০৩. চাঁদের কণা

কাকাবাবু পাথরটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে-দেখতে বললেন, হুঁ, এটাকে দেখতে তো একেবারে একটা সাধারণ পাথরের মতন। একটু কালচে-কালচে ধরনের। পূর্ণিমার রাত্তিরে আকাশের চাঁদ চকচক করে। দেখলে মনে হয়, ওর একটা টুকরোও অমন চকচকে হবে। সুন্দর-সুন্দর খোকা-খুকুদের মায়েরা আদর করে বলত, চাঁদের কণা!

সন্তু বলল, চাঁদের ওপর সূর্যের আলো পড়ে বলেই ওরকম চকচক করে।

কাকাবাবু বললেন, সে তো আজকাল ইস্কুলের ছেলেমেয়েরাও জানে। কিন্তু আকাশের দিকে তাকালে কি আর সে কথা মনে থাকে? চাঁদ নিয়ে এখনও কত কবিতা লেখা হয়। গান হয়। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো..। আসলে কিন্তু চাঁদের কোনও হাসিও নেই, নিজস্ব আলোও নেই। বৈজ্ঞানিকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এই চাঁদের পাথরে নতুন কোনও ধাতু কিংবা খনিজ পদার্থও নেই। চাঁদ তো আসলে পৃথিবীরই একটা টুকরো। এক সময় পৃথিবী থেকে একটা টুকরো ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছিল।

সন্তু বিজ্ঞের মতন বলল, এ-বিষয়ে অনেক থিয়োরি আছে।

কাকাবাবু বললেন, ওসব থিয়োরির কথা থাক। আচ্ছা জোজো, নীল আর্মস্ট্রং এই পাথরটা তোমায় কবে দিলেন?

জোজো বলল, এই তো গত মাসে। একুশে এপ্রিল।

কাকাবাবু বললেন, একুশে এপ্রিল? পয়লা এপ্রিল নয়?

জোজো বলল, কাকাবাবু, আপনি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন? এটা দেখতে সাধারণ পাথরের মতন হলেও মোটেও সাধারণ নয়। এটাকে সারাদিন রোদ খাওয়ালে রাত্তিরবেলা এর থেকে আলো ফুটে বেরোয়। ঠিক জ্যোৎস্নার মতন।

কাকাবাবু বললেন, বটে, বটে? তা হলে তো রাত্তিরবেলা দেখতে হচ্ছে।

এই সময় সিঁড়িতে বেশ ভারী পায়ের শব্দ হল। রঘু একজন বেশ বড়সড় চেহারার মানুষকে পৌঁছে দিয়ে গেল।

সন্তু এঁকে চেনে। ইনি ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের বড়কর্তা নাসির হোসেন। খুব গান ভালবাসেন। এক-একদিন সন্ধেবেলা কাকাবাবুর সঙ্গে গল্প করতে আসেন ইনি, অনেক গান গেয়ে শোনান, তখন ওঁকে দেখে জাঁদরেল পুলিশ অফিসার বলে মনেই হয় না।

কাকাবাবু বললেন, এসো নাসির, এসো! চা-টা খেয়ে এসেছ, না খাবে?

নাসির হোসেন বললেন, নাস্তা করে এসেছি। কী ব্যাপার, রাজাদা, আজ এত সকাল-সকাল তলব; আপনার বাড়িতে কিছু চুরিটুরি হয়েছে নাকি?

কাকাবাবু বললেন, না, না, সেসব কিছু না। তুমি নিশ্চয়ই আজ সকাল থেকেই ব্যস্ত?

নাসির হোসেন বললেন, আর বলেন কেন! কাল থেকেই কপালের ঘাম ছুটে যাচ্ছে। মিউজিয়াম থেকে চাঁদের পাথরটা চুরি হয়েছে জানেন তো? ওই পাথরটা আবার আমাদের সম্পত্তি নয়। আমেরিকান গভর্নমেন্ট এক মাসের জন্য ধার দিয়েছে, সাধারণ মানুষদের দেখবার জন্য। আবার ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে চুরি। উদ্ধার করতে না পারলে আমাদের মান-সম্মান সব যাবে।

কাকাবাবু বললেন, ওটা চোরেরা কেন নেবে? কী লাভ?

নাসির হোসেন বললেন, সেই তো! কোনও এক স্টুপিড চোরের কাণ্ড। সে ব্যাটা ওটাকে কোথাও বিক্রিও করতে পারবে না!

কাকাবাবু বললেন, তুমি তো সন্তুকে চেনো। আর এই ছেলেটি সন্তুর বন্ধু, ওর ডাকনাম জোজো, সবাই সেই নামেই চেনে, তবে কলেজের খাতায় ওর নাম রজত ভট্টাচার্য।

নাসির হোসেন যেন হঠাৎ ভূত দেখলেন। চোখ বড় বড় করে জোজোর দিকে তাকিয়ে রইলেন কয়েক মুহূর্ত।

তারপর আস্তে আস্তে বললেন, জোজো! রজত ভট্টাচার্য! প্রেসিডেন্সি কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র?

জোজো দুদিকে মাথা নাড়ল।

নাসির হোসেন মাথায় হাত দিয়ে বললেন, মাই গড! আমার ডিপার্টমেন্টের অন্তত দশজন অফিসার এর মধ্যে সারা শহরে এই ছেলেটিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

তারপর কাকাবাবুর দিকে ফিরে বললেন, জানেন রাজাদা, আজকের কাগজে খবরটা ছাপা হওয়ার পর অন্তত সাতজন আমাদের কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জানিয়েছে যে তারা জোজো ওরফে রজত ভট্টাচার্যের কাছে একটা চাঁদের পাথর দেখেছে। এখন চাঁদের পাথর তো আর রাস্তা-ঘাটে ছড়াছড়ি যায় না। কী করে ওই ছেলেটি পেল! কিন্তু যারা খবর দিয়েছে, তারা কেউ ছেলেটির ঠিকানা বলতে পারেনি। আজ কলেজ বন্ধ। আমি অর্ডার দিয়ে এসেছি, যে করে হোক আজই প্রেসিডেন্সি কলেজের অফিস খুলিয়ে, খাতাপত্র দেখে ছেলেটির ঠিকানা বার করতেই হবে।

কাকাবাবু চওড়াভাবে হেসে বললেন, তোমার অনেক ঝঞ্ঝাট বাঁচিয়ে দিলাম। তোমাকেও টেলিফোনে ডাকলাম। জোজোকেও এখানে আনিয়ে রেখেছি। এবার তোমরা কথাবার্তা বলে নাও!

জোজো কটমট করে তাকাল সন্তুর দিকে। সন্তু নিজেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না, কাকাবাবু জোজোকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য নাসির হোসেন সাহেবকে আসতে বলেছেন।

কাকাবাবু কোলের ওপর পাথরটা রেখেছিলেন। তুলে ধরে বললেন, এটাই। কি চাঁদের পাথর নাকি?

হঠাৎ খুশিতে ঝলমলে হয়ে গেল নাসির হোসেনের ফরসা মুখখানা।

তিনি হাত বাড়িয়ে বললেন, দিস ইজ ইট! দিস ইজ ইট! এই তো সেই পাথর। জিনিসটাও পাওয়া গেল! রাজাদা, আপনি কী উপকার যে করলেন! কলকাতা পুলিশের মান বাঁচালেন।

তারপর জোজোর দিকে ফিরে, মুখের চেহারা পালটে কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এটা কোথায় পেলে?

জোজো বলল, এটা আমার জিনিস?

তোমার জিনিস? এটা ছিল জাদুঘরে। কী করে তোমার হল?

জাদুঘরে অন্য একটা ছিল। এটা আমি পেয়েছি গত মাসে।

কে দিয়েছে?

আমার ছোটকাকার এক বন্ধু।

আজকাল বুঝি যে-সে চাঁদের পাথর বিলিয়ে বেড়াচ্ছে? জাদুঘর থেকে এই পাথরটা চুরি করার ব্যাপারে তোমার সঙ্গে আর কে-কে ছিল?

আমি চুরি করিনি। এটা আমার!

নাসির হোসেন কাকাবাবুর দিকে ফিরে বললেন, রাজাদা, আর দেরি করা যাবে না। এক্ষুনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে হবে। দিল্লিতে রিপোর্ট করতে হবে। এই ছেলেটিকে আমি অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাচ্ছি! চলো হে ছোকরা, ওঠো!

জোজো এতক্ষণ বেশ একটা তেজ দেখাচ্ছিল। এবার ভেঙে পড়ল।

ভাঙা-ভাঙা গলায়, প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, আমি চুরি করিনি। কাকাবাবু, বিশ্বাস করুন, আমি চুরি করিনি। আমার ছোটকাকার বন্ধু এটা ওড়িশা থেকে এনে দিয়েছেন।

নাসির হোসেন প্রচণ্ড ধমক দিয়ে বললেন, চোপ! ওড়িশায় চাঁদের পাথরের ছড়াছড়ি যাচ্ছে কবে থেকে?

জোজো বলল, আমার ছোটকাকার বন্ধুর নাম নীলমাধব বাহুবলীন্দ্র। সবাই তাকে নীল আর্মস্ট্রং বলে ডাকে। তিনি বলেছেন, এটা চাঁদের পাথর।

কাকাবাবু এবার হোহো করে হেসে উঠলেন, সন্তুর ঠোঁটেও আঁকা হল হাসির রেখা।

কাকাবাবু বললেন, বাহুবলী! আর্মস্ট্রং! হ্যাঁ। অনুবাদটা ঠিকই হয়েছে। আর পাথরটা যদি চন্দ্রভাগা নদীর ধার থেকে কুড়িয়ে আনা হয়, তা হলে চাঁদের পাথর বলা যেতেই পারে।

জোজো দু হাতে মুখ ঢেকে ফেলেছে।

নাসির হোসেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, রাজাদা, হয়তো এই ছেলেটি মিথ্যে কথাই বলেছে সবাইকে। কিন্তু এখন একে.অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আমার উপায় নেই। এর নাম যখন উঠেছে একবার…পাথরটাও টেস্ট করাতে হবে।

জোজো ড়ুকরে উঠে বলল, না, না, প্লিজ আমায় থানায় নিয়ে যাবেন না। আমার বাবা তা হলে আমাকে দারুণ বকবে। এই পাথরটায়…

নাসির হোসেন বললেন, আর কোনও কথা নয়। ওঠো, চলো! বাহুবলী!নীল আর্মস্ট্রং! দেখাচ্ছি মজা।

কাকাবাবু বললেন, দাঁড়াও, দাঁড়াও নাসির। অত ব্যস্ততা কিসের! মিউজিয়ামে চাঁদের পাথরের যে টুকরোটা ছিল, তার বর্ণনা তোমার কাছে আছে নিশ্চয়ই। কতটা বড়, কতটা ওজন…

।নাসির হোসেন বললেন, হ্যাঁ, রাজাদা, সবই আছে। তার সঙ্গে এই পাথরটাও মিলে যায়। পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা পাথর, ওজন পাঁচশো সত্তর গ্রাম।

কাকাবাবু বললেন, এক মিনিট বোসো। তিনি উঠে গিয়ে একটা আলমারি খুললেন।

কাকাবাবু শখের বিজ্ঞানচর্চা করেন বলে তাঁর কাছে কিছু কিছু যন্ত্রপাতি থাকে। আলমারি থেকে তিনি বার করলেন একটা ছোট্ট দাঁড়িপাল্লা। পেতলের তৈরি, গয়নার দোকানে যেরকম থাকে।

কাকাবাবু আপনমনে বললেন, কখন কোন জিনিসটা কাজে লাগে, বলা কী যায়! এই ব্যালান্সটা কিনেছিলাম হংকং থেকে, খুব শস্তায় পাওয়া গিয়েছিল..

নাসির হোসেনের হাত থেকে পাথরটা নিয়ে পাল্লার একদিকে চাপালেন, অন্যদিকে চাপাতে লাগলেন ছোট-ছোট বাটখারা। এক সময় দু দিকের পাল্লা সমান হতেই কাকাবাবু খুশিতে একটা শিস দিয়ে উঠলেন।

নাসির হোসেন এগিয়ে এসে ঝুঁকে পড়তেই কাকাবাবু বললেন, ভাল করে দেখে নাও। ছশো তিরিশ গ্রাম। মিউজিয়ামের পাথরটার চেয়ে এটা ভারী। এবারে তুমিই বলো, নাসির, একটা পাথরকে ভেঙে কিংবা ঘষে ঘষে ওজন কমানো যেতে পারে বটে, কিন্তু কোনওক্রমেই কি কোনও পাথরের ওজন বাড়ানো সম্ভব?

নাসিরসাহেব নিরাশভাবে একবার কাকাবাবুর দিকে, আর একার, জোজোর দিকে তাকালেন।

কাকাবাবু বললেন, চোর ধরা কি এত সোজা? মিউজিয়াম থেকে যারা চুরি করে তারা অত্যন্ত ধুরন্ধর চোর নিশ্চয়ই। তোমাকে আরও অনেক খাটতে হবে, নাসির!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাসির হোসেন জিজ্ঞেস করলেন, রাজাদা, আপনি আগে থেকেই জানতেন, তাই না?

কাকাবাবু বললেন, তোমাদের খানিকটা পরিশ্রম বাঁচিয়ে দিলাম। জোজোর ঠিকানা খুঁজে বার করা, তারপর ওকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেরা করা, এতে তোমাদের অনেক সময় নষ্ট হত।

নাসির হোসেন জোজোর দিকে ফিরে বললেন, তোমাকে থানায় যেতে হবে, কিন্তু এই পাথরটা আমি নিয়ে যাচ্ছি। পরে ফেরত পাবে?

নাসির হোসেনকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিল সন্তু। জোজো এখনও গুম হয়ে বসে আছে।

কাকাবাবু বললেন, চিয়ার আপ, জোজো! বেশ চমৎকার একখানা প্র্যাকটিক্যাল জোক করেছ! নীল আর্মস্ট্রং আর নীলমাধব বাহুবলী! এই নামে সত্যি কেউ আছে না তুমি বানিয়েছ? বানালে স্বীকার করতেই হবে যে তোমার বুদ্ধি আছে বটে!

সন্তু ফিরে এসে জিজ্ঞেস করল, জোজো, তুই নরওয়ের রাজার ফোন পেয়েছিলি?

জোজো এবার মুখ তুলে বলল, হ্যাঁ। ফোন করেছিলেন। কাজ হয়ে গেছে।

কাকাবাবু বললেন, নরওয়ের রাজা? তার নাম কী, নরেন্দ্র, না নরোত্তম?

আবার সিঁড়িতে পায়ের শব্দ হল। রঘু পৌঁছে দিয়ে গেল আর একজন আগন্তুককে।

লম্বা, ছিপছিপে চেহারা, নাকের নীচে তলোয়ারের মতন গোঁফ, ছাই রঙের সুট পরা, তার সঙ্গে মেরুন রঙের টাই। মাথার চুল নিখুঁতভাবে আঁচড়ানো।

কাকাবাবু রীতিমতন অবাক হয়ে গিয়ে বললেন, আরে, আজ পর-পর সব অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছে! এইমাত্র আমি নরেন্দ্র নামটা বললাম, অমনই সত্যি-সত্যি এক নরেন্দ্র এসে হাজির! এ কি ম্যাজিক নাকি?

সত্যিই এই আগন্তুকের নাম নরেন্দ্র ভার্মা। দিল্লিতে থাকেন, সি বি আই-এর এক বড় অফিসার। কাকাবাবুর সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব। একবার ত্রিপুরায় এঁর সঙ্গে দারুণ অ্যাডভেঞ্চার হয়েছিল। সন্তু আর নরেন্দ্র ভার্মা একটা সুড়ঙ্গের মধ্যে লুকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ।

নরেন্দ্র ভার্মা ঘরে ঢুকে বললেন, আমার সম্পর্কেই কথা হচ্ছিল বুঝি? কী খবর, সন্টুবাবু, কেমুন আছ? মা-বাবা সবাই বহাল তবিয়তে আছেন নিশ্চয়ই?

সন্তু জিজ্ঞেস করল, নরেন্দ্ৰকাকা, আপনি কলকাতায় কবে এলেন?

নরেন্দ্র ভার্মা বললেন, এই তো আসছি, বম্বে থেকে মর্নিং ফ্লাইটে। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা তোমাদের বাড়ি। রাজা, তোমার সঙ্গে আমার বহুত জরুরি দরকার আছে!

কাকাবাবু বললেন, বুঝেছি! চাঁদের পাথর চুরির খবর শুনেই তুমি ছুটে এসেছ!

নরেন্দ্র ভামা হেসে বললেন, ভুল বুঝেছ! বিলকুল ভুল। শালর্ক হোসের সঙ্গে তোমার কোনও মিল নেই!

কাকাবাবু বললেন, মিল নেই, তার কারণ আমি ডিটেকটিভ নই! জুতোর কাদা কিংবা সিগারেটের টুকরো নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। তুমি তা হলে চাঁদের পাথরের জন্য আসোনি?

নরেন্দ্র ভার্মা একটা চেয়ারে বসে পড়ে বললেন, ক্যালকাটার মিউজিয়াম থেকে চাঁদের পাথর চুরি গেছে আমি জানি। খুব সিরিয়াস ব্যাপার। কিন্তু সেটা নিয়ে এখানকার পুলিশ মাথা ঘামাবে। পুলিশের কেস। আমার কোনও দায়িত্ব নেই।

কাকাবাবু বললেন, একটু আগে এলে ওই চাঁদের পাথর নিয়ে একটা মজার ব্যাপার দেখতে পেতে এখানে?

নরেন্দ্র ভার্মা বললেন, এখুন আমার মজা-টজা দেখার সময় নেই। মাথার ওপর বিরাট দায়িত্ব, তোমার সাহায্য চাই রাজা।

কাকাবাবু বললেন, সমস্যাটা কী শুনি!

নরেন্দ্র ভার্মা বললেন, আরে, এয়ারপোর্ট থেকে সিধা আসছি। কিছু চা-টা খাওয়াবে না? সনটু, তোমার মা নারকোলের নাড় বানাননি? ওটা আমার খুব ভাল লাগে!

সন্তু দৌড়ে নীচে গিয়ে একটা প্লেটে লুচি, আলুর দম আর কয়েকটা নারকোল-নাড় নিয়ে এসে বলল, এগুলো খান। চা আসছে।

লুচিগুলো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, তাই-ই বেশ উপভোগ করে খেলেন নরেন্দ্র ভার্মা। এক-একটা নারকেল নাড় আস্ত-আস্ত ছুড়ে-ছুড়ে মুখে ফেললেন। তারপর এক গেলাস জল খেয়ে কাকাবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন, রাজা, তুমি বললে তোমার এখানে একটু আগে চাঁদের পাথরটা নিয়ে একটা মজা হয়েছে। তুমি কি ওই কেসটা নিয়েছ নাকি?

কাকাবাবু খানিকটা ধমকের সুরে বললেন, ধ্যাত! চোর ধরা কি আমার কাজ? তা হলে পুলিশ রয়েছে কেন?

তবে যে তুমি বললে?

সে অন্য মজা। পরে শুনবে। এখন তোমার সমস্যাটা বলো।

পাথরটা পাওয়া গেছে?

না।

ওটা পাওয়া না গেলে খুব মুশকিল হবে। আমেরিকার গভর্নমেন্ট সহজে ছাড়বে না।

নরেন্দ্র, তুমি কিন্তু পাথরটা নিয়েই কথা বলছ! ঠিক আছে, রাজা! আমার পয়েন্টে আসছি। পাথর চুরি গেলে আবার পাওয়া যায়, পাথর সহজে নষ্ট করা যায় না। কিন্তু আমার সমস্যা একটা মানুষকে নিয়ে। একটা মানুষ হারিয়ে গেছে।

পৃথিবীতে রোজ অনেক মানুষই তো হারাচ্ছে। নরেন্দ্র, তুমি মাথা ঘামাচ্ছ একজন বিশেষ মানুষকে নিয়ে। সাইমন বুবুম্বা।

জোজো বইয়ের র্যাকের সামনে দাঁড়িয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকার

পাতা ওলটাচ্ছিল, ওই নামটা শুনে চমকে তাকাল।

সন্তুও চোখাচোখি করল জোজোর সঙ্গে।

নরেন্দ্র ভার্মা বললেন, রাজা, তুমি সাইমন বুবুম্বার কথা শুনেছ?

কাকাবাবু বললেন, কাগজে পড়েছি। গ্র্যান্ড হোটেল থেকে রহস্যময়ভাবে উধাও হয়ে গেছেন। ওঁর সঙ্গীরা কিছু বলতে পারছে না। তাইতে মনে হয়, ওঁকে জোর করে কোথাও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

নরেন্দ্র ভার্মা বললেন, হুঁ, মোটামুটি এইটুকুই জানানো হয়েছে বাইরে। কিন্তু কেসটা অত্যন্ত জটিল। আফ্রিকার একটা দেশের নাম মুরুণ্ডি। ছোট দেশ, লেকিন খুব শক্তিশালী দেশ। পেট্রোল আছে অনেক, তাই অত্যধিক ধনী। সেখানকার প্রেসিডেন্টের ভাই এই সাইমন বুবুম্বা। খুব পাওয়ারফুল ম্যান। সবাই জানে, তিনিই হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। এই সাইমন বুবুম্বা আমাদের দেশে এসেছেন একটা চুক্তি সই করতে।

কাকাবাবু বললেন, জানি। ওদের দেশে তামা আর লোহা পাওয়া যায় না। ওরা ইণ্ডিয়া থেকে তামা আর লোহা কিনবে, তার বদলে দেবে পেট্রোল। এই তো?

নরেন্দ্র ভার্মা বললেন, পাঁচশো কোটি ডলারের চুক্তি। ইণ্ডিয়ার খুব লাভ হবে। সব ঠিকঠাক। এর মধ্যে আমাদের অর্থমন্ত্রীর বেমারি হয়ে গেল। মানে অসুস্থ। বিদেশ মন্ত্রী এখন বিদেশে। সাইমন বুবুম্বা বললেন, কুছ পরোয়া নেহি। অর্থমন্ত্রী সেরে উঠুক, তার মধ্যে আমি কয়েকদিন দার্জিলিংয়ের ঠাণ্ডা খেয়ে আসি। সেইজন্য এলেন কলকাতায়। তারপরেই এই কাণ্ড। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে-করে হোক, তাঁকে খুঁজে বার করতেই হবে!

কাকাবাবু বললেন, দার্জিলিংয়ে খোঁজ করেছ? হয়তো একা-একা সেখানে চলে গেছেন!

নরেন্দ্র ভার্মা বললেন, দার্জিলিংয়ে নেই। তিনি আমাদের সরকারের মাননীয় অতিথি। একা-একা কোথাও যেতে পারেন না। সরকারের লোক তাঁকে নিয়ে যাবে, সঙ্গে সিকিউরিটি গার্ড থাকবে। কিন্তু কী হল, কারা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেল। গ্র্যান্ড হোটেলে তাঁর ঘরে ফোঁটা-ফোঁটা রক্তের দাগ। সাইমন বুবুম্বার বয়েস বেশি না, গায়েও খুব জোর। সহজে কেউ ধরে নিয়ে যেতে পারবে না। নিশ্চয়ই তাকে চোট দিয়েছে, মেরে আহত করেছে, তারপর ধরে নিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে রক্ত, কতটা চোট দিয়েছে কে জানে!

কাকাবাবু খানিকটা উদাসীনভাবে বললেন, হুঁ! কিন্তু এ ব্যাপারে আমি কী করতে পারি বলো তো?

নরেন্দ্র ভার্মা বললেন, তোমাকে সাহায্য করতেই হবে।

কাকাবাবু বললেন, কিন্তু এসব তো পুলিশের কাজ। মানুষ খোঁজা কি আমার পক্ষে সম্ভব নাকি? খোঁড়া পা নিয়ে আমি কি দৌড়াদৌড়ি করতে পারি?

রাজা, তোমাকে সাহায্য করতেই হবে। এটা শুধু আমার কাজ নয়, এটা দেশের কাজ। সাইমন বুবুম্বার কোনও ক্ষতি হলে আমাদের দেশেরও বহুত ক্ষতি হয়ে যাবে?

সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু এটা ঠিক আমার কাজ নয়। ভাল-ভাল পুলিশ অফিসারের সাহায্য নাও।

তোমাকে দৌড়োদৌড়ি করতে হবে না। তুমি স্রেফ একটা ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করো। যারা ধরে নিয়ে গেছে, তারা যেন বুবুম্বাকে চট করে মেরে না ফেলে। যতদিন সম্ভব তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

সেটাই বা আমি কী করে পারব?

কালই চিঠি এসেছে যে, বুবুম্বার মুক্তির জন্য এক কোটি ডলার চাই সাতদিনের মধ্যে। না হলে তাকে মেরে ফেলা হবে। এই এক কোটি ডলার কে দেবে? ওঁর দেশের প্রেসিডেন্ট, ওঁর বড় ভাই ফোনে জানিয়ে দিয়েছেন, টাকা তিনি দেবেন না। ইন্ডিয়াতে এই কাণ্ড হয়েছে, ইন্ডিয়া গভর্নমেন্টকে টাকা দিতে হবে। এদিকে আমাদের দেশে কোনও বন্দিকে মুক্ত করার জন্য টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। সরকার তা দিতে পারে না। মহা বিপদ। অথচ সাতদিন মাত্র সময়। এর মধ্যে যেভাবে হোক, বুবুম্বাকে খুঁজে বার করে উদ্ধার করতে হবে। বুবুম্বাকে যদি মেরে ফেলে, তা হলে সব দোষ হবে আমাদের। সরকারের।

টাকাটা কে চেয়েছে? কোনও বিপ্লবী দল নিশ্চয়ই?

কোনও নাম নেই। লেখা আছে যে, টাকাটা জমা দিতে হবে নেপালে। একটা কাপড়ের দোকানে। সে দোকানদার বলেছে, সে কিছু জানে না। চিঠিটা যে খাঁটি, তার প্রমাণ আছে। চিঠিটার এককোণে সাইমন বুবুম্বার সই আছে, বোেঝাই যায় যে তাঁকে দিয়ে জোর করে সই করানো হয়েছে।

তোমরা কি ঠিক করেছ, নেপালে টাকাটা জমা দেওয়ার ছুতো করে ফাঁদ পেতে ওদের ধরবে আর বুবুম্বাকে উদ্ধার করবে?

তার উপায় নেই। টাকাটা দিতে হবে রাত একটায়। ওরা বুবুম্বাকে ছাড়বে পরের দিন সকালে। টাকা দেওয়ার সময় লোকটাকে ধরলেই বুবুম্বাকে মেরে ফেলবে।

এবার সত্যি করে বলো তো নরেন্দ্র, আমার কাছে কী চাও? এর মধ্যে আমার তো কোনও ভূমিকা দেখছি না।

তোমার খুব জরুরি ভূমিকা আছে। তোমাকে একবার মেজর ঠাকুর সিং-এর সঙ্গে দেখা করতে হবে। ওর সঙ্গে কথাবার্তা বলে একটু বাজিয়ে দেখতে হবে।

মেজর ঠাকুর সিং! সে কে? নামটা বেশ চেনা লাগছে। তার সঙ্গে এই ঘটনার কী সম্পর্ক?

মেজর ঠাকুর সিং বিহারের মস্ত বড় জমিদার। অনেক টাকার মালিক। একবার নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিলেন। লোকটা সুবিধের নয়, কিন্তু ওকে ধরা-ছোঁওয়া যায় না। তোমার মনে আছে, সাত-আট মাস আগে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত নিখোঁজ হয়েছিল, সেবারেও টাকা চাওয়া হয়েছিল। শেষপর্যন্ত টাকা দিতে হয়নি, বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত নিজেই একজন গুণ্ডার হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে গুলি চালায়। একজন গুণ্ডাকে মেরে পালিয়ে আসে। যে গুণ্ডাটা মরেছিল, সে ওই মেজর ঠাকুর সিং-এর দলের লোক। কিন্তু ঠাকুর সিং পুরোপুরি অস্বীকার করে। সে বলেছিল, ও লোকটাকে চেনে না, জীবনে কখনও দেখেনি। শেষপর্যন্ত কিছু প্রমাণ করা যায়নি। আমাদের ধারণা, মেজর ঠাকুর সিং এই কারবার করে। ওর বিশাল বাড়ি। সাইমন বুবুম্বাকে ওর বাড়িতে আটকে রাখা আশ্চর্য কিছু নয়। আমরা একটা নামহীন উড়ো চিঠি পেয়েছি, তাতেও বলা হয়েছে যে, সাইমন বুবুম্বার নিরুদ্দেশ হওয়ার সঙ্গে ঠাকুর সিংয়ের সম্পর্ক আছে।

পুলিশ নিয়ে ওঁর বাড়ি সার্চ করলেই তো হয়।

খুব সাবধানে আমাদের এগোতে হবে, রাজা! যে-কোনও উপায়ে সাইমন বুবুম্বাকে প্রাণে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ঠাকুর সিং অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক। আমরা একটু বাড়াবাড়ি করলেই বুবুকে ও খুন করে ফেলতে পারে। সেইজন্যই আমরা চাইছি, তুমি গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করো। তোমার কথা ও শুনবে।

কেন, আমার কথা ও শুনবে কেন? আমার সঙ্গে দেখাই বা করবে কেন?

তোমার সঙ্গে তো ওর আগেই পরিচয় আছে।

কবে আবার পরিচয় হল?

আমাদের কাছে সব রিপোর্ট থাকে। তোমার সঙ্গে মেজর ঠাকুর সিংয়ের দেখা হয়েছে দুবার। একবার কলকাতা থেকে তোমরা দুজনে প্লেনে পাশাপাশি সিটে বসে দিল্লি গিয়েছিলে। তোমার সঙ্গে ঠাকুর সিংয়ের অনেক কথা হয়েছিল, সে তোমাকে কিসমিস আর পেস্তাবাদাম খেতে দিয়েছিল।

আমি কবে প্লেনে কার পাশে বসে গেছি, সে খবরও সি বি আই জানে নাকি?

জানতে হয়, আমাদের অনেক কিছু জানতে হয়। তোমাকে ফলো করিনি, ঠাকুর সিংকে তখন আমাদের একজন লোক ফলো করছিল। ঠাকুর সিং তোমার এ বাড়িতেও এসেছে। সিপাহি বিদ্রোহের আমলের একখানা দলিল দেখাতে। ওর ধারণা, ওই দলিলে গুপ্তধনের সন্ধান আছে। তুমি অবশ্য বিশেষ পাত্তা দাওনি। তুমি বলেছিলে, গুপ্তধনটন খোঁজা তোমার কাজ নয়। রাজি হওনি, তবে খারাপ ব্যবহার করোনি ওর সঙ্গে। ওকে অপমান করলে ও ঠিক প্রতিশোধ নিত। সুতরাং ঠাকুর সিং তোমাকে অপছন্দ করে না।

এতক্ষণে মনে পড়েছে লোকটার কথা। বিরাট ষণ্ডা-গুণ্ডার মতন চেহারা। কিন্তু কথাবার্তা বলে বেশ ভদ্রভাবে। তুমি বলছ, ও খুব বড়লোক আর জমিদার। প্লেনে আমার পাশে বসে আমাকে বেশ খাতির করেছিল।

তুমি তখন নেপালে, এভারেস্টের পথে একটা বিদেশি গুপ্তচর চক্র আবিষ্কার করে তাদের ধ্বংস করে দিয়েছিলে, সমস্ত খবরের কাগজে তোমার নাম আর ছবি, তোমাকে ও চিনে ফেলেছিল।

ওর নাম মেজর ঠাকুর সিং কেন? ও কি কোনওদিন সেনাবাহিনীতে ছিল?

কস্মিনকালেও না। ওদের এক পূর্বপুরুষ ছিল সিপাহি বিদ্রোহের সময় এক নেতা। সে ভাল বন্দুক চালাত, অনেক ইংরেজ খতম করেছিল। সিপাহিরা তাকে ডাকত মেজরসাব। সেই থেকে ওই বংশের বড় ছেলেরা নিজেরাই নিজেদের মেজর বলে।

এই ঠাকুর সিং থাকে কোথায়?

তুমি পালামৌ জেলায় বেতলা জঙ্গলের কথা জানো নিশ্চয়ই। সেই বেতলা ফরেস্ট আর ডালটনগঞ্জ শহরের মাঝামাঝি একটা জায়গায় ঠাকুর সিংয়ের বিরাট প্যালেস। প্রায় একটা দুর্গই বলতে পারো। ওর নিজস্ব পাহারাদার বাহিনী আছে। স্থানীয় লোকেরা বলে, ওই বাড়িটা একেবারে সিংহের গুহা। অচেনা কেউ না বলেকয়ে ভেতরে ঢুকলে আর প্রাণ নিয়ে বেরোতে পারে না। সাইমন বুবুম্বাকে ওখানে আটকে রাখতে পারে!

সন্তু আর জোজো সব কথা শুনছে কান খাড়া করে।

সন্তু জোজোর পাশে গিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, তুই সাইমন বুবুষাকে সত্যি দেখেছিস?

জোজো বলল, হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্যি।

আবার দেখলে চিনতে পারবি?

নিশ্চয়ই পারব। আমাদের বাড়িতে এসেছে, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে।

দশখানা রজনীগন্ধা ডাঁটাসুন্ধু কাঁচা খেয়েছে?

এ কথার উত্তর না দিয়ে জোজো ফিক করে হাসল।

নরেন্দ্র ভার্মা কাকাবাবুকে বললেন, এবার আমাদের প্ল্যানটা বলি শোনো। আজই একটা গাড়িতে করে তোমাকে পাঠানো হবে রাঁচি। সেখানে একটু রেস্ট নিয়ে নেবে। তারপরই সিধা বেলতা ফরেস্ট। ফরেস্ট বাংলোতে তোমার নামে ঘর রিজার্ভ করা থাকবে। গাড়িটাও তুমি সব সময় ব্যবহার করতে পারবে। মনে হবে, তুমি জঙ্গলে বেড়াতে এস্নেছ, বিশ্রাম নিতে এসেছ। বেড়াতে বেড়াতে তুমি ঠাকুর সিংয়ের বাড়ির সামনে হঠাৎ হাজির হবে। তারপর ঠাকুর সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইবে।

কাকাবাবু বললেন, দেখা করার পর?

নরেন্দ্র ভার্মা বললেন, সেকথাও কি তোমাকে বলে দিতে হবে, রাজা? তুমি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য। সাইমন বুবুকে যেমন করে তোক বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর এক কোটি ডলার না দিয়ে উদ্ধার করতে হবে।

কাকাবাবু বললেন, এই প্রস্তাবের একটা অংশ আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে। বেতলার জঙ্গলে গিয়ে থাকা। অনেকদিন কোনও জঙ্গলে যাইনি। বেড়াতে যাবি নাকি রে, সন্তু?

সন্তু সঙ্গে-সঙ্গে উত্তর দিল, হ্যাঁ, যাব। জোজোও যাবে আমাদের সঙ্গে।