০৪. সকালবেলা চায়ের পাট

সকালবেলা চায়ের পাট শেষ করার পর বিমান বলল, চলুন, এবার আপনাদের সারা বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখানো যাক। প্রথমে কোনদিকে যাবেন? নীচের তলা থেকে শুরু করব?

অসিত বলল, না, না, আগে ছাদের ঘরটা দেখব। ওই ঘরটা সম্পর্কে এমন গল্প বলেছেন যে, কৌতূহলে ছটপট করছি।

দীপা বলল, সেই ভাল। আগে ছাদটা ঘুরে আসা যাক।

বিমান তার ব্যাগ থেকে একটা চাবির তোড়া বার করল। তাতে অন্তত পঞ্চাশ-ষাটটা চাবি।

অসিত ভুরু তুলে বলল, এত চাবি?

বিমান বলল, আগে তো সব ঘরের জন্যই তালা-চাবি লাগত। এখন অবশ্য অনেক চাবিই কাজে লাগে না।

দীপা বলল, কাল রাত্তিরে চোর এসেছিল। ছাদে তো তালা লাগাতে পারোনি!

বিমান বলল, ছাদের দরজার একটা পাল্লা যে ভাঙা!

অসিত বলল, অ্যা! কাল চোর এসেছিল? কখন?

কাকাবাবু বললেন, তখন রাত প্রায় দুটো।

অসিত বলল, আমি কিছু টের পাইনি তো! একবার ঘুমিয়ে পড়লে আমার আর ঘুম ভাঙে না।

সবাই মিলে চলে এল ছাদে। আগের দিন অনেকক্ষণ বৃষ্টি হলে পরের দিনের সকালটা বেশি ফরসা দেখায়। ঝকঝক করছে রোদ। ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে।

একদিকের ছাদের কার্নিসে একটা বেশ বড়, খয়েরি রঙের ল্যাজ-ঝোলা পাখি বসে আছে চুপটি করে।

দীপা জিজ্ঞেস করল, ওটা কী পাখি?

কাকাবাবু বললেন, ইষ্টকুটুম।

দীপা বলল, কী সুন্দর পাখিটা! ইষ্টকুটুমের নামই শুনেছি, দেখিনি কখনও। ওর একটা ছবি তুলে রাখব, ক্যামেরাটা নিয়ে আসি। দেখবেন যেন পাখিটা উড়ে না যায়!

কাকাবাবু হেসে বললেন, সে-দায়িত্ব কিন্তু আমরা নিতে পারব না।

দীপা ক্যামেরা আনবার জন্য নীচে ছুটে যেতেই পাখিটা উড়ে চলে গেল!

বিমান বলল, যাঃ—

অসিত পাখির দিকে মনোযোগ দেয়নি। সে এগিয়ে গেল ঘরটার দিকে। কাকাবাবু তার পাশে-পাশে হাঁটতে-হাঁটতে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি যে অ্যান্টিকের ব্যবসা করেন, আপনার কি কলকাতায় কোনও দোকান আছে?

অসিত বলল, না। দোকান-টোকানে বসা আমার পোষায় না। লন্ডনের এক অ্যান্টিক ডিলারের সঙ্গে আমার পার্টনারশিপ আছে। আমি নানা দেশ ঘুরে-ঘুরে খাঁটি জিনিস জোগাড় করি। সে বিক্রি করে। অস্ট্রেলিয়াতেও একটা দোকানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে, ওরা খুব কেনে।

বিমান চাবির তোড়া থেকে এই পাগলাদাদুর ঘরের তালার চাবি খুঁজছে।

কাকাবাবু বললেন, এই ঘরটায় এত বড় আর শক্ত পেতলের তালা কেন? অন্য ঘরে তো দেখিনি!

বিমান বলল, কী জানি! অনেকদিন ধরে এখানে এ-তালাই ছিল, তাই রয়ে গেছে। এ-ঘরটায় দামি জিনিস কিছু না থাকলেও একটা খাট আছে, একটা অনেকগুলি ড্রয়ারওয়ালা টেবিল আছে।

কাকাবাবু বললেন, খাট আছে? বাঃ, তা হলে আজ রাত্তিরে আমি এ-ঘরেই থাকব।

বিমান বলল, না, না, তা হয় নাকি? ছাদের ওপর আপনি একা-একা থাকবেন?

কাকাবাবু বললেন, এটাই তো এবাড়ির সবচেয়ে সুন্দর ঘর। আমার এখানেই থাকতে ভাল লাগবে। খাট যখন আছে, একটা তোশক আর বালিশ এনে দিলেই চলবে।

অসিত বলল, থাকার পক্ষে এই ঘরটা কিন্তু সত্যিই আইডিয়াল!

কাকাবাবু মাথা নেড়ে বললেন, আমি কিন্তু আগে বুক করেছি।

অনেকগুলো চাবি লাগিয়ে-লাগিয়ে দেখার পর ঠিক-ঠিক দুটো চাবি খুঁজে পাওয়া গেল। বিমান পেতলের তালা দুটো খুলছে। কাকাবাবু দেখলেন, সিঁড়ির নীচে একটা ইট পড়ে আছে, তালার গায়েও খানিকটা ইটের গুঁড়ো লেগে আছে। কাল যে চোর এসেছিল, সে এই ইট মেরে তালা ভাঙার চেষ্টা করেছিল।

দরজার ওপর আর নীচের শিকল খুলে একটা ধাক্কা মারার পর ভেতর থেকে একটা পচা গন্ধ বেরিয়ে এল।

বিমান একটা ভয়ের শব্দ করে পিছিয়ে গেল কয়েক পা।

কাকাবাবু হো-হো করে হেসে উঠে বললেন, তোমার পাগলাদাদু এই ঘরে মরে পচে ছিলেন, তুমি কি ভাবছ, সেই গন্ধ এখনও আছে? তারপর তো এই ঘরে অনেকে ঢুকেছিল, তুমিই বলেছ!

অসিতের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

বিমান লজ্জা পেয়ে বলল, আমি নিজেই তো চার-পাঁচবার ঢুকেছি।

কাকাবাবু বললেন, নিশ্চয়ই কোনও ইঁদুর-টিঁদুর মরে আছে।

অসিত বলল, জানলাগুলো সব বন্ধ। খুলে দিলে হাওয়া আসবে। এই সময় ছাদের দরজার কাছে ভানু নামের কাজের লোকটি এসে ডাকল, দাদাবাবু?

বিমান মুখ ফিরিয়ে দেখল, ভানুর সঙ্গে আর-একজন লোক এসেছে। ধুতি পাঞ্জাবি পরা, মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা, কাঁধে ঝোলানো একটি ব্যাগ।

কাকাবাবু ঘরটার মধ্যে ঢুকতে যাচ্ছিলেন, বিমান তাঁকে ডেকে বলল, কাকাবাবু, আপনাকে একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলুম। এর নাম ব্ৰজেন হালদার। আমার ছোটবেলার বন্ধু। এই গ্রামের স্কুলে ইংরেজি পড়ায়। আপনি আসবেন শুনে ও খুব ধরেছিল আপনার সঙ্গে একটু আলাপ করিয়ে দেওয়ার জন্য। আপনার খুব ভক্ত।

কাকাবাবু সিঁড়ি থেকে নেমে এলেন।

ইংরেজি মাস্টারটি ছুটে এসে কাকাবাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। তারপর গদগদ স্বরে বলল, আপনিই কাকাবাবু! সন্তু কোথায়?

কাকাবাবু বিব্রতভাবে পাসরিয়ে নিয়ে বললেন, সন্তু আসেনি।

ব্ৰজেন বলল, সন্তুকে ছাড়া..আপনি কোথাও যান নাকি? আমার ধারণা ছিল, সন্তু সব সময় আপনার সঙ্গে থাকে।

বিমান বলল, সন্তুর এখন পরীক্ষা চলছে, সে আসতে পারেনি।

ব্ৰজেন চোখ বড় করে বলল, সন্তু পরীক্ষাও দেয়? অন্য ছেলেদের মতন?

বিমান বলল, কেন, সন্তু পরীক্ষা দেবে না কেন?

ব্ৰজেন বলল, আমার ধারণা ছিল, সন্তু একটা গল্পের চরিত্র, তাকে পরীক্ষা-টরিক্ষা দিতে হয় না। সে সব সময় অ্যাডভেঞ্চার করে বেড়ায়।

কাকাবাবু ও বিমান দুজনেই হেসে উঠলেন।

বিমান বলল, সন্তু গল্পের চরিত্র হবে কেন? সন্তু আমাদের পাড়ায় থাকে, বাচ্চা বয়েস থেকে তাকে চিনি।

ব্ৰজেন কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, আমার এতদিন ধারণা ছিল, কাকাবাবু বলে সত্যিকারের কেউ নেই। লেখকদের বানানো ব্যাপার। বিমান যখন প্রথম বলল, আপনি এখানে আসবেন, আমি বিশ্বাসই করিনি।

বিমান বলল, ছুঁয়ে দেখবি নাকি সত্যি কি না!

ব্ৰজেন বলল, ইস, আমার ছেলেটাকে আনলাম না। আমার ছেলে একেবারে পাগলের মতন আপনার ভক্ত। ও আপনার অটোগ্রাফ নিলে কত খুশি হত! একটা কথা বলব, সার? একবার দয়া করে আমাদের বাড়িতে যাবেন? সামান্য, পাঁচ মিনিটের জন্য?

বিমান বলল, ঠিক আছে, বিকেলের দিকে আমরা একবার বেড়াতে বেরোব। তখন তোমার বাড়িটাও ঘুরে আসব। তোমার বাড়িতে একবার আচারের তেল দিয়ে মাখা মুড়ি খেয়েছিলাম, মনে আছে, দারুণ লেগেছিল। সেইরকম মুড়ি খাওয়াবে?

নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই! মুড়ির মতন সামান্য জিনিস, তা কি উনি খাবেন?

হ্যাঁ, খাবেন। কাকাবাবু মুড়ি ভালবাসেন। আর কোনও খাবার-টাবার রাখার দরকার নেই কিন্তু।

কাকাবাবুর মুখের দিকে তাকাল ব্ৰজেন। কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ, যাব।

ব্ৰজেন বলল, আমার বাড়ি খুব কাছে। এখান থেকে দেখা যায়। আসুন, দেখবেন।

বিমান বলল, ঠিক আছে। বিকেলবেলা তো যাচ্ছিই! ৩০৬

ব্ৰজেন তবু বলল, কাকাবাবুকে আমার বাড়িটা দেখিয়ে রাখি।

প্রায় জোর করেই ব্ৰজেন ওদের নিয়ে গেল পাঁচিলের দিকে। পেছন দিকে পদ্মফুলে ভরা দিঘিটার ডান পাশে অনেক গাছপালা, প্রায় জঙ্গলের মতন। সেইদিকে আঙুল দেখিয়ে ব্ৰজেন বলল, ওই যে দেখুন, শিমুলগাছটার ফাঁক দিয়ে..

বাড়িটা প্রায় দেখাই যাচ্ছে না, তবু কাকাবাবু ও বিমান একসঙ্গে বলল, হ্যাঁ, দেখেছি।

ব্ৰজেন বলল, আমাদের ওখান থেকে এই বাড়িটাকে মনে হয় একটা পাহাড়ের মতন। দিগন্ত ঢেকে থাকে। এই বাড়িটার জন্যই আমাদের গ্রামের অনেক নাম। কত দূরদূর থেকে লোকে এই বাড়িটা দেখতে আসে। এত বিখ্যাত বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে, ছি ছি, কী লজ্জার কথা বলুন তো! আমার যদি সেরকম টাকা থাকত, আমি এ বাড়িটা কিনে নিতাম।

কাকাবাবু বললেন, এটা সত্যিই খুব দুঃখের কথা। তবে বাড়িটা তো ভেঙেই পড়ছে ক্রমশ।

ব্ৰজেন বলল, ঐতিহাসিক বাড়ি! এখানে আলিবর্দি আর সিরাজদ্দৌল্লা এসে থেকে গেছেন!

বিমান বলল, এসব আবার তুমি কোথা থেকে পেলে?

ব্ৰজেন বলল, নবাব আলিবর্দির আমলের বাড়ি নয় এটা? বর্গির হাঙ্গামার সময় নবাব আলিবর্দি তাঁর নাতিকে নিয়ে একসময় পালিয়ে এসেছিলেন এদিকে। এ বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন।

বিমান হেসে বলল, এসব গালগল্প। কোনও প্রমাণ নেই।

ব্ৰজেন জোর দিয়ে বলল, রামমোহন রায় থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত অনেকেই যে এসেছিলেন, তা নিশ্চয়ই জানো!

বিমান বলল, তা যাই বলল। এ বাড়ি মেরামত করার সাধ্য আমার নেই।

ব্ৰজেন বেশি কথা বলতে ভালবাসে। সে বাড়িটা সম্পর্কে অনেক কথা বলে যেতে লাগল। কাকাবাবু খানিকটা অস্থির বোধ করলেন।

দীপা ফিরে এসে বলল, এই ক্যামেরাটা কোথায় রেখেছ? খুঁজেই পেলাম না।

বিমান বলল, তোমার পাখি করে উড়ে গেছে। আর ক্যামেরা দিয়ে কী হবে?

দীপা বলল, তবু বলল না ক্যামেরাটা কোথায়? আমি ছাদে তোমাদের ছবি তুলব।

এই সময় ঘরটার মধ্যে ঘটাং করে একটা জোর শব্দ হল।

বিমান বলল, এই যে, ওখানে মেঝের অনেক পাথর আলগা আছে। দীপা, দ্যাখো তো, অসিতবাবুকে একটু বলে দাও।

দীপা ঢুকে গেল সেই ঘরের মধ্যে। ব্ৰ

জেন প্রসঙ্গ পালটে বলল, আচ্ছা কাকাবাবু, আপনার উল্কা রহস্য-এর প্রথম দিনে আপনি যে জাটিঙ্গা পাখিদের কথা বলেছিলেন, পরে সেই পাখিদের রহস্য সম্পর্কে তো আর কিছু জানা গেল না। পাখিগুলো আগুন দেখলে ইচ্ছে করে ঝাঁপ দেয় কেন?

কাকাবাবু বললেন, জাটিঙ্গা পাখিদের রহস্যের কোনও মীমাংসা এখনও হয়নি।

বিমান বলল, আচ্ছা ব্ৰজেন, বিকেলে তো তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছিই। তখন এসব কথা আলোচনা হবে। এখন আমাদের কিছু কাজ আছে।

ব্ৰজেন বলল, ছি, ছি, হঠাৎ এসে তোমাদের ডিস্টার্ব করলাম। এই ছাদটা আমার খুব ভাল লাগে। রঘুদাকে বলে মাঝে-মাঝে আমি এখানে এসে বসে থাকি। আচ্ছা, আসি তা হলে এখন। বিকেলে কিন্তু ঠিক আসতে হবে।

ব্ৰজেন সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাওয়ার পর বিমান বলল, আমি ছোটবেলায় যখন মামার বাড়ি আসতাম তখন ওর সঙ্গে ভাব হয়েছিল। আমরা একই বয়েসী।

কাকাবাবু বললেন, চলো, এবার তোমার পাগলাদাদুর ঘরটা দেখা যাক।

ঘরটা খুব ছোট নয়। এক সময় বেশ যত্ন করেই তৈরি করা হয়েছিল। মেঝেতে শ্বেতপাথরের টালি বসানো। সেগুলো মাঝে-মাঝে ভেঙে গিয়ে গর্ত হয়ে গেছে এখন। একপাশে একটা বড় খাট পাতা। কয়েকটা ঘুণ-ধরা কাঠের বাক্স। সারা ঘরে ছড়ানো ছেঁড়া পুঁতির মালা, ঝিনুক, ছোট-ছোট শাঁখ, প্রচুর ছেঁড়াখোঁড়া বই, পুরনো খবরের কাগজ, কয়েকটা ম্যাপ।

অসিত ঘরের একটা জানলা খুলে দিয়েছে, তাতেই প্রচুর রোদ এসেছে। পচা গন্ধটা নেই।

বিমান জিজ্ঞেস করল, ইঁদুরটা দেখতে পেলেন? দীপা ভয়ে লাফিয়ে উঠে বলল, ইঁদুর! ইঁদুর কোথায়?

অসিত হেসে বলল, না, না, ইঁদুর টিদুর দেখতে পাইনি। ওটা আসলে বন্ধ ঘরের ভ্যাপসা গন্ধ!

দীপা বিরক্তভাবে বলল, এই রাজ্যের ঝিনুক মিনুকগুলো ঘরের মধ্যে জমিয়ে রেখেছ কেন তোমরা এতদিন? ঝেটিয়ে বার করে দেওয়া উচিত ছিল।

বিমান বলল, যদি এর মধ্যে কোনওটা দামি হয়, সেইজন্য কেউ ফেলেনি।

অসিত একটা ঝিনুক তুলে নিয়ে জোর করে টিপে ভেঙে ফেলল। তারপর হাসতে হাসতে বলল, এগুলো অতি সাধারণ। কোনও দাম নেই।

কাকাবাবু একটা ছেঁড়া বই তুলে নিয়ে দেখলেন, সেটা একটা শেক্সপীয়রের নাটক। সামনের দিকের অনেক পাতা নেই।

বিমান বলল, আপনার কী মনে হয়, অসিতবাবু, এ ঘরে কোনও দামি জিনিস থাকতে পারে? বহুবার সার্চ করে দেখা হয়েছে। আমার বড়মামা মেঝে খুঁড়ে-খুঁড়েও দেখেছেন। কেউ কিছু পায়নি।

অসিত বলল, দামি জিনিস কিছু থাকলেও অন্য কেউ আগেই নিয়ে নিয়েছে। এখন যা পড়ে আছে, সবই রদ্দি জিনিস। আবর্জনা। মোটামুটি সবই তো দেখলাম।

দীপা বলল, মার্বেলের টালিগুলোর কিছু দাম হতে পারত, তাও তো সবই প্রায় ভাঙা।

বিমান বলল, কাকাবাবু, আপনি এই ঘরে থাকবেন বলছিলেন? দেখলেন তো কিরকম নোংরা?

কাকাবাবু বললেন, তাতে আমার কোনও অসুবিধে হবে না। একটু ঝাঁট-টটি দিয়ে নিলেই চলবে। চতুর্দিকে জানলা। সবকটা খুলে দিলে…

অসিত হঠাৎ চেঁচিয়ে বলে উঠল, ওই বন্ধ জানলাটার কাছে ওটা কী দেখুন তো? চকচক করছে?

সবাই ফিরে তাকাল। সত্যি, যে-জানলাটা খোলা, তার ঠিক উলটো দিকের জানলাটার পাশে কী যেন চকচক করছে হিরের মতন।

অসিত সেদিকে এগোবার আগেই কাকাবাবু বললেন, আমি দেখছি।

ক্রাচ বগলে নিয়ে দু পা এগোলেন কাকাবাবু। তৃতীয়বার একটা ক্রাচ একটা পাথরের ওপর ফেলতেই সেটা নড়বড় করতে করতে সম্পূর্ণ উলটে গেল। তার নীচে একটা বড় গর্ত। কাচটা পিছলে ঢুকে গেল সেই গর্তের মধ্যে। কাকাবাবু তাল সামলাতে পারলেন না। তিনি পড়ে গেলেন, দেওয়ালে খুব জোর ঠুকে গেল তাঁর মাথা। গলগল করে রক্ত বেরোতে লাগল। গর্তের মধ্যে ঢুকে গেছে তাঁর একটা পা। কিন্তু কাকাবাবু উঠতে পারলেন না, তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।