রমা – ২.৫

পঞ্চম দৃশ্য

[গ্রামের একাংশ। কয়েকটা ভাঙ্গা মন্দিরের কিছু-কিছু দেখা যাইতেছে। বৃক্ষ-লতা-গুল্মে সমস্ত স্থান সমাকীর্ণ। মনে হয় এদিকে কদাচিৎ কখনো কেহ আসে মাত্র]

[বেণী ও গোবিন্দর প্রবেশ]

গোবিন্দ। (সচকিতে ইতস্ততঃ দৃষ্টিপাত করিয়া) কে জানে কোন্‌ শালা আবার কোথা দিয়ে শুনবে। যে জাল বিস্তার করে দড়িটি ধরে বসে আছি বাবা, একটুখানি টান দিয়েচি অমনি ঝুপ করে পড়েচে।

বেণী। কাজ হাঁসিল ত?

গোবিন্দ। নইলে কি আর তোমাকে এই বনের মধ্যে নাহক ডেকে এনেচি বাবা! তুই শালা ভৈরব আচায্যি,—তোর নেই এক কড়ার মুরোদ, তুই যাস আমাদের বিপক্ষে? তুই যাস পরকে আগলাতে? এখন বাস্তুভিটেটা বাঁচা! কি করে মেয়ের বিয়ে দিস তা একবার দেখি!

বেণী। ডিক্রি হয়েছে তাহলে?

গোবিন্দ। (দুই হাতের দশ আঙুল তুলিয়া ধরিয়া) একটি হাজার! কিন্তু শুধু কথায় চিঁড়ে ভিজবে না বাবা, আধাআধি।

বেণী। (অত্যন্ত খুশী হইয়া) আধাআধি কেন খুড়ো, দশ-আনা ছ’-আনা।

গোবিন্দ। ভ্যালা মোর বাপ্‌ রে! শুধু এই নয় বাবা। সুমুখে পূজো। যদু মুখুয্যের কন্যা এবার মাকে কি করে আনেন তা দেখতে হবে। আসচে ফাগুনে ঘটা করে ভাইয়ের পৈতেটি কি করে দেন তাও একবার নেড়ে-চেড়ে পাঁচজনকে দেখাব,—তবে আমার নাম গোবিন্দ গাঙ্গুলী।

বেণী। তারকেশ্বরের কাণ্ডটা তা হলে সত্যি বল?

গোবিন্দ। সত্যি নয়? শালা নটবর কি কিছু বলতে চায়? বকশিশ কোবলে, পিঠে হাত বুলিয়ে কিছুতেই কিছু হয় না। ব্যাটা আর ভাঙ্গে না। তখন ফস করে পায়ের ধুলো মাথায় দিয়ে বললাম, বাবা, রমার চাকরই হও আর যাই হও,—শুদ্দুর ছাড়া আর কিছু নও, ছেলেপুলে নিয়ে ঘর কর, বামুনের পায়ের ধূলো মাথায় করে যদি মিথ্যে বল, তে-রাত্তির পোয়াবে না, সর্পাঘাত হবে। ব্যাটা যেন কাঁদো-কাঁদো হয়ে গেল। সাহস দিয়ে বললাম, নটবর, চাকরি গেলে আবার ঢের হবে, কিন্তু প্রাণ গেলে আর হবে না। তখন ফড়্‌ফড়্‌ করে আগাগোড়া ব্যাপারটা বলে ফেললে।—ঠাকরুনের ছ’টার গাড়িতে আর বাড়ি আসা হলো না। বাবু রাত্তিরে বাসায় রইলেন, খাওয়া-দাওয়া, হাসি-গল্প—যাক, পরচর্চায় কাজ নেই—ঘটনাটা সত্যি৷

বেণী। দেখলে না খুড়ো, কিছুতেই আকবরকে থানায় যেতে দিলে না!

গোবিন্দ। দেবে কি করে? দেওয়া কি যায় বাবা? যায় না।

বেণী। হুঁ। অন্ধকার হয়ে আসচে, যাওয়া যাক চল।

গোবিন্দ। চল। (হঠাৎ বেণীর হাতটা ধরিয়া ফেলিয়া) কিন্তু বাবা, ভাইপোটা যে অর্ধেক বিষয় টেনে নেবে তা চলবে না বলে রাখচি। সামলাতে হবে।

বেণী। নির্ভয়ে থাকো খুড়ো, আমি বেঁচে থাকতে তা হবে না।

গোবিন্দ। হাটের অংশটা এবার ছেড়ে দিতে রমা পথ পাবে না তাও তোমাকে বলে রাখলাম বড়বাবু। কিন্তু চেপে। ব্যাপারটা হঠাৎ চাউর করে ফেলো না।

বেণী। (ঈষৎ হাসিয়া) দেখা যাক।

[উভয়ের প্রস্থান]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *