আর যুদ্ধ নয়

আর যুদ্ধ নয়

‘কার দিকে তুমি গুলি ছুঁড়ছো হে, এখানে সবাই মানুষ!’
তুমি কে, তুমি কি গ্রহান্তরের দলছুট?
তোমার কখনো ছিল না কি শৈশব?
তুমি কি কখনো দেখোনি মাটিতে ঘুমন্ত কোনো শিশু?
জানলার ধারে দাঁড়ানো, একলা, শুন্যদৃষ্টি নারী?
কার দিকে তুমি গুলি ছুঁড়ছো হে, এখানে সবাই মানুষ!
নামাও রাইফেল
এ পৃথিবী তোমার একলার নয়
এ পৃথিবী লোভের, ঘৃণার, উন্মত্ততার নয়
আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছে, আমি তোমার দিকে
আর তাকাতে পারছি না।

কী গভীর নিঃশব্দ বন চারদিকে
ওরা জানে, ওরা সব দেখেছে।
ধোঁয়ায় গ্রাস করছে নিষ্পাপ বাচ্চা ও ব্যাকুল মহিলাদের
ক্ষুধার্ত ও বঞ্চিতদের দিকে উদ্যত মুষ্টি তুলেছে যারা
তারা কে?

কার দিকে তুমি গুলি ছুঁড়ছো হে, এখানে সবাই মানুষ!

ল্যাটভিয়ার রিগা শহর থেকে তিরিশ মাইল দূরে, জঙ্গলের মধ্যে অনেকখানি ফাঁকা জায়গা। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি অভিভূত হয়ে পড়েছিলুম, আমার মতন কঠোর লোকেরও কান্না এসে গিয়েছিল। চল্লিশ বছর আগে ঐ স্থানটিতে আশী হাজার শিশু বৃদ্ধ-নারী-পুরুষকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। আমি কনসেনট্রেশান ক্যাম্পের অনেক বর্ণনা আগে পড়েছি। কিন্তু বইতে পড়া আর নিজে সেরকম কোনো স্থানে উপস্থিত হওয়ার মধ্যে উপলব্ধির অনেক তফাৎ। সেখানে দাঁড়িয়ে আমার হঠাৎ মনে পড়ল, একটি বিখ্যাত চেকোশ্লোভাক যুদ্ধ-বিরোধী উপন্যাসের লাইন, কার দিকে তুমি গুলি ছুঁড়ছো হে, এখানে সবাই মানুষ! বাকি লাইনগুলি সেই অনুসঙ্গে লেখা। হয়তো ঠিক সুললিত কবিতা হলো না। কিন্তু লাইনগুলি এই ভাবেই আমার মনে এসেছিল। ঠিক সেইরকমই লিখে গেছি।