উদ্বাস্তু

আমি কি কখনো জানতাম এত দ্রুত
শহরের চেনা দৃশ্যাবলি লুপ্ত হয়ে যাবে? একটি রাত্রিরে
আমার সারাটা মাথা বিষম রুপালি হয়ে যাবে?
কেমন বদলে গেছি অতি দ্রুত নিজেরই অজ্ঞাতে।
আমার চাদ্দিকে দরদালান কেবলি যাচ্ছে ধসে,
আমার সম্মুখে
এবং পেছনে
দেয়াল পড়ছে ভেঙে একে একে, যেন
মাতাল জুয়াড়ী কেউ নিপুণ হেলায়
হাতের প্রতিটি তাশ দিচ্ছে ছুড়ে। আমি
কত ধ্বংসস্তুপের ভেতর দিয়ে হাঁটি
করাল বেলায়। জনসাধারণ ছিন্ন
মালার মুক্তোর মতো বিক্ষিপ্ত চৌদিকে।
সমস্ত শহর আজ ভয়াবহ শবাগার এক। কোনোমতে
দম নিই দমবন্ধ ঘরে। জমে না কোথাও আড্ডা,
রেস্তোরাঁ বিজন। গ্রন্থে নেই মন, আপাতত জ্ঞানার্জন বড়
অপ্রয়োজনীয় ঠেকে। ঘর ছেড়ে পথে

পা বাড়াতে ভয় পাই। যেদিকেই যাই,
ডাইনে অথবা বাঁয়ে, বিষণ্ন স্বদেশে বিদেশীরা
ঘোরে রাজবেশে। রেস্তোরাঁয়, পার্কে, অলিতে-গলিতে
শহরতলিতে শুধু ভিনদেশী ভাষা যাচ্ছে শোনা।
বস্তুত বিষণ্ন এ শহরে হত্যাময় এ শহরে
স্বদেশীর চেয়ে বিদেশীর সংখ্যা বেশি। নাগরিক
অধিকারহীন পথ হাঁটি, ঘাড় নিচু, ঘাড়ে মাথা
আছে কি বা নেই বোঝা যায়। এই মাথার ওপর
আততায়ী, শাসক সবার
আছে পাকাপোক্ত অধিকার। কেবল আমারই নেই।

যদিও যাইনি পরবাসে, তবু আমি
বিষণ্ন উদ্বাস্তু একজন। ক্লান্ত মনে ধরে ঘুণ, শুধু ঘুণ।