০৬. সকালটা বেশ সুন্দর

সকালটা বেশ সুন্দর। ঝড়বৃষ্টি থেমে গেছে। গাছগুলোর পাতা সব ধোওয়া, ঝকমকে সবুজ। আজও একটা ময়ূর এসে ডাকছে। পোষা হরিণগুলো ঘুরছে আপন মনে।

বারান্দায় বসেই চা খাওয়া হয়ে গেছে একটু আগে। এঁটো কাপ-ডিশগুলো পড়ে আছে টেবিলের ওপর। কাকাবাবু গেছেন বাথরুমে। ম্যানেজার নুরুলসাহেব গল্প করছেন সন্তুদের সঙ্গে।

নুরুলসাহেবের পাঁচ বছরের মেয়ে আমিনা খেলা করছে সামনে। সে ছুটে-ছুটে একটা প্রজাপতি ধরার চেষ্টা করছে। চার-পাঁচ রকমের রঙিন ফ্রক পরা মেয়েটি নিজেও যেন একটা প্রজাপতি।

একটা জিপগাড়ি এসে থামল বাগানের পাশে। তার থেকে নামল একটা গাঁট্টাগোট্টা লোক, এগিয়ে আসতে লাগল বাংলোর দিকে।

আমিনা প্রজাপতির দিকে চেয়ে-চেয়ে ছুটছে, অন্য কিছু দেখছে না, সেই লোকটার সঙ্গে তার ধাক্কা লেগে গেল বেশ জোরে।

এরকম ধাক্কা লাগলে যে-কোনও লোক ছোট মেয়েটিকে আদর করে কিংবা কোলে তুলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে যে তার লেগেছে কি না। কিন্তু এই লোকটা বিরক্তভাবে আমিনাকে জোরে ঠেলে দিল, সে আছড়ে পড়ল মাটিতে। কেঁদে উঠল সঙ্গে-সঙ্গে।

নুরুলসাহেব মেয়েকে ধরতে গেলেন না, লোকটিকেও কিছু বললেন না।

প্রচণ্ড রাগে সন্তুর মুখ-চোখ লাল হয়ে গেল। লোকটা আর একটু কাছে আসতেই সন্তু অন্য কিছু আর চিন্তা না করে ছুটে গিয়ে লোকটির মুখে খুব জোরে একটা ঘুসি কষাল।

লোকটা ধড়াম করে পড়ে গেল চিত হয়ে। এক ঘুসিতেই প্রায় অজ্ঞান। ঘুসিটা লেগেছে ঠিক নাকের ডগায়। গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে।

নুরুলসাহেব আঁতকে উঠে বললেন, এ কী করলে ভাই? সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার। ওকে মারলে?

সন্তু হাঁফাতে-হাঁফাতে বলল, মারব না, নিশ্চয়ই মারব।

জোজো বলল, বেশ করেছে মেরেছে। ও না মারলে আমি নিজেই ওর মাথাটা একটা নারকোলের মতন ফাটিয়ে দিতাম।

জোজো ছুটে গিয়ে আমিনাকে মাটি থেকে তুলে নিল।

নুরুলসাহেব বললেন, ও লোকটা কতার সিং! তোমরা চেনো না। ঠাকুর সিংয়ের ডান হাত!

সন্তু বলল, ডান হাত, বাঁ হাত যাই-ই হোক, ওইটুকু একটা মেয়েকে মারলে শাস্তি দিতে হবে না?

নুরুলসাহেব ভয়ে আমসির মতন মুখ করে বললেন, ওদের চটালে আমি যে এখানে চাকরিই করতে পারব না। ওরা যা ইচ্ছে তাই-ই করে। শিকার করা নিষেধ, তবু জঙ্গলে গিয়ে হরিণ মারে, খরগোশ মারে। আমার এখানে খাবার নিতে আসে মাঝে-মাঝে। যক্ষুনি যা চাইবে, দিতে হবে সঙ্গে-সঙ্গে।

কতার সিং উঠে বসল আস্তে-আস্তে। জ্বলন্ত চোখে তাকাল সন্তুর দিকে। দাঁত কিড়মিড় করে কী যেন একটা খারাপ গালাগালি দিল।

সন্তু যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানেই রইল, সরল না এক চুলও।

কর্তার সিং উঠে দাঁড়িয়ে বলল, কুত্তার বাচ্চা, তোকে জানে মেরে দেব।

সন্তু দুটো হাত মুঠি করে বুক আড়াল রেখে বলল, আও না, আও! তোমাকে আরও শিক্ষা দেব আমি।

সন্তুর তুলনায় কতার সিংয়ের শরীর অন্তত আড়াইগুণ বড়। সন্তুকে দেখলে মনেই হয় না তার গায়ে খুব জোর আছে। সে মাল-টাল ফোলায় না। প্যান্ট আর শার্ট পরা সাধারণ চেহারা। কিন্তু বক্সিং সে ভাল জানে।

কতার সিং বক্সিংটক্সিংয়ের ধার ধারে না। একটা ঘুসি খেয়েই সে সন্তুর মুঠোর ওজন বুঝে গেছে। সে আর ও লাইনে গেল না।

বাঁ হাত দিয়ে সে মুখের রক্ত মুছল। ডান হাতে ঝাঁ করে একটা ছুরি বার করল।

সন্তু তবু পালাল না। তার সিংয়ের চোখে চোখ রেখে পিছিয়ে গেল খানিকটা।

এই সময় ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন কাকাবাবু। এরকম একটা আসন্ন লড়াইয়ের দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়ে বললেন, কী ব্যাপার, কী হয়েছে?

জোজো বলল, ওই লোকটা অমানুষ। বাচ্চা মেয়ে আমিনাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। সন্তু রেগে গিয়ে ওর নাকে একটা ঘুসি মেরেছে বলে এখন ও ছুরি তুলেছে। কাওয়ার্ড কোথাকার! রোদ্দুরে কতার সিংয়ের স্থবির ফলাটা চকচক করে উঠল।

কাকাবাবু ইচ্ছে করলেই চট করে ঘর থেকে রিভলভারটা আনতে পারতেন। কিন্তু আনলেন না। নিজের একটা ক্রাচ সন্তুর দিকে ছুড়ে দিয়ে বললেন, এটা ধর, সন্তু। লোকটাকে আচ্ছা করে পিটিয়ে দে।

সন্তু চট করে একটু ঘুরেই লুফে নিল ক্রাচটা। তারপর সেটা বনবন করে ঘোরাতে লাগল।

কতার সিং একটা ন ইঞ্চি ছুরি নিয়ে অত বড় ক্রাচের সঙ্গে কী করে লড়বে? সে পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই সন্তু দমাস দমাস করে মারতে লাগল তার পিঠে, বুকে।

আমিনা কান্না ভুলে গিয়ে খলখল করে হাসতে লাগল তা দেখে।

দুবার কতার সিং ছিটকে পড়ে গেল মাটিতে। তারপর উঠেই সে রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাবার চেষ্টা করল। সন্তু তাড়া করে গেল তাকে।

কাকাবাবু চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, মার, আরও মার দে, সন্তু। ওর এত সাহস, সকালবেলাতেই ছুরি বার করে এত লোকের সামনে?

কতার সিং কোনওক্রমে উঠে পড়ল জিপগাড়িতে। দুর্বোধ ভাষায় কী যেন শাসাল মুখ বার করে। তারপর হুস করে বেরিয়ে গেল জিপটা।

সন্তু ফিরে আসতেই কাকাবাবু তার কাঁধ চাপড়ে বললেন, বাঃ, ভাল লড়েছিস, সন্তু। বেশ করেছিস ওকে মেরেছিস।

নুরুলসাহেবের দিকে ফিরে বললেন, আপনার ওইটুকু মেয়েকে মারল, আপনি নিজে কিছু বললেন না?

নুরুলসাহেব বললেন, আমাকে এখানে চাকরি করতে হয়। পুলিশ পর্যন্ত ওঁদের ভয় পায়। এই যে কাণ্ডটা ঘটল, এর পর কী হয় কে জানে!

কাকাবাবু বললেন, এত ভয়ে-ভয়ে চাকরি করতে হবে? এর চেয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে না খেয়ে থাকাও ভাল। মানুষের আত্মসম্মান না থাকলে আর কী। রইল?

জোজো বলল, ওই লোকটা নিশ্চয়ই দলবল নিয়ে ফিরে আসবে।

কাকাবাবু বললেন, আসুক। দেখি ওদের মুরোদ। ঠাকুর সিং টের পেয়ে গেছে, আমি কে! তোরা এক কাজ কর তো জোজো। তুই আর সন্তু ওই যে চেকপোেস্টটা আছে, তার কাছে চলে যা। ওখান দিয়ে অনেক গাড়ি যায়। ঠা র সিং-এর গাড়ি কিংবা লোকজনেরাও যাবে নিশ্চয়ই। তোরা ওখানে অন্য লোকজনদের শুনিয়ে-শুনিয়ে গল্প কর যে কতার সিংকে কেমন মেরেছিস! সবাইকে বুঝিয়ে দে যে আমরা ভয় পাই না।

সন্তু আর জোজো মজা পেয়ে গেল। মহিমও যোগ দিল তাদের সঙ্গে। ওরা তিনজনে সেই চেকপোস্টের কাছে একটা কালভার্টে গিয়ে বসল।

একটা গাড়ি থামতেই জোজো হাসতে হাসতে বলল, ওই যে কর্তার সিং না কে একটা লোক এসেছিল, ঠাকুরুসিং-এর বাঁ হাত…

মহিম বলল, বাঁ হাত না, ডান হাত!

জোজো বলল, ডান হাত না ডান পা কে জানে! দেখতেই তাগড়া চেহারা, আসলে একটা ভা! একখানা ঘুসিতে কুপোকাত!

মহিম বলল, মটিতে পড়ে গিয়েই চ্যাঁচাতে লাগল, ঠাকুর সিং, বাঁচাও, বাঁচাও! কোথায় ঠাকুর সিং! সেও তো একটা মহাভিতু!

জোজো বলল, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি নামে সিনেমাটায় একটা গান ছিল জানিস!

তারপর সে গেয়ে উঠল, ভজন পূজন জানি না, মা, জেতেতে ফিরিঙ্গি…

থেমে গিয়ে বলল, এ গানটা না, আর-একটা গান আছে ঠাকুর সিং সম্পর্কে :

হয়ে ঠাকুর সিংয়ের বাপের জামাই
কোর্তা-টুপি ছেড়েছি।

মহিম হাসতেহাসতে বলল, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি এই ঠাকুর সিংয়ের কথা কী করে জানল?

জোজো বলল, ঠাকুর সিং নাকি খুব বীরপুরুষ। তলোয়ার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ঠিক যাত্রাদলের সেনাপতির মতন। কাকাবাবু মাত্র পাঁচ মিনিট লড়ে ওর হাত থেকে তলোয়ারটা উড়িয়ে দিলেন। তারপর থেকে আর ঠাকুর সিং কাকাবাবুর চোখের দিকে তাকাতেই সাহস পায়নি, লক্ষ করেছিলি?

সন্তু বলল, ঠাকুর সিংয়ের তো প্রাণ বেঁচে গেল কাকাবাবুর দয়ায়।

জোজো বলল, ভারী তো বীর! বনগাঁয়ে শিয়াল রাজা!

তিনজনে হোহো করে হেসে উঠল একসঙ্গে।

একটা গাড়ি থেমে চেকপোস্টে নম্বর লেখাচ্ছিল। দুজন লোক ওদের কথা শুনে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এল। একজন হিন্দিতে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কার কথা বলছেন? কোন ঠাকুর সিং?

জোজো অবজ্ঞার সঙ্গে বলল, এই তো এখানকার ঠাকুর সিং। যার বাড়ির নাম রূপ মঞ্জিল। আমাদের কাকাবাবুর সঙ্গে লড়তে এসেছিল, হেরে ভূত হয়ে গেছে।

লোকটি বলল, কাকাবাবু কে?

জোজো উত্তর দিল, রাজা রায়চৌধুরী! তাঁর নাম শুনলেই ঠাকুর সিং এখন ভয়ে কাঁপে।

মহিম বলল, আর এই যে ছেলেটি সন্তু, এ ঠাকুর সিংয়ের চ্যালা কতার সিংয়ের নাক ফাটিয়ে দিয়েছে এক ঘুসিতে।

জোজো বলল, সকালবেলা বেয়াদপি করতে এসেছিল। বাচ্চা ছেলেমেয়েদের ওপর যারা অত্যাচার করে, তাদের আমরা দারুণ শাস্তি দিই।

লোক দুটি অবাক হয়ে পরস্পরের দিকে তাকাল। এরকম কথা যেন তারা জীবনে শোনোনি।

এইরকম চলল বেশ কিছুক্ষণ। অনেক গাড়ির লোক এইসব কথা শুনে গেল। তাদের মুখে-মুখে আবার ছড়িয়ে গেল অনেক দূর।

চেকপোস্টে যে-লোকটি নম্বর লেখে সে এক সময় উঠে এসে বলল, এই, তোমরা এইসব কথা বোলো না। ঠাকুর সিং সাঙ্ঘাতিক লোক!

সন্তু বলল, আমরা তো মিথ্যে কথা কিছু বলছি না। যা সত্যি তাই বলছি।

জোজো বলল, ঠাকুর সিংয়ের বাড়িটা নাকি সিংহের গুহা ও বাংলায় একটা ছড়া আছে জানেন? সিংহের মামা আমি নরহরি দাস/ পঞ্চাশটা বাঘ আমার। এক-এক গ্রাস!

একটু পরে বাংলো থেকে একজন লোক এসে ওদের ডেকে নিয়ে গেল।

কাকাবাবু বললেন, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে আজ দুপুরটা সবাই ঘুমিয়ে নাও ভাল করে। রাত্তিরে আজ বেরোব। সারা রাত জাগতে হতে পারে।

জোজো জিজ্ঞেস করল, রাত্তিরে কোথায় যাব, কাকাবাবু?

কাকাবাবু বললেন, সেটা রাত্তিরেই ঠিক করব!

পাশাপাশি বিছানায় শুয়েও সন্তু-জোজোর ঘুম এল না অনেকক্ষণ। গল্পই চলতে লাগল। কাকাবাবু কিন্তু দিব্যি নাক ডেকে ঘুমোলেন। যেন তাঁর কোনও চিন্তাই নেই।

বিকেলে উঠে তিনি চা খেলেন দুবার।

সন্ধে-সন্ধের সময় ম্যানেজারকে ডেকে বললেন, আমাদের চারটে খাবারের প্যাকেট করে দিন। রাত্তিরে এখানে খাব না। জঙ্গলে যাব, জঙ্গলে বসে। খাব। আর আপনার এখান থেকে দু-একটা বালিশ-পাশবালিশ আর চাদর নিয়ে যাচ্ছি।

ম্যানেজার জিজ্ঞেস করল, জঙ্গলে বালিশ-চাদর নিয়ে কী করবেন?

কাকাবাবু বললেন, ঘুরে-ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলে একটুখানি শুয়ে নেব। জঙ্গলে শুয়ে থাকতে ভারী আরাম লাগে।

তারপর কাকাবাবু বাংলোর মালি, বেয়ারা, দরোয়ান প্রত্যেককে ডেকে-ডেকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, এখন জঙ্গলে কী কী জন্তু জানোয়ার আছে, কোথায় গেলে কোন্টা দেখা যায়। যেন তিনি সকলকে জানাতে চান যে, তিনি আজ সদলবলে জঙ্গল ঘুরতে যাচ্ছেন।

আটটার সময় বাকি তিনজনকে নিজের ঘরে ডেকে এনে বললেন, তৈরি হয়ে নাও, এবার বেরোব।

মহিমকে বললেন, কাল তুমি যেন কী কী অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছিলে ঠাকুর সিংয়ের লোকদের ঘায়েল করতে? ঘুমের ওষুধ, ক্লোরোফর্ম! নিয়ে নাও সঙ্গে, আজ কাজে লেগে যেতে পারে।

সবাই গাড়িতে ওঠার পর কাকাবাবু ম্যানেজারকে বললেন, ডান দিকে দু কিলোমিটার গেলে একটা সল্ট লিক আছে না? পাশে একটা পুকুর? সেইদিকে যাচ্ছি।

চেকপোস্টের কাছে এসে সেখানকার লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, সল্ট লিক আছে কোন্ দিকে? ওখানে কি একটা পুকুর আছে? জন্তু-জানোয়ার দেখার জন্য ওইটাই তো ভাল জায়গা, তাই না?

কাকাবাবু যেভাবে সবাইকে জঙ্গলে যাওয়ার কথা বলছেন, তাতে সন্তু আর জোজো দুজনেরই ধারণা হল, কাকাবাবু আসলে জঙ্গলে যাবেন না। ঠাকুর সিংয়ের বাড়ির দিকেই গোপনে যাবেন।

মহিম সেইদিকেই গাড়ি চালাচ্ছিল, কাকাবাবু বললেন, উই, ডান দিকে ঘোরো।

গাড়ি ঢুকে পড়ল জঙ্গলের মধ্যে। খানিক বাদে কাকাবাবু এক জায়গায় থামতে বললেন, সেখানে সত্যিই একটা পুকুর রয়েছে।

টর্চের আলো ফেলে-ফেলে কাকাবাবু আগে জায়গাটা পরীক্ষা করলেন ভাল করে। পুকুরের একদিকে একটা ভাঙা ঘাট, অনেক কাল আগে তৈরি হয়েছিল, বেশ চওড়া। সেই ঘাটের দুপাশে বড় বড় আমগাছ। একটু ফাঁকা জায়গায় একটা পাথর বসানো। এর মধ্যে নুন থাকে, জন্তু-জানোয়াররা এসে সেই নুন চাটে।

সব দেখে সন্তুষ্ট হয়ে কাকাবাবু অন্যদের ডেকে বললেন, শোনো, আমি একটা প্ল্যান করেছি। এখানে একটা ফাঁদ পাতব। আজ যা কাণ্ড ঘটেছে, তাতে ঠাকুর সিং তার দলবল নিয়ে আমাদের খুঁজতে আসবেই। প্রথমে যাবে বাংলোতে, সেখানে না পেয়ে খবর শুনে ঢুকবে এই জঙ্গলে। ওকে ওর বাড়ির বাইরেই পেতে চাই, না হলে জব্দ করা যাবে না। আমাদের লুকিয়ে থাকতে হবে। সন্তু আর জোজো থাকবে গাছের ওপর। মহিম শুয়ে থাকবে গাড়ির তলায়। মোটর মিস্তিরিরা যেমন তলায় শুয়ে থাকে, সেইভাবে। কিন্তু তার আগে দেখতে হবে, ওরা কজন আসে। দুজন কিংবা তিনজন পর্যন্ত হলে ঠিক আছে। বেশি যদি হয়। দশ বারোজনের দল হলে আমরা কিছুই করতে পারব না। ওরা এলোপাথাড়ি গুলি চালাবে। যদি সেরকম বড় দল দেখি, আমরা কোনও সাড়াশব্দ করব না। গাড়ির হেডলাইট জ্বালা থাকবে, ওরা দেখবে ফাঁকা গাড়ি। তখন নিশ্চয়ই ভাববে যে, আমরা পাড়ি এখানে রেখে পায়ে হেঁটে জঙ্গলের মধ্যে গেছি। ওরা সেদিকে খুঁজতে গেলেই আমরা সুযোগ বুঝে গাড়িতে চেপে পালাব।

সন্তু জিজ্ঞেস করল, আর যদি দু-তিনজন আসে?

কাকাবাবু বললেন, তা হলে আমি ধরব ঠাকুর সিংকে। তাকে নিয়ে তোদের চিন্তা করতে হবে না। বাকি লোক দুটোকে ধরবে সন্তু আর জোজো। আর মহিম, তুমি তোমার ক্লোরোেফর্মের শিশিটা কাজে লাগিও, চটপট সবাইকে অজ্ঞান করে ফেলবে। আমরা তো আর মানুষ খুন করব না, অজ্ঞান করে ধরে নিয়ে যাব!

পর পর তিনজনের মুখের দিকে তাকিয়ে কাকাবাবু আবার বললেন, কিন্তু মনে রেখো, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সাবধানতা আর লুকিয়ে থাকা। ওরা যেন কোনওক্রমেই প্রথমে আমাদের দেখতে না পায়। আর যদি বড় দল আসে, তা হলে আমাদের পালাতে হবে। কোনওরকম হঠকারিতার পরিচয় দিলে চলবে না। আর একটা কথা, আমি যখন বলব, এইবার। ঠিক তখনই তোমরা অ্যাকশন শুরু করবে। তার আগে আমি যাই বলি, এমনকী তোমাদের নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেবে না। পালাবার দরকার হলেও আমি বলব, এইবার!

মহিম জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা সার, গাড়ির তলায় শুয়ে থাকার চেয়ে আমি গাড়ির ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারি না?

কাকাবাবু বললেন, ওরা এসে গাড়ির ভেতরটা খুঁজে দেখবেই। তোমাকে দেখামাত্র গুলি করবে। গাড়ির তলায় সাধারণত কেউ খুঁজে দেখে না।

মহিম বলল, তা হলে আমিও কোনও গাছের ওপর লুকিয়ে থাকব। গাড়ির তলায় শুতে আমার বিচ্ছিরি লাগে।

কাকাবাবু বললেন, ঠিক আছে তাই-ই থাকো। কতক্ষণ থাকতে হবে তার ঠিক নেই। একেবারে নিশ্বাস বন্ধ করে, নট নড়নচড়ন হয়ে থাকার দরকার নেই। একটু নড়াচড়া করতে পারো। ওরা জানান দিয়েই আসবে। তবে কথা বলার দরকার নেই। যে-যার খাবার গাছের ওপর বসেই খেতে পারো, কিংবা আগেই খেয়ে নিতে পারো। তোমরা উঠে পড়ো গাছে, আমি আমার কাজ শুরু করি।

সন্তু জোজোকে জিজ্ঞেস করল, তুই গাছে উঠতে পারিস তো?

জোজো বলল, ইজি। আফ্রিকায় আমি বহুবার গাছে উঠেছি, এক-একটা পঞ্চাশ-ষাট ফুট উঁচু।

সন্তু বলল, তা হলে ওঠ তুই আগে।

জোজো বলল, প্রথমটায় তুই একটু ঠেলে দে!

একটা ঝাঁকড়া মতন আমগাছের গুঁড়ি জড়িয়ে ধরল জোজো। সন্তু ঠেলে দিল পেছন থেকে। জোজো ঘঁচোড়-প্যাচোড় করে খানিকটা উঠে গিয়ে পড়ে গেল ধপাস করে। গাছটা পুকুরের দিকে একটু বাঁকা। জোজো পড়ে গিয়ে পুকুরের ধার দিয়ে গড়াতে লাগল জলের দিকে।

জোজো প্রাণভয়ে চেঁচিয়ে উঠল, ওরে বাবা রে, ধর, ধর আমাকে, ড়ুবে য়ার, ড়ুবে যাব।

সন্তু দৌড়ে গিয়ে তাকে টেনে তুলল।

তারপর জিজ্ঞেস করল, ড়ুবে যাবি মানে?তুই সাঁতার জানিস না? তুই যে বলেছিলি, তুই ভূমধ্যসাগরে সাঁতার কেটেছিস?

জোজো সঙ্গে-সঙ্গে উত্তর দিল, সে তো দিনের বেলায়। রাত্তিরবেলা আমি সাঁতার কাটি না।

তারপর আবার গাছটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, অনেকদিন প্র্যাকটিস নেই তো। একটু ভাল করে ধর আমাকে।

এবার জোজো কোনওরকমে উঠে ওপরের একটা ডালে গিয়ে বসল।

সন্তু তরতর করে উঠে গেল তার পাশের গাছে।

জোজো বলল, তোর তো বেশ প্র্যাকটিস আছে দেখছি। রোজ গাছে চাপিস বুঝি?

সন্তু বলল, রোজ গাছে চাপব, আমি কি বানর নাকি?

জোজো বলল, তুই নিজেই তো সেটা প্রমাণ করলি!

কাকাবাবু বললেন, উহুঁ! আর কথা নয়। শোনো, দু-একটা জন্তু-জানোয়ার জল খেতে কিংবা নুন খেতে আসতে পারে, তখনও কথা বোলো না, কোনও শব্দ কোরো না।

মহিমও স্বচ্ছন্দেই উঠে পড়ল আর-একটা গাছে।

কাকাবাবু কাজে বসলেন। তোশক, বালিশ, চাদর মুড়ে, দড়ি দিয়ে বেঁধে চটপট একটা মানুষের মতন আকৃতি বানিয়ে ফেললেন। সেটার গায়ে পরিয়ে দিলেন নিজের একটা জামা। সেটাকে বসিয়ে দিলেন ঘাটের একপাশে। একটু দূর থেকে দেখে মনে হবে, একজন মানুষ যেন ঘাটে বসে পুকুরের শোভা দেখছে। পুকুরের মাঝখানে রয়েছে একরাশ শালুক আর পদ্মফুল।

ঘাটের অন্য ধার থেকে নীচে নেমে একটা ঝোপের মধ্যে বসে রইলেন কাকাবাবু।

এর পর শুধু অপেক্ষা।

গাড়ির হেডলাইট দুটো জ্বলছে। সেদিকে দেখা যাচ্ছে জঙ্গলের খানিকটা। অন্যদিকও পুরোপুরি অন্ধকার নয়। আকাশ সামান্য মেঘলা, তবু জ্যোৎস্না। আছে। এদিক-ওদিক উড়ছে অসংখ্য জোনাকি। যেগুলো নিচুর দিকে, সেগুলোকে মনে হয় কোনও জন্তুর চোখ। কিংবা সত্যিই কোনও-কোনও ছোটখাটো জন্তু ঘুরছে, তাদের চোখ দেখে মনে হচ্ছে জোনাকি।

একটু বাদে গাছ থেকে ফল পড়ার মতন দুটো শব্দ হল। জোজো আর সন্তুর খাবারের ঠোঙা। কাকাবাবু নিজের খাবারটাও খেয়ে নিলেন। এর পর আর খাওয়া যাবে কি না কে জানে! স্যান্ডুইচ আর মুরগি ভাজা। ফ্লাস্কে চা কিংবা কফি আনলে হত। আগে এ কথাটা মনে পড়েনি!

ঘণ্টাখানেক বাদে জঙ্গলের মধ্যে খচমচ শব্দ হল। কেউ যেন সাবধানে হাঁটছে। কিন্তু দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যে কেউ এদিকে এল না। হঠাৎ তড়বড়-তড়বড় করে ছুটে এল তিনটে হরিণ। ঘাটের কাছে এসে থমকে দাঁড়াল। জলে নামল না, গাড়িটার দিকে সন্দেহজনকভাবে তাকিয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত। তারপর ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলে গেল।

এর পর এল দুটো শুয়োর। তারা গাড়িটা গ্রাহ্য করল না, এসেই জল খাওয়া। শুরু করে দিল। একটা শুয়োর ফিরল কাকাবাবুর দিকে। নাকটা উঁচু করে গন্ধ শোঁকার চেষ্টা করল। কী যেন বুঝে সে কয়েকটা লাফ মেরে মিলিয়ে গেল জঙ্গলের মধ্যে। অন্যটাও গেল তার পিছু পিছু।

কাকাবাবু ভাবলেন, এও তবু ভাল। হরিণ, শুয়োর ঠিক আছে। আজ একটা বাঘ এসে পড়লেই মুশকিল। বাঘ ঠিক মানুষের গন্ধ পেয়ে যাবে। মানুষ দিয়ে যদি ডিনার সারতে চায়? রিভলভার দিয়ে তো বাঘ মারা যাবে না। ভয় দেখানো যেতে পারে। কিন্তু তা হলেই ভেস্তে যাবে সব প্ল্যান।

খুব কাছেই কাকাবাবু একটা সম্সর শব্দ পেলেন। বেশ বড় একটা সাপ। কাকাবাবু নিশ্বাস বন্ধ করে অসাড় হয়ে গেলেন। তাঁর গায়ের ওপর দিয়ে সাপ। চলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। নড়াচড়া না করলে সাপ কামড়াবে না।

সাপটা কামড়াল না বটে, কিন্তু সেখান থেকে যেতে যেন প্রায় এক ঘণ্টা লাগিয়ে দিল।

অসহ্য উৎকণ্ঠা আর প্রতীক্ষা।

কাকাবাবুর ঘড়ি অন্ধকারে জ্বলে। তিনি দেখলেন রাত সাড়ে এগারোটা। এভাবে থাকা খুবই কষ্টকর। সন্তু-জোজোরা গাছের ওপর ঘুমিয়ে পড়লে ধপাস করে পড়ে যাবে নীচে। কাকাবাবু ঠিক করলেন আর এক ঘণ্টা দেখে ফিরে যাবেন। ঠাকুর সিং যদি সত্যি ভয় পেয়ে থাকে, তা হলে তাড়া করে আসবে না।

মিনিট পনেরো বাদে পাওয়া গেল জিপের আওয়াজ। এদিকেই আসছে।

কাকাবাবুদের গাড়িটা থেকে খানিকটা দূরে থামল জিপটা। একটুক্ষণ অপেক্ষা করল। তারপর তোক নামতে লাগল। দুজন। রাইফেল উঁচিয়ে এগিয়ে এসে গাড়িটার ভেতরে, চারপাশে উঁকিঝুঁকি দিল।

কাকাবাবু ধরে নিলেন, জিপে একজন ড্রাইভার থাকতে পারে। তা হলে মোট তিনজন। ঠিক আছে। ওদের মধ্যে ঠাকুর সিংকে চেনা যাচ্ছে।

গাড়িটা ছেড়ে যখন ওরা ঘাটের কাছাকাছি এসেছে, তখন কাকাবাবু চেঁচিয়ে উঠলেন, সন্তু, জোজো, কোথায় গেলি! এবার ফিরে আয়!

সঙ্গে-সঙ্গেই ঠাকুর সিং রাইফেল তুলে গুলি চালাল দুবার।

কাকাবাবু আঃ বলে তীব্র, কাতর আর্তনাদ করলেন।

ঠাকুর সিং বলল, খতম!

গর্বের সঙ্গে সে রাইফেলের নলে দুবার ফুঁ দিল।

সঙ্গের লোকটা জিজ্ঞেস করল, লাশটা ওখানেই ফেলে রেখে যাব?

ঠাকুর সিং প্রথমে বলল, এখানে টেনে নিয়ে আয়।

পরের মুহূর্তে মত বদলে ফেলে বলল, না থাক। ওখানেই থাক। লাথি মেরে পানিতে ফেলে দে।

লোকটি বলল, সেই ছোকরা দুটো গেল কোথায়?

ঠাকুর সিং বলল, আসবে। গুলির শব্দ শুনেছে, এবার আসবে!

লোকটি নিজের গায়ের ঝাল মেটাবার জন্য আর একটা গুলি চালাল বালিশের মূর্তিটার ওপর। তারপর রাইফেলটা কাঁধে ঝুলিয়ে এগিয়ে এল ঘাটের দিকে লাশে লাথি মারার জন্য।

কাকাবাবু চিৎকার করলেন, এইবার!

ঠাকুর সিং চকিতে রাইফেল তুলে পাশ ফিরতেই তার কপালে ঠেকল রিভলভারের নল। একটা বজ্রকঠিন স্বর শোনা গেল, রাইফেলটা ফেলে দাও। না হলে তোমার মাথায় যেটুকু ঘিলু আছে, তা এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে!

গাছ থেকে ততক্ষণে ঝপাঝপ করে লাফিয়ে পড়েছে সন্তু, জোজো, মহিম।

অন্য লোকটা কতার সিং। সে আর রাইফেল নামাবার সময় পায়নি। সন্তু লাফিয়ে পড়েছে তার ঘাড়ে। জোজো এসে তাকে জাপটে ধরল।

মহিম একটা রুমালে জবজবে করে ক্লোরোফর্ম ভিজিয়ে নিল। উত্তেজনার চোটে ছুটে এসে এত জোর ধাক্কা দিল ঠাকুর সিংকে যে, সে চিত হয়ে পড়ে গেল মাটিতে। মহিম প্রায় তার বুকের ওপর চেপে বসে নাকের কাছে রুমালটা ঠেসে ধরল।

ঠাকুর সিং খানিকটা লড়বার চেষ্টা করেও পারল না। কাকাবাবু তাকে ভয় দেখাবার জন্য পায়ের কাছে একটা গুলি করলেন। ক্লোরোফর্মের ঘোরে একটুক্ষণের মধ্যেই সে নেতিয়ে পড়ল।

কর্তার সিংয়ের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছে সন্তু আর জোজো।

কাকাবাবু সেদিকে তাকালেন না। তিনি রিভলভারটা উঁচিয়ে রইলেন জিপটার দিকে।

কিন্তু সেখান থেকে কেউ নামলও না, গুলিও ছুটে এল না। এই দুজনেরই একজন জিপ চালিয়ে এসেছে? ভেবেছিল, দু খানা রাইফেলের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না।

মহিম এবার সন্তু আর জোজোর পাশে গিয়ে কর্তার সিংকেও অজ্ঞান করে ফেলল।

কাকাবাবু তবু জিপটার দিকে এগিয়ে গেলেন। একটা ক্রাচ রেখে, শুধু একটাই ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটছেন, অন্য হাতে উদ্যত রিভলভার।

জিপের চালকের আসনে বসে আছে একজন লোক। স্থিরভাবে চেয়ে আছে। ভয়ে তার মুখখানা ময়লা কাপড়ের মতন হয়ে গেছে। সে ভেবেছে, রাইফেলের গুলি খেয়েও কাকাবাবু মরেননি।

সেই লোকটির কাছে বন্দুক-পিস্তল নেই, রয়েছে একটা রামদা, কিন্তু ভয়ের চোটে সেটাও সে তুলতে পারছে না।

কাকাবাবু আদেশ করলেন, নেমে এসো?

লোকটি অমনই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল।

কাকাবাবু চেঁচিয়ে বললেন, মহিম, এদিকে এসো তো। এই লোকটাকেও অজ্ঞান করে দাও।

লোকটি ভেউ-ভেউ করে কেঁদে ফেলল, হাতজোড় করে বলল, আমি কিছু করিনি, আমাকে মারবেন না। আমি কোনও দোষ করিনি।

কাঁদতে কাঁদতে সে বসে পড়ল হাঁটু গেড়ে।

মহিম দৌড়ে এল এদিকে। ক্লোরোফর্ম ভেজানো রুমালটা চেপে ধরল এর নাকে। লোকটি বাধা দেওয়ার চেষ্টাই করল না। ঢুলে পড়ল প্রায় সঙ্গে-সঙ্গে।

কাকাবাবু বললেন, বাঃ! তেমন কিছু ঝাট হয়নি। ফাঁদটা ভালই পাতা হয়েছিল, কী বলো?

জোজো বলল, সত্যি যদি আপনি ঘাটটায় বসে থাকতেন, তাহলে ঠাকুর সিং-পেছন থেকেই আপনাকে গুলি করত?

কাকাবাবু বললেন, ওরা তো সত্যি ভেবেই গুলি চালিয়েছে!

জোজো বলল, আমার ইচ্ছে করছে, ঠাকুর সিংয়ের মাথাটা নারকোলের মতন ফাটিয়ে দিতে।

কাকাবাবু বললেন, না, ঠাকুর সিংকে আমাদের দরকার। ওকে বেঁধে আমাদের গাড়িতে ভোলো। আর বাকি দুজনের কী হবে? এত লোকের তো জায়গা হবে না গাড়িতে।

মহিম বলল, ওরা এখানেই পড়ে থাক। যা ডোজ দিয়েছি, তিন-চার ঘণ্টার আগে জাগবে না।

কাকাবাবু বললেন, মাটিতে পড়ে থাকলে কোনও বুনো জানোয়ার কামড়ে দিতে পারে। ওদের জিপগাড়িটায় তুলে দাও।

সন্তুরা তিনজন সেইরকম ব্যবস্থা করে ফেলল।

কাকাবাবু গাড়িতে উঠে বললেন, এবার চলো ডালটনগঞ্জ!