2 of 2

৫৯. দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পূর্বে রমাযান মাসের রোযা ফরয হওয়া প্রসঙ্গে

দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পূর্বে রমাযান মাসের রোযা ফরয হওয়া প্রসঙ্গে

ইবন জারীর বলেন, : এই সনে রমযানের রোযা ফরয করা হয়। কেউ কেউ বলেন যে, একই বছর শা’বান মাসে রোযা ফরয করা হয়। এরপর তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় আগমন করে দেখতে পান যে, ইয়াহুদীরা আশূরার দিন রোযা পালন করছে; এ সম্পর্কে তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে : এ এমন একটা দিন, যেদিন আল্লাহ মূসা (আ:)-কে নাজাত দেন (এবং এ দিনে ফিরআওনের লোকজনকে ডুবিয়ে মারেন), তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, : তোমাদের চাইতে আমরাই বরং মূসার বেশী ঘনিষ্ঠ। তাই তিনি নিজে আশুরার রোযা, রাখেন এবং লোকজনকে এ দিনে রোযা রাখার নির্দেশ দেন। বুখারী এবং মুসলিম শরীফে ইবন আব্বাস (রা) সূত্ৰে হাদীছটি বর্ণিত আছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন :

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হলো, যেমন বিধান দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তিগণকে, যাতে করে তোমরা মুত্তাকী হতে পার— (সিয়াম) স্বল্প কয়েকদিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদেরকে অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদয়াএকজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাৰ্য করে, তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকরাযদি তোমরা জানতে। রমযান মাস, এ মাসে মানুষের দিশারী, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন নাযিল হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এতে রোযা পালন করে। আর কেউ পীড়িত থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টকর তা চান না, এ জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করতে পার (২৪

এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট হাদীছ আর বর্ণিত রিওয়ায়াত এবং এ থেকে সংগৃহীত বিধান সম্পর্কে আমরা তাফসীর গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সমস্ত প্ৰশংসা আল্লাহর জন্য।

ইমাম আহমদ (র) আবু নসর, আমর ইবন মুররা সূত্রে মুআয ইবন জাবাল থেকে বর্ণনা করে বলেন, : সালাতের উপর তিনটা অবস্থা অতিবাহিত হয়, সিয়ামের উপরও তিনটা অবস্থা অতিক্রান্ত হয়েছে। তারপর তিনি সালাতের অবস্থা উল্লেখ করেন। সিয়ামের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, : রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় আগমন করে মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করতেন। এ সময় তিনি আশূরার রোযাও রাখতেন। তারপর আল্লাহ তাঁর উপর রোযা ফরয করে আয়াত নাযিল করেন :

آ2)}ها TRIIگ6 جم ۹।| ۴।| 5।| 8}۶ علی الذین یطیف و نه فدیهٔ طعام مسکین ۴ 6}) আর যার ইচ্ছা একজন মিসকীনকে খাবার দান করলে তার জন্য তা-ই যথেষ্ট হতো। অতঃপর فمن 68,66 شهر رمضان الذي أنزل فيه القرأن 8 R6515ة tif861ة كRTها IIIR S25كة

এবং পীড়িত আর মুসাফিরের জন্য রুখসত বা রাখা না রাখার অবকাশ দেন। যে বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি সিয়াম পালন করতে সক্ষম নয়, তার জন্য রোযা পালন না করার এ অবকাশ বা অনুমতি। এ হলো দুটো অবস্থা। তিনি বলেন, : তারা পানাহার এবং স্ত্রীগমন করতো যাবত না ঘুমাতো। ঘুমালে এ (সব থেকে) বিরত থাকতো। আনসারের এক ব্যক্তি, যাকে বলা হতো ছুরমা, লোকটি সারাদিন রোযা রেখে কায়িক শ্রম দেয় অর্থাৎ শ্রমিকের কাজ করে এবং গৃহে ফিরে ইশার নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে পানাহার না করেই এবং এ অবস্থায়ও পরদিন রোযা রাখে। রাসূলুল্লাহ্ (স) তাকে দেখলেন যে, বেশ পরিশ্রম করছে। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে বললেনঃ

“কি ব্যাপার, আমি তোমাকে কষ্টের পরিশ্রম করতে দেখছি। লোকটি তাকে এ ব্যাপারে অবহিত করলো। বর্ণনাকারী বলেন, : একদিন উমর (রা) নিদ্রার পর স্ত্রীগমন করেন। পরে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (স)-এর নিকট আগমন করে তাকে এ সম্পর্কে জানালে আল্লাহ তা’আলা ২/ u

আবু দাউদ তাঁর সুনান গ্রন্থে এবং হাকিম। তাঁর মুস্তাদরাকে মাসউদ্দীর হাদীছ থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর বুখারী-মুসলিমে যুহরী সূত্রে আইশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি

বলেন, : আশূরায় রোযা রাখা হতো; কিন্তু রামাযানের রোযার আয়াত নাযিল হলে যার ইচ্ছা! রোযা রাখতো যার ইচ্ছা না রাখতো। ইমাম বুখারী (র) ইবন উমর এবং ইবন মাসউদ (রা)

থেকে অনুরূপ হাদীছ বৰ্ণনা করেছেন। এ বিষয়ে লিখার জন্য তাফসীর এবং ‘আহকামুল কাবীর’ এ ভিন্ন মওকা রয়েছে। আল্লাহর নিকট সাহায্য কাম্য।

ইবন জারীর বলেন, : এ বছর লোকজনকে যাকাতুল ফিত্র তথা সাদাকাতুল ফিতরের নির্দেশ দেয়া হয়। কথিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ঈদুল ফিতরের একদিন বা দু’দিন পূর্বে লোকজনের উদ্দেশ্যে খুতবা দেন এবং তিনি সাদাকা ফিতর আদায় করার জন্য লোকজনকে নির্দেশ দেন। রাবী বলেন, : এ বছর রাসূলুল্লাহ (সা) ঈদের নামায পড়েন এবং লোকজনকে নিয়ে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বহির্গত হন। আর এ ছিল প্রথম ঈদের নামায, যা রাসূলুল্লাহ (সা) আদায় করেন। লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সম্মুখে একটা বল্লম নিয়ে দাঁড়ায়। এটা ছিল যুবােয়র (রা)-এর। হাবশার বাদশাহ তাকে এ বল্লম দান করেছিলেন। ঈদে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সম্মুখে এটি স্থাপন করা হতো।

আমি (ইবন কাহীর) বলি : পরবর্তীকালের একাধিক ব্যক্তি উল্লেখ করেন যে, এ বছর সম্পদের যাকাত ফরয করা হয়। বদর যুদ্ধের ঘটনা আলোচনা করার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্ তা’আলা। তাঁর প্রতিই তো আস্থা আর তার উপরই ভরসা। লা হাওলা ওয়া লা কুওওয়ােতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিাল আষীম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *