5 of 11

২১.০৪ ভবনাথ, মহিমা প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে হরিকথাপ্রসঙ্গে

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

১৮৮৪, ১৫ই জুন

ভবনাথ, মহিমা প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে হরিকথাপ্রসঙ্গে

ঠাকুর হলঘরে আবার ফিরিলেন। তাঁহার বসিবার আসনের কাছে একটি তাকিয়া দেওয়া হইল। ঠাকুর বসিবার সময় “ওঁ তৎসৎ” এই মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া তাকিয়া স্পর্শ করিলেন। বিষয়ী লোকেরা এই বাগানে আসা-যাওয়া করে ও এই সকল তাকিয়া ব্যবহার করে; এইজন্য বুঝি ঠাকুর ওই মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া উপাধানটি শুদ্ধ করিয়া লইলেন; ভবনাথ, মাস্টার প্রভৃতি কাছে বসিলেন। বেলা অনেক হইয়াছে, এখনও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন হয় নাই। ঠাকুর বালক স্বভাব। বলিলেন, “কইগো, এখনও যে দেয় না। নরেন্দ্র কোথায়?”

একজন ভক্ত (ঠাকুরের প্রতি সহাস্যে) — মহাশয়! রামবাবু অধ্যক্ষ। তিনি সব দেখছেন। (সকলের হাস্য)

শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিতে হাসিতে) — রাম অধ্যক্ষ! তবেই হয়েছে!

একজন ভক্ত — আজ্ঞা, রামবাবু যেখানে অধ্যক্ষ, সেখানে এইরকমই হয়ে থাকে। (সকলের হাস্য)

শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) — সুরেন্দ্র কোথায়? আহা, সুরেন্দ্রের বেশ স্বভাবটি হয়েছে। বড় স্পষ্ট বক্তা, কারুকে ভয় করে কথা কয় না। আর দেখ খুব মুক্তহস্ত। কেউ তার কাছে সাহায্যের জন্য গেলে শুধুহাতে ফেরে না। (মাস্টরের প্রতি) তুমি ভগবানদাসের কাছে গিয়েছিলে, কিরকম দেখলে?

মাস্টার — আজ্ঞা, কালনায় গিয়েছিলাম। ভগবানদাস খুব বুড়ো হয়েছেন। রাত্রে দেখা হয়েছিল, কাঁথার উপর শুয়েছিলেন। প্রসাদ এনে একজন খাইয়ে দিতে লাগল। চেঁচিয়ে কথা কইলে শুনতে পান। আপনার নাম শুনে বলতে লাগলেন, তোমাদের আর ভাবনা কি?

“সেই বাড়িতে নাম-ব্রহ্মের পূজা হয়।”

ভবনাথ (মাস্টারের প্রতি) — আপনি অনেকদিন দক্ষিণেশ্বরে যান নাই। ইনি আমাকে দক্ষিণেশ্বরে আপনার বিষয় জিজ্ঞাসা করছিলেন, আর বলছিলেন যে, মাস্টারের কি অরুচি হয়ে গেল।

এই বলিয়া ভবনাথ হাসিতে লাগিলেন। ঠাকুর উভয়ের কথোপকথন সমস্ত শুনিতেছিলেন। মাস্টারের প্রতি সস্নেহে দৃষ্টি করিয়া বলিতেছেন, হ্যাঁ গো, তুমি অনেকদিন যাও নাই কেন বল দেখি?

মাস্টার তো তো করিতে লাগিলেন।

এমন সময় মহিমাচরণ আসিয়া উপস্থিত। মহিমাচরণ কাশীপুরবাসী, ঠাকুরকে ভারী শ্রদ্ধাভক্তি করেন ও সর্বদা দক্ষিণেশ্বরে যান। ব্রাহ্মণ সন্তান, কিছু পাণ্ডিত্যও আছে। ইংরেজী, সংস্কৃত অনেক গ্রন্থ পড়িয়াছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে, মহিমার প্রতি) — একি! এখানে জাহাজ এসে উপস্থিত। (সকলের হাস্য) এমন জায়গায় ডিঙি-টিঙি আসতে পারে; এ যে একেবারে জাহাজ! (সকলের হাস্য) তবে একটা কথা আছে — এটা আষাঢ় মাস। (সকলের হাস্য)

মহিমাচরণের সঙ্গে অনেক কথাবার্তা হইতেছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মহিমার প্রতি) — আচ্ছা, লোককে খাওয়ানো একরকম তাঁরই সেবা করা, কি বল? সব জীবের ভিতরে তিনি অগ্নিরূপে রয়েছেন। খাওয়ানো কিনা, তাঁকে আহুতি দেওয়া।

“কিন্তু তা বলে অসৎ লোককে খাওয়াতে নাই। এমন লোক, যারা ব্যভিচারাদি মহাপাতক করেছে — ঘোর বিষয়াসক্ত লোক, এরা যেখানে বসে খায়, সে জায়গায় সাত হাত মাটি অপবিত্র হয়।

“হৃদে সিওড়ে একবার লোক খাইয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই খারাপ লোক। আমি বললুম, ‘দেখ হৃদে, ওদের যদি তুই খাওয়াস, তবে এই তোর বাড়ি থেকে চললুম।’ (মহিমার প্রতি) — আচ্ছা, আমি শুনেছি, তুমি আগে লোকদের খুব খাওয়াতে, এখন বুঝি খরচা বেড়ে গেছে?” (সকলের হাস্য)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *