আত্মজীবনীর খসড়া

গলায় রক্ত তুলেও তোমার মুক্তি নেই
হঠাৎ-আলোয় শিরায় যাদের আবির্ভাব,
আসবেই ওরা ঝড়ের পরের পাখির ঢেউ।
তাদের সুদূরে ফিরিয়ে দেবার মন্ত্র যদি
জানতে, তবে কি প্রতি মুহূর্তে ব্যর্থতার
কাদাবালি মেখে সত্তা তারায় আত্মজ্যোতি
কখনো হারায়, লোকনিন্দার তীক্ষ্ম হুলে
অচিরে বিদ্ধ অকালবৃদ্ধ সহজে ব’নে
কেটে যেত কাল আকাশকুসুম জল্পনায়?
তারা যাকে বলে সফলতা তার চিহ্ন তুমি
সারা পথ হেঁটে এখনও কিছুই পাওনি খুঁজে
সহজ তো নয় স্বর্গসিঁড়ির আশায় বাঁচা।

যার দেখা পেয়ে চলতি পথের সূর্যোদয়ে
মুগ্ধ তরুণ অমরত্বের মন্ত্র পেল,
অচেনা মাঠের বিহ্বল থামে দাঁড়িয়ে একা
পেতে চাও ঐ নদীর নিবিড় শ্রাবণে যাকে,
ইচ্ছে-জোয়ারে ভেসে-ভেসে তুমি ট্রেনের পথে
নেমে যাও সুখে হঠাৎ বেঠিক ইস্টিশনে
খেয়ালি আশায় সন্ধানে যার দিনের শেষে
গ্রামান্তে কোনো, তাকেই তো বলো সুন্দর, না?

গোলকধাঁধায় তাকে খোঁজা ভার সত্য জেনো,
তার জন্যেই জপেছ গানের কত-না কলি,
পথ চেয়ে আছ সকল সময় প্রতীক্ষায়
কে জানে কখন আসবে সে তার শ্রান্ত পায়ে-
আসবে যেদিন কী দিয়ে বরণ করবে তাকে?
তোমাকে দীর্ণ করে যারা আসে, প্রস্ফুটিত
পদ্মের মতো সৃজনী আভায় কামসুরভি
ছড়ায় হৃদয়ে, কোটি জ্যোতিকণা বিলায় মনে,
সমস্ত রাত একা-একা ঘরে চার-দেয়ালে
মাথা খুঁড়ে তুমি মরছ যাদের প্রতীক্ষায়
চিনেছ তাদের বহুবার তবু কেন যে এই
লগ্নে রক্তে কুমারীর ভীরু চঞ্চলতা,
আসবেই ওরা-পারবে না তুমি ফেরাতে আর।
ভেবেছ কখনো সুরের সভায় আসন পাওয়া
সম্ভব হবে? এই যে ছড়ানো কথার কালো
দুরাশায় আজও জোনাকি-জীবন, কখনো তারা
দূরের শরতে স্মৃতিগন্ধার পাবে কি আলো?
এ-কথা কখনো জানবে না তবু মৃত্যু হবে।

শহর জেগেছে, দূরে ঘণ্টায় প্রাণের ধ্বনি,
রোগীর শরীরে নামল নিদ্রা হাসপাতালে,
যারা কোনো দিন ভুলেও পেল না আপন জন
ছেঁড়াখোঁড়া সেই কজন রাতের জুয়োশেষের
ক্লান্তিতে ফের ভিড়ল ধোঁয়াটে রেস্তোরাঁয়।
আস্তাবলের সহিস ঘোড়ার পিঠ বুলোয়,
শীতের শুকনো ডালের মতোই ভিস্তি বুড়ো
কেঁপে-কেঁপে তার জল-মসৃণ মশক বয়;
পথের কুকুর হাই তুলে চায় ধুলোয়, কেউ
জানল না ভোর ফুটল তরুণ ফুলের মতো,
খণ্ডিতা নারী এখনও আলোর আলিঙ্গনে।
আজও আছে চিরকস্তুরীটুকু লুকোনো মনে
সেই সৌরভে উন্মন তুমি, তখন জানি
দেয়ালে তোমার কাঠকয়লার আঁচড় পড়ে।