বিরহিণীর শেষ রাত্রি

বিরহিণীর শেষ রাত্রি

নতুন জানলার পাশে দাড়ি-নাকামানো থুত্‌নি
রাত-জাগা চোখ।
কিছু দূরে টিলা
ডালপালা ছুঁয়ে আছে পীতবর্ণ মেঘ
তার ওপাশ অসীমের ঘর-বাড়ি।
বাতাসে ছড়িয়ে আছে তারা-পোড়া ছাই
বস্তুত এখন এই শেষ রাতে পৃথিবীরও
হঠাৎ দাউদাউ করে জ্বলে উঠবার
দাবি আছে।
এই নারী…
সেও কি পুরুষ চায়…
ছায়াপথ জুড়ে তার রতিতৃষ্ণা
উরু খুলে ডাকে কোনো চণ্ডাল-গ্রহকে?

হঠাৎ আকাশ খুলে যায়
যেন কোনো জাদুকর আমার মোহকে
জব্দ করবার জলে ছড়িয়েছে নতুন সম্মোহ
লক্ষ লক্ষ ডানাওয়ালা শিশু
হুবহু প্রি-র‍্যাফেলাইট
দ্বাদশ সূর্যকে ঘিরে খলখল শব্দে
হাসে।
এরা সব কোথা থেকে এলো?
আমি তন্নতন্ন করে খুঁজি
ফের সিগারেট জ্বেলে
দেখি এই নতুন আকাশ।

পূর্বসংস্কার বশে আমার মগজ চায়
হাওয়ার তরঙ্গে ভাসা
দি্ক্‌বসনা রুবেন্‌স রমণী।
নেই।
শুধু শিশুদের ওড়াউড়ি…
ক্রমে ক্রমে তারা সব রং হয়ে গলে পড়ে
যেরকম রং
ছোঁয়নি কখনো কোনো পার্থিব আঙুল।
নীলের হৃদয়-চেরা নীল
টারকোয়াজ মথিত চাপা আভা
মাজার চক্ষুর মতো বিচ্ছুরিত হলুদ-খয়েরি
পাথরের ঘুম-ভাঙা সহসা-রক্তিম…
সেইসব রং ঠিক
জলস্তম্ভ হয়ে ওঠে
ফের ভাঙে
পরম্পর ঝাপটা মারে, যেন
শত শত ঐরাবত
স্নানের নেশায় মেতে আছে।

এমন নয় যে আমি এতেই মুগ্ধ হবো
স্তব্ধবাক হয়ে যাবো।
দৃশ্য-দৃশ্যান্তর ভেদ করে
উঠে আসে কান্না
এই দুঃখী বিরহিণী পৃথিবীর কান্নার আওয়াজ
কিছুতে ঢাকে না।
জেগে ওঠে গাছপালা
নদী ও নগরী
সুন্দরের একান্ত নিজস্ব নশ্বরতা।
মানুষ চায় না আর
মানুষের আয়ু
শিশুর খেলনার মতো চতুর্দিকে ধ্বংসবীজ
যে-কোনো রাত্রিই যেন
শেষ রাত
যে-কোনো শব্দই যেন শেষ ধ্বনি
যে-কোনো আলোই যেন
শেষ অন্ধকার আমন্ত্রণ।
যদি তাই হয়, তবে
তার আগে রজস্বলা, হে ধরিত্রী,
অন্তত একবার
মহান সঙ্গমে যাও মহাশূন্যে
জ্বলে ওঠো
নিজের আগুনে।