স্মৃতির শহর ১৫

একদিন কেউ এসে বলবে
তোমার বসবার ঘরে একটা চৌকি পাতবার জায়গা আছে
আমি ঐখানে আমার খাটিয়া এনে শোবো
আমার গাছতলা আর ভাল্লাগে না।

একদিন কেউ এসে বলবে
তোমার ভাতের থালা থেকে আমি তিন গ্রাস তুলে নেবো
কারণ আমার কোনো থালাই নেই
আমার অনাহার একঘেয়েমির মতন ধিকধিক করে জ্বলছে
আর আমার ভাল্লাগে না।

গাড়ি বারান্দার তলা থেকে ধুলো মাখা তিনটে বাচ্চা ছুটে এসে বলবে
ওগো, আমরা বাসি রুটি চাই না, পাঁচ নয়া চাই না
আমাদের ছাই রঙের হাফ প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরিয়ে
চুল আঁচড়ে দাও
আমাদের গাল টিপে দিয়ে বলল, সাবধানে—
আমরাও ইস্কুলে যাবো!

একদিন কয়লাখনির অন্ধকার থেকে উঠে আসবে
একজন কালো রঙের মানুষ
সে অবাক হয়ে বলবে
একি, আমার জন্য শোকসভা নেই কেন?
ডিনামাইট নিয়ে আমি গিয়েছিলুম গভীর থেকে আরও গভীরে
আমি ফিরিনি, কিন্তু তোমাদের জন্য আগুন এসেছে
আমার নামে তোমরা কেন নাম রাখো নি শহরের রাস্তার
তবে এসব রাস্তা কাদের নামে, তাদের তো চিনি না।

একদিন ধান খেতে কাদা জল মেখে দাঁড়ানো একজন মানুষ
নিজের চেয়ে আরও অনেক লম্বা হয়ে উঠে গলা তুলে বলবে,
তোমরা যারা কোনোদিন কাদা জল মাখো নি,
মাটিতে শোনন নি কোনো আওয়াজ
জানো না ঘাম রক্ত-উৎকণ্ঠায় সবুজ হয় সোনালি
সেই তোমরাই শস্য নিয়ে রাহাজানি করো
আর আমার সন্তানরা থাকে উপবাসী, তোমাদের লজ্জা করে না?
আমি আসছি…।