দোষ কারও নয়৫
দিনমণি ডুবে অস্তাচলে,
রেখে যায় রক্তরাঙা কর,
আলোকিত ক্ষীণ দিনমানে
এই যেন শেষ অবসর!
রাখি আঁখি দেখি সচকিতে
বিজয়ের রাশি পিছে রয়,
জয়ে গণি হীন লজ্জা বলে
আমি ছাড়া দোষী কেহ নয়।
জীবনেরে গড়ি দিন দিন
কিম্বা উহা করে চলি ক্ষয়,
যথাকর্ম সেইরূপ ফল—
শুভে শুভ, মন্দে মন্দ হয়।
স্রোত যদি একবার ধায়
রোধ কিম্বা নিয়ন্ত্রণ তার
সাধ্য নহে কভু আর কারও,
আমা ছাড়া দোষ তবে কার?
আমি হই রূপধারী সেই,
ছিল যাহা অতীত আমার,
সৃষ্টিবীজ সুপ্ত সেখানেই
বিকশিতে ভুবনে আবার।
ইচ্ছা, চিন্তা—যে অতীত ধরি
মনোমাঝে সদা ব্যক্ত হয়,
বাহিরের আকৃতিও তাই,
আমি ছাড়া দোষী কেহ নয়।
প্রেমরূপে ফিরে আসে প্রেম
ঘৃণা আনে ঘৃণা তীব্রতর,
পরিমাপ নিজে তারা করে
রেখে যায় ছাপ মোর ’পর।
জীবনের শেষে মরণেও
তাহাদের দাবী জমা রয়,
এই ভোগ—দায় আমারি তো
আমি ছাড়া দোষী কেহ নয়।
ত্যজিলাম মিছে ভয়রাশি
বৃথা যত পরিতাপ আর
বুঝিয়াছি গূঢ় অনুভবে
স্বকর্মের কিবা অধিকার।
হর্ষ-ব্যথা অপমান যশ—
মোর কর্মে জাত প্রেতচয়,
ইহাদের সম্মুখে দাঁড়ানু
আমি ছাড়া কেহ দোষী নয়।
ভাল মন্দ প্রেম আর ঘৃণা
সুখ তথা দুঃখ যাহা বলি
একে ছাড়ি অন্য নাহি থাকে,
যুগ্মভাবে বাঁধা তো সকলি।
দুঃখ ছাড়া সুখস্বপ্ন দেখি
ভ্রান্তি শুধু! সত্য নাহি হয়,
আসিল না, আসিবে না কভু
আমি ছাড়া কেহ দোষী নয়।
অতএব ত্যজিলাম ঘৃণা
ত্যজিলাম তুচ্ছ ভালবাসা,
দূর করি দ্বন্দ্বের সংঘাত
মিটিয়াছে জীবনের তৃষা।
চিরমৃত্যু—ইহাই তো চাই
—নির্বাণ এ জীবন-শিখার,
ঘুচে-যাওয়া কর্মের আশ্রয়
রহিবে না দোষী কেহ আর।
একমাত্র নরবর, এক সেই প্রভু
একমাত্র সিদ্ধ আত্মা যিনি
কুহেলী-সন্দেহঘেরা যত পথ ছিল
ঘৃণাভরে ত্যজিলেন তিনি,
অসীম সাহসভরে করিয়া মনন,
অসঙ্কোচে উদ্দেশ্য দেখান—
‘মৃত্যু মহা-অভিশাপ, জীবনেও তাই
শ্রেষ্ঠ বস্তু জানিও নির্বাণ।’
ওঁ নমো ভগবতে সম্বুদ্ধায়
ওঁ নতি মোর ভগবান্ বুদ্ধ যিনি তাঁয়।