2 of 2

৮১. সাবীক যুদ্ধ বা ছাতুর যুদ্ধ

সাবীক যুদ্ধ বা ছাতুর যুদ্ধ

হিজরী ২য় সালের যিলহাজ্জ মাসে সাবীক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। একে কারকারাতুল কুদর যুদ্ধও বলা হয়। সুহায়লী বলেন, : কারকারী অর্থ সমতলভূমি এবং কিদর এক প্রকার পাখীর নাম, যার গায়ের রং ধূসর। মুহাম্মদ ইবন ইসহাক মুহাম্মদ ইবন জাফর ও ইয়াখীদ ইবন রূমান প্রমুখ সূত্রে আবদুল্লাহ ইবন কাআব ইবন মালিক থেকে বর্ণিত। ইবন কাআব ছিলেন আনসারগণের মধ্যে বিজ্ঞ আলিম। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধে পরাজিত কুরায়শরা যখন মক্কায় পৌঁছল এবং আবু সুফিয়ানও মক্কায় প্রত্যাবর্তন করল, তখন সে কসম খেয়ে বসলো যে, মুহাম্মদের সাথে আর একটি যুদ্ধ না করা পর্যন্ত সে স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হবে না। এরপর কসম রক্ষার্থে সে দু’শ’। কুরায়শ আশ্বারোহী সঙ্গে নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা হল। নজদ অতিক্রম করে মদীনা থেকে বার মাইল দূরে নীব নামক পাহাড়ের পাদদেশে উপনীত হল। ঐ রাত্রেই সে বনু নষীর গোত্রে উপস্থিত হয়ে হুয়াই ইবন আখতাবের বাড়ীতে আসে। তার ঘরের দরজায় শব্দ করলে হুয়াই ইবন আখতাব ভীত হয়ে পড়ে এবং দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানায়। আবু সুফিয়ান সেখান থেকে ফিরে এসে বনু নষীরের সর্দার ও কোষাধ্যক্ষ সাল্লাম ইবন মিশকামের বাড়ীতে যায়। বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি চাইলে সাল্লাম ইবন মিশকাম তাকে অনুমতি দেয়। এরপর তাকে উত্তম রূপে আপ্যায়িত করে মুসলমানদের গোপন সংবাদ সরবরাহ করে। এরপর সে রাতের শেষ ভাগে আপন সৈন্যদের সাথে মিলিত হয় এবং একদল কুরায়শ সৈন্যকে মদীনার দিকে পাঠিয়ে দেয়। তারা মদীনার উপকণ্ঠে আরীয নামক স্থানে এসে খেজুর গাছের শুকনা ডাল। একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা সেখানে একটি ক্ষেতে কর্মরত জনৈক আনসারী ও তার এক মিত্ৰকে দেখতে পেয়ে উভয়কে হত্যা করে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাদের ধরার জন্যে অগ্রসর হন। ইবন হিশাম বলেন, যাত্রাকালে তিনি মদীনা

দেখাশুনার দায়িত্ব আবু লুবাবা বশীর ইবন আবদুল মুনযির-এর উপর ন্যস্ত করেন।

ইবন ইসহাক বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সা) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে কারকারাতুল কিদর পর্যন্ত পেঁৗছে জানতে পারলেন আবু সফিয়ান ও তার সৈন্যরা পালিয়ে গেছে–তাই তিনি সেখান থেকে মদীনায় ফিরে যান। মুসলমানরা সেখানে মুশরিকদের ফেলে যাওয়া প্রচুর রসদ সম্পদ লাভ করেন। মুশরিকরা তাদের বোঝা হালকা করার জন্যে এগুলো ফেলে যায়। প্রাপ্ত মালের মধ্যে বেশীর ভাগ ছিল ছাতু। এ কারণে এই যুদ্ধকে ছাতুর যুদ্ধ বা সাবীক যুদ্ধ বলা হয়। মুসলিম সেনাগণ বলেছিল— ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমরা কি এটাকে জিহাদ হিসেবে গণ্য করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যা। ইবন ইসহাক বলেন, : আবু সুফিয়ান এই অভিযান সম্পর্কে এবং সাল্লাম ইবন মিশকামের প্রশংসায় নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করে :

و انى تخيرت المدبنة واحدا + الحلف فلم اندم و لم اتلوم الخ অর্থ : মদীনায় বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্যে আমি একজন লোককে বাছাই করেছি এবং এতে আমি লজ্জিত বা নিন্দিত হইনি।

সাল্লাম ইবন মিশকাম আমাকে মূল্যবান লাল ও কাল মদ তৃপ্তি সহকারে পান করায় অথচ তখন আমি খুবই ব্যস্ত ছিলাম।

যখন তাকে সৈন্য দলের নেতৃত্ব প্রদান করা হলো তখন আমি বললাম সম্মান ও গনীমতের সুসংবাদ গ্রহণ করা। এর দ্বারা তাকে আমি বিব্রত করতে চাচ্ছিলাম না। ভালভাবে চিন্তা করে অগ্রসর হও। কেননা, এ সম্প্রদায় কিন্তু নির্ভেজাল লুআই বংশের লোক। জুরহুম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া লোক এরা নয়।

ইবন মিশকামের সাথে আমার সাক্ষাত কোন এক আরোহীর রাত্রের সামান্য বিরতিকালের অবস্থানের মত ছিল, যে নেহাত অসহায়ের সাহায্যের উদ্দেশ্যেই এসেছে। বন্ধুত্বের কারণে নয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *