০৫. সবারই ঘুম ভাঙল অনেক দেরিতে

সবারই ঘুম ভাঙল অনেক দেরিতে।

রাত প্রায় দুটো পর্যন্ত জেগে দেখা হয়েছে জঙ্গলের রাত্রির দৃশ্য। বাঘটার ডাকই শোনা গেছে কয়েকবার। কিন্তু সার্চলাইট ফেলেও সেটাকে দেখা যায়নি।

কাকাবাবুর অবশ্য ধারণা, বাঘ একটা নয়, দুটো। ওরা হাতির পাল দেখে রেগে রেগে ডাকছিল। হাতিদের জন্যই জল খেতে আসতে পারছিল না। হাতি আর বাঘ কাছাকাছি থাকে না। হাতিরা অবশ্য বাঘের গর্জন গ্রাহ্যও করেনি। অনেকক্ষণ খেলা করেছে জলে।

সকালবেলা শুধু শোনা যাচ্ছে অসংখ্য পাখির ডাক। কিছু পাখি দেখা যাচ্ছে, কিছু পাখি পাতার আড়ালে অদৃশ্য হয়ে থাকে।

চা খাওয়ার পরই গৌতমকাকু সন্তু আর পুরুকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে চলে গেছেন বাজার করে আনতে।

কাকাবাবু একটা ইজিচেয়ারে বসে বই খুলে পড়তে লাগলেন। মিলিকাকিমা স্নানটান সেরে এসে বললেন, আপনার বন্ধু এই যে বাজারে গেল, কখন আসবে তার ঠিক নেই। দেখবেন, ও রাজ্যের জিনিস কিনে আনবে, সব খাওয়াই হবে না, ফেলে দিতে হবে!

কাকাবাবু বললেন, এখানে বাজারে গেলে ওর সবকিছুই খুব সস্তা মনে হয়, তাই না! ডলারের সঙ্গে তুলনা করলে সস্তাই তো বটে!

মিলিকাকিমা বললেন, এখানে একজোড়া ডিম মোটে পাঁচ টাকা, আমরা ওখানে ভাবতেই পারি না। আমাদের হিসেবে নব্বই-একশো টাকা তো হবেই!

কাকাবাবু বললেন, শুধু সস্তা নয়। সবকিছুই টাটকা। অবশ্য পাঁচটা টাকাও এখানকার অনেক লোকের কাছে বেশি। কত গরিব লোক ডিম খেতেই পায় না।

মিলিকাকিমা বারান্দার ধারে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, হু। মাঝে-মাঝে আমার এত কষ্ট হয়। আমরা যারা বিদেশে থাকি, আমাদের সবার উচিত প্রত্যেক মাসে কিছু কিছু টাকা এদেশের গরিবদের জন্য পাঠানো।

তারপর বললেন, কাল রাত্রে কি গন্ডার এসেছিল?

কাকাবাবু বললেন, না। গন্ডার চট করে দেখা যায় না।

এদেশে গন্ডার নেই?

থাকবে না কেন? আসামে অনেক গন্ডার আছে। পশ্চিম বাংলাতেও আছে। এখানে জঙ্গলগুলো তো ভাগ ভাগ করা। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যেও বেশ কিছু গন্ডার আছে, কিন্তু তারা বিশেষ অন্য জঙ্গলে আসে না, হঠাৎ দু-একটা ছিটকে চলে আসতে পারে।

আমি কখনও গন্ডার দেখিনি।

চিড়িয়াখানাতেও দ্যাখোনি?

কলকাতার চিড়িয়াখানায় আছে।

না, কলকাতার চিড়িয়াখানায় আবার গেলাম কবে? শুধু সিনেমায় দেখেছি।

ঠিক আছে, আমরা গন্ডার দেখতে যাব। হলং গেলে দেখা যেতে পারে। অবশ্য যদি তোমার ভাগ্যে থাকে।

গৌতমকাকু ফিরে এলেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে।

সত্যি তিনি গাড়িভর্তি করে যেন গোটা বাজারটাই তুলে এনেছেন। নানারকমের তরকারি। শাক-সবজি, মাছ, মাংস, মুরগি। এতসব সাতদিনেও খেয়ে শেষ করা যাবে না। ওঁদের এখানে থাকার কথা মাত্র তিনদিন।

এর পর মিলিকাকিমা আর গৌতমকাকু যতীনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রান্নায় মেতে উঠলেন। ড্রাইভার রতনেরও এ-ব্যাপারে খুব উৎসাহ আছে।

সন্তু অবিরাম চেষ্টা করে যেতে লাগল পুরুকে বাংলা শেখাতে।

পুরু এখন গাস-এর বদলে গাছ বলতে পারছে। দেকতে নয়, দেখতে। মাতা নয়, মাথা। বালো নয়, ভাল।

কিন্তু তেঁতুল বলতে পারছে না কিছুতেই।

টেনটুল আর টেটুল বলতে বলতে একবার সে বলে ফেলল, টেনতুল!

সন্তু বলল, বাঃ, এই তো অনেকটা হয়েছে। টেন নয়, বলো তেঁ, তেঁ, তেঁ।

পুরু বলল, টেন, টেন, টেন।

সন্তু বলল, ভাল করে শোনো। টেন নয়, এর মধ্যে ন নেই, চন্দ্র বিন্দু। আর ট-এর বদলে ত। ত তো আবার বললে! বলো, ত, ত, ত।

পুরু বলল, ত, ত, ত। তেনতুল!

সন্তু বলল, আবার ন বলছ! শুধু বলো তেঁতুল।

পুরু বলল, তেঁতুল। কাকাবাবু বই থেকে মুখ তুলে বললেন, ওই তো হয়েছে। তেতুল পর্যন্ত বলেছে। চন্দ্রবিন্দুটা পরে হবে। ত বলতে পেরেছে তো!

সন্তু বলল, তা হলে এখন তুমি, তোমাকে, তালগাছ, তখন, তারপর, তুলতুলে, তপন, তাড়াতাড়ি, এইসবই পারবে।

পুরু চেষ্টা করে ঠিকঠাকই বলে যেতে লাগল, শুধু একবার বলে ফেলল, টালগাছ। আর তপনকে কিছুতেই টপন ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারে না। তার এক মামাতো ভাইয়ের নাম তপন, তাকে টপন বলাটাই অভ্যেস হয়ে গেছে।

সব রান্না শেষ হলে খেতে খেতে বেলা সাড়ে তিনটে বেজে গেল।

মিলিকাকিমা মনের সাধ মিটিয়ে কঁচা তেঁতুলের টক রান্না করেছেন।

তাতে এক চুমুক দিয়ে পুরু বলল, মা, আমি তেতুল বলটে পারি!

মিলিকাকিমা বললেন, তোর বাবা যে বাঙাল, তাই তুই তেতুল পর্যন্ত পেরেছিস। চন্দ্রবিন্দু আর হবে না!

গৌতমকাকু বললেন, নিশ্চয়ই পারবে। আমি তো পারি। তেঁতুল! বল, তেঁতুল!

এবারে পুরু বলল, তেঁতুল!

কাকাবাবু বললেন, বাঃ, এ তো দারুণ ইমপ্রুভমেন্ট! একবেলার মধ্যে…

সন্তু গম্ভীরভাবে মাস্টারমশাইয়ের মতন বলল, কাকাবাবু, তোমার এক নম্বর। আর পুরু, তুমি তেঁতুল ঠিক বললে, কিন্তু আবার বলটে হয়ে গেল কেন? বলতে বলতে পারো না?

একটু পরেই বিকেল হয়ে যাবে, আজ আর বেরোনো হল না।

সন্ধে হতেনা-হতেই আবার দেখা গেল হাতির পাল। অনেক হরিণ। বারবার শোনা গেল ময়ূরের ডাক।

আজও দুবার শোনা গেল বাঘের গর্জন।

পরদিন সকালে কাকাবাবু সবাইকে বললেন, তোমরা তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও, আজ জলদাপাড়া যাব। মিলিকে গন্ডার দেখাতে হবে।

পুরু জিজ্ঞেস করল, গন্ডার কী?

সন্তু বলল, তোমাকে ইংরেজি নামটা বলব না। তা হলেই আমার এক পয়েন্ট হয়ে যাবে। সেটা এমন একটা প্রাণী, মোষের চেয়ে একটু বড়, হাতির থেকে ছোট, আর গায়ের চামড়া খুব পুরু।

কাকাবাবু বললেন, গন্ডারকে আজ যদি কাতুকুতু দাও, সাতদিন পরে হাসবে।

সবাই হেসে উঠল, শুধু অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইল পুরু। সে বেচারি কাতুকুতু মানেও জানে না।

গৌতমকাকু বললেন, বুঝলি না তো! জন্তুটাকে যদি দেখতে পাস, তা হলে ঠিক চিনতে পারবি?

সবাই মিলে গাড়িতে ওঠার পর হলং বাংলোতে পৌঁছতে ঘণ্টা দুয়েক লেগে গেল। এখানকার গেট দিয়ে ঢোকার ব্যাপারে কড়াকড়ি আছে, কিন্তু কাকাবাবুর নাম শুনে ছেড়ে দিল। ডি এম সাহেব ফোন করে জানিয়ে রেখেছিলেন।

ভেতরে আসার পর এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে কাকাবাবুকে বললেন, আমি এখানকার ফরেস্ট রেঞ্জার, আমার নাম আমজাদ আলি। আপনিই তো কাকাবাবু? ডি এম সাহেব আপনাদের কথা বলেছেন। আমি কালকেও আপনাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।

কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ, কাল আর আসা হয়নি।

আমজাদ আলি বললেন, আপনাদের জন্য দুটো ঘরের ব্যবস্থা করা আছে। আজ রাত্তিরে এখানে থাকবেন তো?

কাকাবাবু বললেন, না, আমাদের সব জিনিসপত্র চাপড়ামারিতে আছে। আমরা এখানকার জঙ্গলটা একটু ঘুরে দেখে যেতে চাই। আলিসাহেব, গন্ডার দেখা যেতে পারে কি?

আমজাদ আলি বললেন, গন্ডার দেখতে হয় ভোরবেলা হাতির পিঠে চেপে। দুপুরবেলা তো জঙ্গলে ঢোকার নিয়ম নেই। তা আপনাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা যেতেই পারে। সবাই হাতির পিঠে চাপবেন তো?

গৌতমকাকু বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, খুব ভাল হবে।

পুরুর দিকে ফিরে বললেন, আমরা এলিফ্যান্ট রাইড নেব, বুঝলি। দারুণ থ্রিলিং হবে।

সন্তু বলল, গৌতমকাকু, আপনার দুই!

মিলিকাকিমা বললেন, আমি বাপু হাতির পিঠে চাপতে পারব না। আমার ভয় করবে!

কাকাবাবু বললেন, ঠিক আছে, মিলি আর আমি গাড়িতেই যাব। একটা হাতির পিঠে সবাই মিলে চাপাও যাবে না।

আমজাদ আলি বললেন, দুটো হাতির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে, আপনারা উঠতে না চাইলে জিপগাড়িতে যেতে পারেন, আপনাদের গাড়ি ভেতরের রাস্তায় চলতে পারবে না।

গৌতমকাকুর সঙ্গে সন্তু আর পুরু চাপল হাতির পিঠে। আমজাদ আলির নিজস্ব জিপে উঠলেন কাকাবাবু আর মিলিকাকিমা।

জঙ্গলের মধ্যে খুবই এবড়োখেবড়ো রাস্তা। জিপগাড়িটা চলছে লাফিয়ে লাফিয়ে। হাতির কোনও অসুবিধে নেই, সে চলেছে দুলকি চালে।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, আলিসাহেব, আপনার বাড়ি কোথায়?

আমজাদ আলি বললেন, আমাকে স্যার তুমি বলবেন। সাহেবটাহেব কিছু নয়, শুধু আমজাদ। আমার বাড়ি মালদায়। এখানে আছি অনেকদিন। জঙ্গল আমার ভাল লাগে। তবে, এবারে ট্রান্সফার নেওয়ার চেষ্টা করছি।

কেন?

আগে এ-অঞ্চলটা খুবই ভাল ছিল। খুব শান্তিপূর্ণ। কিন্তু এখন সময় খুব খারাপ হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগেই আমার একজন ফরেস্ট গার্ড মারা পড়েছে।

কোনও জানোয়ারের হাতে মারা পড়ল?

না, স্যার। আমাদের ট্রেনিং নেওয়া আছে। জন্তু-জানোয়ারের হাত থেকে কী করে বাঁচতে হয়, তা আমরা জানি। ফরেস্ট গার্ডকে ওরা গুলি করে মেরেছে।

ওরা মানে কারা?

সবার পরিচয় কী আর জানি! নানারকম অপরাধীরা এই জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা তো খুব সহজ। বাইরের লোক আসতে পারে না। পুলিশও আসে না। শুধু আমরা কয়েকজন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লোক। আমাদের কাছে তো তেমন অস্ত্রশস্ত্র নেই। ওদের কাছে অতি আধুনিক মারাত্মক সব অস্ত্র আছে। যখন-তখন আমাদের মুখোমুখি হলেই মেরে দেয়।

মিলিকাকিমা বললেন, বাবা রে বাবা, জঙ্গলের মধ্যেও শান্তি নেই?

আমজাদ আলি বললেন, দিদি, মানুষের মতন হিংস্র জন্তু কি আর আছে? এই জঙ্গলে হাতি, বাঘ, গন্ডার আছে বটে, কিন্তু গত তিন বছরের মধ্যে আমাদের একজন লোকও কোনও জানোয়ারের আক্রমণে মরেনি। কিন্তু মানুষের হাতে মরেছে তিনজন। বিনা দোষে। শুধু তাদের দেখে ফেলাটাই অপরাধ।

মিলিকাকিমা বললেন, এই রে, এখন যদি আমরা ওদের কারুকে দেখে ফেলি?

আমজাদ আলি বললেন, আমরা খুব গভীর জঙ্গলে যাব না। তা ছাড়া দিনের বেলা ওরা লুকিয়ে থাকে।

মিলিকাকিমা বললেন, কাজ নেই বাপু গন্ডার দেখে। চলুন, আমরা ফিরে যাই।

আমজাদ আলি বললেন, ওই দেখুন, একপাল শম্বর!

মিলিকাকিমা কই কই বলে এদিক-ওদিক তাকিয়ে, তারপর দেখতে পেয়ে বললেন, বাঃ, ভারী সুন্দর তো। বড় বড় হরিণকে বুঝি শম্বর বলে?

আমজাদ আলি বললেন, এখানে নানারকম হরিণ দেখতে পাবেন। হরিণ প্রচুর বেড়েছে। আমরা এই জঙ্গলটার খুব যত্ন করে জন্তু-জানোয়ারের সংখ্যা অনেক বাড়িয়েছি, কিন্তু মানুষের হিংস্রতার জন্য সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!

কাকাবাবু বললেন, এইসব সংরক্ষিত অরণ্যে নানা ধরনের অপরাধীদের লুকিয়ে থাকা সহজ। সরকার কি তা বোঝে না? সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয় না?

আমজাদ আলি মুখোনা মলিন করে বললেন, সে আমি কী করে বলব বলুন! আমি এখন এখান থেকে চলে যেতে পারলে বাঁচি।

আরও পাল পাল হরিণ দেখা যাচ্ছে। নানান জাতের হরিণ।

হাতির ওপর বসে গৌতমকাকু বললেন, কই হে, এ জঙ্গলে কি হরিণ ছাড়া আর কিছু নেই? ওহে মাহুত, এখানে বাঘ নেই?

মাহুত বলল, হ্যায় হুজুর।

গৌতমকাকু বললেন, বাইসন, হাতিও তো দেখা যাচ্ছে না।

মাহুত বলল, কাল সুবে সুবে আসবেন। তখন বহুৎ কিছু দেখতে পাবেন।

গৌতমকাকু একদিকে হাত দেখিয়ে বললেন, ওই যে একটা ময়ূর। যাক, তবু একটা ময়ূর দেখা গেল।

পুরু অন্যদিকে হাত দেখিয়ে উত্তেজিতভাবে বলল, রাইনো, রাইনো!

সত্যি, ডান দিকের একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে দুটো গন্ডার। পাশাপাশি। দেখে মনে হয়, এক্ষুনি দৌড় শুরু করবে।

গৌতমকাকু ক্যামেরা বার করে ছবি তুলতে লাগলেন।

সন্তু পুরুকে বলল, এবার তো বুঝলে গন্ডার কাকে বলে?

পুরু বলল, হ্যাঁ, রাইনো। বাবা যে বলছিল। কাটাকুটু দেবে, তার মানে কী?

সন্তু বলল, কাটাকুটু নয়, কাতুকুতু! ঠিকমতন তুমি যদি উচ্চারণ করতে পারো, তা হলে মানে বলে দেব?

পুরু বলল, কাতাকুতু? কাতুকুতু?

সন্তু বলল, এবার ঠিক হয়েছে।

তারপরই সে পুরুর বগলের তলায় হাত দিয়ে কাতুকুতু দিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে হাসিতে ছটফট করে উঠল পুরু। সরে গেল দূরে।

সন্তু বলল, এই হচ্ছে কাতুকুতু! পুরু জিজ্ঞেস করল, গন্ডার সাতদিন পরে হাসে কেন?

সন্তু বলল, গন্ডারের চামড়া এতই পুরু যে, সুড়সুড়িটা ভেতরে পৌঁছতে অনেক সময় লাগে।

পুরু জিজ্ঞেস করল, সুড়সুড়ি মানে?

গৌতমকাকু বললেন, থাক, যথেষ্ট হয়েছে আজকের মতন। ওই দ্যাখ গন্ডার দুটো দৌড়চ্ছে। এসব তো আর দেখতে পাবি না। বাংলা পরে শিখলেও চলবে।

গন্ডারদুটো দৌড়ে জঙ্গলের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।

ওরা যে হাতিটায় চেপেছে, সেটা হঠাৎ শুঁড় তুলে ডেকে উঠল।

মাহুত বলল, শের হ্যায়। বাঘ দেখলে হাতি রাগ করে।

সবাই ব্যগ্রভাবে বাঘ দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু সেটাকে দেখা গেল না।

এর পর আর অনেকক্ষণ হরিণের দৌড়নো ছাড়া আর দেখা গেল না কিছুই।

কাকাবাবুর নির্দেশে সবাই ফিরে এল হলং বাংলোয়।

আমজাদ আলি ওঁদের না খাইয়ে ছাড়লেন না। খাওয়া শেষ করতে করতে গড়িয়ে গেল দুপুর।

কাকাবাবু বললেন, এবার আমাদের রওনা হওয়া উচিত। সন্ধের আগে চাপড়ামারি পৌঁছলে ভাল হয়।

আমজাদ আলি বললেন, হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন, সন্ধে হয়ে গেলে আর বাংলো থেকে বেরোবেন না। দিনকাল ভাল নয়।

তখনই হলং ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেও চাপড়ামারি পৌঁছতে বেশ দেরি হয়ে গেল। রাস্তায় একটা ট্রাকের সঙ্গে একটা জিপগাড়ির অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, তাই দারুণ জ্যাম।

এর মধ্যে সন্ধে হয়ে এসেছে। বাংলোয় পৌঁছেই কাকাবাবু বললেন, যতীন কোথায়, চা বানাও, চা বানাও, বিকেলের চা খাওয়া হয়নি।

গৌতমকাকু বললেন, জ্যামের জন্য যখন গাড়ি থেমে ছিল, তখন দেখি যে রাস্তার পাশে একটা দোকানে শিঙাড়া ভাজছে। গরম গরম শিঙাড়া কিনে এনেছি, চায়ের সঙ্গে জমবে!

মিলিকাকিমা বললেন, বাবা রে বাবা, শিঙাড়া দেখলে তুমি আর লোভ সামলাতে পারো না। যখন পেট খারাপ হবে, তখন বুঝবে।

গৌতমকাকু বললেন, এখানকার জল খুব ভাল। আমি পাথর খেয়েও হজম করতে পারব!

দোতলার বারান্দায় বসে সবেমাত্র চা পান শুরু হয়েছে, তখনই একটা জিপগাড়ি এসে থামল গেটের বাইরে। তার থেকে ঝপাঝপ করে নেমে পড়ল তিনজন পুলিশ।

কাকাবাবু উঁকি দিয়ে দেখে ভুরু কুঁচকে বললেন, আবার পুলিশ কেন? ওদের আসতে বারণ করে দিলাম।

পুলিশ তিনজন গটগট করে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠে এল ওপরে। তাদের একজনের হাতে একটা স্টেনগান।

তাদের মধ্যে একজন সামনে এগিয়ে এসে কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, মিস্টার রায়চৌধুরী, চা খাচ্ছেন? ঠিক আছে, শেষ করে নিন।

কাকাবাবু বললেন, কী ব্যাপার?

পুলিশটি বলল, ব্যাপার কিছুই নয়। আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।

কাকাবাবু বললেন, যেতে হবে মানে? কোথায় যাব? আপনাদের কে পাঠিয়েছে?

লোকটি হাসিমুখে বলল, কেউ পাঠায়নি। আমি নিজেই এসেছি।

কাকাবাবু সঙ্গে সঙ্গে বুঝে গেলেন, এরা আসল পুলিশ নয়। তিনি হাতের চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে রাখতেই সেই লোকটি বলল, আমি জানি, আপনার সঙ্গে একটা রিভলভার থাকে। সেটা বার করার চেষ্টা করবেন না। আপনি দুহাত ওপরে তুলে থাকুন।

গৌতমকাকু কিছু বুঝতে না পেরে বললেন, পুলিশের লোক এরকম ব্যবহার করছে কেন? আপনারা রাজা রায়চৌধুরীকে চেনেন না? এখানকার ডি এম সাহেবের উনি কাকা হন।

সেই লোকটি এক ধমক দিয়ে বলল, শাট আপ! আর কেউ একটাও কথা বলবে না। আমি অকারণ রক্তারক্তি পছন্দ করি না।

সে এগিয়ে এসে কাকাবাবুর গা চাপড়ে কোটের ভেতরের পকেট থেকে রিভলভারটা বার করে নিয়ে নিজের কোমরে গুঁজল।

তারপর বলল, এঁকে চিনব না কেন? রাজা রায়চৌধুরী কাকাবাবু নামেই বেশি বিখ্যাত। বিখ্যাত বলেই তো এঁকে নিয়ে যেতে এসেছি। আমার নাম শঙ্কর রায়বর্মন। আমিও কম বিখ্যাত নই। এ-তল্লাটে অনেকেই আমার নাম শুনলে ভয়ে কাঁপে। নিন, চটপট চা-টা শেষ করে নিন।

কাকাবাবু শান্তভাবে বললেন, আপনার নাম আমি শুনেছি। আরও চা আছে। আপনি চা খাবেন?

শঙ্কর রায়বর্মন বলল, না, আমি চা খাব না। তবে একটা শিঙাড়া খেতে পারি।

গৌতমকাকু বললেন, এরা আসল পুলিশ নয় বুঝি?

সন্তু মাথা নাড়ল।

কাকাবাবু বললেন, শঙ্কর রায়বর্মন, আপনি যে উদ্দেশ্যে আমাকে ধরে নিয়ে যেতে চাইছেন, তা সফল হবে না।

শঙ্কর রায়বর্মন হেসে বলল, আমি কী উদ্দেশ্যে এসেছি, তা আপনি এর মধ্যেই বুঝে গেছেন? তা পারবেন না কেন, আপনি বুদ্ধিমান লোক। আপনার মাথার দাম আমি ঠিক করেছি, কুড়ি লক্ষ টাকা। সেই টাকাটা পেলেই আপনাকে ছেড়ে দেব।

কাকাবাবু বললেন, এর আগেও কয়েকবার আমাকে এই অবস্থায় পড়তে হয়েছে। কোনওবারই কেউ শেষপর্যন্ত আমাকে ধরে রাখতে পারেনি। টাকাও পায়নি।

শঙ্কর রায়বর্মন বলল, আপনার অনেক অভিযানের কাহিনী আমি পড়েছি। যারা আগে কয়েকবার আপনাকে আটকে রেখেছিল, তারা সব বোকা! আমার হাত থেকে আপনি কিছুতেই পালাতে পারবেন না। পুলিশ আমার টিকিটিও ছুঁতে পারবে না। এই আমার চ্যালেঞ্জ রইল।

কাকাবাবু বললেন, কিন্তু আমার জন্য কুড়ি লক্ষ টাকা কে দেবে? আমার অত টাকা নেই, আমার দাদাও অত টাকা দিতে পারবেন না।

শঙ্কর রায়বর্মন বলল, আপনাদের তো কলকাতায় একটা বাড়ি আছে, সেটা বিক্রি করে দেবেন। কিংবা, এরা ফিরে গিয়ে আর যে-কোনওভাবে হোক, টাকার জোগাড় করুক।

কাকাবাবু বললেন, টাকা দিতে না পারলে কী হবে?

শঙ্কর রায়বর্মন বলল, দেবে, দেবে, ঠিকই দেবে। আর বেশি ত্যাণ্ডাই ম্যাণ্ডাই করলে—

কাকাবাবু বললেন, আমাকে মেরে ফেলবেন, এই তো!

শঙ্কর রায়বর্মন বলল, না, না, সোনার হাঁসকে কি কেউ প্রথমেই মারে? দরকার হলে একটু একটু করে, যেমন ধরুন, প্রথমে আপনার ডান হাতের পাঞ্জাটা কেটে আপনার দাদার কাছে পাঠিয়ে দেব।

কাকাবাবু বললেন, ওরে বাবা, প্রথমেই ডান হাত? তা হলে আর রইলটা কী? সেই যে গান আছে, মুণ্ডু গেলে খাবোটা কী?

শঙ্কর রায়বর্মন এবার হিংস্র মুখ করে বলল, আপনি আমার সঙ্গে রসিকতা করছেন? আমাকে এখনও চেনেন না।

সে কাকাবাবুর গালে ঠাস করে এক চড় কষাল।

গৌতমকাকু আঁতকে উঠে বললেন, এই, এই, ওর গায়ে হাত তুলছ!

শঙ্কর রায়বর্মন ওঁর দিকে ফিরে বলল, আপনি কে? আপনার নামটা শুনি? আপনার পরিচয় কী?

গৌতমকাকু বললেন, আমার নাম ডাক্তার গৌতম হালদার, আমি এখানে থাকি না। আমেরিকায়…

কাকাবাবু ওঁকে বাধা দিয়ে বললেন, এই গৌতম—

ততক্ষণে গৌতমকাকু বলে ফেলেছেন, আমেরিকায় আছি বহু বছর…

শঙ্কর রায়বর্মন শিস দিয়ে বলল, আপনি আমেরিকায় থাকেন, ডাক্তার? দেন ইউ আর এ বিগার ফিশ। আপনাকেই বা ছাড়ি কেন? আপনার মাথার দাম অন্তত পঞ্চাশ লাখ তো হবেই। আপনাকেও যেতে হবে আমাদের সঙ্গে। এই জটা, এর হাতদুটো পিছমোড়া করে বেঁধে ফেল।

ওর একজন সঙ্গী এল গৌতমকাকুর হাত বাঁধতে।

কাকাবাবু বললেন, ওকে নিলে কিন্তু আপনার বিপদ হবে। আমার জন্য কেউ মাথা ঘামাবে না। আমি মরি কি বাঁচি, তাতে কারও কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমার এই বন্ধু আমেরিকার নাগরিক। ওকে ধরে রাখলে আমেরিকার সরকার এদেশের সরকারকে চাপ দেবে।

শঙ্কর রায়বর্মন অবজ্ঞার সঙ্গে বলল, ওসব আমেরিকা ফ্যামেরিকা আমাকে দেখাবেন না। আমি গ্রাহ্য করি না। কী করে টাকা আদায় করতে হয়, আমি জানি।

কাকাবাবু বললেন, এটা কিন্তু তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছ!

শঙ্কর রায়বর্মন হুঙ্কার দিয়ে বলল, তুমি? আমাকে তুমি বলার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?

আবার সে কাকাবাবুর গালে একটা চড় কষাল।

সন্তু এবার ছেলেমানুষের মতন ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠল। দুহাতে মুখ চাপা দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, কাকাবাবুকে মারছে! কাকাবাবুকে মারছে!

শঙ্কর রায়বর্মন সন্তুকে পা দিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে বলল, এই ছোঁড়া, চুপ কর! এতবড় ধেড়ে ছেলে, কাঁদছে দ্যাখ!

সেই পায়ের ধাক্কায় সন্তু গড়িয়ে পড়ল মাটিতে।

সঙ্গে সঙ্গে সে একজন নকল পুলিশের পা ধরে এ্যাচকা টান দিল। সেই লোকটার হাতেই স্টেনগান।

সে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতেই সন্তু তার হাত থেকে স্টেনগানটা ছিনিয়ে নিয়ে তড়াক করে উঠে দাঁড়াল।

গম্ভীর গলায় বলল, এবারে তিনজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যান। এদিক-ওদিক করলেই আমি গুলি চালাব। শঙ্কর রায়বর্মন, আপনার হাতের রিভলভারটা টেবিলের ওপর রাখুন।

শঙ্কর রায়বর্মন কাকাবাবুর সামনে থেকে নড়ল না।

সন্তুর দিয়ে চেয়ে বলল, এ ছোঁড়ার এলেম আছে তো দেখছি! এর নাম সন্তু, তাই না? ওর কথা আমার আগেই ভাবা উচিত ছিল। তা তুই কী করবি? কী করে ওটা চালাতে হয় জানিস?

কাকাবাবু বললেন, সন্তু কিন্তু সবরকম ফায়ার আর্মস চালাতে জানে।

শঙ্কর রায়বর্মন বলল, তাই নাকি? মানুষ মারার অভ্যেসও আছে, দেখি কেমন পারিস?

কাকাবাবু বললেন, প্রাণে না মারলেও ও পায়ে গুলি চালাবে।

শঙ্কর রায়বর্মন সিনেমার ভিলেনের মতন হা-হা করে হেসে উঠল। তারপর বলল ফক্কা! ফক্কা! ওটার মধ্যে গুলি নেই। আর্মির কাছ থেকে দুটো এ কে ফরটি সেভেন কেড়ে নিয়েছি, কিন্তু গুলি পাইনি। তবে, শুধু ওগুলো দেখলেই সবাই ভয় পেয়ে যায়। গুলির অর্ডার দিয়েছি, এসে যাবে।

তার হাতে কাকাবাবুর রিভলভার। নিজের কোমর থেকে আর একটা রিভলভার বার করে বলল, এই দুটোতে কিন্তু গুলি আছে। মানুষ মারতে আমার একটুও হাত কাঁপে না। এই ছোঁড়া, তুই অস্তরটা ফেরত দিবি, না গুলি খেতে চাস।

কাকাবাবু বললেন, ওটা ফেরত দে, সন্তু!

সন্তু সেটা পায়ের কাছে নামিয়ে রাখল।

শঙ্কর রায়বর্মন তার কাছে গিয়ে প্রথমে কাঁধ চাপড়ে বলল, গুড অ্যাটেন্ট মাই বয়!

তারপর সন্তুকেও সে একখানা থাপ্পড় মারল খুব জোরে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ফের যদি পাকামি করিস, তোর কাকাবাবুর মতন তুইও খোঁড়া হবি! এটা ছেলেখেলা নয়, যুদ্ধ। আমি যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। আমি এখানকার রাজা!

কাকাবাবুর দিকে ফিরে বলল, আর দেরি নয়, রাজা রায়চৌধুরী, উঠে পড়ো। ক্রাচ বগলে নাও। তোমার এই আমেরিকান ডাক্তার বন্ধুটিও আমাদের সঙ্গে যাবে।

মিলিকাকিমা এতক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এবার তিনি বলে উঠলেন, ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমিও সঙ্গে যাব।

শঙ্কর রায়বর্মন বলল, না, না, আমরা মহিলাদের গায়ে হাত ছোঁয়াই না। আপনারা কলকাতায় ফিরে যান, টাকার জোগাড় করুন গিয়ে। ছোট ছেলেদেরও আমরা ধরে রাখি না।

মিলিকাকিমা ছুটে এসে তাঁর স্বামীকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে বললেন, আমি কিছুতেই ওঁকে একা যেতে দেব না!

শঙ্কর রায়বর্মন বলল, এইমাত্র বললাম, আমরা মেয়েদের গায়ে হাত দিই না। কিন্তু আপনি এরকম করলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে বাধ্য হব। শেষ পর্যন্ত দরকার হলে গুলিও চালাব। কোনও লাভ নেই, সরে যান। ও ডাক্তারমশাই, আপনার বউকে

সরে যেতে বলুন।

গৌতমকাকু বললেন, মিলি সরে যাও।

মিলিকাকিমা বললেন, না, আমি কিছুতেই তোমাকে এই বিপদের মুখে যেতে দেব না!

শঙ্কর রায়বর্মন মিলিকাকিমাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য হাত তুলতেই পুরু দৌড়ে এসে বলল, ডোন্ট টাচ মাই মাদার!

শঙ্কর রায়বর্মন বলল, দেন আস্ক ইয়োর মাদার টু স্টেপ অ্যাসাইড।

তারপর সে মিলিকাকিমাকে বলল, শুনুন, আপনার স্বামীর কোনও বিপদ হবে না। ভালই খাওয়াদাওয়া আর শোয়ার জায়গা দেব। দশদিন সময়। এর মধ্যে টাকাটা জোগাড় করুন। টাকা পেলেই সুস্থভাবে ফিরিয়ে দেব। টাকা না পেলে অবশ্য একটা-একটা করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফেরত যাবে।

মিলিকাকিমা বললেন, আপনার কথা শুনে মনে হয়, আপনি লেখাপড়া জানেন। আপনি এরকম নিষ্ঠুরের মতন কথা বলছেন?

শঙ্কর রায়বর্মন বলল, লেখাপড়া জানলেই কি নিজের অধিকার ছেড়ে দিতে হবে? আমি যে কারণে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি, তার জন্য আমার অনেক টাকার দরকার। টাকার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। আমেরিকায় থাকেন। পঞ্চাশ লাখ টাকা আর আপনাদের কাছে এমন কী ব্যাপার! এক কোটি, দুকোটি তো চাইনি! তাও চাইতে পারতাম!

এর পর সে কাকাবাবুর গায়ে রিভলভারের খোঁচা দিয়ে বলল, আর দেরি নয়!

কাকাবাবু আর গৌতমকাকুকে নিয়ে ওরা নীচে নেমে গেল। তার পরেই তাঁদের তুলে নিয়ে জিপগাড়িটা মিলিয়ে গেল জঙ্গলের অন্ধকারে।

মিলিকাকিমা ধপাস করে একটা চেয়ারে বসে পড়ে বললেন, ধরে নিয়ে গেল? সত্যিই ধরে নিয়ে গেল? অ্যাঁ! এখন কী হবে?

পুরু বলল, কিডন্যাপিং! অ্যাবডাকশান! উই মাস্ট ইনফর্ম দা পুলিশ রাইট নাও! হোয়ার দা হেল উই দেন ফাইন্ড আ টেলিফোন, সন্তু?

তার এখন একটাও বাংলা কথা মনে পড়ছে না।