তাকে ওরা হাসপাতালের একটা বীজাণুধ্বংসী গন্ধময়
ঝকঝকে তকতকে কেবিনে এনে
শুইয়ে দিলো। ওর হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া বেশ ভালো,
প্লীহা কিংবা যকৃতেও কোনো গোলমাল নেই,
অন্ত্রে ক্ষত কামড় বসায় নি, রক্তচাপ স্বাভাবিক।
মোটকথা, ওর শরীর
ষোলআনা নীরোগ। তবু সে এখন হাসপাতালের বেডে।
সে যে-রাষ্ট্রের বাসিন্দা, সেখান কারো
কোনো নাম নেই; প্রত্যেককে শনাক্ত করা হয়
ভিন্ন-ভিন্ন নস্বরে।
সেখানকার বিজ্ঞানীরা আবেগ-বিতাড়নী বীটকা আবিষ্কার
ক’রে বাজ্যের অবাল-বৃদ্ধ-বনিতার
অস্থিমজ্জা থেকে আবেগ নিংড়ে নিয়েছেন, যেরকম হয়
আখ-মাড়াইয়ের কলে। আকাশে চাঁদ উঠতে
কিংবা তারা ফুটতে দেখলে কারো মনে
ঢেউ জাগে না, ঝুঁকে-থাকা ডালে গোলাপে দেখে
কেউ আর বলে না ‘সুন্দর,। কোনো সুন্দরীর মুখোমুখি
হলে কারো মনে তারার মতো
কেঁপে ওঠে না কবিতার পংক্তিমালা। বারংবার
সুপ্রযুক্ত ইনজেকশনে
মানুষী দুর্বলতাগুলো একে-একে উপড়ে ফেলা হয়েছে।
৩৩৩৩৩৩৩, রাজ্যের
কর্ণধারদের ধন্দে ফেলে দিয়েছে। ওকে প্রচুর অব্যর্থ
আবেগ-বিতাড়নী বটিকা
সেবন করানো হয়েছে, বারবার ইনজেকশন
ঠেলে দেয়া হয়েছে
ওর শিরায়-শিরায়। তবুও সারিয়ে তোলা যায় নি
তার সুন্দরকে সুন্দর বলবার ব্যামো।
হাসপাতালে দু’দিন কাটাতে-না কাটাইতেই
একজন নার্স কর্তৃপক্ষের কাছে ওর বিরুদ্ধে
রুজু করলো নালিশ। সোবকাকে
ওর মনে ধরেছে, এ-ধরনের কথা নাকি রোগী বলেছে
কণ্ঠস্বরে হ্রদের ছলছলানি এনে। ফলে,
সেই নার্সকে বদলি করা হলো ওর কেবিন থেকে
আর ঘন ঘন ইনজেকশন
ঠেলে দেয়া হলো৩৩৩৩৩৩৩-এর শরীরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে।
একরাতে রাজ্যের তিন কর্ণধার ওকে দেখতে এলেন
হাসপাতালে। শুয়ে ছিলো সে।
ধবধবে বালিশে মাথা রেখে। ‘কেমন আছেন’ প্রশ্ন করলেন
ভাবলেশহীন একজন। ‘ভালো আছি, বেশ ভালো …
এই বালিশটাকে মনে হচ্ছে একটা রাজহাঁস
যে আটকা পড়েছে
তুষার-ঢাকা হ্রদে’- ব’লে সে বাইরে দৃষ্টি মেলে দিলো
যেখানে থইথই করছে জ্যোৎস্না
রাজ্যের কর্ণধারগণ তাকালেন
পরস্পর, তারপর পরবর্তী কর্মপহ্নার কথা তুখোড়
চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করতে করতে
করিডোর দিয়ে হেঁটে গেলেন তিনটি রোবটের ধরনে।