রমা – ৪.২

দ্বিতীয় দৃশ্য

পথ
[জগন্নাথ ও নরোত্তমের প্রবেশ। জগন্নাথের হাতে একগাছা মোটা লাঠি]

নরোত্তম। এই পথ, এইখান দিয়ে যাবে। জগা, এখনো বল, সাহস হবে ত?

জগন্নাথ। সাহস হবে না কি রে! শাস্তি নিতে রাজী হয়েই ত শাস্তি দিতে দাঁড়িয়েচি। অনেক দুঃখু দিয়েচে। মা দুর্গা! শুধু এই করো, আজ যেন একটা কাজের মত কাজ করে যেতে পারি। যেন হাত না কাঁপে।

নরোত্তম। হাত কাঁপবে কি রে?

জগন্নাথ। তা পারে। বাপ-পিতামোর কাল থেকে মার খাওয়াটাই অভ্যাস হয়ে আছে কিনা! তাই শেষ পর্যন্ত হাত যদি না ওঠে ত হাতের দোষ, আমার নয়।

নরোত্তম। তবে লাঠিগাছটা আমার হাতে দিয়ে তুই সরে দাঁড়া। দেখি আমি কি করতে পারি।

জগন্নাথ। অমন কথা তুই বলিস নে নরু। তোর ছেলেপুলে আছে, কিন্তু আমার নেই। এই আমার সময়। ছোটবাবু ফিরে এলে আর হবে না, তিনি হাত চেপে ধরবেন। তাই তাঁর জেল থেকে বেরোবার আগেই তার শোধ নিয়ে আমি জেলে গিয়ে ঢুকবো। তুই ঘরে যা।

নরোত্তম। ঘরে যাব না, কাছেই থাকব জগা।

[নরোত্তমের প্রস্থান। অপর দিক দিয়া গোবিন্দ,
বেণী ও দরোয়ানের প্রবেশ। হাতে তাহার লণ্ঠন]

বেণী। (চমকিয়া) দাঁড়িয়ে কে রে?

জগন্নাথ। আমি জগন্নাথ।

গোবিন্দ। পথে দাঁড়িয়ে লোক ভাঙ্গান হচ্চে, কেউ না খেতে যায়! না রে হারামজাদা?

জগন্নাথ। গাল দিয়ো না বলচি গাঙ্গুলীমশাই।

বেণী। গাল দেবে না হারামজাদা—শালা! কাল চাল কেটে ভিটেয় সরষে বুনে দেব জানিস?

জগন্নাথ। অনেকের দিয়েচ জানি, কিন্তু আর না দিতে পার আমি তার ব্যবস্থা কোরে যাব।

বেণী। কি ব্যবস্থা করবি রে হারামজাদা? শুনি?

[এই বলিয়া সে অগ্রসর হইয়া গেল]

জগন্নাথ। এই যে ব্যবস্থা!

[এই বলিয়া সে বেণীর মাথায় সজোরে আঘাত করিল]

বেণী। (বসিয়া পড়িয়া) বাবা রে! গেছি রে বাবা!
[গোবিন্দ ও দরোয়ান চীৎকার করিয়া দ্রুতপদে পলায়ন করিল।

বেণী। তোর পায়ে পড়ি বাবা, জগন্নাথ, ব্রহ্মহত্যা করিস নে। দোহাই বাবা, তোকে দশ বিঘে জমি দেব।

জগন্নাথ। জমি তোমার চাইনে—সে তোমার থাক। ব্রহ্মহত্যাও করব না!

বেণী। আজ থেকে তোর সঙ্গে বাপ-ব্যাটা সম্পর্ক জগন্নাথ—যা চাইবি তুই—

জগন্নাথ। কিছুই চাইব না। কিন্তু বাপ-ব্যাটার সম্পর্ক তোমার সঙ্গে? ছিঃ! আর সাবধান করে দিচ্চি বড়বাবু, এই মারই তোমার শেষ মার নয়। বাবু বোলে, বামুন বোলে যতই সয়েচি, ততই অত্যাচার বেড়ে গেছে। আর আমরা সইব না। দেখি তোমরা সিধে হও কিনা!

[প্রস্থান]

বেণী। বাবা রে, মরে গেছি রে! সব শালা পালাল রে!

[গোবিন্দ ও দরোয়ানের প্রবেশ]

গোবিন্দ। (হাঁপাইতে হাঁপাইতে) পালাবো কেন বাবা, পালাই নি। ছুটে লোক ডাকতে গিয়েছিলাম। জগা শালা কি-রকম গুণ্ডা জান ত? শালাকে ডাকাতির চার্জে পাঁচ বচ্ছর ঠেলে দেবো—তবে আমার নাম গোবিন্দ গাঙ্গুলী!

দরোয়ান। (হাঁপাইতে হাঁপাইতে) হাঁথ মে একঠো হাথিয়ার রহতা!

বেণী। দূর হ শালা সুমুখ থেকে। মেরে তক্তা বানিয়ে দিলে—(মাথায় হাত দিয়া দেখিয়া) বাবা গো! কি রক্ত পড়চে গো,—আর আমি বাঁচব না।

[বেণী শুইয়া পড়িল]

গোবিন্দ। (ধরিয়া তুলিবার চেষ্টা করিয়া) বাঁচবে, বাঁচবে। আমি নিজে তোমাকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাব। (দরোয়ানের প্রতি) ধর না শালা ছাতুখোর। শালা ভয়ে শিয়ালের মত ছুটে পালাল।

দরোয়ান। কেয়া করে বাবুজি, বিন্‌ হাথিয়ার—

[উভয়ে বেণীকে তুলিয়া লইয়া প্রস্থান করিল]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *