[যদিও ষ্টিয়াটর শহরে ৯ অক্টোবর তারিখে প্রদত্ত স্বামীজীর বক্তৃতায় প্রচুর লোক সমাগম হইয়াছিল। ‘ষ্টিয়াটর ডেইলি ফ্রী প্রেস’ (৯ অক্টোবর) শুধু নিম্নের নীরস বিবরণটুকু পরিবেশন করিয়াছেন।]
অপেরা হাউসে শনিবার রাত্রে এই খ্যাতিমান্ হিন্দুর বক্তৃতা খুব চিত্তাকর্ষক হইয়াছিল। তুলনামূলক ভাষাবিদ্যার সাহায্যে তিনি আর্যজাতিসমূহ এবং নূতন গোলার্ধে তাঁহাদের বংশধরদিগের মধ্যে বহুপূর্বে স্বীকৃত সম্বন্ধ প্রমাণ করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। ভারতবর্ষের ত্রি-চতুর্থ জনগণ যাহা দ্বারা অত্যন্ত হীনভাবে নিপীড়িত, সেই জাতিভেদ-প্রথার তিনি মৃদু সমর্থন করিলেন, আর গর্বের সহিত ইহাও বলিলেন যে, যে-ভারতবর্ষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরিয়া পৃথিবীর ক্ষমতাদৃপ্ত জাতিসমূহের উত্থান এবং পতন দেখিয়াছে, সেই ভারতবর্ষই এখন বাঁচিয়া আছে। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁহার দেশবাসীর ন্যায় অতীতকে ভালবাসেন। তাঁহার জীবন নিজের জন্য নয়, ঈশ্বরের জন্য উৎসর্গীকৃত। তাঁহার স্বদেশে ভিক্ষাবৃত্তি এবং পদব্রজে ভ্রমণকে খুব উৎসাহিত করা হয়, তবে তিনি তাঁহার বক্তৃতায় সে-কথা বিশেষ উল্লেখ করেন নাই। ভারতীয় গৃহে রান্না হইবার পর প্রথম খাইতে দেওয়া হয় কোন অতিথিকে। তারপর গৃহপালিত পশু, চাকর-বাকর এবং গৃহস্বামীকে খাওয়াইয়া বাড়ীর মেয়েরা অন্ন গ্রহণ করেন। দশবৎসর বয়সে ছেলেরা গুরুগৃহে যায়। গুরু দশ হইতে বিশ বৎসর পর্যন্ত তাহাদিগকে শিক্ষাদান করেন। তারপর তাহারা বাড়ীতে ফিরিয়া পারিবারিক পেশা অবলম্বন করে, অথবা পরিব্রাজক সন্ন্যাসী হয়। সে ক্ষেত্রে তাহাদের জীবন অনবরত ভ্রমণ, ভগবৎ-সাধনা এবং ধর্মপ্রচারে কাটে। যে অশন-বসন লোকে স্বেচ্ছায় তাহাদিগকে দেয়, তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিতে হয়, তাহারা টাকাকড়ি কখনও স্পর্শ করে না। বিবেকানন্দ এই শেষোক্ত শ্রেণীর। বৃদ্ধ বয়সে লোকে সংসার ত্যাগ করে এবং কিছুকাল শাস্ত্রপাঠ এবং তপস্যা করিয়া যদি আত্মশুদ্ধি অনুভব করে, তখন তাহারাও ধর্মপ্রচারে লাগিয়া যায়। বক্তা বলেন যে, মানসিক উন্নতির জন্য অবসর প্রয়োজন। এদেশের আদিবাসীদের—যাহাদিগকে কলাম্বাস বর্বর অবস্থায় দেখিয়াছিলেন—তাহাদিগকে সুশিক্ষা না দিবার জন্য তিনি আমেরিকান জাতির সমালোচনা করেন। এই বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে তিনি তাঁহার অজ্ঞতার পরিচয় দিয়াছেন। তাঁহার বক্তৃতা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। তিনি যাহা বলিয়াছেন, তাহার তুলনায় অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুক্ত রাখিয়াছেন।