কারণ ছাড়াই তুমি স্মরণীয় আমার নিকট।
এ আমার লেখার টেবিল, অনবদ্য ফাউন্টেন
পেন, জন্মদিনে পাওয়া, গদ্যপদ্য চৈত্রে কি শ্রাবণে
তোমাকেই মাঝে মাঝে রাখে মনে হৃদ্যতাবশত।
মাঝে-মাঝে; কেননা বস্তুত কেউ স্মৃতির আঘাত
পারে না সইতে জানি সকল সময়। পাখি দূর
নীলিমার দিকে খুব সতৃষ্ণ তাকালে কিম্বা কোনো
বাদ্যযন্ত্র বেজে বেজে থেমে গেলে স্মৃতি জন্ম নেয়।
এখানে গাছের নিচে বসেছিলে, পাতাগুলি খসে
পড়েছিল তোমার পায়ের কাছে, খোঁপায় আটকে
ছিল একটি কি দু’টি। অন্ধকার করেছিল গ্রাস
যুগল ভাস্কর্য, স্মরণীতায় লীন আজ
সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, গোধূলির আঙটির ঝলক,
ফৈয়াজের দীর্ঘতান, দু’জনের ফুল্ল আলিঙ্গন।
আমার উপোসী ওষ্ঠে বুনো জ্যোৎস্না চুমোয় চুমোয়
বিষাদ ছড়িয়ে দেয়। একটি বেড়াল, অতিশয়
রাগী হিংস্র জিভে চেটে চেটে মুছে ফেলে খুব দ্রুত
আমার সকল পথ; প্রত্যেকটি সেতু, যা আমার
স্বপ্নজাত, আইসক্রিমের মতো গলে যায়, আমি
হৃতজ্যোতি চোখ হয়ে ঝুলে থাকি একা,অসহায়।
ঘরের চৌকাঠ আর শূন্য উঠোনের মাঝখানে,
সতত জাগর দৃষ্টি আর অন্ধকার মাঝখানি,
হাতের উন্মখ তালু, আর রেকাবির মাঝখানে,
স্তনের সোনালি বোঁটা আর তৃষ্ণার্ত ওষ্ঠের মাঝে,
কাকতাড়ুয়ার আর হিরন্ময় ফসলের মাঝে
যে প্রকৃত ব্যবধান থাকে তার হাহাকার হয়
প্রতিধ্বনিময় সর্বক্ষণ আমার জীবনে; থাকি,
বেঁচে থাকি শিকারি-তাড়িত হরিণের ক্লেশ নিয়ে।
জ্ঞানত কখনো আমি করি না আক্ষেপ ঝরাপাতা,
গলন্ত মোমের কথা ভেবে, তবু আমার একান্ত
অভিমানী কবিতার খাতা কত অশ্রুপাত করে-
স্মৃতিতে রেঁনেসা থাকে, থাকে কিছু মৌল বিষণ্নতা।