স্কুলের এসেমব্লিতে বড় আপা লম্বা বক্তৃতা দিতে ভালোবাসেন। এই দেশের মেয়েরা কীভাবে পুরো দেশটাকে পাল্টে দেবে সেটা তার প্রিয় একটা বিষয়। প্রত্যেকদিনই রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে স্কুলের মেয়েদের এই লম্বা বক্তৃতা শুনতে হয়। বড় আপা একেকদিন একেকজন বিখ্যাত মহিলা নিয়ে বক্তৃতা দেন। আজকে কাকে নিয়ে বক্তৃতা দেবেন সেটা জানার জন্যে যখন সবাই এক ধরণের কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করছে তখন বড় আপা বললেন, “প্রিয় মেয়েরা। আর দুই সপ্তাহ পরে স্কুল স্পোর্টস। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা!”
লেখাপড়া ছাড়া অন্য সবকিছুতে মেয়েদের উৎসাহ, তাই সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠল। বড় আপা বললেন, “লেখাপড়ার পাশাপাশি দরকার খেলাধূলা। সুস্থ মন থাকতে পারে শুধু সুস্থ শরীরে। তোমাদের যেন সুস্থ শরীর, সুস্থ দেহ থাকে সেজন্যে আমরা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করি। এই বছর দৌড় ঝাপের সাথে একটা নতুন বিষয় যোগ হচ্ছে যেটা আগে কখনো হয় নি। সেটা হচ্ছে–” বলে বড় আপা একটু থামলেন, সব মেয়েরা এই নূতন বিষয়টা শোনার জন্যে কান পেতে রইল।
বড় আপা তখন হাত তুলে ঘোষণা করলেন, “সাঁতার।”
মেয়েরা শুনে খুব চমৎকৃত না হলেও চিৎকার করে আনন্দ প্রকাশ করল। বড় আপা জিজ্ঞেস করল, “তোমরা কারা কারা সাঁতার জানো?”
সবাই হাত তুলল। শুধু ছোট ক্লাশের কয়েকটা মেয়ে হাত তুলল না। তারা হয় সাঁতার জানে না, না হয় বড় আপা কী বলছেন সেটা বুঝতে পারে নি। গ্রামের প্রায় সব মেয়ে বড় হতে হতে সাঁতার শিখে যায়। সেরিনা ইচ্ছে করে হাত তুলে নি, পানির সাথে তার যে একটা বাড়াবাড়ি বন্ধুত্ব আছে সেটা সে সব সময় গোপন রাখার চেষ্টা করে তাই সে নিজে থেকে এটা কাউকে বলে না।
বড় আপা বললেন, “সরকার থেকে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রতি বছর মেয়েদের সাঁতার প্রতিযোগিতা হবে। আমাদের স্কুল থেকেও আমরা টিম পাঠাব। তোমরা কারা কারা অংশ নিতে চাও?”
এবারেও প্রায় সব মেয়ে হাত তুলল, সেরিনা এবারও হাত তুলল না। সে কোনো সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায় না। বড় আপা বললেন, “তোমরা যারা সাঁতার প্রতিযোগিতায় নাম দিতে চাও তারা নাজমা ম্যাডামের কাছে নাম দিবে।” নাজমা ম্যাডাম স্কুলের স্পোর্টস টিচার, শুকনো, খিটখিটে এবং বদরাগী। বড় আপা বললেন, “আর তোমরা যারা দৌড় ঝাপে নাম দিতে চাও তারা ক্লাশ টিচারের কাছে নাম দিবে।”
স্কুলে বার্ষিক প্রতিযোগিতার জন্যে প্রতিদিন দুপুরের পর ক্লাশ ছুটি দিয়ে দেয়া হল। মেয়েরা তখন স্কুলের মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে। হাই জাম্প, লং জাম্প দেয়। যারা কখনো দৌড়াদৌড়ি করে না তারা আছাড় খেয়ে পড়ে হাঁটু আর কনুইয়ের ছাল তুলে ফেলতে লাগল। সাঁতার নিয়ে বড় আপার অনেক বক্তৃতা দেবার পরেও খুব বেশী মেয়ের সাঁতারে উৎসাহ দেখা গেল না জেলেপাড়ার দুটি মেয়ে আর ডানপিটে ধরণের কয়েকটা মেয়ে ছাড়া সাঁতার প্রতিযোগিতায় বেশী মেয়ে পাওয়া গেল না।
স্কুলের সীমানার ভেতরে একটা পুকুর রয়েছে, বহু বছর আগে একটা মেয়ে ডুবে মারা যাবার পর এখন কাউকে সেখানে যেতে দেয়া হয় না। স্কুলের সবচেয়ে দুষ্টু মেয়েটিও পুকুরের কাছে যেতে সাহস পায় না। স্কুল কর্তৃপক্ষ পুকুরে মাছের চাষ করে, বাইরের লোকজন এই পুকুর লিজ নিতে খুবই আগ্রহী, তার প্রধান কারণ মেয়েদের স্কুল বলে কেউ মাছ চুরি করে নেবে সেরকম ভয় নেই।
সাঁতার প্রতিযোগিতার জন্যে পুকুরের এক পাশের জঞ্জাল পরিষ্কার করা হয়েছে। মেয়েরা এক পাশ থেকে অন্য পাশে সাঁতরে যাবে। আগে থেকে এই প্রতিযোগিতাটি সেরে রাখা হচ্ছে, মূল স্পোর্টসের দিনে শুধু পুরস্কার দেয়া হবে। নাজমা ম্যাডাম প্রত্যেকদিন শাড়ি পরে স্কুলে আসেন, আজকে সাঁতার প্রতিযোগিতার জন্যে সালওয়ার কামিজ পরে এসেছেন। নিজে পুকুরে নেমে মেয়েগুলোকে সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে দিলেন। পুকুরের মাঝামাঝি একটা বাঁশ ভাসিয়ে রাখা হয়েছে, মেয়েগুলো সঁতরে এসে এই বাঁশটাকে ছুঁবে, কে আগে ছুঁয়েছে কে পরে ছুঁয়েছে সেখান থেকে প্রথম দ্বিতীয় ঠিক করা হবে।
সাঁতার প্রতিযোগিতা দেখার জন্যে স্কুলের অনেক ছাত্রী পুকুর পাড়ে হাজির হয়েছে। তাদের মাঝে সেরিনাও আছে। নাজমা ম্যাডাম প্রথমে সবাইকে বলে দিলেন কী করতে হবে। একবার বাঁশী বাজিয়ে প্র্যাকটিস করা হল। তারপর যারা সাঁতার দেবে তারা পুকুর পাড়ে সারি বেঁধে দাঁড়াল। নাজমা ম্যাডাম বাঁশী বাজাতেই সবাই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণপণে সাঁতার দিতে শুরু করল। পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে সবাই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকে, গৌরী আর ললিতা নামে জেলে পাড়ার দুটি মেয়ে সবার আগে, তার কিছু পিছনে নার্গিস নামে একজন ডানপিটে মেয়ে। অন্যেরা অনেক পিছনে।
পানি ছিটিয়ে সাঁতার কেটে একে একে সবগুলো মেয়ে বাঁশ পর্যন্ত পৌঁছাল তখন তাদেরকে পুকুর পাড়ে নিয়ে এসে কে প্রথম কে দ্বিতীয় হয়েছে নাজমা ম্যাডাম তাদের নাম লিখে নিতে শুরু করল।
যখন সবাই পুকুরের এই পাড়ে সাঁতার প্রতিযোগিতার জন্যে ভিড় করেছে তখন পুকুরের অন্য পাড়ে একটা বিপদজনক ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। নিচু ক্লাশের ছোট একটা মেয়ে পুকুরের অন্য পাড়ে একা একা নিজের মতো করে হেঁটে বেড়াচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সে পুকুরের মাঝে কিছু একটা দেখে দাঁড়িয়ে গেল। যেটা দেখে সে দাঁড়িয়েছে সেটা নিশ্চয়ই তার জন্যে যথেষ্ট কৌতূহলী কিছু, কারণ দেখা গেল সে ধীরে ধীরে পুকুরের পানির দিকে নামতে শুরু করেছে। পানির খুব কাছাকাছি এসে সে নিচু হয়ে পুকুর থেকে কিছু একটা তোলার চেষ্টা করতে থাকে এবং ঠিক তখন পুকুরের অন্য পাড় থেকে কেউ একজন প্রথমবার তাকে দেখতে পায়।
উঁচু ক্লাশের বড় একটা মেয়ে চিৎকার করে বলল, “এই মেয়ে? তুমি কী কর? পানিতে পড়ে যাবে তো?”
মেয়েটি তখন সত্যি সত্যি পানিতে পড়ে গেল। সবাই দেখল মেয়েটি পানিতে একটু হাবুডুবু খেলো তারপর পানিতে তলিয়ে গেল। পুকুরের পানিতে ছোট মেয়েটির কোনো চিহ্ন নেই।
এক সাথে সবাই চিৎকার করে ওঠে, কয়েক মুহূর্ত কেউ কে কী করবে ঠিক করে বুঝতে পারে না। তারপর সবাই পুকুরের তীর ধরে দৌড়াতে শুরু করে। বিশাল পুকুর, এক পাশ থেকে দৌড়ে অন্য পাশে যেতে সময় লাগবে। পুকুরের অন্য পাশে পৌঁছানোর পরেও কেউ বাচ্চাটাকে তোলার জন্যে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে না, মাছ চাষিরা পুকুরের চারপাশে গাছের ডাল, বাঁশ পুঁতে রেখেছে। মেয়েদের আতংকিত চিৎকারে মুহূর্তে পুরো এলাকাটা ভয়ংকর হয়ে উঠে।
সেরিনা এক মুহূর্ত চিন্তা করল, আর আব্বু অসংখ্যবার তাকে মনে করিয়ে দিয়েছে কেউ যেন পানির নিচে নিশ্বাস নেবার বিস্ময়কর ক্ষমতার কথা জানতে না পারে। সে কখনো কাউকে জানায় নি, কিন্তু সে এখন নিজের চোখের সামনে একটা বাচ্চাকে পানির নিচে নিশ্বাস নিতে না পেরে মারা যেতে দিতে পারবে না।
তাই সবাই অবাক হয়ে দেখল হঠাৎ সেরিনা পুকুরের তীর ধরে ছুটে এসে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পুকুরের পানিতে এতোটুকু ঢেউ না তুলে একটা তীরের মতো তার পুরো শরীরটা পানির ভেতর ঢুকে গেল। তারপর কোথাও কিছু নেই, একটা নিস্তরঙ্গ পুকুর, তার নিচে কী আছে কেউ জানে না।
দুই হাতে পানি কেটে সেরিনা সামনে এগিয়ে যায়, অসংখ্য বড় বড় মাছ সরে গিয়ে তাকে জায়গা করে দেয়, ঘোলা পানি আর শ্যাওলা, বেশি দূর দেখা যায় না। তার মাঝে সেরিনা দ্রুত এগিয়ে গেল। পরিষ্কার কিছু দেখা না গেলেও পানির ভেতর সে ছটফট করে নাড়াচাড়া করার শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
চোখের পলকে সে শিশুটির কাছে পৌঁছে গেল, পানির নিচে গাছের ডালের সাথে তার কাপড় আটকে গেছে সেখান থেকে ছুটতে পারলেও সে ভেসে উঠতে পারবে না। এই বাচ্চাটি সাঁতার জানে না।
বাচ্চাটির বুকের ভেতর বাতাস দরকার। সেরিনা বাচ্চাটির নাক চেপে ধরে মুখের ভেতর ফুঁ দিয়ে খানিকটা বাতাস ঢুকিয়ে দেয়। তারপর কাপড়টি হঁচকা টানে ছুটিয়ে আনে। বাচ্চাটি পাগলের মতো সেরিনাকে জাপটে ধরল, অন্য কেউ হলে সেটা বড় সমস্যা হয়ে যেতো, সেরিনার জন্যে কোনো সমস্যা নয়, সে পানির নিচে যতক্ষণ খুশী যেভাবে ইচ্ছে থাকতে পারে। কিন্তু বাচ্চাটি যেন নিজে থেকে নিশ্বাস নিতে পারে সেজন্যে তাকে ওপরে তুলতে হবে। সেরিনা পায়ে ধাক্কা দিয়ে মুহূর্তে পানির ওপর ভেসে উঠল, আর সাথে সাথে পুকুর ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য ছাত্রী, শিক্ষক আনন্দে চিৎকার করে উঠল।
ঘোট শিশুটি খক খক করে কাশছে, বুকের ভেতর মনে হয় পানি ঢুকে গেছে কিন্তু সেটা নিয়ে সেরিনা মাথা ঘামলি না, বাচ্চাটার মাথায় হাত দিয়ে বলল, “ভয় নাই, তোমার কোনো ভয় নাই।”
বাচ্চাটা পাগলের মতো তাকে জাপটে ধরে রেখেছে, ভয়ে আতংকে থর থর করে কাঁপছে, তার মনে হচ্ছে সেরিনাকে ছেড়ে দিলেই বুঝি সে আবার ডুবে যাবে।
সেরিনা বাচ্চাটিকে পিঠে নিয়ে সাঁতার কেটে পুকুর পাড়ে হাজির হতেই একসাথে অনেক মেয়ে বাচ্চাটাকে ধরে উপরে তুলে আনে। বাচ্চাটি আতংকিত মুখে কাশতে থাকে, হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে।
সেরিনা নিজেও উপরে উঠে আসে আর সবাই তাকে ঘিরে ধরে। তার ক্লাশের একটি মেয়ে সেরিনাকে জাপটে ধরে কেঁদে ফেলল, বলল, “তুই কেমন করে করলি? কেমন করে করলি?”
সেরিনা হাসার চেষ্টা করে বলল, “আমাকে ছাড়, তুই ভিজে যাচ্ছিস।”
“ভিজলে ভিজব। তুই এতো ভালো সাঁতার কাটতে পারিস?”
সেরিনা উত্তর দিল না, আরেকজন বলল, “তুই নিশ্বাস না নিয়ে পানির নিচে এতোক্ষণ কেমন করে থাকতে পারলি? কেমন করে?”
সেরিনা এবারেও কোনো উত্তর দিল না। আরেকজন বলল, “তুই না থাকলে বাচ্চাটা আজকে নির্ঘাত মরে যেতো। নির্ঘাত মরে যেতো।”
সেরিনা এবারেও কোনো কথা বলল না।
.
রাত্রিবেলা খাবার টেবিলে সেরিনা বলল, “আব্বু, আমার কিছু করার ছিল না।”
শামীম বলল, “অবশ্যই তোর কিছু করার ছিল না। তুই ছাড়া আর কেউ এই বাচ্চা মেয়েটাকে বাঁচাতে পারতো না।”
“কিন্তু এখন সবাই জেনে গেছে।”
“কী জেনে গেছে?”
“আমি পানির নিচে থাকতে পারি।“
শামীম মাথা নাড়ল, বলল, “উহুঁ”। সেটা মনে হয় এখনো কেউ ধরতে পারে নি। সবাই ভেবেছে তুই খুব ভালো সাতার কাটতে পারিস। এই পর্যন্তই। কিন্তু তুই যে আসলে সাঁতার কাটিস না, তুই যে পানির নিচে মাছের মতো ঘুরে বেড়াস সেটা কেউ ধরতে পারে নাই, কারণ সেটা কেউ একবারও চিন্তা করে নাই।”
সেরিনা মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ, সবাই জিজ্ঞেস করেছে কেমন করে এতে ভালো সাঁতার কাটতে শিখেছি।”
শামীম বলল, “যাই হোক যেটা হয়ে গেছে ভালো ভাবেই হয়েছে। একটা বাচ্চাকে প্রাণে বাঁচিয়েছিস। সেটা নিয়ে বেশি হইচই হয় নি। এখন থেকে খুব সাবধান। তোর যে একটা অস্বাভাবিক ক্ষমতা আছে সেটা কেন কেউ জানতে না পারে।”
সেরিনা বলল, “কেউ জানবে না আব্বু। তুমি নিশ্চিন্ত থাক।”
.
কিন্তু এতো নিশ্চিন্ত থাকা গেল না, কারণ পরের দিনই বড় আপা ক্লাশের মাঝখানে সেরিনাকে ডেকে পাঠালেন। বড় আপার অফিসে ঢুকে সেরিনা দেখল সেখানে তাদের স্পোর্টস টিচার নাজমা ম্যাডাম ছাড়াও আর দুই একজন স্যার ম্যাডাম আছেন। বড় আপা সেরিনাকে ডেকে একেবারে তার নিজের কাছে নিয়ে গেলেন, তার মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে বুকের মাঝে একটু জড়িয়ে ধরলেন, তারপর বললেন, “সেরিনা, মা, তোমাকে যে আমি কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাব বুঝতে পারছি না। তুমি না থাকলে কী সর্বনাশ যে হয়ে যেতো, চিন্তা করলেই আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
সেরিনা কিছু বলল না। বড় আপা বললেন, “সবাই যেটা বলছে সেটা বিশ্বাস করার মতো না, কিন্তু এতোজন মানুষের সামনে পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে আমি ব্যাপারটা অবিশ্বাস করি কেমন করে? তুমি এতো ভালো সতার দেয়া কেমন করে শিখলে?”
সেরিনা আমতা আমতা করে বলল, “এইতো মানে ইয়ে—“
“আমরা ঠিক করেছি স্কুলের পক্ষ থেকে আমরা তোমাকে একটা পুরস্কার দেব। অ্যানুয়েল স্পোর্টসের দিনে তোমাকে সেই পুরস্কার দেওয়া হবে।”
সেরিনা শুকনো গলায় বলল, “থ্যাংক ইউ ম্যাডাম।”
নাজমা ম্যাডাম বড় আপাকে বললেন, “আপা, আপনি তো আসল কথাটাই বললেন না।”
বড় আপা বললেন, “আপনি বলেন।”
নাজমা ম্যাডাম তখন তার খনখনে গলায় সেরিনাকে বললেন, “তুমি এতো ভালো সাঁতার জানো কিন্তু তুমি আমাদের সাঁতার প্রতিযোগিতায় যোগ দিলে না কেন?”
সেরিনা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল, সে এই প্রশ্নের কী উত্তর দেবে?
“যাই হোক, আমরা ঠিক করেছি তুমি প্রতিযোগিতায় যোগ না দিলেও তোমাকে আমাদের টিমে নিয়ে নেব। ন্যাশনাল কয়েকটা ইভেন্ট আছে সেইখানে আমরা অংশ নেব। তুমি হবে আমাদের টিম লিডার।”
সেরিনা ভয় পাওয়া গলায় বলল, “না!”
“কেন না? তুমি এতো ভালো সাঁতার জান, তুমি কেন অংশ নেবে।”
সেরিনা কী উত্তর দিবে বুঝতে পারল না, আমতা আমতা করে বলল, “না ম্যাডাম না। আমি পারব না।”
“তুমি কী পারবে না?”
“আমি সাঁতারের টিমে থাকতে পারব না।”
“কেন পারবে না?”
সেরিনার কোনো ভালো উত্তর নেই, তাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। বড় আপা জিজ্ঞেস করলেন, “কেন পারবে না?”
সেরিনা অসহায় ভাবে বলল, “আমার আব্বু বলেছে আমি যেন কোথাও না যাই।”
বড় আপা হাসি মুখে বললেন, “এই সমস্যা? আমি নিজে তোমার আব্বুর সাথে কথা বলে পারমিশন নিব তুমি নিশ্চিন্ত থাক।”
.
সত্যি সত্যি বড় আপা নাজমা ম্যাডামকে নিয়ে একদিন বাসায় হাজির হয়ে গেলেন। শামীমের তখন আর কিছু বলার থাকল না।