সে

প্রেম তাকে করে না আকুল। উদয়াস্ত তার প্রাণে
একটি মরুর জ্বালা উন্মোচিত-যেন সে দুর্জ্ঞেয় কোনো যন্ত্রণার গানে
ধুলোর বিজনে যাত্রী মোহাবিষ্ট আর হলদে পাতার বালিশে
মাথা রেখে অভীষ্ট সহজ গাঢ় ঘুমে যায় মিশে
ক্লান্তির মন্থর শ্লোকে,
অভিভূত হঠাৎ কখনো
ফুলের পাপড়ির মতো আকাশকে বলে, ‘ঐ শোনো
কার যেন বাঁশি বাজে, স্পন্দিত পৃথিবী!’-শুধু তার মনে হয়
কোথাও অলক্ষ্যে কোনো নিঃসঙ্গ ফলের মতো একটি হৃদয়
গড়ে ওঠে। সারাক্ষণ ভাবনার কত ছায়া ঝরে,
সে কার স্পর্ধিত মাথা লোটে আজ ব্যথার পাথরে?

সোনার শিকল পায়ে পারেনি পরাতে কেউ তার
ত্রিলোকের ত্রিসীমায়। একটি অরূপ নদী প্রাণে বয় যার,
সে যায় চলার ধ্যানে, জনহীন বনে সে-ও পথভ্রষ্ট, জানে সব দিক
নির্দয় কালোয় মাখা, তবু এক তৃষ্ণা তাকে করেছে পথিক।
এবং অভ্যাসবশে
উদাসীন সে-ই আসে ফিরে
সাতপুরুষের জীর্ণ ভিটের তিমিরে
মাঝে-মাঝে, আলোর দাক্ষিণ্য নেই, তবু কিছু তুলে নিতে বাসনার ফুল
পুরোনো পিদিম জ্বালে। মনে পড়ে ছিল কার কালো চুল সুগন্ধে আকুল।

সে জানে নিজের কিছু পরিচয়, জানে তার বয়সী কপালে
ক্রটির তিলক কাটা, একা-একা তাই শুধু জ্বালে
ব্যথার আগুন মনে। কোনো দিন অপরের দীপ্ত গুণে, জয়ে
হয়নি অসূয়া-দীর্ণ, তারও চোখ রূপ খোঁজে, অথচ আপন মুখ ভয়ে
কখনো দেখে না ভুলে। তাকে আর কে দেবে অভয়?
একটি অরূপ নদী (জানে সে-ও) প্রাণে তার বয়।