1 of 2

০৩. কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে

কুরআন নাযিলকালে জিনদেরকে প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে

কুরআন মজীদ নাযিল হওয়ার প্রাক্কালে জিন ও সত্যান্দ্রোহী শয়তানদের আসমানী সংবাদ শ্রবণে বাধা দেয়া হতো যাতে করে তারা কুরআনের একটি বর্ণও চুরি করে শুনতে না পায়। কুরআনের কিছু অংশও যদি তারা শুনতে পেত, তবে তা তাদের বন্ধুদের নিকট পৌছিয়ে দিত। ফলে সত্য-মিথ্যায় সংমিশ্রণ ঘটার আশঙ্কা থাকতো। এটি সৃষ্টিজগতের প্রতি আল্লাহ তা’আলার পরম দয়া ও অনুগ্রহ যে, তিনি জিন ও দুর্ধর্ষ শয়তানদেরকে আসমানী সংবাদ শ্রবণ থেকে বিরত রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা তাদের উক্তির উল্লেখ করেন এভাবে?

—এবং আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্ৰহ করতে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কঠোর গ্রহণ ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আর পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাটিতে ংবাদ শোনার জন্যে বসতাম। কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে তার উপর নিক্ষেপের জন্যে প্রস্তুত জুলন্ত উল্কাপিণ্ডের সম্মুখীন হয়। আমরা জানি না, জগতবাসীর অকল্যাণই অভিপ্রেত, নাকি তাদের প্রতিপালক তাদের কল্যাণ চান? (৭২ : ৮-১০)।

আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন, :

শয়তানরা তা নিয়ে অবতরণ করেনি! তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এটির সামর্থও রাখে না। ওদেরকে তো তা শোনার সুযোগ থেকে দূরে রাখা হয়েছে (২৬ : ২১০-২১১)।

হাফিযী আবু নু আয়ম বলেন, সুলায়মান ইবন আহমদ তাবারানী— হযরত ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, জিনরা আকাশে আরোহণ করে ওহী বিষয়ক আলোচনা শুনত। তার মধ্য থেকে একটি কথা কণ্ঠস্থ করে সেটির সাথে আরও নয়টি কথা তারা যোগ করত। ফলে একটি কথা সত্য হত। আর তাদের যোগ করা কথাগুলো অসত্য প্রমাণিত হত। নবী করীম (সা) যখন রাসূল রূপে প্রেরিত হলেন, তখন তাদেরকে তাখোকে বাধা দেয়া হয়। বিষয়টি তারা ইবলীসকে জানায়। ইতোপূর্বে অবশ্য তাদের প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হতো না। ইবলীস বলল, নিশ্চয়ই পৃথিবীতে কিছু একটা ঘটেছে যার জন্যে এমনটি হচ্ছে। কারণ অনুসন্ধানের জন্যে সে তার শিষ্যদেরকে পাঠায়। তারা দেখতে পায় যে, দুটো পাহাড়ের মধ্যবতী এক স্থানে রাসূলুল্লাহ (সা) দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছেন। তাবা এসে ইবলীসকে তা জানায়। সে বলে, এ-ই। আসল ঘটনা যা পৃথিবীতে ঘটেছে।

আবু আওয়ানা–হযরত ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও তার সাহাবীগণ উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলেন। তখন আসমানী সংবাদ শ্রবণে শয়তানরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। তাদের প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা শুরু হয়েছিল। বাধাপ্ৰাপ্ত শয়তানরা আপন সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসে। ওরা জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার, তোমরা ফিরে এলে কেন? উত্তরে ওরা বলল, আসমানী সংবাদ শ্রবণে আমাদেরকে। বাধা দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হয়েছে। ওরা বলল, নিশ্চয় পৃথিবীতে নতুন কোন ঘটনা ঘটেছে যার ফলে এমনটি হয়েছে। তোমরা পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত খুঁজে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবগত হও। জিনদের একটি দল তিহামা অভিমুখে যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উকায বাজারে যাওয়ার পথে তারা তাঁকে নাখল নামক স্থানে দেখতে পায়। তিনি তখন সাহাবীগণকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন, কুরআন তিলাওয়াত শুনে তারা অত্যন্ত মনোযোগী হয়। তখন তারা বলাবলি করে, এটিই হল মূল ঘটনা যার জন্যে আমরা আসমানী সংবাদ শ্রবণে বাধাপ্ৰাপ্ত হয়েছি। এরপর তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে গিয়ে বলে :

إنكا سميغنافر أنا عجبا يهدى إلى الرشد فأمنا به ولن تُشترك

بر بنا احدا—আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি। যা সঠিক পথ-নির্দেশ করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের শরীক নির্ধারণ করব না। (৭২ : ১-২)। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা’আলা প্রিয়নবী (সা)-এর প্রতি ওহী নাযিল করেন :

a—-a قل أوحى إلى أنه استمع نفر من الجن বলুন, আমার প্রতি ওহী প্রেরিত হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে (প্রাগুক্ত)। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ হাদীছ উল্লিখিত হয়েছে।

আবু বকর ইবন আবী শায়ক হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আসমানী সংবাদ শ্রবণের জন্যে জিনদের প্রত্যেক গোত্রের আকাশে আলাদা আলাদা বসার স্থান ছিল। যখন ওহী নাযিল হত, তখন ফেরেশতাগণ কঠিন পাথরে লোহার আঘাতের ন্যায় শব্দ শুনতে পেতেন। ওই শব্দ শুনে ফেরেশতাগণ সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন। ওহী নাযিল সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা মাথা তুলতেন না। ওহী নাযিল শেষ হওয়ার পর তারা একে অন্যে বলাবলি করতেন, “তোমাদের প্রতিপালক কী বললেন?” যদি ওহীটি উর্ধ্ব জগত বিষয়ক হত, তবে তারা বলতেন, “তিনি সত্য বলেছেন, তিনি সমুচ্চ মহান।” আর যদি সেটি পৃথিবীতে অনুষ্ঠিতব্য অদৃশ্য বিষয় হত, অথবা পৃথিবীর কারো মৃত্যু সম্পর্কিত হত, তখন তারা ওই বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন এবং তারা বলাবলি করতেন, এরূপ হবে। এদিকে শয়তানগণ ফেরেশতাদের আলোচনা শুনে ফেলত এবং তা এনে নিজেদের মানুষ বন্ধুদের নিকট পৌছিয়ে দিত। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর রিসালাতপ্রাপ্তির পর থেকে শয়তানদেরকে উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করে বিতাড়িত করা হয়। উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপের বিষয়টি সর্বপ্রথম অবগত হয়। ছাকীফ গোত্রের লোকেরা। উল্কাপিণ্ডের পতনকে বিপদ মনে করে ওই বিপদ থেকে মুক্তিলাভের জন্যে তাদের মধ্যে যারা বকরীর মালিক তারা প্রতিদিন একটি করে বকরী যাবাহ দিতে লাগল। আর যারা উটের মালিক তারা প্রতিদিন একটি উটি যাবাহ দিতে লাগল। অন্যরাও দ্রুত তাদের মালামাল দান-সাদাকা করতে শুরু করল। ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ বলল, আপাতত তোমরা ধন-সম্পদ নষ্ট করো না। বরং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা। খসে পড়া তারকাগুলো যদি পথ-নির্দেশক তারকা হয়, তবে এটি বিপদ বটে, অন্যথায় বুঝতে হবে এটি নতুন কোন ঘটনার ফলশ্রুতি। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তারা বুঝে নিল যে, পথ-নির্দেশক তারকাগুলো যথাস্থানে রয়েছে। এগুলো মোটেও কক্ষচু্যত হয়নি। এরপর তারা মালামাল ও পশুপাখী উৎসর্গ করা থেকে বিরত রইল।

এদিকে আল্লাহ্ তা’আলা একদল জিনকে কুরআন শোনার সুযোগ দিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) নামােযরত থাকা অবস্থায় তারা কুরআন পাঠ শুনল। সেখানে উপস্থিত হয়ে তারা নিজেদেরকে বলল, চুপ করে শোন! শয়তানরা ইবলীসকে বিষয়টি জানােল। সে বলল, ওহী শ্রবণে বাধাপ্ৰাপ্তি পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার ফলশ্রুতি। তোমরা পৃথিবীর সকল অঞ্চল থেকে কিছু কিছু মাটি আমার নিকট নিয়ে এস। অন্যান্য মাটির সাথে তারা তিহামাহ অঞ্চলের মাটিও নিয়ে এল। ইবলীস বলল, ঘটনা ঘটেছে। এ স্থানে। s

বায়হাকী ও হাকিম এ হাদীছটি হাশাদ ইবন সালামা সূত্রে আতা ইবন সাইব থেকে উদ্ধৃত করেছেন।

ওয়াকিদী বলেন, উসামা ইবন যায়দ ইবন আসলাম–কা’ব (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, হযরত ঈসা (আ:)-এর উর্ধ্বারোহণের পর থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নবুওয়াতপ্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত কারো প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নবুওয়াত লাভের পর তা শুরু হয়। কুরায়শগণ তখন উল্কা পতনের এ বিস্ময়কর ঘটনাটি দেখতে পেলো যা ইতোপূর্বে তারা দেখেনি। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মনে করে তারা তা থেকে

মুক্তিলাভের জন্যে পশু উৎসর্গ করতে ও ক্রীতদাস মুক্ত করতে শুরু করে। তাদের এ সংবাদ তাইফে পৌঁছলে ছাকীফ গোত্রের লোকেরাও অনুরূপ দান-দক্ষিণা শুরু করে। ছাকীফ গোত্রের কার্যকলাপের কথা তাদের গোত্রপতি আবদে ইয়ালীল-এর কানে যায়। সে বলল, তোমরা এরূপ কেন করছি? তারা বলল, আকাশ থেকে উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হচ্ছে। আমরা ওইগুলোকে আকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত হতে দেখেছি। সে বলল, ধন-সম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেলে পুনরায় অর্জন করা কষ্টসাধ্য হবে। তোমরা তাড়াহুড়ো করে কিছু করো না। বরং ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। যদি ঘটনা এমন হয় যে, আমাদের চেনা-জানা ও পরিচিত তারকাগুলো খসে পড়ছে, তাহলে বুঝবে যে, মানুষের ধ্বংস শুরু হয়েছে। আর যদি আমাদের চেনা-জানা ও পরিচিতির বাইরের তারকাগুলো খসে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে পৃথিবীতে নতুন কোন ঘটনা ঘটার প্রেক্ষিতে এমন হচ্ছে। তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেল যে, পতনশীল উল্কাগুলো তাদের পরিচিত তারকা নয়। বিষয়টি তারা আবদে ইয়ালীলকে জানায়। সে বলল, তোমাদেরকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কোন নবীর আবির্ভাব ঘটলে এমনটি হয়ে থাকে।

অল্প কয়েক দিন পর নিজের ধন-সম্পদের খোঁজখবর নেয়ার জন্যে আবৃ সুফিয়ান ইবন। হারব তাদের নিকট যায়। আবদে ইয়ালীল এসে তার সাথে সাক্ষাত করে এবং উল্কাপিতন বিষয়ে আলোচনা করে। আবু সুফিয়ান বলল, মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ আবির্ভূত হয়েছে। সে নিজেকে রিসালাতপ্রাপ্ত নবী বলে দাবী করে। আবদে ইয়ালীল বলল, এ কারণেই উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

সাঈদ ইবন মানসূর। আমির শা’বী সূত্রে অনুরূপ একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। বায়হাকী ও হাকিম (র) হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন. তিনি বলেছেন যে, হযরত ঈসা (আ) থেকে মুহাম্মাদ (সা) পর্যন্ত ওহী বিরতির মেয়াদে দুনিয়ার আকাশে প্রহরা ছিল না। বস্তৃত যারা প্রহরা না থাকার কথা বলেছেন সম্ভবত তারা এ কথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, তখন আকাশে প্রহরার কঠোরতা ছিল না। অবশ্য সাধারণ প্রহরা ছিল। তাদের উপরোক্ত বক্তব্যের এরূপ ব্যাখ্যা দেয়া একান্ত আবশ্যক। কারণ, উক্ত বক্তব্যের বিপরীতে আবদুর রাযযাক ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, একদিন আমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) একটি মজলিসে বসা ছিলেন। হঠাৎ একটি উল্কাপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হয়ে চারিদিক আলোকিত করে তোলে। তিনি বললেন, এরূপ উল্কাপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হলে তোমরা কী ধারণা করা? ইবন আব্বাস (রা) বললেন, তখন আমরা বলি যে, কোন সম্মানিত লোকের মৃত্যু হয়েছে বা জন্ম হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, না, তা নয়, বরং ব্যাপার হল এই, একথা বলে তিনি সেই হাদীছটি বললেন, যেটি “জগত সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়ে আকাশ ও তার নক্ষত্ররাজির সৃজন” শিরোনামের মধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি। সকল প্ৰশংসা আল্লাহর।

ইবন ইসহাক তার সীরাত গ্রন্থে উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপের কাহিনী উল্লেখ করেছেন। ছাকীফ গোত্রের জনৈক বয়ােবৃদ্ধ ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন যে, ওই ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বলেছিল যে, তোমরা তারকাগুলো ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা যে, এ

পথ-প্রদর্শক তারকাগুলো যথাস্থানে আছে নাকি স্থানচ্যুত হয়েছে। তিনি উক্ত বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তির নাম বলেছেন আমর ইবন উমায়্যা।

সুদী বলেছেন, পৃথিবীতে কোন নবী না থাকলে কিংবা আল্লাহর কোন প্রধান দীন বিদ্যমান না থাকলে আকাশে প্রহরা থাকত না। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নবুওয়াত লাভের পূর্বে শয়তানরা দুনিয়ার আকাশে নিজেদের আসন নির্ধারণ করে রেখেছিল। কি বিষয় সম্পর্কে আকাশ জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে আলোচনা হত, তা তারা আড়ি পেতে শুনত। আল্লাহ তা’আলা হযরত মুহাম্মাদ (সা)-কে যখন নবীরূপে প্রেরণ করলেন, তখন এক রাতে ওদের প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হল। এটি দেখে তাইফের অধিবাসীরা আতংকিত হয়ে উঠে। তারা বলাবলি করতে শুরু করে যে, আকাশের অধিবাসীদের ধ্বংস অনিবাৰ্য। আকাশে ভয়ংকর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এবং উল্কাপিণ্ডের পতন দেখে তারা দাসদাসী মুক্ত করা এবং পশুপাখী উৎসর্গ করা শুরু করে। আবদে

তাইফবাসি! তোমাদের নিজেদের ধন-সম্পদগুলো এভাবে নষ্ট করো না। বরং বড় বড় তারকাগুলোকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা। যদি দেখতে পাও যে, সেগুলো নিজ নিজ স্থানে স্থির আছে, তবে বুঝে নিবে যে, আকাশের অধিবাসিগণ ধ্বংস হয়নি। বরং আবু কাবাশার বংশধর ব্যক্তিটির কারণে এরূপ ঘটছে। আর যদি ওই তারকাগুলোকে যথাস্থানে দেখতে না পাও, তাহলে আকাশের অধিবাসিগণ নিশ্চয় ধ্বংস হয়েছে। তারা তারকাগুলো যথাস্থানে দেখতে পায় এবং নিজেদের ধন-সম্পদ বিলিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকে। ওই রাতে শয়তানরা বিচলিত হয়ে ইবলীসের নিকট গিয়ে উপস্থিত হয়। পৃথিবীর সকল স্থান থেকে এক মুষ্টি করে মাটি আনার জন্যে সে ওদেরকে নির্দেশ দেয়। তারা তার কথামত তা নিয়ে আসে। সে মাটিগুলোর ঘাণ নেয় এবং বলে, তোমাদের প্রতিপক্ষ তো মক্কাতেই রয়েছে।

নসীবায়ন অঞ্চলের অধিবাসী সাতটি জিনকে সে মক্কা পাঠায়। সেখানে এসে তারা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে দেখতে পায়। তিনি হারাম শরীফের মসজিদে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করছিলেন। কুরআন তিলাওয়াত শোনার প্রবল আগ্রহে তারা তার খুবই নিকটে পৌছে যায় { যেন তাদের বক্ষ রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর দেহ মুবারক স্পর্শ করবে। এরপর ওই জিনগুলো ইসলাম গ্রহণ করে। তাদের বিষয়টি ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা প্রিয়নবী (সা)-কে অবহিত করেন। ওয়াকিদী বলেন. মুহাম্মাদ ইবন সালিহ হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন নবুওয়াত লাভ করেন, তখন সকল মূর্তি মাথা নুইয়ে পড়ে যায়। শয়তানরা ইবলীসের নিকট এসে জানায় যে, দুনিয়ার তাবৎ মূর্তি মাথা নুইয়ে পড়ে রয়েছে। সে বলল, এরূপ ঘটেছে। একজন নবীর কারণে র্যাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। শস্য-শ্যামল জনপদে তোমরা তার খোজ নাও! তারা বলল, সেখানে তাঁকে খুঁজে আমরা তাকে পাইনি। ইবলীস বলল, ঠিক আছে, আমি নিজে তাঁকে খুঁজে বের করব। এবার সে নিজে বের হল। তাকে ডেকে অদৃশ্য থেকে বলা হল, দরজার পাশে তাকে খুঁজে দেখা। অর্থাৎ মক্কায় খুঁজে দেখা। “কারনুস ছা’আলিব” নামক স্থানে সে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে দেখতে পায়। এরপর সে তার বাহিনীর নিকট গিয়ে বলে, আমি তাকে পেয়েছি এবং লক্ষ্য করেছি যে, তার সহায়তায়

জিবরাঈল ফেরেশতা রয়েছেন। আচ্ছা, তোমাদের নিকট কী কৌশল আছে? তারা উত্তর দিল যে, তার সাখীদের নিকট কমনীয় ও রমণীয় বিষয়গুলোকে আমরা চিত্তাকর্ষক ও সুসজ্জিত করে রাখব এবং ওগুলোকে তাদের নিকট মোহনীয় করে তুলব। এবার ইবলীস বলল, ঠিক আছে, তাহলে আমি নিরাশ হব না।

ওয়াকিদী বলেন, তালহা ইবন আমার আবদুল্লাহ ইবন আমরা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে দিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলেন, সেদিন শয়তানদেরকে আকাশে যেতে বাধা দেয়া হল এবং তাদের প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হল। তখন শয়তানরা ইবলীসের নিকট গিয়ে উপস্থিত হয় এবং ওই ঘটনা তাকে জানায়। তখন সে বলে, আসলে নতুন একটি ঘটনা ঘটেছে। ইসরাঈলীদের নির্গমন স্থলে পবিত্ৰ ভূমিতে তোমাদের প্রতি একজন নবী প্রেরিত হয়েছেন। তাঁর খোজে। শয়তানরা সিরিয়ায় যায়। কিন্তু সেখানে তাকে না পেয়ে তারা ইবলীসের নিকট ফিরে এসে বলে, ওখানে তিনি নেই। ইবলীস বলল, ঠিক আছে, আমি নিজে তাঁকে খুঁজে বের করব। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর খোজে। সে মক্কায় গমন করে। সে তাঁকে দেখতে পায় যে, তিনি হেরা গুহায় অবতরণ করছেন। তাঁর সাথে রয়েছেন ফেরেশতা জিবরাঈল (আ)। সে তার শিষ্যদের নিকট ফিরে আসে। তাদের উদ্দেশ্যে সে বলে, আহমদ (সা) নবীরূপে প্রেরিত হয়েছেন, তাঁর সাথে রয়েছেন জিবরাঈল (আঃ)। তোমাদের নিকট কী কৌশল আছে? তারা সমস্বরে উত্তর দিল যে, আমাদের নিকট আছে দুনিয়া। এটিকে আমরা মানব জাতির নিকট চাকচিক্যময় ও আকর্ষণীয় করে তুলব। যে বলল, ঠিক আছে, তবে তাই কর!

ওয়াকিদী (র) বলেন, তালহা ইবন আমর ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বলেছেন, শয়তানরা আড়ি পেতে ওহী শ্রবণ করত। মুহাম্মাদ (সা) যখন নবুওয়াত লাভ করলেন, তারা ওহী শ্রবণে বাধা প্ৰাপ্ত হল। ইবলীসের নিকট তারা এ বিষয়ে অভিযোগ পেশ করে। সে বলে, নিশ্চয়ই কোন নতুন ঘটনা ঘটেছে। সে আবু কুবায়স পাহাড়ে উঠল। এটি পৃথিবীর আদি পাহাড়। ওখান থেকে সে দেখতে পেল যে, রাসূলুল্লাহ (সা) মাকামে ইবরাহীমের পেছনে নামায আদায় করছেন। সে বলল, আমি গিয়ে তার ঘাড় মটকে দিই। রাগে গরগর করতে করতে সে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট যায়। তাঁর নিকট তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) ছিলেন।

হযরত জিবরাঈল (আঃ) তখন ইবলীসকে এমন একটি লাথি মারেন যে, সে দূরে বহুদূরে গিয়ে ছিটকে পড়ল এবং পালিয়ে প্ৰাণ বাচাল। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, জিবরাঈল (আ) তাকে এমন সজোরে লাথি মেরেছিলেন যে, সে এডেন অঞ্চলে গিয়ে পড়েছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *