পতন

কখনো বা কখনো সবাই প’ড়ে যায় অতর্কিতে।
ব্যাপক রোদ্দুর ভেঙে, অন্ধকারে ঢেউ তুলে যারা
পথচারী, পড়বো না কখনও হোঁচট খেয়ে আদাড়ে-বাদাড়ে,
এ ফখর তাদের সাজে না।

কখনো না কখনো সবাই প’ড়ে যায় অতর্কিতে।

সিঁড়িতে উঠতে গিয়ে কিংবা বাসের হাতল ধরে
বাদুড় সাজার ক্ষিপ্ত প্রতিযোগিতার
মাশুল অনেকে দেয়, কেউ কেউ খানাখন্দে প’ড়ে,
হায়, কেউ কেউ খাদেও তলিয়ে যায়।
কখনো না কখনো সবাই প’ড়ে যায় অতর্কিতে।

শৈশবে যখন হাঁটি হাঁটি পা পা
চলার আবৃত্তি করতাম ট’লে কালো-সাদা বরফি-আঁকা
মেঝেতে মাতাল, তাল সামলাতে না পারলে পিতা
তড়িঘড়ি ধরতেন তাঁর আত্মজের হাত দৃঢ় হাতে আর কৈশোরেও
কখনো বাইরে গেলে প্রফুল্ল সকালে কি বিকেলে
সহসা ঠোকর খেলে পথে পতনোন্মুখ পুত্রকে
নিতেন সামলে অবলীলাক্রমে, বলতেন, ‘তোর
হুঁশ নেই এতটুকু, দেখেশুনে পথ চলা দরকার, বুঝলি?
নইলে দুর্ঘটনা ফাত্রা ছোকরার মতো উঠবে হেসে
হো হো তোর আহম্মকি দেখে।

ইদানীং তাঁর কথা খুব কমই বলা হয়, অকস্মাৎ
দেয়ালের ফটোগ্রাফে নির্বিকার দৃষ্টি প’ড়ে যদি,
অতীত ককিয়ে ওঠে কখনোবা, মনে হয়, একদিন পুরোনো
এ বাড়িতে তিনিও ছিলেন।
এখানে এ ঘরে কিংবা পথের কিনারে, শুনি, শিহরিত, একা,
আজও ক্লোরোফর্মের মতন ভাসে তার আত্মা আত্মা স্বর।

মনে প’ড়ে, যখন নামানো হল করবে পিতার
তেয়াত্তর বছরের উদাস শরীর গমগমে পুণ্যশ্লোক
উচ্চারণে, আমি প’ড়ে যাচ্ছিলাম খুঁড়ে তোলা মাটির ওপর
প’ড়ে যাচ্ছিলাম।
কখনো না কখনো সবাই প’ড়ে যায় অতর্কিতে।

আমি
প’ড়ে
যাচ্ছি
প’ড়ে
যাচ্ছি
অতি দ্রুত প’ড়ে
যাচ্ছি
প’ড়ে যাচ্ছি
ক্রমাগত, ভাবি আমার জনক ঐ
পবিত্র গাছের রূপে দেখাবেন লাল কি সবুজ সিগন্যাল;
কিন্তু আমি
প’ড়ে যাচ্ছি
প’ড়ে
যাচ্ছি
প’ড়ে
যাচ্ছি
পাবো না কখনো আর পৌরুষ-প্রবল তাঁর হাতের নির্ভর
প’ড়ে যাচ্ছি
প’ড়ে যাচ্ছি
শুধু প’ড়ে যাচ্ছি…