পত্রাবলী-পরিশিষ্ট

২০৫ক*

[মিঃ ফ্রান্সিস লেগেটকে লিখিত]

সহস্রদ্বীপোদ্যান (যুক্তরাষ্ট্র)
অগষ্ট, ১৮৯৫

প্রিয় বন্ধু,
আপনার চিঠি যথাসময়ে পেয়েছি।

আমার ইচ্ছামত আপনি আমায় লণ্ডনে যেতে বলেছেন—এ আপনার বিশেষ অনুগ্রহ ও মহত্ত্বের পরিচায়ক। সেজন্য অজস্র ধন্যবাদ। কিন্তু আমার লণ্ডনে যাবার কোন তাড়া নেই। তাছাড়া, আমি আপনাকে প্যারিসে বিবাহিত দেখতে চাই; তারপর আমি লণ্ডনে যাব।

আমি ঠিক সময়ে হাতের কাছে প্রস্তুত … থাকব, ভয় নেই।

ইতি
আপনার চিরবিশ্বস্ত
বিবেকানন্দ

২৬০ক*

[গিরিধারীদাস মঙ্গলদাস বিহারীদাস দেশাইকে লিখিত]

২২৮ ওয়েষ্ট ৩৯ ষ্ট্রীট
নিউ ইয়র্ক
২ মার্চ, ১৮৯৬

প্রিয় বন্ধু,
আপনার সুন্দর পত্রখানির উত্তর দিতে দেরী হওয়ার জন্য ক্ষমা করবেন।

আপনার পিতৃব্য মহাত্মা ছিলেন, তাঁর সমগ্র জীবন দেশের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত। আশা করি আপনারা সবাই তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন।

এই শীতে ভারতে ফিরছি—হরিদাস ভাইকে আর দেখতে পাব না ভেবে কী যে দুঃখ হচ্ছে, তা প্রকাশ করতে আমি অপারগ।

তিনি একজন দৃঢ়নিষ্ঠ উন্নতচরিত্র বন্ধু ছিলেন, তাঁকে হারিয়ে ভারতের খুবই ক্ষতি হল।

শিগ্‌গির ইংলণ্ডে যাচ্ছি—গ্রীষ্মকালটা সেখানে কাটাবার ইচ্ছা, আর পরের শীতকালে ভারতে যাব।

আপনার পিতৃব্য ও বন্ধুদের আমার কথা জানাবেন।

আপনার পরিবারবর্গের চির শুভানুধ্যায়ী
বিবেকানন্দ

পুনঃ—আমার ইংলণ্ডের ঠিকানাঃ কেয়ার অব ই.টি.স্টার্ডি এস্কোয়ার, হাই ভিউ, কেভার্শ্যাম, রীডিং, ইংলণ্ড।

৩২৪ক*

[‘লাইট অব দ্য-ইষ্ট’ পত্রিকার সম্পাদককে লিখিত]*

প্রিয় মহাশয়,
‘লাইট অব দ্য-ইষ্ট’ পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যা অনুগ্রহ করে আমাকে পাঠানর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। পত্রিকাটির সম্পূর্ণ সাফল্য কামনা করি।

যেহেতু পত্রিকাটির উন্নতিকল্পে আপনি আমার পরামর্শ চেয়েছেন আমি খোলাখুলি বলি, একাজে আমার আজীবন অভিজ্ঞতায় আমি সব সময়ে দেখেছি যে অলৌকিকের চর্চা ক্ষতিকর, তা মানুষকে দুর্বল করে। আমাদের যা চাই তা হল শক্তি। অন্যান্য জাতির চেয়ে ভারতবাসী—আমাদের বেশী দরকার বলিষ্ঠ তেজস্বী চিন্তার। সর্ববিষয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মের অনুশীলন আমাদের যথেষ্ট হয়েছে। যুগ যুগ ধরে আমাদের ভেতরে রহস্যময় বস্তু ঠেসে পোরা হয়েছে। তার ফলে, আমাদের বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক পরিপাকশক্তি এমনভাবে নষ্ট হয়ে গেছে যা প্রায় চিকিৎসার অসাধ্য এবং জাতিটাকে অকর্মণ্য মানসিক জড়তার এমন এক নিম্নস্তরে টেনে নামান হয়েছে যার অভিজ্ঞতা এর আগে বা পরে অন্য কোন সভ্য সমাজকে লাভ করতে হয়নি। একটা বলশালী জাতি গড়ে তুলতে হলে তার পেছনে তরতাজা ও বলিষ্ঠ চিন্তা থাকা দরকার।[তা] আছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত উপনিষদের মধ্যে, যা সারা পৃথিবীকে শক্তিশালী করতে পারে। অদ্বৈতবাদ হচ্ছে শক্তির শাশ্বত আকর। কিন্তু তাকে কাজে লাগান দরকার। প্রথমে বেদান্তকে পণ্ডিতীর কঠিন আবরণ থেকে মুক্ত করতে হবে; তারপরে তার সমস্ত সরলতা সৌন্দর্য ও ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়েও তা প্রয়োগ করে দেশের সর্বত্র শিক্ষা দিতে হবে। ‘এটা একটা বিরাট কাজের ফরমাশ’, কিন্তু তাহলেও, যেন আগামী কালই একাজ নিষ্পন্ন হবে এভাবে এই উদ্দেশ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।’ একটা বিষয়ে আমি সুনিশ্চিতঃ যে কেউ অকপট ভালবাসা দিয়ে, নিঃস্বার্থপর হয়ে মানুষের সেবা করতে চায় সে অসাধ্য সাধন করতে পারবে।

ইতি

আপনার বিশ্বস্ত
বিবেকানন্দ

৩৩০ক*

[স্বামী ব্রহ্মানন্দকে লিখিত]

(দার্জিলিঙ থেকে লেখা)
আলমবাজার মঠ, কলকাতা
২৬ মার্চ, ১৮৯৭

প্রিয় মিসেস বুল,
আমাকে নিয়ে জাতীয় উল্লাস-উদ্দীপনা প্রদর্শন শেষ হয়েছে; অন্ততঃ আমাকে সে সব সংক্ষেপে সারতে হয়েছে, যেহেতু আমার স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙে পড়েছিল। পশ্চিমে একটানা খাটুনি ও ভারতে এক মাস প্রচণ্ড পরিশ্রমের পরিণাম বাঙালীর ধাতে—বহুমূত্র রোগ। এ একটি বংশগত শত্রু এবং বড়জোর কয়েক বছরের মধ্যে এই রোগে আমার দেহাবসান পূর্বনির্দিষ্ট। শুধু মাংস খাওয়া, জল একেবারে না খাওয়া এবং সর্বোপরি, মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ বিশ্রামই, বোধ হয়, জীবনের মেয়াদ বাড়াবার একমাত্র উপায়। মগজটাকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম আমি দিচ্ছি, দার্জিলিঙে যেখান থেকে এখন আপনাকে চিঠি লিখছি।

সারদানন্দের সাফল্যের খবর পেয়ে আমি খুব খুশী হয়েছি। তাকে আমার আন্তরিক ভালবাসা জানাবেন এবং তাকে অত্যধিক কাজ করতে দেবেন না। বাঙালীর শরীর মার্কিনদের মত নয়।

শ্রীযুক্ত চট্টোপাধ্যায় (মোহিনী) কলিকাতায় আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এবং খুব বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করেন। আপনার প্রেরিত বার্তা তাঁকে দিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে কাজ করতে বেশ আগ্রহী। আর বেশী কিছু লেখবার নেই, আমি শুধু আমার মঠটি চালু করতে দৃঢ়সংকল্প এবং সে কাজ সারা হওয়া মাত্র আমি আবার আমেরিকায় আসব।

প্রসঙ্গতঃ গার্টুড অর্চাড (Gertrude Orchard) নামে ইংলণ্ডের এক মহিলাকে আপনার কাছে পাঠাব। তিনি গৃহশিক্ষিকার কাজ করেছেন, কিন্তু ললিতকলাদিতে তাঁর ব্যুৎপত্তি আছে এবং আমার ইচ্ছে, তিনি আমেরিকায় গিয়ে ভাগ্যপরীক্ষা করে দেখুন। আপনার ও মিসেস (ফ্লোরেন্স) এ্যাডাম্‌স-এর উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি তাঁকে দেব।

মিসেস এ্যাডাম্‌স, মিস থার্সবী, মিস ফার্মার (মহীয়সী ভগিনী) এবং অন্যান্য সুহৃদ্গণকে আমার ভালবাসা জানাবেন।

আপনি আমার অসীম প্রীতি ও চিরকৃতজ্ঞতা গ্রহণ করুন।

আপনার স্নেহের
বিবেকানন্দ

৩৩১ক*

[লালা বদ্রী শাহকে লিখিত]

দার্জিলিঙ
৭ এপ্রিল, ১৮৯৭

প্রিয় লালাজী,
এইমাত্র তারযোগে আপনার সহৃদয় আমন্ত্রণ পেলাম। বোধহয় আপনি ইতোমধ্যে শুনেছেন যে আমি মারাত্মক বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়েছি।

তাতে আমাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল এবং আমাকে ছুটতে হল দার্জিলিঙে—এ জায়গায় খুব ঠাণ্ডা এবং এই রোগের পক্ষে হিতকর বলে।

সেই থেকে আমি অনেক ভাল বোধ করছি এবং ডাক্তাররা চান না যে আমি ঘোরাফেরা করি, কেন না তাতে রোগ আবার বাড়বে। আমার স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা যদি মাস দুয়েক চলে তাহলে মনে হয় আমি সমতল ভূমিতে নেমে আসতে সমর্থ হব এবং আপনাদের সকলের সঙ্গে দেখা করতে আলমোড়ায় যেতে পারব। আপনাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি বলে আমি বিশেষ দুঃখিত। কিন্তু আপনি বুঝছেন, এছাড়া গত্যন্তর ছিল না; শরীরটা আমার আয়ত্বে ছিল না।

আপনি ও আলমোড়ার অন্যান্য সব বন্ধুরা আমার ভালবাসা জানবেন।

ইতি
আপনার বিশ্বস্ত
বিবেকানন্দঃ

৩৪৮ক*

[কলম্বোর মিঃ টি.শোকনাথনকে লিখিত]*

আলমোড়া
৩০ জুন, ১৮৯৭

প্রিয় বন্ধু,
সিংহলে (অধুনা শ্রীলঙ্কা) থাকার সময়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সে অনুসারে পত্রবাহক স্বামী শিবানন্দকে সেখানে পাঠান হল। যে কাজ তাঁর তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত হবে তিনি তার বিশেষ উপযুক্ত, অবশ্য আপনার সহৃদয় সহায়তা পেলে।

আশা করি আপনি তাঁকে সিংহলের অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেবেন। ইতি

সতত প্রভুসমীপে আপনার
বিবেকানন্দ