয়ে আমি বাগান বিক্রি করে দেব। কিন্তু তাতেও যখন কাজ হল না তখন ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এবার সরাসরি খুন করতে চায় আমাকেই। আজ দারোয়ানকে খুন করল, কাল আমাকে করবে।

এই ওরা কারা?

জানি না। টেলিফোন চালু ছিল যখন, তখন প্রথম অনুরোধ, পরে হুমকি দিত।

লোকগুলোর কি মুখ বাঁধা ছিল?

না। নর্মাল পোশাক। কিন্তু ওদের কয়েকজন বাংলায় কথা বলছিল না।

কী ভাষায় বলছিল?

মনে হল ওড়িয়া ভাষায়।

অর্জুন অবাক। উত্তরবঙ্গের এইসব এলাকায় ওড়িয়া ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা খুবই কম। ব্যাপারটা অদ্ভুত। সে জিজ্ঞেস করল, দারোগাবাবুকে আপনি একটা কথা বলেননি। অবশ্য উনিও জিজ্ঞেস করেননি। ওরা যখন বাংলোয় ঢুকেছিল তখন আপনি চোরা কুঠুরিতে। কিন্তু বাংলোয় ঢোকার পর ওরা যেসব কথা বলেছিল তা তো আপনার শোনার কথা। কী বলছিল ওরা?

ভদ্রমহিলা মনে করার চেষ্টা করে বললেন, প্রথমে খুব রাগারাগি করছিল। জিনিসপত্র ভাঙচুর করছিল হয়তো। আমি শব্দ পাচ্ছিলাম। যারা ওড়িয়া ভাষায় কথা বলছিল তাদেব সব কথার মানে আমি অবশ্য বুঝতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত আমাকে না পাওয়ার পর ওরা হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেল। নিজেদের মধ্যে চাপা গলায় আলোচনা করছিল। একজনের কথা কানে এল—

যে করেই হোক মালিকানকে খুঁজে বের করতেই হবে। ও বেঁচে থাকলে সব কাজ শুরু করতে পারছে না।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, কী কাজ?

জানি না। ওরা নাকি চা বাগানের গায়ে ভাঙা মন্দির দেখতে পেয়েছে। ওইরকম বলছিল।

মহিলার কথা শেষ হতেই অর্জুন যেন ইলেকট্রিক শক খেয়ে লাফিয়ে উঠল।