অভিব্যক্ত হয়ে গেলে জীবে জীবে অনেক প্রভেদ। অভিব্যক্ত জীবরূপে তুমি কখনও খ্রীষ্ট হতে পারবে না। মাটি দিয়ে একটি হাতী গড়, আবার সেই মাটি থেকেই একটি ইঁদুর গড়। তাদের জলে ডোবাও—দুটিই একাকার হয়ে যাবে। মৃত্তিকারূপে তাদের চিরন্তন ঐক্য, নির্মিত বস্তু হিসাবে তাদের চিরন্তন পার্থক্য। ঈশ্বর ও মানুষ—নিত্যই হল উভয়ের উপাদান। নিত্যরূপে সর্বব্যাপী সত্তারূপে আমরা সকলে এক; অভিব্যক্তির ক্ষেত্রে ঈশ্বর চিরন্তন প্রভু এবং আমরা চিরন্তন ভৃত্য।
তোমাদের মধ্যে তিনটি জিনিষ আছেঃ দেহ, মন ও আত্মা। আত্মা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, মনের জন্ম-মৃত্যু আছে, এবং দেহেরও আছে। তুমি সেই আত্মা, কিন্তু সচরাচর তোমার ধারণা শরীরটাই বুঝি তুমি। এক ব্যক্তি যখন বলে, ‘আমি এখানে’ তখন সে শরীরটার কথাই ভাবে। তারপর আসে আর একটি মুহূর্ত, যখন তুমি সর্বোচ্চ স্তরে বিরাজ করছ; তুমি তখন বল না, ‘আমি এখানে’। তখন যদি কোন ব্যক্তি তোমাকে গালাগালি করে বা অভিশাপ দেয়, তোমার কোন ক্রোধ বা বিরক্তি হয় না, কারণ তুমি হলে আত্মা। ‘যখন নিজেকে মন বলে ভাবি, তখন হে চিরন্তন অগ্নি, আমি তোমার স্ফুলিঙ্গমাত্র। আর নিজেকে যখন আত্মা বলে অনুভব করি, তখন তুমি ও আমি অভেদ’—এক ভক্ত বলেছিলেন ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে। তাহলে মন আত্মার অগ্রবর্তী হয় কি করে?
ঈশ্বর যুক্তিবিচার করেন না; যদি সত্যই জান, তবে যুক্তিবিচার করবে কেন? গোটাকতক তথ্যকে জানবার জন্য এবং তার ভিত্তিতে কতকগুলি সাধারণ নিয়ম দাঁড় করাবার জন্য আমরা যে কীটের মত সন্ধান করে ফিরছি, সেই চেষ্টায় গড়ে ওঠা সমস্ত জিনিষগুলি আবার ভেঙে পড়ে যাচ্ছে, এ-সবই আমাদের দুর্বলতার চিহ্ন।
মন ও যাবতীয় বস্তুর উপর আত্মা প্রতিফলিত হয়। আত্মার আলোকই মনকে চেতনায় স্পন্দিত করে। সব কিছুই আত্মার প্রকাশ; মনগুলি অসংখ্য দর্পণের মত। যাকে তোমরা ভালবাসা, ভয়, ঘৃণা, পুণ্য বা পাপ বল, সব কিছুই আত্মার প্রতিফলন; প্রতিফলকটি নিম্নস্তরের হলে প্রতিফলনও ভাল হয় ।