১০. স্নান করে, খাওয়াদাওয়া সেরে

স্নান করে, খাওয়াদাওয়া সেরে কাকাবাবু ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নিলেন। দুপুরে ঘুমোবার অভ্যেস নেই তাঁর কিন্তু আজ তিনি ক্লান্ত বোধ করছিলেন। স্টেশন থেকে বেশ কিছুটা দূরে এই বাড়িটায় পৌঁছবার পর কাকাবাবুকে একটা ঘর দেখিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কাকাবাবু তখনই বলেছিলেন, আমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে চাই।

আসবার পথে একটা দোকানে গাড়ি থামিয়ে কাকাবাবু দুজোড়া করে প্যান্ট গেঞ্জি ইত্যাদি কিনে এনেছেন। তাঁর গায়ে এখন নতুন পোশাকের গন্ধ। ঘুম থেকে ওঠার পর তিনি কিছুক্ষণ গম্ভীরভাবে বসে রইলেন। জীবনে তিনি অনেক ভয়ংকর প্রকৃতির লোক দেখেছেন। অনেক বিপদে পড়েছেন, অনেকবার খুদে ডাকাতের হাতে বন্দী হয়েছেন, কিন্তু ভদ্রলোক হিসাবে পরিচিত। লোকেরা তাঁকে জোর করে কোথাও ধরে নিয়ে গেছে, এরকম অভিজ্ঞতা তাঁর আগে কখনও হয়নি। এরা সম্বলপুর স্টেশনে তাঁর গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দিয়েছে পর্যন্ত, যেন তিনি একজন সম্মানিত অতিথি। অথচ ঘুমের ওষুধ ইঞ্জেকশান দিয়ে তাঁকে এখানে আনা হয়েছে তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে।

এতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ব্যাপারটা হালকা করে দেখছিলেন। এখন তাঁর মনে মনে রাগ জমছে। অংশুমান চৌধুরীর পাগলামি তিনি আর সহ্য করতে পারছেন না। তবে, অংশুমান চৌধুরীর সঙ্গে এখানকার যারা হাত মিলিয়েছে, তাদেরও একবার ভাল করে দেখা দরকার। সন্তুকেই বা এরা কোথায় রেখেছে?

কাকাবাবু দরজাটা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালেন।

সামনে একটা টানা বারান্দা পাশাপাশি বেশ কয়েকটা ঘর। বারান্দার রেলিংয়ের ওপরে গ্রিল লাগানো, তার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে বাড়ির সামনের রাস্তা। এরা কোনও পাহারার ব্যবস্থা রাখেনি। কাকাবাবু ইচ্ছে করলেই বাইরে বেরিয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু এরা ভাল করেই জানে যে, সন্তুকে সঙ্গে না নিয়ে কাকাবাবু একা-একা চলে যাবেন না।

বারান্দা পেরিয়ে খানিকটা আসতেই কাকাবাবু দেখতে পেলেন সিঁড়ির পাশের একটি ঘরের দরজা খোলা। সেখানে বসে আছে অসীম পট্টনায়ক, আর কাকাবাবুর পূর্ব পরিচিত মাধর রাও। অসীম পট্টনায়কের গায়ে এখনও নীল সাফারি সুট আর মাধব রাও পরে আছে পাজামা আর হলুদ রঙের পাঞ্জাবি। মাধব রাওয়ের বয়েস ষাটের বেশি হলেও বেশ শক্ত সমর্থ শরীর, নাকের নীচে মোটা গোঁফ।

কাকাবাবুকে দেখে দুজনেই উঠে দাঁড়াল। মাধব রাও খাতির করে বললেন, আসুন, মিঃ রায়চৌধুরী। আপনি ঘুমোচ্ছিলেন তাই ডিস্টার্ব করিনি। ভালমতন বিশ্রাম হয়েছে তো?

অসীম পট্টনায়ক বলল, আসুন স্যার, ভেতরে এসে বসুন। আমাদের আজকের সন্ধেবেলার মিটিংটা ক্যানসেল হয়ে গেছে। পরে আর একদিন হবে। মিঃ অংশুমান চৌধুরীও হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

কাকাবাবু এই ঘরের মধ্যে ঢুকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন। টেবিলের ওপর চায়ের সরঞ্জাম রাখা, তা দেখে কাকাবাবুর চা তেষ্টা পেল, কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। তিনি এক দৃষ্টিতে মাধব রাওয়ের মুখের দিকে চেয়ে রইলেন।

মাধব রাওয়ের ঠোঁটে একটা লম্বা চুরুট। কিছুদিন আগে মাধব রাও অন্য একজন ভদ্রলোককে নিয়ে কাকাবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে কাকাবাবু ওঁকে চুরুট খেতে নিষেধ করেছিলেন তাঁর সামনে। আজ মাধব রাও চুরুট নামালেন না মুখ থেকে, ফুক ফুক করে ধোঁয়া ছাড়তে লাগলেন।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, মাধব রাও, আপনি এক সময় দিল্লিতে সরকারি চাকরি করতেন, তাই না?

মাধব রাও মাথা হেলিয়ে বললেন, হ্যাঁ ঠিক, আপনার মনে আছে দেখছি। হ্যাঁ, গভর্নমেন্ট সার্ভিস করতাম, এখন রিটায়ার করেছি।

কাকাবাবু বললেন, রিটায়ার করার পর এইসব ইলিগ্যাল কাজ শুরু করেছেন? আপনার নামে অভিযোগ জানালে আপনার পেনশান বন্ধ হয়ে যাবে।

দারুণ অবাক হয়ে মাধব রাও বললেন, ইলিগ্যাল কাজ? আপনি বলছেন কী? আই অ্যাম স্ট্রিক্টলি অন দা সাইড অব ল।

কিডন্যাপিং। অ্যাবডাকশান, এসব বেআইনি কাজ নয়? আমাকে আর আমার ভাইপোকে আপনারা জোর করে ধরে এনেছেন।

এবারে অসীম পট্টনায়ক অবাক হয়ে বলল, জোর করে? আপনার তো স্যার সম্বলপুরে একটা মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করার কথা। আপনি নিজে আসতে রাজি হয়েছেন।

কাকাবাবু কড়া গলায় বললেন, আমি কোনওদিন কোনও পাবলিক মিটিংয়ে যাই না। এখানকার কোনও মিটিংয়ের কথাও আমি আগে শুনিনি। আমাকে আনা হয়েছে জোর করে ঘুম পাড়িয়ে কিংবা অজ্ঞান করে, আর সন্তুকে কীভাবে আনা হয়েছে তা আমি এখনও জানি না। তারও সম্বলপুরে আসবার কোনও কারণ নেই।

মাধব রাও বললেন, আপনি রেগে যাচ্ছেন মিঃ রায়চৌধুরী। আপনি সব কথা আগে শুনুন। আপনাকে গোড়া থেকে খুলে বলছি, সব শুনলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, আমাদের কোনও দোষ নেই। তার আগে একটু চা খাওয়া যাক। আপনি চা খাবেন তো, না কফি আনব?

কাকাবাবু বললেন, চা হলেই চলবে। আগে আপনি কি বলতে চান, সেটাই শুনি।

একটা ট্রে-তে টি পট কাপ, ছাঁকনি ইত্যাদি সব সাজানো রয়েছে। পট থেকে কয়েকটি কাপ চা ঢালতে-ঢালতে মাধব রাও বললেন, আমার বন্ধু অনন্ত পট্টনায়ক একটা বিশেষ কাজে বাইরে গেছেন। তিনি থাকলে তাঁর মুখ থেকেই সব শুনতেন। যাই হোক, আমিই বলছি, আমি আর অনন্তবাবু কলকাতায় আপনার বাড়িতে একদিন গিয়েছিলাম, মনে আছে?

কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ, মনে আছে। আপনারা আমাকে একটা অদ্ভুত প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, সে প্রস্তাবে আমি ইন্টারেস্টেড নই। ঠিক কি না?

মাধব রাও একটু হেসে বললেন, হ্যাঁ, সেদিনও আপনি খুব রেগে গিয়েছিলেন, আমাদের প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছিলেন বলা যায়। তা আপনার বাড়ি, আপনার যদি কোনও লোকের কথা পছন্দ না হয়, তাহলে তো চলে। যেতে বলতেই পারেন। তাতে আমরা কিছু মনে করিনি। আপনাকে অনুরোধ করেছিলুম, একবার অন্তত সম্বলপুর থেকে ঘুরে যেতে, তাতেও আপনি রাজি হননি।

সেই জন্যই আমাকে জোর করে ধরে আনাবার ব্যবস্থা করেছেন?

আরে ছি ছি, আপনার মতন লোককে জোর করে ধরে আনতে পারি কখনও? সেরকম চিন্তা আমরা মনেও কখনও স্থান দিইনি। আপনি রিফিউজ করার পর আমরা আরও দু একজনের কাছে যাই। তাদের মধ্যে মিঃ অংশুমান চৌধুরী কাজটা করতে রাজি হন। কিন্তু তিনি একটা শর্ত দেন। তাঁর কাজে আপনাকেও পার্টনার করে নিতে হবে। আমরা বললুম, সেটা তো সম্ভব নয়। আপনি রাজি হবেন না। তো, তিনি বললেন, সে দায়িত্ব তিনিই নেবেন। তিনিই আপনাকে সম্বলপুরে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিয়েছেন। কী করে তিনি আনবেন, তা আমরা কিছুই জানি না। তিনি আমাদের জানিয়েছিলেন যে, একটা মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করার কথা বলে আপনাকে রাজি করানো হয়েছে।

মাধব রাও, আমি আপনার কথা বিশ্বাস করতে পারছি না।

রায়চৌধুরীবাবু, আপনি যে-কোনও শপথ করতে বলুন। আমি সেই শপথ নিয়ে বলব যে, আপনাকে জোর করে ধরে আনার কথা আমরা চিন্তা করিনি, কোনও ব্যবস্থা করা তো দূরের কথা।

অসীম পট্টনায়ক বলল, স্যার, আমরা নামকরা ফ্যামিলি এখানকার। আমাদের বাড়িতে কারুকে জোর করে আটকে রাখব, এ তো অতি লজ্জার কথা! আপনি একজন সম্মানীয় অতিথি।

কাকাবাবু বললেন, আর আমার ভাইপো সন্তু, সে এখানে এল কী করে?

মাধব রাও বললেন, অংশুমানবাবুই বলেছিলেন যে, দুটি ছোকরাও এই সঙ্গে আসবে। তবে তাদের মধ্যে একজন আপনার ভাইপো কি না তা আমরা জানব কী করে?

দুটি ছোকরা মানে? কত বয়েস তাদের?

এই আঠারো-উনিশ হবে। কলেজের ছোকরা মনে হয়। অংশুমানবাবু কেন তাদের আনিয়েছিলেন, তাও আমরা জানি না।

সেই ছেলেদুটি কোথায়?

তারা আছে অন্য বাড়িতে। তাদের চার্জও আমরা নিইনি। অংশুমানবাবুর চেনা লোক তাদের ভার নিয়েছে।

অংশুমানবাবু ভেবেছেন কী? তিনি যা খুশি তাই-ই করবেন। ডাকুন অংশুমানবাবুকে।

তাঁকে তো এখন ডাকা যাবে না। স্টেশনে পড়ে গিয়ে উনি কোমরে চোট পেয়েছেন, মনেও একটা শক পেয়েছেন। তাই ওঁর নিজের ডাক্তার ওঁকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছেন।

মাধব রাও, আপনাকে বুদ্ধিমান লোক বলে জানতাম। এই অংশুমান চৌধুরী আপনাদের কী সাহায্য করবে? যে লোক একটা বিড়ালের বাচ্চা দেখে ভয় পায়, সেই লোক যাবে জঙ্গলের মধ্যে একটা মূর্তি উদ্ধার করতে?

মাধব রাও গোঁফে তা দিতে দিতে নিঃশব্দে হাসলেন, চুরুটটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে বললেন, আমাদের বরাবরই ধারণা, আপনিই একমাত্র আমাদের সাহায্য করতে পারেন। অংশুমান চৌধুরী আপনাকে এখানে আসতে রাজি করাবেন শুনেই আমরা তাঁর সব কথা মেনে নিয়েছি।

কাকাবাবু উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, একটা মূর্তি চুরির মতন জঘন্য কাজ আমাকে দিয়ে করাতে চাইছেন, আপনার লজ্জা করে না? আমি কিছুতেই আপনাদের প্রস্তাবে রাজি হব না। আমি আজ রাতেই কলকাতার ট্রেন ধরব, তার আগে আমার ভাইপো সন্তুকে এনে দিন আমার কাছে।

অসীম পট্টনায়ক বলল, স্যার হিরাকুদ ড্যাম দেখতে যাবেন না? সম্বলপুর এসে হিরাকুদ না দেখে কেউ ফিরে যায় না। আর আমাদের সেই মিটিংটা হবে পরশুদিন।

কাকাবাবু বললেন, একটা ট্যাক্সি ডেকে দিন। আমি এখানকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দেখা করতে যাব, তাঁকে সব কথা খুলে বলব।

অসীম পট্টনায়ক বলল, ট্যাক্সির দরকার কী আমাদের বাড়ির গাড়ি আছে, তাতে আপনি যেখানে ইচ্ছে করবেন, সেখানেই যেতে পারবেন।

মাধব রাও বললেন, রায়চৌধুরীবাবু, আপনি আমাদের নামে আর একটা মিথ্যে দোষ দিলেন। আমরা আপনাকে কোনও মূর্তি চুরি করার কথা একবারও বলিনি, আমরা আপনাকে অনুরোধ করেছি একটা চুরি-যাওয়া মূর্তি উদ্ধার করে দিতে। সেটা কি অপরাধ? আপনাকে আর একটা অনুরোধ করব? আপনি এ কাজ করতে রাজি হোন বা না হোন, এ বাড়ির মূর্তির কালেকশানটা একবার দেখবেন? একটু দেখুন না, কতক্ষণই বা লাগবে? তারপর আপনি না হয় ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের কাছে যাবেন।

কাকাবাবু অগত্যা রাজি হলেন। পুরনো মূর্তি সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ আছে। তিনি বললেন, ঠিক আছে, চলুন!

বাড়িটি পুরনো আমলের। দেখেই বোঝা যায় বেশ শৌখিন লোকের বাড়ি। তবে এখন এ বাড়িতে বিশেষ কেউ থাকে না। এই পরিবারের মেয়েরা ও অন্যান্য লোকেরা এখন থাকে ভুবনেশ্বরের অন্য একটি বাড়িতে।

একতলার সিঁড়ির নীচে খানিকটা অন্ধকার-মতন জায়গা। তার মধ্যে ঢুকে গিয়ে অসীম পট্টনায়ক একটা লুকোনো দরজা খুলল চাবি দিয়ে। মাধব রাও কাকাবাবুকে বললেন, আসুন, আপনার আর একটু কষ্ট হবে, সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে, আমাদের স্ট্যাচু কালেকশানের ঘরটা মাটির নীচে।

মাটির নীচের ঘর শুনেই কাকাবাবুর খটকা লাগল। মাধব রাও এতক্ষণ যা বলল, তা সবই যদি মিথ্যে হয়, তা হলে এবারে ওরা তাঁকে মাটির নীচের ঘরে নিয়ে আটকে রাখার চেষ্টা করতে পারে। ওদের দুজনের সঙ্গে কাকাবাবু গায়ের জোরে পারবেন না, তা ছাড়া মাধব রাওয়ের কাছে রিভলভার থাকা খুবই সম্ভব। কাকাবাবুর কাছে কিছুই নেই।

তবু তাঁকে যেতেই হবে। এখন আর যাব না বলা যায় না। তিনি মাধব রাওয়ের পেছন-পেছন চললেন। অসীম আগই নেমে সুইচ টিপে আলো জ্বালল। চমৎকার নিয়ন আলোর ব্যবস্থা আছে, এমনকী, পাখাও আছে। ঘরটি বেশ বড়, তাতে বেশ কিছু ছবি এবং গোটা কুড়ি-পঁচিশ মূর্তি সাজানো।

মাধব রাও বললেন, অনন্তবাবু থাকলে তিনি ভাল করে বুঝিয়ে দিতে পারতেন। আমিও কিছু কিছু জানি। এই যে মূর্তিগুলি দেখছেন, এগুলো আগে ওপরেই থাকত। অনন্তবাবুর বাবার শখের কালেকশান। এবাড়ির ছাদে একটা ঠাকুরঘর আছে। এক সময় সেখানে পুজোও হত। এর মধ্যে থেকে সবচেয়ে দামি মূর্তিটাই চুরি গেছে। তারপর থেকে অন্য মূর্তিগুলো এই ঘরে এনে সাবধানে রাখা হয়েছে। এই যে এই দিকটায় আসুন।

ঘরের একেবারে শেষ প্রান্তে একটা কাঠের বেদীর ওপর দুটি ছোট-ছোট নীল রঙের নারী মূর্তি রয়েছে। বেদীর দু পাশে মূর্তি দুটি বসান, মাঝখানটা ফাঁকা।

মাধব রাও ডাকলেও কাকাবাবু চট করে সেদিকে গেলেন না। অন্য মূর্তিগুলি যত্ন করে দেখতে লাগলেন। কয়েকটি বেশ পুরনো মনে হয়। ভুবনেশ্বরের মন্দিরের গায়ে যেরকম মূর্তি আছে, অনেকটা সেই ধাঁচের। কাকাবাবু দু একটা মূর্তির গা আঙুল দিয়ে ঘষে ঘষে কিছু পরীক্ষা করলেন। তারপর চলে এলেন মাধব রাওয়ের কাছে।

মাধব রাও বললেন, এই যে দুটি নীল মূর্তি দেখছেন, এ দুটি রাধা আর লক্ষ্মীর। এর মাঝখানে একটা ছিল বিষ্ণু মূর্তি। ওপরের ঠাকুর ঘরে সেই মূর্তিটাই পুজো করা হত। সেই মূর্তিটাই চুরি গেছে, অবশ্য অনেককাল আগেই চুরি হয়েছে। কিন্তু এখন সেটার সন্ধান পাওয়া গেছে। মূর্তিটি কিন্তু বেশ বড়। টারকোয়াজের মূর্তি, এক হিসেবে সেটা অমূল্য। সেটার একটা ছবি আছে না, অসীম?

অসীম বলল, হ্যাঁ, এখানেই তো ছিল, দেখছি।

অসীম নিচু হয়ে ছবিটা খুঁজতে লাগল, কাকাবাবু ছোট একটা নীল মূর্তি হাতে তুলে নিয়ে, নাকের কাছে এনে গন্ধ শুকলেন। তার ঠোঁটে একটা চাপা হাসি ফুটে উঠল।

কাঠের বেদীটার তলা থেকে অসীম ছবিটা তুলে আনল। সেটা একটা হাতে-আঁকা ছবি। সেটা বিষ্ণু মূর্তির ছবি বলে চেনা যায় না। দাঁড়ানো অবস্থায় একজন পুরুষ, তার পায়ে হাঁটু পর্যন্ত গাম বুটের মতন জুতো, মাথায় মুকুট। ভুবনেশ্বরে এরকম একটা সূর্য মূর্তি আছে।

কাকাবাবু ছবিটা হাতে নিয়ে দেখতে যেতেই সিঁড়িতে একটা শব্দ পাওয়া গেল। কে যেন নেমে আসছে। অসীম বলল, কে? মাধব রাও পকেটে হাত দিল।

সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল লম্বা ছিপছিপে একজন মানুষ, মাথায় তার একটাও চুল নেই, চোখে কালো চশমা। অংশুমান চৌধুরী। তাঁর হাতে একটা বড় কাগজের বাক্স।

কয়েক পা এগিয়ে এসে কাষ্ঠ হাসি হেসে তিনি বললেন, রাজা রায়চৌধুরীকে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। ছবি দেখে উনি কী বুঝবেন?

কাগজের বাক্সটা খুলে তিনি বড় একটা নীল রঙের পুরুষ-মূর্তি বার করে উঁচু করে ধরে বললেন, এই দেখুন সেই আসল মূর্তি।