০২. পিরামিডের ভেতরে

প্রথম থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল পিরামিডের ভেতরে ঢুকব। কিন্তু প্রথমদিন পিরামিড দেখতে গিয়ে হতাশ হলুম। কায়রো শহর থেকে পাঁচ-ছ মাইল দূরেই তিনটি পিরামিড পাশাপাশি। বিশালাকার জগদ্বিখ্যাত ফিংকস হোটেল থেকে বেরিয়ে বাসে চেপেই সেখানে পৌঁছনো যায় আধ ঘণ্টার মধ্যে। সেখানে পৌঁছেই আমি হতাশ হলুম, যদিও পিরামিডগুলি আসল পিরামিডই, সুউচ্চ ত্রিকোণ পাথরের ঢিবি, বহু পর্যটক ভ্রমণার্থীর ভিড় সেখানে, অনেক খাবার দাবার সঙ্গে এনেছে–পিকনিক করার জন্য; কেউ কেউ পিরামিডের গা বেয়ে ওপরে উঠে গেছে। প্রচুর ক্যামেরা ও ট্রানজিস্টার–অনেকটা মেলার মতন আবহাওয়া। সন্ধেবেলা এখন দিল্লির লালকেল্লায় যেমন দেখানো হয়–সেই সঁএ লুকিয়ে হল সবই ঠিক, তবু আমি মনমরা হয়েছিলুম, ওখানকার কোনও পিরামিডের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না, ছাদ ধসে পড়ে দুর্ঘটনার ভয়ে সবক’টির মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অনেক মোড়া ও উটের সমাবেশ ওখানে–সহিসরা এসে টানাটানি করছে সেগুলো ভাড়া নেবার জন্য, ওদের মুখে ভাঙা ইংরেজি–ওয়ান আওয়ার ট্রিপ, কাম কান মিস্টার ফিফটি পিয়াসতা। গিভ থারটি পিয়াসতা! থারটি ফাইভ? নো? সামনে বালুকাময় প্রান্তরে উটের পিঠে চেপে একটুখানি মরুভূমি ভ্রমণের স্বাদ পাবার জন্য অনেকে ভাড়াও নিচ্ছে। শুনতে পেলাম ওখান থেকে দশ-বারো মাইল দূরে মেমফিসে কয়েকটা পিরামিড আছে–সেগুলোর মধ্যে ঢোকা যায়–উটের পিঠে সেখানে যেতে হবে।

মনে-মনে ঠিক করে ফেললুম। সেদিন নয়, তার দু’দিন পর ওখানে ফিরে এসে একটা উট ভাড়া নিয়ে একা বেরিয়ে পড়লুম মেমফিসের উদ্দেশ্যে।

আঃ কী ভালো লেগেছিল সেই সকালবেলা। খালি একটু আফশোস হচ্ছিল–চেনাশুনো কেউ আমাকে এ অবস্থায় দেখল না। নিজেকে মনে হচ্ছে খাঁটি অভিযাত্রী একজন, আমার পরনে জিনের প্যান্ট, গায়ে লাল ছাপ-ছাপ জামা, রোদ ঢাকার জন্য একটা টপিও ৪ পরেছি। গলায় ঝোলানো ওয়াটার বটল, চোখে রোদ চশমা। আমি আমেরিকান উট মার্কা সিগারেট খাচ্ছি। ‘ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন’–তখন তো আমি সত্যিই আরব বেদুইন! বাংলা দেশে–শুধুমাত্র আমার বাবা-মায়ের ধারণা–আমার গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। কিন্তু বন্ধুবান্ধব বা মেয়েদের চোখে আমি ছাতার মতন কালো, অথচ এক জার্মান মহিলা আমাকে দেখে বলেছিলেন–আমাকে নাকি আরবদের মতন দেখতে–আমার শরীর কত না সূর্যের আলো শুষেছে। বারবার সেই কথা মনে হতে লাগল, এ জন্মে না হোক–গত জন্মে আমি নিশ্চিত আরব ছিলুম।

বেলা বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে রোদ চিড়চিড় করতে লাগল, আগস্ট মাসের গরমে ইজিপটে ইওরোপ-আমেরিকার টুরিস্টরা সাধারণত আসে না সুতরাং পুরো মাত্রায় আমি একা। উটের পিঠে ভ্রমণ করতে বেশ আরাম লাগে বটে–কিন্তু পরদিন শরীরের সবচেয়ে নরম স্থান দুটিতে এমন ব্যথা হয় যে মনে হয় যে সারারাত্রি বিছানায় শোবার বদলে দাঁড়িয়ে থাকি। ক্রমে মেমফিসের চত্বরে এসে পৌঁছলুম। পাথর ও বালুকাময় প্রান্তরে ছড়ানো কয়েকটি পিড়ামিড-অসংখ্য ভাঙা মূর্তি ও স্তম্ভ–একটি পিরামিড দেখা মাত্র চিনতে পারলুমবহু ছবিতে দেখেছি সেটার নাম স্টেপ পিরামিড -ওর গা’টা মসৃণ নয়, সিঁড়ির মতন ধাপে ধাপে উঠে গেছে–এটাই মিশরের প্রাচীনতম পিরামিড বয়েস পাঁচ হাজার। বছর। একদা এখানেই ছিল মিশরের য়াজধানী, আর্য সভ্যতার চেয়েও প্রাচীন এক সভ্যতার একদা লীলাভূমিতে আমি এসে দাঁড়িয়েছি।

কিন্তু দাঁড়িয়েছি দর্শক হিসেবে আমি একা। এখানে আর কেউ আসেনি, যত দূর দেখা যায় শুধু বালি আর সভ্যতার পাথুরে কঙ্কাল-মাঝে-মাঝে একটু জোর বাতাসের সাঁসাঁ শব্দ! উট থেকে নামিয়ে সহিস আমাকে বলল, কাম কাম। খানিকটা পাথর বাঁধানো রাস্তা দিয়ে উঠেই দেখা গেল সরকারি নোটিশ ও একটা কুঁড়েঘর। নোটিশের মর্মার্থ–এখানে ঘুরতে গেলে সঙ্গে গাইড নিয়ে ঘুরতে হবে। আমার সহিসের নাম রফিক–বেশ হাসিখুশি এক তরুণ, সে আঙুল দেখিয়ে আমায় বলল, সি! দেখলাম এক বিশালকায় পুরুষ মাটিতে উবু হয়ে নামাজ পড়ছে। তার পাশে একটা শাবল পড়ে আছে, আর একটি তিন-চার বছরের ফুটফুটে বাচ্চা ছেলে বালি নিয়ে খেলা করছে।

হঠাৎ কোথা থেকে বিষম ভয় আমাকে পেয়ে বসল। জানি না সবারই এরকম হয় কি, কিন্তু আমার অন্তত বিদেশের কোথাও হঠাৎ খুব ফাঁকা কোনও জায়গায় পৌঁছলেই কী রকম যেন ভয় ধরে। তা ছাড়া আমি ভাবলুম এ জায়গাটা ঘুরে দেখতে আমার অন্তত তিন ঘণ্টা চার ঘণ্টা সময় লাগবে–অতক্ষণ আমাকে নিয়ে একা-একা ঘোরাবার পর গাইড যদি শেষে অসম্ভব বেশি টাকা চায়? অন্যদিক দিয়ে–মোটরেও এখানে আসার রাস্তা আছে, ভেবেছিলাম আরও অনেক টুরিস্ট নিশ্চিত আসবে–সকলে একসঙ্গে দেখব। আজ শুধু আমিই একমাত্র দর্শক। আমাকে ঘুরিয়ে দেখাবার দরকারই বা কি, ওই তো শাবল পড়ে আছে, নামাজ সেরে উঠে ওই জোয়ান লোকটা যদি শাবলের এক ঘা আমার মাথায় মারে-তাহলেই আমার শেষ, তারপর গাইড ও সহিস দুজনে মিলে আমার পকেটের সব কিছু ভাগাভাগি করে নিয়ে–ওই শাবল দিয়েই বালির যেকোনও জায়গায় গর্ত খুঁড়ে আমাকে যদি কবর দেয়–তা হলে ভূ-ভারতে কারুর জানার উপায় নেই। কিংবা যে কোনও একটা পিরামিডের ভেতরেও আমার মৃতদেহটা দুমড়ে কুঁকড়ে রেখে দিতে পারে। হয়তো কুড়ি কি পঞ্চাশ বছর বাদে কেউ আমার দেহটা আবিষ্কার করে ভাববে–আর একটা পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো মমি, আমাকে নিয়ে আবার নতুন করে গবেষণা শুরু হবে।

এই কথাটা ভাবামাত্র আমি হেসে ফেললাম। এখন মুখটা হাসি-হাসি রাখা দরকার, ওদের কাছে আমার ভয় পাওয়া মুখ মোটেও দেখানো চলবে না। গাইডের তখনও নামাজ পড়া শেষ হয়নি। শাবলের ফলাটা কী চকচকে! এশিয়া মাইনর সম্পর্কে একটা ভ্রমণ কাহিনীতে পড়েছিলুম এক জোড়া জু তো পাবার লোভেও কুবদরা মানুষ খুন করে। আমার তো জুতো জামা-কাপড় রোদ-চশমা, ফ্লাস্ক, পকেটে বেশ কিছু ইজিপসিয়ান পাউন্ডও রয়েছে। ওসব কথা মন থেকে তাড়িয়ে আমি নাচের ভঙ্গিতে পা দোলাতে-দোলাতে দুঃসাহসী যুবার মতন শিস দিয়ে ইংরেজি গাযের সুর ভাঁজতে লাগলুম। আমায় দেখলেই বুঝতে পারত, আসলে তখন আমি ভয়ে আধমরা হয়ে গেছি। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি!

বাচ্চা ছেলেটা আমার শিস শুনে খলখল করে হেসে উঠল। তাকে দেখে হঠাৎ আমার বুদ্ধি এল। এই বাচ্চা ছেলেটাই আমায় বাঁচাতে পারে। আমি ওকে দেখিয়ে সহিসকে বললুম লাভলি চাইল্ড। ভেরি সুইট লুকিং। সহিস একগাল হেসে বলল, ইয়েস হিজ নেম বাকু।

আমি সোল্লাসে বললুম বাকু? হোয়াট এ সুইট নেম? নীচু হয়ে আমি ঝপ করে ছেলেটাকে কোলে তুলে নিলুম। ওর চুলে হাত বুলিয়ে নাচতে-নাচতে বললুম, বাকু ডার্লিং, উম উম, কী সুন্দর ছেলেটা, কাঁদিস না বাবা, আল্লার দোহাই এখন কাঁদিস না, বাঃ বাঃ প্রিটি চাইল্ড, আই লাভ ইউ।

ছেলেটা কাঁদল না, মজা পাচ্ছিল বেশ, আমি ওকে নিয়ে খেলা করতে লাগলুম, সুড়সুড় দিয়ে হাসালুম। এমনকি ওর ধুলোমাখা গালে ফটাফট করে কয়েকটা চুমুও খেলাম! আমার একমাত্র আশা, ছেলেটাকে আদর করছি দেখে ওর যাবা যদি আমায় শাবল না মারে। খুনিরও তো পিতৃস্নেহ থাকে।

নামাজ পড়া শেষ করে গাইড আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে ছিল। তারপর কুঁড়েঘরের মধ্যে ঢুকে একটা লণ্ঠন নিয়ে বেরিয়ে এলো, শাবলটা এক হাতে তুলে নিয়ে বলল কাম স্যার। পিরামিড ইনসাইড অর আউট সাইড।

মাথার ওপরে গনগনে ইজিপসিয়ান সূর্য বালিতে চোখ ধাঁধানো আলো, লোকটির হাতে লণ্ঠন তখন আমার একমাত্র ইচ্ছে বেঁচে ফিরে আসা, কোনও রকমে পালানো, পিরামিডের ভেতরটা কীরকম জানি না যদি সেখানটাই খুনের প্রশস্ত স্থান হয়? একবার ইচ্ছে হল, ভেতরে ঢুকব না বলি। কিন্তু তাহলে সহিসটা অবাক হয়ে যাবে, বুঝবে ভয় পেয়েছি। সুতরাং বেপরোয়াভাবে বললুম, ইনসাইড।

লোকটি বলল, ইনসাইড ভেরি ডার্ক। কাম।

শুনেছিলাম মিশরের প্রাচীন লিপি হিয়েরোগ্রাফিকসে কোনও স্বরবর্ণ নেই, তেমনই লক্ষ করলুম, মিশরি লোকদের ইংরেজিতে প্রায় কোনও ক্রিয়াপদ থাকে না এক ওই কাম ছাড়া। শুকনো মুখে প্রাণ হাতে করে তার সঙ্গে চললুম, সহিস ওখানে অপেক্ষা করতে লাগল।

স্টেপ পিরামিডের ভেতরে ঢোকা যাবে না–ওটা এত প্রাচীন যে ঢোকা নিরাপদ নয়। একটা ছোট নতুন পিরামিড–এই হাজার তিনেক বছর বয়স–সেটার মধ্যে ঢুকতে বলল গাইড। ভেবেছিলাম পিরামিডের গায়েই কোনও দরজা থাকবে–সেখান থেকে টুপ করে ঢুকে এক পলক দেখেই বেরিয়ে আসব। কিন্তু পিরামিডটা থেকে বেশ কিছুটা দূরে–প্রায় পঞ্চাশ ফুট–থেমে গিয়ে গাইড বলল, হিয়ার। কেয়ারফুল। হ্যানডস লাইক দিস–ওয়াল। কেয়ারফুল!

একটা গর্ত মাটির নীচে সুড়ঙ্গের মতন নেমে গেছে। অন্ধকার এবং ঢালু। মাথা নীচু করে, দু-হাত দু-পাশের দেয়ালে ভর দিয়ে পা টিপে-টিপে নামতে হবে, একটু হাত আলগা হলেই গড়িয়ে নীচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছে, না এলেই ভালো হত। সামনে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে–সেই শাবল হাতে গাইড। জানি না, নীচে নেমে আমার ভাগ্যে কী আছে।

নীচে নেমে কী দেখলুম, তা বর্ণনা করার জায়গা এখানে নেই। আর একটি পৃথক রচনা দরকার। শুধু এইটুকু বলাই যথেষ্ট, মাটির ওপরে যে বিশাল ত্রিভুজ–সেটা পিরামিডের অকিঞ্চিৎকর অংশ, নিছক মাথার টুপিও বলা যায়। পিরামিডের আসল অংশ মাটির নীচে সেখানে নানান ছোট ছোট ঘর, ঘরের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা অসংখ্য ছবি সেইসব ছবিতে অনেক গল্প, আর পড়ে আছে কারুকার্য করা কিছু শূন্য কফিন–ভেতরের সব মমি পাচার হয়ে গেছে। এক সময় এই সব পিরামিডের অন্দর ভরা ছিল খাঁটি সোনার আসবাব ও মূর্তিতে–তার অনেক চুরি হয়ে গেছে, কিছু দেখেছি কায়রো মিউজিয়ামে। আর একটা পাশের কবরের ভেতরে নেমেছিলাম–সেটায় নামার পথ একটা সোজাসুজি গভীর কুয়োর মধ্যে দিয়ে, আগে সেই কুয়োতে পাথরের সিঁড়ি ছিল, এখন মিশর সরকার লোহার ঘোরানো সিঁড়ি বসিয়েছে। সেই সিঁড়ি দিয়ে নামতে-নামতে মনে হয় যেন অনন্তকাল ধরে নামছি তো নামছিই–নিজের হাত দেখা যায় না এমন অন্ধকার। একটু বাদেই মাথা ঘুরে যায়।

সেই গাইডটির মতন সরল ও নিষ্পাপ মানুষ আমি জগৎ সংসারে খুবই কম দেখেছি। আমি ভয় পাচ্ছিলুম, সে হয়তো আমাকে খুন করবে। বস্তুত অতবড় বিশাল চেহারায় আমি একটা নেহাৎ শিশু। অন্য যে কোনও জায়গার গাইডরা খুনি না হোক রক্তশোষক-টাকা নিয়ে এমন ঝোলোঝুলি করে। এই গাইডটি নিতান্তই লাজুক–টাকাকড়ির কথা মুখ ফুটে বলতেই চায় না। তার ধারণা, কত দূর দেশ থেকে লোকেরা এই যে এইসব পাথরের স্তূপ দেখতে আসে–এতে যে তাদের অত কষ্ট হয়–সেসব যেন তারই লজ্জা। ঘোরানো সিঁড়ির কবরখানায় নামার পর আমার মাথা ঝিমঝিম করছিল, আমি অবসন্নভাবে সেই অন্ধকার ভূগর্ভে বসে পড়েছিলাম–ভাবছিলাম–অতগুলো সিঁড়ি বেয়ে আর আমার দ্বারা ওপরে ওঠা সম্ভব হবে না। সে তখন তার বিশাল কাঁধ আমার হাতের তলায় দিয়ে একপ্রকার বহন করেই সেই কয়েকশো সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এল। তারপর আমাকে ওর কুঁড়ের কাছে নিয়ে গিয়ে নিজের হাতে লেবু-চা তৈরি করে খাওয়াল। জীবনে সেই একবারই চা-কে মনে হয়েছিল মৃতসঞ্জীবনী। সরকারি বাঁধা রেট অনুযায়ী ওর ন্যায্য প্রাপ্য অর্থ মিটিয়ে দেবার পর, আমি ওকে চায়ের দাম দিতে চাইলুম। ও লজ্জিত নারীর মতন হাত নেড়ে বলতে লাগল, কিছুতেই চায়ের দাম নেবে না। লোকটি দরিদ্র, তা ছাড়া সেই মরুভূমির মাঝখানে চায়ের যথেষ্ট দাম–সুতরাং আমি ওকে দাম দেবার জন্য জোরাজুরি করতে লাগলুম। ও তখন ছাপানো চায়ের কাগজটা আমার চোখের সামনে তুলে ধরে বলল, সি, টি ফ্রম ইয়োর কান্ট্রি! ইউ মানি? নো,নো, নো!