[সোর্স না জানা অজানা গল্প]

০৫. আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম কোচিনে

‘সুরভি’ নামে কেরলের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে গিয়েছিলাম কোচিনে। বেশ বড় রকমের সাহিত্য সমাবেশ, সারা ভারতের প্রত্যেক ভাষা থেকে নির্বাচিত লেখক প্রতিনিধিদের সংখ্যা প্রায় দেড়শো হবে। এরকম গ্যাঞ্জামে সাহিত্যের কোনও সুসার হয় না, পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা হয়, অচেনা লেখকদের সঙ্গে মেলামেশা হয়, প্রচুর খাওয়া-দাওয়া হয়। আমার কাছে অতিরিক্ত আকর্ষণ অদেখার দর্শন।

সকাল-দুপুর-সন্ধেতে অবিরাম কবিতাপাঠ, সাহিত্য আলোচনা ও ভাষণ, এত সব কে শোনে? বেশিক্ষণ বসে থাকলে মাথা ধরে যায়। একসঙ্গে এত লেখক-লেখিকাকে সামলাতে উদ্যোক্তারা হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন, সাহিত্যিক সম্প্রদায়ের মেজাজ-মর্জিও কম বিচিত্র নয়। চারদিন থাকার কথা, তার মধ্যে প্রথম দুদিন কেটে যাওয়ার পর বোঝা গেল, কর্মকর্তারা আমাদের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি ঘুরিয়ে দেখাবার বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারেননি। তা হলে কি কাঠের চেয়ারে বসে চারদিন ধরে বাইশটা ভাষার সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান সঞ্চয় করেই ফিরে যেতে হবে? আমার মন ছটফট করছিল।

সম্মেলন স্থান থেকে চুপিচুপি সরে পড়ে কাছাকাছি দু-একটি জায়গা ঘুরে আসতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু গাড়ির বড় অনটন। গাড়ি ছাড়া যাওয়া যাবে না। উদ্যোক্তাদের কাছে ফাঁকি দিয়ে ভ্রমণের জন্য গাড়িও চাওয়া যায় না। সেই সময় আবার এর্নাকুলমে কী একটা রাজনৈতিক সমাবেশ চলছিল, সেই রাজনৈতিক দল সেখানকার অধিকাংশ ভাড়ার গাড়ি দখল করে নিয়েছিল।

আমাদের থাকার ব্যবস্থা বেশ একটি মনোরম স্থানে। একটি বিশাল হ্রদের মতো জলাভূমি, চারদিকে গাছপালা, তারমধ্যে একটি বিশাল হ্য। সেটি কোনও এক কারখানার গেস্ট হাউস। সত্যিই বিশাল, ঘরের সংখ্যা শতাধিক, প্রত্যেকটি আরামপ্রদ ঠান্ডা ব্যবস্থা সমেত, বিদেশি অতিথিরা এসে এখানে থাকেন। অতি সুন্দর জায়গা হলেও যাতায়াতের খুব অসুবিধা। ইচ্ছেমতো বেড়িয়ে আসা যায় না, হেঁটে কাছাকাছি জনপদে যেতেও ঘণ্টাখানেক লাগে। সকালে বিকালে উদ্যোক্তারা বাস পাঠিয়ে আমাদের নিয়ে যান, ফিরিয়ে দেন। আমরা স্কুলের বাচ্চার মতো অধীরভাবে সেই বাসের অপেক্ষা করি, একটা বাস এলে অনেক বয়স্ক, গম্ভীর চেহারার লেখক-লেখিকাও সত্যিই ছেলেমানুষের মতো দুদ্দাড় করে দৌড়ে তাতে উঠে জায়গা দখল করে নেন। বাকিরা হতাশভাবে অপেক্ষা করেন পরবর্তী বাস বা গাড়ির জন্য।

তৃতীয় দিনে একটি উপায় পাওয়া গেল। ইংরিজিতে কবিতা লেখেন কেকী দারুওয়ালা, আমার পূর্ব পরিচিত, তিনি শুধু কবি নন, খুবই উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার, দিল্লিতে সি বি আই এর ডিরেক্টর না কী যেন। খুবই সদালাপী, নিরহঙ্কার, সুদর্শন মানুষ। এই কেকী দারুওয়ালা ভারতের যে-কোনও শহরে গেলেই পুলিশ বিভাগ থেকে তাঁর নিজস্ব ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ি পাবেন। এখানেও যথারীতি তিনি আলাদা গাড়িতে ঘুরছেন। কেকী দারুওয়ালাকে আমি চুপিচুপি জিগ্যেস করলাম, তোমার গাড়িতে আমরা কয়েকজন পালিয়ে যেতে পারি না? কেকী বলল, আমরা সেরকমই একটা প্ল্যান করছি, তুমি হলে চতুর্থ জন, আর কারওকে যেন বোলো না। অন্যরাও অনেকে যেতে চাইলে কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখব?

চারজনে বেরিয়ে পড়া গেল, আমরা দুজন পুরুষ ছাড়া অন্য দুজন মহিলা–নবনীতা দেবসেন এবং হিন্দি ভাষার তরুণী কবি গগন গিল। আদি পরিকল্পনা নবনীতার, এই নারীটি বিশ্ব বেড়ানি, একা-একা চিন সীমান্ত এবং দক্ষিণ-মেরু, যে-কোনও জায়গায় অকুতোভয়।

অনেক কিছু দেখা হল, তবু শেষ পর্যন্ত আমার মনে দাগ কেটে রইল একটা ছোট নদী। এখানকার পেরিয়ার নদী সুবিখ্যাত, সে নদীর কথা বলছি না, এই অঞ্চলে ঘোরাফেরা করলেই পেরিয়ার নদী বারবার চোখে পড়বে, অনেক সেতুও পেরোতে হয়। আমাদের সমাবেশের ব্যবস্থাও হয়েছিল দুই নদীর সঙ্গমস্থলে, ভারী সুন্দর জায়গা। কিন্তু ভালো লাগার নদীটি দেখেছি সব শেষে।

ইতিহাস আমার প্রিয় এবং ইতিহাসের দিক থেকে কেরল রাজ্য একটি অতি সমৃদ্ধ খনি। ভারতবর্ষের প্রথম মুসলমানদের প্রথম মসজিদ স্থাপিত হয়েছে কেরলে, প্রথম রোমান ক্যাথলিক গির্জাও এখানে, ইহুদিরা এখানে বসতি স্থাপন করেছিল, আবার এখানেই জন্মেছেন শঙ্করাচার্য, যিনি মাত্র বত্রিশ বছর জীবিত থেকে ভারতের চার প্রান্তে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করে হিন্দু ধর্মের ধ্বজা তুলেছিলেন।

কোচিন দুর্গ চত্বরেই রয়েছে গির্জাটি, পোর্তুগিজরা এটি বানিয়েছিল প্রায় পাঁচশো বছর আগে। সেন্ট ফ্রান্সিসের নামের এই গির্জাটি সাদামাটা, বিরাটও নয়, তেমন কিছু শ্রীমণ্ডিতও নয়। সামনের অংশটি অবিকল রেখে ভেতরে যে অনেকবার পুনর্নির্মাণ হয়েছে তা বোঝা যায়। কিন্তু এই চার্চের প্রধান আকর্ষণ, এখানেই ভাস্কো-দা-গামাকে সমাধি দেওয়া হয়েছিল। পাশ্চাত্য বণিক ও লুণ্ঠনকারীদের ভারতে প্রথম টেনে এনেছিলেন এই ভাস্কো-দা-গামা, ভারতের অধঃপতনের ইতিহাসে এই লোকটির ভূমিকা অনেকখানি।

১৫২৪ সালে ভাস্কো-দা-গামা এখানে দেহ রেখেছিলেন। এই সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চে তাঁকে কবর দেওয়ার চোদ্দো বছর পর অবশ্য তাঁর দেহাবশিষ্ট নিয়ে যাওয়া হল লিসবনে। কিন্তু এই গির্জার মধ্যে তাঁর সেই কফিন ও সমাধি ফলক রয়ে গেছে। পাঁচশো বছর পর মানুষের হাড়গোড়ের কী অবস্থা হয় তা আমি জানি না, সেগুলো এখানে থাকুক বা না থাকুক, তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু মৃত অবস্থায় তিনি এখানে শায়িত ছিলেন, ভাবতেই রোমাঞ্চ হয়।

আমি নবনীতাকে বললাম, ভাস্কো-দা-গামা নিশ্চয়ই মদ খেয়ে মাতলামি করতে-করতে মারা যান। কেকী দারুওয়ালা খুব কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এসে বলল, তাই নাকি, তাই নাকি। এ তথ্য তো ইতিহাসে পাইনি! আমি হাসতে-হাসতে জানালাম, এটা অবশ্য আমার অনুমান। স্মৃতিফলকে লেখা আছে, ভাস্কো-দা-গামার মৃত্যু হয়েছিল ক্রিসমাসের দিন সকালে। আগের রাত্রে, অর্থাৎ ক্রিসমাস ইভে সাহেবদের পার্টিতে মদের স্রোত বইতে থাকে, সার্থকতার আনন্দে তিনি হয়তো প্রচুর পান করে ফেলেছিলেন এবং কারওর সঙ্গে মারামারি বাঁধানোও অস্বাভাবিক ছিল না!

একটা নিদারুণ বিষণ্ণতার আবহাওয়া পাওয়া যায় মাত্তান নামে একটি জায়গায়। এমন কোনও পল্লির অবস্থা কি কল্পনাও করা যায়, যেখানে মানুষ আছে, কিন্তু তাদের মধ্যে একটিও যুবক বা যুবতী নেই? মাত্তানের জু-টাউন ঠিক তাই। এককালে এখানে ছিল সমৃদ্ধ নগর, ইজরায়েল থেকে পালিয়ে এসে দলে দলে ইহুদিন এখানে বসতি স্থাপন করেছিল। এখনও বাড়িগুলি ইওরোপীয় ধরনের। রাস্তাঘাট সুন্দর, কিন্তু অধিবাসী সবাই বুড়োবুড়ি। অল্প বয়েসি ছেলেমেয়েরা সবাই পাড়ি দিয়েছে উন্নত ও শক্তিশালী দেশ ইজরায়েলে, সেখানে ইহুদিদের কাজ জোটাবার কোনও অসুবিধা নেই। বুড়ো-বুড়িরা যায়নি, শেষ জীবনে নতুন পরিবেশে গিয়ে কী -ই বা হবে। এখন দেখা যায়, একেকটা বড় বড় বাড়িতে রয়েছে একটি মাত্র বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। তাদের ফ্যাকাশে ধরনের মুখ। এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই এখানকার প্রসিদ্ধ সিনাগগটি কোনওরকমে চালু রেখেছে।

এই জায়গাটিতে এসে কেকী দারুওয়ালা খুব অভিভূত হয়ে পড়ল। সে পারশি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। ভারতের পারশিদের সংখ্যাও খুবই ক্ষীয়মাণ, আত্মীয়স্বজনের বাইরে বিয়ের পাত্র পাত্রী পাওয়াও দুর্লভ।

এবারে আমার সেই নদীর কথা।

শেষ দিনটিতে যাওয়া হল কালাডিতে। প্রায় কুড়ি-বাইশ কিমি দূরে। শঙ্করাচার্যের জন্মস্থান হিসেবেই জায়গাটি প্রায় একটি তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে, সেখানে রয়েছে তাঁর স্মৃতিমন্দির বা আটতলা কীর্তিস্তম্ভ সৌধ। ওই সৌধ আমাকে বিশেষ আকৃষ্ট করল না। সেখানে নাকি রয়েছে শঙ্করাচার্যের রুপোর চটিজুতো আর দেওয়ালের গায়ে তাঁর জীবনকাহিনির নানান ছবি। ছবিগুলি জ্যাবজেবে রঙে আঁকা, ছবি হিসেবে একেবারেই উৎকৃষ্ট নয়। আর চটিজুতোর ঘরে এত ভিড় সে ভিড় ঠেলে একজোড়া পাদুকা দেখার সাধ আমার হল না।

অনেকদিন আগে শঙ্করাচার্যের একটা রচনা পড়ে বেশ ভালো লেগেছিল। দারুণ তেজি বক্তব্য। ‘শ্লোকার্ধেব প্রবক্ষামি যদুক্তঃ গ্রন্থ কোটিভিঃ…’ অর্থাৎ কোটি-কোটি গ্রন্থে যা লেখা হয়েছে, তা আমি মাত্র আধখানা শ্লোকে বলে দিতে পারি। সেই আধখানা শ্লোক কী? ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা! অতি সরল কথা, আসলে বেশ জটিল। এক এবং অদ্বিতীয় নির্গুণ ব্রহ্মই সত্য, আর এই জগৎ মিথ্যা। এই জগৎ কেন মিথ্যা হবে, তা অবশ্য আমি বুঝি না। শঙ্করাচার্য সে সম্পর্কেও বলেছেন, প্রত্যেক জীবই স্বরূপত ব্রহ্ম, কিন্তু অজ্ঞানবশত জীব তার স্বরূপ বুঝতে পারে না বা ভুলে যায়।

আমার মনে হয়, আমি ভুলে গিয়েই বেশ আছি, ব্রহ্ম-টহ্ম হতে চাই না। সে যাই হোক, অত অল্প বয়েসের মধ্যে এই তেজি ব্রাহ্মণটি সারা ভারত জয় করেছিলেন বলে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধার ভাব আছে।

শঙ্করাচার্যের জীবনকাহিনিতে একটি নদীর গল্প আছে, সেই নদীটি কোথায়? তাঁর জন্ম এ পল্লিতেই। এর কাছাকাছি একটি নদী থাকা উচিত।

লোকজনকে জিগ্যেস করে আমি বড় রাস্তা ছেড়ে ডানদিকে একটা সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলাম। সাধারণ গ্রামের রাস্তার মতো, দুপাশে আগাছার ঝোঁপ। একটু বাদেই চোখে পড়ল সেই নদী, কী সুন্দর সেই নদী। দেখামাত্র চোখ জুড়িয়ে গেল।

এ কিন্তু পেরিয়ার নয়, তারই একটি শাখা, এই নদীর নাম পূর্ণা। আমাদের গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনার মতো অত চওড়া নয়, রূপনারায়ণের মতোও নয়, আবার কেলেঘাই বা কপোতাক্ষর মতো ছোটও নয়। অন্য পাড় স্পষ্ট দেখা যায়, গাছপালার ফাঁকে-ফাঁকে ছোট-ছোট কুটির, মাঝনদীতে নৌকো চলেছে পাল তুলে। কেরলের প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের বাংলার বেশ মিল আছে, এই নদীতীরে এসে হঠাৎ মনে হল যেন আমাদের কৈশোরের পূর্ব বাংলায় এসে পড়েছি।

গ্রীষ্মকালে আমাদের এদিককার নদীগুলির বড়ই শীর্ণদশা হয়। পূর্ণায় বেশ জল আছে। এবং স্রোত আছে। স্রোত না থাকলে নদীকে মানায় না। কুলুকুলু ধ্বনিটিও যেন শুনতে পাওয়া যায়। নদীর সঙ্গে নারীর উপমা আসেই, পূর্ণা যেন সদ্য ফ্রক ছেড়ে শাড়ি পরেছে, গায়ের রং বেশ ফরসা, কেন না জলের রং স্বচ্ছ।

একটা পাথরের বাঁধানো ঘাট রয়েছে। কিছুটা ভাঙা ভাঙা। শঙ্করাচার্য জন্মেছিলেন অষ্টম শতাব্দীতে। নিশ্চয়ই ততদিনের পুরোনো ঘাট নয়, তবু একটা প্রাচীনত্বের ছাপ আছে। কিংবা আবহমানকালের। এরকম নদী দেখলেই সাধ হয় এর কিনারায় একটা বাসা বেঁধে থেকে যাই।

এককালে এই নদীতে কুমির ছিল। শঙ্করাচার্যের জীবনীতে এই গল্প আছে যে, একদিন এই নদীতে স্নানের সময় তাঁ পা একটি কুমিরে কামড়ে ধরেছিল। তা দেখে, তীরে দাঁড়িয়ে আর্তস্বরে কেঁদে উঠেছিলেন তাঁর মা। শঙ্করাচার্যের তখন কৈশোরের বয়স, সেই বয়সেই তিনি সংসার ত্যাগ করে ব্রহ্মচর্য নিয়ে বেরিয়ে পড়তে চান, মা কিছুতেই রাজি হননি। কুমির যখন টেনে নিয়ে যাচ্ছে, তখন শঙ্করাচার্য বলে উঠলেন, মা, তুমি যদি আমাকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দাও, তা হলে আমি বাঁচবার চেষ্টা করতে পারি। মা তখন ব্যাকুলভাবে অনুমতি দিয়ে বলেছিলেন, তুই সন্ন্যাসী ব্রহ্মচারী যা হতে চাস তাই হবি, এখন তুই শুধু বেঁচে ফিরে আয়!

অমনি কুমির ছেড়ে দিয়ে চলে গেল, শঙ্করাচার্য ঘাটে ফিরে এলেন। সেটা সত্যিই কুমির ছিল, মায়া-কুমির, তা কে জানে! বারোশো বছর আগে ঘটনাটা ঘটেছিল এখানে।

এখন এই নদীতে কুমির থাকার প্রশ্নই ওঠে না। মানুষ বড় বিচিত্র প্রাণী। মানুষ কুমির মেরে মেরে প্রায় শেষ করে দিচ্ছিল, তারপর হঠাৎ একদিন খেয়াল হল, আরে পৃথিবী থেকে ডোডো পাখির মতো, কুমিরও যে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এদের বাঁচানো দরকার। এখন কুমিরের ডিম খুঁজে খুঁজে কুমিরের চাষ হয়, বাচ্চা কুমিরদের খাইয়ে-দাইয়ে বড় করে ছেড়ে দেওয়া হয় নদীতে। এখন কুমির টিকে আছে মানুষের দয়ায়।

পূর্ণা নদীটির রূপ এমনই স্নিগ্ধ যে-কোনও হিংস্রতার কথা এখানে মনেই আসে না। বরং দেখলেই অবগাহনের ইচ্ছে জাগে। একটা তোয়ালে আনিনি বলে বড় আপসোস হতে লাগল।

জুতোটুতো খুলে আমি ঘাটের পৈঠায় বসলাম জলে পা ডুবিয়ে। খানিক পরে একটা চমকপ্রদ ব্যাপার হল। কয়েকটা ছোট ছোট মাছ ঠোকরাতে লাগল আমার পায়ে। পরিষ্কার জলে দেখা যাচ্ছে মাছগুলোকে, অনেকটা আমাদের চ্যালা মাছের মতো, আর একটু লম্বা, ঝিলিক দিচ্ছে তাদের গায়ের রুপোলি রং। তারপর দেখি ঝাঁকে-ঝাঁকে ওই মাছ এসে আমার পা দুটোকে ঘিরে ধরেছে। আমার কিন্তু ব্যথা লাগছে না একটুও, বরং সুড়সুড়ি বোধ হচ্ছে। ওরা কি আমার পা-কে কোনও খাদ্য বা খেলার বস্তু ভেবেছে?

এরকম অভিজ্ঞতা আমার আগে কখনও হয়নি। এই নদীতে এত মাছ?

অন্যরা মন্দির, সৌধ দেখায় ব্যস্ত, আমি সেখানে জলে পা ডুবিয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখতে লাগলাম মাছেদের খেলা।