০৩. রাত্তিরে খাওয়ার আগে

রাত্তিরে খাওয়ার আগে বারান্দায় কয়েকখানা চেয়ার পেতে নানারকম গল্প হল অনেকক্ষণ। এ-দিকের কয়েকটা ঘরে ইলেকট্রিকের আলো থাকলেও নিভে গেল একটু বাদেই। গ্রামের দিকে লোডশেডিং হয় শহরের চেয়েও বেশি। এক-এক সময় দু-তিনদিন একটানা কারেন্ট থাকে না।

দীপা বলল, এই রে, সারারাত অন্ধকারে থাকতে হবে! পাখাও ঘুরবে!

বিমান বলল, বৃষ্টির জন্য গরম অনেক কমে গেছে। একটা হ্যাজাক বাতি জ্বেলে আনব?

অসিত বলল, এখন থাক। এই তো বেশ লাগছে। পরে খাওয়ার সময় হ্যাজাক দরকার হবে।

বিমান বলল, তখন একটা নিরীহ লোককে দেখে আমরা কী ভয় পেয়ে গেলাম! লজ্জার কথা?

দীপা বলল, সব সময় আমাকে দোষ দাও। কিন্তু তুমিই বেশি ভয় পেয়েছিলে!

বিমান জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা কাকাবাবু, আমরা কেউই তো ভূতে বিশ্বাস করি না। এমন কী দীপাও মানে যে, ভূত বলে কিছু নেই। মানুষ মরে গেলে আর কোনওরকমেই তার পৃথিবীতে ফিরে আসার উপায় নেই, এ তো আমরা সবাই জানি। তবু ভয় পাই কেন?

কাকাবাবু বললেন, আমরা ভূতের ভয় পাই না। আমরা অন্ধকারকে ভয় পাই। এটা বহু যুগের সংস্কারের ব্যাপার।

দীপা বলল, শুধু অন্ধকারের জন্যই ভয়?

কাকাবাবু বললেন, দিনের বেলায় রোদ্দুরের আলোয় তুমি যদি দ্যাখো একটা জীবন্ত কঙ্কাল খটখটিয়ে আসছে, তা দেখে কি তোমার ভয় হবে? বরং তোমার হাসি পাবে। কারণ, তুমি জানো, কোনও কঙ্কালের পক্ষে হাঁটা সম্ভব নয়। কেউ নিশ্চয়ই কোনও কায়দা করে তোমাকে ঠকাতে চাইছে। কিংবা ধরো, এখানে একশো পাওয়ারের একটা বাল্ব জ্বলছে, তার মধ্যে যদি একটা ঘোমটাপরা পেত্নি এসে পড়ে, তা হলে তুমি কি ভয় পাবে? তুমি অমনি জিজ্ঞেস করবে, অ্যাই, তুই কে রে? এখানে ন্যাকামি করছিস?

অসিত বলল, যেসব দেশে লোডশেডিং হয় না, সমস্ত গ্রামেও আলো জ্বলে, সেসব দেশ থেকে ভূত পালিয়ে গেছে চিরকালের জন্য।

কাকাবাবু বললেন, অন্ধকার সম্পর্কে বহু যুগ আগেকার ভয় এখনও আমাদের রক্তের মধ্যে রয়ে গেছে। অন্ধকারে বিপদ আসতে পারে যে-কোনও দিক থেকে। যে-বিপদটাকে আমরা চোখে দেখতে পাই না। সেটা সম্পর্কে আমাদের যুক্তিও গুলিয়ে যায়।

অসিত বলল, আমারও প্রথমটা লোকটাকে দেখে বুকটা কেঁপে উঠেছিল, স্বীকার করতে লজ্জা নেই।

কাকাবাবু বললেন, ভাগ্যিস আমি বিছানাটা দেখতে পেয়েছিলাম, তাই লোকটাকে গুলি করিনি।

অসিত বেশ অবাক হয়ে মুখ ফিরিয়ে বলল, গুলি করতেন মানে? আপনার কাছে কি রিভলভার-টিভলভার আছে নাকি?

বিমান বলল, বাঃ, আপনি রাজা রায়চৌধুরী, মানে কাকাবাবু সম্পর্কে কিছু জানেন না? ওঁর কত শত্রু। সব সময় একটা অস্ত্র তো সঙ্গে রাখতে হবেই!

অসিত আবার জিজ্ঞেস করল, ওঁর এত শত্ৰু কেন? উনি কী করেন?

কাকাবাবু বললেন, ওসব কথা থাক। বিমান, তুমি যে তখন বললে, ছাদের ঘরে তোমার এক ক্রিশ্চান দাদু থাকতেন। তিনি সত্যিই ক্রিশ্চান ছিলেন?

বিমান বলল, হ্যাঁ, উনি ছিলেন আমার মায়ের এক কাকা। ঠিক আপন নন, একটু দূর সম্পর্কের। উনি এবাড়িতেই থাকতেন। শুনেছি অনেক লেখাপড়া করেছিলেন। এখানে কাছাকাছি ক্রিশ্চান মিশনারিদের একটা চার্চ আছে। সেখানে কিছুদিন যাতায়াত করতে করতে উনি হঠাৎ দীক্ষা নিয়ে ফেললেন। ওঁর আগে নাম ছিল ধর্মনারায়ণ রাও, দীক্ষা নেওয়ার পর নাম হল গ্রেগরি রাও।

তাই নিয়ে খুব গোলমাল হয়েছিল নিশ্চয়ই!

তা তো হবেই। আগেকার দিনের ব্যাপার। ধর্ম বদল করার ব্যাপারটা কেউ সহজে মেনে নিতে পারত না। এ বাড়ির যিনি তখন কর্তা ছিলেন; তিনি এত রেগে গেলেন যে, সেই গ্রেগরি রাওকে তাড়িয়ে দিলেন বাড়ি থেকে। শুধু তাই নয়, হুকুম দেওয়া হল যে সে এই জেলাতেই কোথাও থাকতে পারবে না। এবাড়ির সঙ্গে তার সম্পর্কের কথাও যেন কেউ না জানতে পারে। গ্রেগরি রাও নিরুদ্দেশে চলে গেলেন।

দীপা বলল, তারপর তো অনেক বছর পর তাঁকে বম্বে না কোথায় আবার খুঁজে পাওয়া গেল।

বিমান বলল, আমাকে বলতে দাও না! আমার মামাবাড়ির ব্যাপার আমি তোমার থেকে ভাল জানি। গ্রেগরি রাও নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার পর অনেকদিন তার কোনও খবর পাওয়া যায়নি, কেউ খবর জানতেও চায়নি!

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, উনি বিয়ে-টিয়ে করেননি?

না। কখনও চাকরিবাকরি করেননি, টাকা রোজগার করতেও শেখেননি। এবাড়িতে তাঁর কোনও দরকারও হত না সে-আমলে। তিনি কোথায় চলে গেলেন কে জানে। প্রায় বছর দশেক বাদে আমার মায়ের বাবা, তার মানে আমার দাদু একবার কী কাজে গিয়েছিলেন, বম্বেতে। সেখান থেকে বেড়াতে গেলেন গোয়র পাঞ্জিম শহরে। যে হোটেলে উঠলেন, তার ম্যানেজার বাঙালি। তিনি আমার দাদুকে আগে থেকেই চিনতেন। কথায় কথায় সেই ম্যানেজার বললেন, আপনাদের বংশের একজন মানুষ এখানে খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। তিনি খুব অসুস্থ, বিনা চিকিৎসায়, না খেতে পেয়ে মারা যাবার উপক্রম।

গ্রেগরি রাও গোয় চলে গিয়েছিলেন?

হ্যাঁ। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ায় তাঁর এত অভিমান হয়েছিল যে, বাংলা থেকে যত দূরে সম্ভব তিনি চলে যেতে চেয়েছিলেন। গোয়াতে অনেক বড় বড় চার্চ আছে জানেন নিশ্চয়ই। সেইরকম একটা চার্চে আশ্রয় পেয়েছিলেন গ্রেগরি রাও। সেখানে একজন পর্তুগিজ পাদ্রি তাঁকে খুব স্নেহ করতেন, দুজনে থাকতেন এক বাড়িতে। তারপর সেই পর্তুগিজ পাদ্রির সঙ্গে চার্চের কী যেন গণ্ডগোল হল, তিনি চার্চের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে থাকতে লাগলেন আলাদাভাবে। গ্রেগরি রাও কিন্তু তাঁকে ছাড়লেন না, তিনিও চার্চ ছেড়ে দিয়ে সেই পাদ্রির সঙ্গেই রয়ে গেলেন। আমার দাদু যখন গোয়ায় গেলেন, তখন সেই পাদ্রিও মারা গেছেন, গ্রেগরি রাও একা থাকেন।

হোটেলের ম্যানেজারের কাছে এইসব কথা শুনে তোমার দাদু গেলেন গ্রেগরি রাওয়ের সঙ্গে দেখা করতে?

প্রথমে দাদু রাজি হননি। তিনি বলেছিলেন, ওকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, ও রাও পরিবারের কেউ না! কিন্তু আমার দিদিমা ছিলেন খুব দয়ালু। তিনি প্রচুর দান-ধ্যান করতেন। তিনি সব শুনে বললেন, আচ্ছা, একজন লোক অসুস্থ অবস্থায় একা একা পড়ে আছে, তাকে সাহায্য করবে না? তা কি হয়? সে মারা গেলে লোকে বলবে তো রাও বংশের একজন মানুষ না খেয়ে মরেছে! আমাদের বাড়িতে তো কত লোক এমনই থাকে, খায়। দিদিমার। অনুরোধে দাদু গেলেন দেখা করতে। পাঞ্জিম থেকে খানিকটা দূরে, কালাংগুটে। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না, গ্রেগরি রাওয়ের আস্তানা তখন একজন লোকের বাড়ির আস্তাবলে। সেখানকার লোকে তার গ্রেগরি নামটাও জানে না। সবাই বলে বাঙালিবাবু। আমার দাদু গিয়ে কী দেখলেন জানেন?

কী?

গ্রেগরি রাও তখন বদ্ধ পাগল। তাঁর অন্য কোনও অসুখ নেই। এমনই পাগল যে, মানুষ চিনতেও পারেন না। দাদুকেও চিনতে পারলেন না। পর্তুগিজ ভাষায় কী সব বিড়বিড় করতে লাগলেন। দাদু ভেবেছিলেন, কিছু টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করে আসবেন। কিন্তু দিদিমা বললেন, ওই পাগলকে টাকা দিয়ে কী হবে? ওঁর তো টাকা-পয়সা সম্পর্কেও কোনও জ্ঞান নেই। ওঁর হাতে টাকা দিলে দুদিনেই অন্য লোকরা লুটেপুটে নেবে। তখন ঠিক হল, সেই পাগলকে সঙ্গে নিয়ে আসা হবে এখানে। কিন্তু, পাগলকে আনা কি সহজ? তাঁর ওই আস্তাবলের ঘরের মধ্যে নানারকমের নুড়িপাথর, ঝিনুক, পুঁতির মালা, ছেঁড়াখোঁড়া বইপত্র ছড়ানো। এইসব হল পাগলের সম্পত্তি। তাঁকে ঘর থেকে বার করা যায় না, ওইসব জিনিস বুকে চেপে ধরে চিৎকার করতে থাকেন। দাদু বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। দিদিমার দয়াতেই শেষ পর্যন্ত লোজন জুটিয়ে ওই ঘরের সমস্ত হাবিজাবি জিনিসপত্ৰসমেত গ্রেগরি রাওকে নিয়ে আসা হল বীরভূমের এই বাড়িতে। চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তার কবিরাজরা বললেন, ওঁর ভাল হওয়ার আর কোনও আশা নেই। বাড়িতে একটা পাগল রাখা তো সোজা কথা নয়। সেইজন্য তাঁকে রাখা হল ওই ছাদের ঘরটায়। ওখানেই তিনি আপনমনে থাকতেন। এখানে আসার পর এগারো বছর বেঁচে ছিলেন।

অসিত জিজ্ঞেস করল, এইসব ঘটনা আপনি কার কাছে শুনেছেন! আপনার মার কাছে?

বিমান বলল, হ্যাঁ, মার কাছে তো অনেকবার শুনেছি। আমার দিদিমার কাছেও শুনেছি। খুব ছোটবেলায় আমি পাগলাদাদুকে দেখেছিও। বাচ্চা ছেলেমেয়েদের দেখলেই দাঁত খিচিয়ে মারতে আসতেন। ওঁর ভয়ে আমরা ছাদে যেতাম না। সারা মুখে দাড়িগোঁপের জঙ্গল, মাথার চুল জট পাকানো, চেহারাটাও হয়ে গিয়েছিল ভয়ঙ্কর। তবে ছাদ থেকে কখনও নীচে নেমে আসতেন না বলে আর কোনও ভয় ছিল না।

এগারো বছর ওই ছাদের ঘরে ছিলেন?

তাই তো শুনেছি। একদিনের জন্যও কেউ ওঁকে ঘর থেকে বার করতে পারেনি। ওই ঘরের সঙ্গেই একটা বাথরুম তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল সেইজন্য। বাড়ির একজন কাজের লোক রোজ ওঁর ঘরের সামনে খাবার দিয়ে আসত। সেও ভয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকত না। একদিন নাকি পাগলাদাদু তার হাত কামড়ে দিয়েছিল।

দীপা বলল, তোমার ছোটমামার কথাটা বলো।

বিমান বলল, হ্যাঁ। একমাত্র আমার ছোটমামার সঙ্গেই ওই পাগলাদাদুর কিছুটা ভাব ছিল। ছোটমামা ছিলেন অনেকটা আমার দিদিমার মতন। মায়া-দয়া ছিল খুব। প্রথম থেকেই তিনি পাগলাদাদুর সেবা করতেন। সাহস করে ওঁর ঘরে ঢুকে জোর করে কয়েকদিন ওঁকে স্নান করিয়ে দিয়েছেন। বুঝতেই পারছেন, ঘরখানা অসম্ভব নোংরা হয়ে উঠেছিল দিনের পর দিন। অনেকটা যেন সিংহের খাঁচার মতন। ভয়ে কোনও কাজের লোক ঢোকে না। ছোটমামাই শুধু ঢুকতেন, এবং জমিদারের ছেলে হয়েও তিনি নিজের হাতে সে-ঘরের ময়লা পরিষ্কার করেছেন কয়েকবার। পাগলাদাদু নাকি ছোটমামার মাথায় হাত দিয়ে কী সব যেন বলতেন, তা বোঝা যেত না কিছুই, কিন্তু মনে হত যেন আশীবাদ করছেন। কিন্তু পাগলের ব্যাপার তো। হঠাৎ একদিন মেজাজ বদলে গেল। ছোটামামা সেদিন ঘরটা একটু গুছিয়ে দিচ্ছেন, পাগলাদাদু আচমকা খেপে গিয়ে প্রথমে ছোটমামাকে এক লাথি কষালেন। চিৎকার করে বললেন, শয়তান, তুই আমার ঘরে জিনিস চুরি করতে এসেছিস? সাত রাজার ধন এক মানিক আছে আমার কাছে। দেব না! কাউকে দেব না! তারপর হাতের বড় বড় নোখ দিয়ে ছোটমামার গাল চিরে দিলেন। বোধ হয় চোখ দুটোও গেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ছোটমামা কোনওক্রমে পালিয়ে আসে। তারপর থেকে দিদিমা ছোটমামাকে ওপরে যেতে বারণ করে দিয়েছিলেন।

কাকাবাবু বললেন, বাবাঃ, সাঙ্ঘাতিক পাগল ছিলেন তো!

বিমান বলল, অথচ কিন্তু লেখাপড়া জানতেন বেশ। পাগল অবস্থাতেও চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি করতেন। বাইবেলের শ্লোক বলতেন। কিন্তু লোকজন দেখলেই হিংস্র হয়ে উঠতেন।

অসিত বলল, হুঁ। তা হলে মনে হচ্ছে, উনিই আপনার ছোটমামাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন। ওঁর কাছে কোনও দামি জিনিস আছে সেটা টের পেয়ে আপনার ছোটমামা রাত্তিরবেলা চুরি করতে গিয়েছিলেন। পাগল জেগে উঠে তাঁকে ঠেলে নীচে ফেলে দেয়।

কাকাবাবু বললেন, অনেক বছর আগেকার ব্যাপার। এখন আর এ-নিয়ে গবেষণা করে কোনও লাভ নেই।

বিমান একগাল হেসে বলল, তা ছাড়া ওঁর ঘরে দামি জিনিস কিছু ছিল না। ওটা পাগলের প্রলাপ।

অসিত বলল, নানারকম পাথর, ঝিনুক ছিল বলছিলেন। তার মধ্যে কোনও-কোনওটা খুব দামি হতে পারে।

বিমান বলল, কিচ্ছু না, কিছু না! সেগুলো সব ওই ঘরের মধ্যেই আছে, কাল সকালে দেখবেন। নদীর ধারে কিংবা সমুদ্রের ধারে যে নানারকম ছোট-ছোট নুড়িপাথর থাকে, অনেকে কুড়িয়ে আনে, ওই পাথরগুলো সেরকম। আর কিছু ঝিনুক। তাও সমুদ্রের ধার থেকে কুড়োনো, তার মধ্যে আবার অনেকগুলোই ভাঙা। আর ছিল পুঁতির মালা, অনেকগুলো। নানান রঙের, কিন্তু অতি সাধারণ পুঁতি। ক্রিশ্চানদের রোজারি বলে একরকম জপের মালা থাকে, ওঁর বোধ হয় সেইরকম মালা জমানোর শখ ছিল!

দীপা বলল, ওইসব পুঁতিটুতির মধ্যে দু-একটা হিরে-মুক্তোও থেকে যেতে পারে।

বিমান বলল, সেসব কী আর কম খুঁজে দেখা হয়েছে। জমিদারি চলে যাওয়ার পর যখন এই বংশের রোজগার বন্ধ হয়ে যায়, তখন হ্যাংলার মতন সবাই সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখেছে কোথাও কোনও দামি জিনিস আছে কি না! বড়মামা চেয়ার-টেবিল বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন, তাতেই বুঝতে পারছ, দামি জিনিস আর কিছু বাকি ছিল না।

অসিত জিজ্ঞেস করল, আপনার পাগলাদাদুর ঘরের জিনিসপত্রগুলো আপনি নিজেও পরীক্ষা করে দেখেছেন?

অনেকবার। আমার ছোটভাই একজন স্যাকরা ডেকে এনে পুঁতির মালাগুলো দেখিয়েছে। সেই স্যাকরা বলেছিল, ওইসব মালার দাম দশ টাকাও হবে না। আমাদের আগেও অনেকে দেখেছে। তবে পাগলাদাদু মারা যাওয়ার আগে কেউ ঘরে ঢুকে দেখেনি। উনি মারা যাওয়ার পরেও কয়েক মাস ভয়ে কেউ ও-ঘরে ঢোকেনি।

তখনও ভয় ছিল কেন?

ওঁর মৃত্যুর ব্যাপারটা যে ভয়াবহ। আগেই বলেছি, বাড়ির একজন কাজের লোক রোজ ওঁকে খাবার দিয়ে আসত। সেই লোকটি এক সময় ছুটি নেয় দেশে যাওয়ার জন্য। আর একজনের ওপর ভার দিয়ে যায়। সেই লোকটা পর-পর দুদিন দেখে যে খাবার বাইরে পড়ে আছে, পাগলাদাদু কিছু খাননি। সে ভেবেছিল, পাগলের খেয়াল। কাউকে বলেনি কিছু। তৃতীয় দিনেও ওইরকম খাবার পড়ে থাকতে দেখে সে কয়েকবার ডাকাডাকি করেও কোনও সাড়াশব্দ পায়নি। তখন সে জানিয়েছিল বড়মামাকে। বড়মামা পাত্তা দেননি, বলেছিলেন, খিদে পেলে ঠিক খাবে। দিদিমা তখন বেঁচে নেই, ওই পাগলের জন্য বাড়িতে কারও কোনও মায়া-দয়া ছিল না। আরও দুদিন পর বিশ্রী গন্ধ পেয়ে দরজা ভাঙা হল। পাগলাদাদু অন্তত তিন দিন ধরে ঘরের মধ্যে মরে পড়ে আছেন। শীতকাল ছিল, খুব শীত ছিল সেবার, তাই আগে গন্ধ পাওয়া যায়নি। এইরকমভাবে মৃত্যু হলে নানারকম ভয়ের গল্প রটে যায়। কাজের লাোে ধরেই নিল পাগলাদাদু অপঘাতে মরে ভূত হয়েছেন। একে ছিলেন হিংস্র পাগল, তার ওপরে ভূত, কেউ আর ওই ঘরের ধারেকাছে যায়? ঘরটা সেইরকমই পড়ে আছে। এখনও নাকি ছাদে মাঝে-মাঝে শব্দ হয় রাত্তিরে, এরা বলে যে পাগলা সাহেবের ভূত ঘুরে বেড়াচ্ছে।

দীপা কান খাড়া করে বলল, চুপ, চুপ! শোনো, ওপরে কিসের শব্দ হচ্ছে না?

সবাই শোনার চেষ্টা করল। বিমান বলল, ধ্যাত! কোথায় শব্দ? এখনও তোমার ভূত-প্রেতের ভয় গেল না?

অসিত বলল, বোধ হয় নীচে কোনও শব্দ হয়েছে, আপনি ভেবেছেন ছাদে। এরকম হয়। আচ্ছা, বিমানবাবু, আপনার ওই পাগলাদাদু যখন মারা যান, তখনও কি দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল?

বিমান বলল, হ্যাঁ! আপনি ভাবছেন, কেউ তাঁকে মেরে ফেলেছিল? তা নয়! দরজা বন্ধই ছিল।

দীপা বলল, থাক, আর ওসব কথার দরকার নেই। কতকালের পুরনো ব্যাপার!

একজন কাজের লোক এই সময় এসে জানাল যে, খাবার তৈরি হয়ে গেছে।

সবাই এবার উঠে গেল খাবার ঘরে। টেবিলের ওপর পাঁচখানা প্লেট পাতা রয়েছে।

কাকাবাবু একটা চেয়ার টেনে বসে বললেন, আমরা তো চারজন। পাঁচজনের ব্যবস্থা কেন? আর কেউ আসবে?

বিমান হেসে বলল, না, আর কেউ নেই। এটা এ-বাড়ির একটা অনেককালের নিয়ম। খাবার সময় একটা জায়গা সব সময় বেশি রাখা হত। যদি হঠাৎ কোনও অতিথি এসে পড়ে!

কাকাবাবু বললেন, বাঃ, বেশ ভাল নিয়ম তো।

দীপা বলল, আমার কিন্তু ভাল লাগে না। একটা খালি প্লেট দেখলে বারবার মনে হয়, এক্ষুনি বুঝি কেউ আসবে। বারবার দরজার দিকে চোখ চলে যায়।

বিমান বলল, আমাদের বাড়িতে কিন্তু এরকম অনেকবার হয়েছে। খেতে বসেছি, এমন সময় কোনও খুড়তুতো কিংবা মাসতুতো ভাই এসে পড়ল। আমরা অমনই বলি, এসো, এসো, খেতে বসে যাও। প্লেট সাজানো দেখে সে অবাক হয়ে যায়। তখন আমরা বলি, তুমি যে আসবে, তা আমরা আগে থেকেই জানতাম!

দীপা খাবার পরিবেশন করতে লাগল। পদ বেশি নেই। সরু চালের সাদা ধপধপে ভাত, বেগুনভাজা আর আলুভাজা, মুর্গির ঝোল। ঝোলটার চমৎকার স্বাদ।

খাওয়া যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন সময় কোথায় যেন ধুড়ম-ধড়াম শব্দ হল। বেশ জোর আওয়াজ। চমকে উঠল সবাই।

বিমান চেঁচিয়ে উঠল, ভানু, ভানু!

অল্পবয়েসী কাজের ছেলেটি এসে দাঁড়াল দরজার কাছে।

বিমান জিজ্ঞেস করল, ও কিসের শব্দ রে?

ভানু বলল, পশ্চিম দিকের বারান্দাটা খানিকটা ভেঙে পড়ল। মাঝে-মাঝেই ভাঙছে। আজ খুব বৃষ্টি হয়েছে তো।

দীপা সঙ্গে-সঙ্গেই চোখ ওপরে তুলে বলল, ওরে বাবা, এ-দিকটাও ভাঙবে না তো?

বিমান বলল, না, না, সে-ভয় নেই। এ-দিকের অংশটা মজবুত আছে। কয়েক বছর আগে সারানোও হয়েছিল খানিকটা!

দীপা তবু বলল, কেন যে সাধ করে এই ভুতুড়ে বাড়িতে আসা!

ভানু চলে যাওয়ার পর কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, এই বাড়িটা ভেঙে ফেলা হবে, তারপর তোমাদের এ বাড়িতে যারা কাজ করত, তাদের কী হবে? তারা বেকার হয়ে যাবে?

বিমান বলল, ওদের জন্য ব্যবস্থা করেছি। এখন এখানে কাজ করে পাঁচজন। তাদের মধ্যে দুজন খুবই বুড়ো হয়ে গেছে, তাদের কিছু টাকা দিয়ে। রিটায়ার করিয়ে দেব, তারা নিজেদের দেশের বাড়িতে ফিরে যাবে। আর তিনজন এখানে পাইপের কারখানা হবে, তাতে চাকরি পাবে। যিনি এ-জায়গাটা কিনেছেন, তিনি ওদের চাকরি দিতে রাজি হয়েছেন।

অসিত বলল, এ-দিকের বারান্দারও অনেক টালি খসে গেছে। আর কিছুদিনের মধ্যে পুরো বাড়িটা নিজে নিজে ভেঙে পড়ত।

খাওয়ার পর আর বেশিক্ষণ গল্প হল না। যে যার নিজের ঘরে শুতে চলে গেল।

কাকাবাবু পোশাক পালটে পাজামা-পাঞ্জাবি পরলেন। এক্ষুনি তাঁর শুতে ইচ্ছে করছে না। তিনি বাইরের দিকের জানলাটার কাছে দাঁড়ালেন।

বৃষ্টি থেমে গেলেও আকাশ এখনও মেঘলা। বাইরের কিছুই প্রায় দেখা যায়। তবু হাওয়া দিচ্ছে বেশ। যখন একদম একলা থাকেন, তখন কাকাবাবু গুনগুন করে গান করেন। তাঁর এই গানের কথা কেউ জানে না। এ একেবারে তাঁর নিজস্ব অদ্ভুত গান। কোনও বিখ্যাত কবিতার তিনি নিজে সুর লাগিয়ে দেন।

এখন তিনি সুর দিতে লাগলেন সুকুমার রায়ের একটি কবিতায় :

শুনেছ কী বলে গেল
সীতানাথ বন্দ্যো
আকাশের গায়ে নাকি
আকাশের গায়ে নাকি
টক টক গন্ধ…
(আ-হা-হা-হা- না-না-না-না)
টক টক থাকে নাকো
যদি পড়ে বৃষ্টি
তখন দেখেছি চেটে
তখন দেখেছি চেটে
একেবারে মিষ্টি!

এই গানটাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নানারকমভাবে গাইতে লাগলেন। অনেকক্ষণ ধরে। তারপর আর-একটা গানে সুর দিলেন :

আম আছে, জাম আছে
আর আছে কদবেল
সবসে বড়া হ্যায়
জাঁদরেল, জাঁদরেল…

গানটান শেষ করার পর কাকাবাবু বিছানায় চলে এলেন। তবু তাঁর ঘুম এল। নানারকম কথা ভাবতে লাগলেন। একবার সন্তুর কথাও মনে এল। সন্তু কি এখন রাত জেগে পড়াশোনা করছে? ওর পরীক্ষা মাত্র তিনদিনের। এখানে তার বেশিদিন থাকা হলে সন্তু ঠিক চলে আসবে!

ঘন্টা দু-এক কেটে গেল, তবু ঘুম আসার নাম নেই। নতুন জায়গায় এলে তাঁর এরকম হয় প্রথম রাত্তিরটা। ঘুমের জন্য তিনি ব্যস্ত নন। একটা রাত না ঘুমোলেও কোনও ক্ষতি হয় না।

চতুর্দিক একেবারে নিস্তব্ধ। এইসব গ্রাম-দেশে সন্ধের পর এমনিতেই কোনও শব্দ থাকে না। আজ ভাল বৃষ্টি হয়ে বাতাস ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, সবাই আরাম করে ঘুমোচ্ছে।

এক সময় ছাদে তিনি অস্পষ্ট শব্দ শুনতে পেলেন। কাকাবাবুর কান খুব তীক্ষ্ণ, সামান্য শব্দও তিনি শুনতে পান। মনে হচ্ছে, ছাদে কেউ হাঁটছে।

কাকাবাবু আর একটুক্ষণ শুনলেন। কোনও সন্দেহ নেই, কোনও মানুষের পায়ের শব্দ। এ বাড়ির দরজা-জানলা এতই ভাঙা যে, চোর-টোরের ঢুকে পড়া খুব স্বভাবিক। কয়েকদিনের মধ্যেই বাড়িটা একেবারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, তার আগে এ-গ্রামের চোরেরা এসে যা পাবে তাই নিয়ে যেতে চাইবে। ভাঙা চেয়ার-টেবিল কিংবা পুরনো লোহাও বিক্রি হয়।

এর পর একটা চাপা ঝনঝন শব্দ হতে লাগল। যেন কোনও লোহার শিকল ধরে টানাটানি করা হচ্ছে। একটু পরেই আবার বদলে গেল শব্দটা। খট খট খট। কেউ যেন কিছু ভাঙার চেষ্টা করছে।

কাকাবাবু খাট থেকে নেমে পড়লেন। তিনি কৌতূহল দমন করতে পারছেন। ছাদে নানারকম শব্দ হলে তিনি ঘুমোবেন কী করে?

বালিশের তলা থেকে রিভলভারটা নিয়ে পাঞ্জাবির পকেটে ভরলেন। এক হাতে নিলেন টর্চ। তারপর ক্রাচ দুটো বগলে নিয়ে এগোলেন।

দরজাটা খোলার সময় কাচ করে একটা শব্দ হল। কাকাবাবু একটুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর বেরোলেন বাইরে। লম্বা-টানা বারান্দাটা পুরো অন্ধকার। কাকাবাবু দেওয়ালের একটা সুইচ টিপে দেখলেন, এখনও লোডশেডিং।

কাকাবাবুর পক্ষে নিঃশব্দে চলার কোনও উপায় নেই। ক্রাচের শব্দ হবেই। এত রাত্তিরে যেন বেশি জোর শব্দ হচ্ছে খটখট করে।

বিমানদের ঘরের দরজা খুলে গেল।

বিমান মুখ বাড়িয়ে বলল, কে? কে?

কাকাবাবু বললেন, আমি।

এ কী, কাকাবাবু! কোথায় যাচ্ছেন?

একটু ভূত দেখে আসি।

অ্যাঁ? কী বললেন?

ছাদে একটা শব্দ হচ্ছে। যদি ভূত-টুত হয়, তা হলে একবার দেখে চক্ষু সার্থক করে আসি।

না, না, কাকাবাবু, এত রাত্তিরে ছাদে যাবেন না।

ঘুম আসছে না। আমার একটু পায়চারি করতে ইচ্ছে হচ্ছে।

দাঁড়ান, তা হলে আমিও যাব আপনার সঙ্গে। চটিটা পরে আসছি।

পাশ থেকে দীপা বলল, আমি একলা এই অন্ধকারের মধ্যে থাকব নাকি? ওরে বাবা রে, না, কিছুতেই না!

বিমান বলল, তা হলে তুমিও চলো।

দীপা বলল, আমি এখন কিছুতেই ছাদে যেতে পারব না। তোমাদেরও যেতে হবে না!

কাকাবাবু বললেন, বিমান, তুমি থাকো। আমি আগে দেখে আসছি। কোনও চিন্তা নেই।

বিমান তবু চেষ্টা করল কাকাবাবুকে থামাবার। কাকাবাবু এগিয়ে গেলেন।

টর্চের আলো ফেলে-ফেলে তিনি দেখছেন। খানিকটা পরে অসিতের ঘর। কাকাবাবু একবার ভাবলেন, অসিত যদি জেগে থাকে, তা হলে তাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবেন। দরজাটা ঠেলা দিলেন আলতো করে। সেটা ভেতর থেকে বন্ধ। শব্দ শুনে অসিত জাগেনি, তার গাঢ় ঘুম।

ছাদে ওঠার সিঁড়িটার কাছে এসে কাকাবাবু থমকে দাঁড়ালেন। তাঁর ক্রাচের আওয়াজ আর বিমানের কথাবার্তা শুনে চোরের সজাগ হয়ে যাওয়ার কথা। সে যদি সিঁড়ি দিয়ে নেমে পালাতে চায়, কাকাবাবুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে যাবে। সে ইচ্ছে করেও কাকাবাবুকে ঠেলে দিতে পারে।

কাকাবাবু এবার রিভলভারটা বার করে তৈরি রাখলেন। তারপর সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলেন আস্তে-আস্তে। সামান্য একটা চোর ধরার জন্য এতটা ঝুঁকি নেওয়ার কোনও মানে হয় না। কিন্তু এই ধরনের উত্তেজনা বোধ করতে কাকাবাবুর ভাল লাগে।

ছাদের দরজাটা একেবারে হাট করে খোলা। যদি দরজার পাশেই কেউ লুকিয়ে থাকে, সেইজন্য কাকাবাবু টর্চ দিয়ে দেখে নিলেন ভাল করে। একটা ক্রাচ বাড়িয়ে দিলেন প্রথমে। কেউ কিছু করল না।

এবার কাকাবাবু ঢুকে পড়লেন ছাদে।

কেউ কোথাও নেই। শব্দটা থেমে গেছে অনেক আগেই। এত বড় ছাদ যে, অন্য দিক দিয়ে পাঁচিল টপকে কারও পক্ষে পালিয়ে যাওয়া খুবই সহজ।

ছাদের ঘর সাধারণত সিঁড়ির পাশেই থাকে। এটা কিন্তু তা নয়। সিঁড়ি থেকে অনেকটা দূরে, মাঝামাঝি জায়গায় বেশ বড় একটা ঘর। এক সময় যত্ন করে তৈরি করা হয়েছিল। চার-পাঁচখানা শ্বেতপাথরের সিঁড়ি, তারপর দরজা। কাকাবাবু সেদিকে এগিয়ে যেতে-যেতে আন্দাজ করলেন যে, এই ঘরটার প্রায় নীচেই দোতলায় তাঁর ঘর।

এ-ঘরের দরজাটা বেশ শক্তপোক্ত রয়েছে এখনও। আগেকার দিনের কায়দা অনুযায়ী সেই দরজার তলার দিকে একটা শিকল, ওপর দিকে একটা শিকল। দুটো শিকলেই তালা দেওয়া। পেতলের বেশ বড় তালা।

কেউ একজন এই শিকল খোলার ও তালা ভাঙার চেষ্টা করেছিল।

কাকাবাবু টর্চ ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে সিঁড়ির নীচটা ভাল করে দেখলেন। বৃষ্টিতে ছাদে জল জমেনি বটে, তবে অনেক দিনের পুরু ধুলো ভিজে দইয়ের মতন হয়ে আছে। তার ওপর পায়ের ছাপ।

কাকাবাবু যদি শার্লক হোমসের মতন গোয়েন্দা হতেন, তা হলে সেই পায়ের ছাপ মাপবার চেষ্টা করতেন বসে পড়ে। কিন্তু ওসব তাঁর ধাতে পোষায় না। তিনি শুধু লক্ষ করলেন, আসা ও যাওয়ার দুরকমের ছাপ। যে এসেছিল, সে এসেছিল পা টিপেটিপে, গোড়ালির ছাপ পড়েনি। আর যাওয়ার সময় গেছে দৌড়ে। একটু দূরে গিয়েই মিলিয়ে গেছে, সেখানটায় শ্যাওলা।

কাকাবাবু মনে-মনে বললেন, বিমানের পাগলাদাদু বেশ ভালই থাকবার জায়গা পেয়েছিল। এই ঘরটাই এ-বাড়ির শ্রেষ্ঠ ঘর বলা যায়। চতুর্দিক খোলা। আজ যদি জ্যোৎস্না থাকত, তা হলে বহুদূর পর্যন্ত দেখা যেত।

কাকাবাবু নীচে নেমে আসার পরই বিমানের গলা শোনা গেল। সে দরজার কাছেই ব্যাকুলভাবে অপেক্ষা করছিল। সে জিজ্ঞেস করল, কী হল কাকাবাবু?

কাকাবাবু হালকা গলায় বললেন, ভূত দেখা আমার ভাগ্যে নেই। তোমার পাগলাদাদুকে দেখা গেল না। ওখানে কেউ নেই।