০৫. আরও বড় অপরাধী ইসলামকে ছেড়ে ইউরোপীয় দাস ব্যবসার নিন্দা করা

অধ্যায়-৫
আরও বড় অপরাধী ইসলামকে ছেড়ে ইউরোপীয় দাস ব্যবসার নিন্দা করা
লেখক: এম,এ খান

প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘানায় যখন দাস-দুর্গ পরিদর্শন করছিলেন তখন তিনি দাস প্রথাকে নিন্দা করতে গিয়ে, ভূগর্ভস্থ দাসদের কারাকক্ষের নিকটবর্তী গীর্জার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন কীভাবে ইউরোপীয় খ্রীষ্টানরা গীর্জার বৈধতা নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদেরকে দাস বানিয়ে ব্যবসা করেছিল, যেন এটা ছিল ইতিহাসের একমাত্র দাস প্রথা এবং নিন্দনীয় হবার যোগ্য। কিন্তু ইসলাম, যার ভূমিকা দাস প্রথা প্রবর্তন এবং অনুশীলনে অনেক বেশী নিষ্ঠুর এবং অনেক বেশী বেদনাদায়ক, সেটাকে এখন পর্যন্ত আলোচনায়ই আনা হয় না যেন দাস প্রথার ত্রুটি ইসলাম এবং তার অনুসারীদের মধ্যে কখনও ছিল না অথবা নাই। সাধারণ মানুষ এ কথা মনে করে যে, কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে দাস প্রথা ইতিহাসের একমাত্র দাস প্রথা যার দ্বারা ইউরোপীয় বণিকরা কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদেরকে বন্দী করে নূতন পৃথিবীতে (উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ) চালান দিত। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোন মুসলমানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ কথা বলবেন। আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী একজন মুসলিম যুবক আমাকে লিখেছিলেন, “আপনি কি জানেন কীভাবে আমেরিকার দাস শিকারীরা আফ্রিকায় গিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদেরকে বন্দী করে এবং দাস বানিয়ে আমেরিকায় এনেছিল? এই দাস শ্রম আমেরিকার অর্থনৈতিক ক্ষমতা গঠনে এক বিরাট ভূমিকা রেখেছিল।” “নেশন অব ইসলাম”-এর লুই ফারাখান আটলান্টিক পাড়ি দেওয়া এই দাস ব্যবসাকে “সবচেয়ে জঘন্য এবং সবচেয়ে নিষ্ঠুর দাস প্রথা”  বলে উল্লেখ করেছেন, এবং তিনি বলেছেন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা জানে না যে, অতীতে “আমাদের (কৃষ্ণাঙ্গদের) প্রতি যে আচরণ করা হয়েছিল তার উপর ভিত্তি করেই তারা আজকের এই সুবিধাজনক অবস্থা ভোগ করছে”।মুসলমানদের বিশাল সংখ্যাগুরু অংশ বিশ্বাস করে যে, ইসলামের ইতিহাস এই দাসত্বের ঘৃণ্য ব্যবস্থা হতে মুক্ত। রকি ডেভিস (ওরফে শহীদ মালিক) যিনি কি-না ইসলাম গ্রহণকারী একজন অস্ট্রোলীয় আদিবাসী, তিনি A. B. C. রেডিওকে বলেন যে, “ইসলাম নয়, খ্রীষ্টধর্মই হচ্ছে দাস ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা।”সত্যি কথা বলতে কী একজন মুসলমান হিসাবে ৩৫ বছর ধরে জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি যা বুঝেছি, সেটা হচ্ছে, মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য বিরোধী যে তীব্র ঘৃণা রয়েছে সেটার একটি প্রধান কারণই হচ্ছে এই বিশ্বাস। ভারতে মুসলমানরা উপমহাদেশে দাস ব্যবস্থার চর্চা নিয়ে যখন কথা বলে তখন তারা পর্তুগীজরা গোয়া, কেরালা এবং বাংলার উপকূলীয় এলাকা থেকে কীভাবে মানুষদেরকে দাস হিসাবে বন্দী করে নিয়ে যেত শুধুমাত্র তার হৃদয় বিদারক ও লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করে। কিন্তু যখন আমি অনুসন্ধান করি তখন মুসলমানরা যেভাবে দাস ব্যবস্থাকে অনুশীলন করেছিল তার ভয়াবহতা জেনে বিস্ময়ে অভিভূত হই। আমি দেখতে পাই যে, আল্লাহ ও নবী কর্তৃক সমর্থিত ও স্বীকৃত দাস ব্যবস্থা ছিল আরও অনেক বেশী ভয়ঙ্কর এবং সেটা ছিল আরও অনেক ব্যাপকতর আয়তনে পরিচালিত। এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি Islamic Jihad: A Legacy of Forced Conversion, Imperialism and Slavery (ইসলামী জিহাদ : জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ এবং দাসত্বের উত্তরাধিকার) নামক আমার সাম্প্রতিক লেখা গ্রন্থে আলোচনা করেছি।এটা শুভ লক্ষণ যে, ১১ জুলাইতে ঘানার একটি প্রাক্তন দাস ব্যবসার দুর্গ পরিদর্শন করে প্রেসিডেন্ট ওবামা মানব ইতিহাসের এই অন্ধকার অধ্যায়টিকে এক “বিরাট পাপ” হিসাবে নিন্দা করেন। এবং তিনি আরও বলেছেন “যারা আফ্রো-আমেরিকান তাদের নিকট এই জায়গার একটি বিশেষ অর্থ আছে ….. এটা ছিল তাদের জন্য এক গভীর বেদনার জায়গা।”কীভাবে ইউরোপীয় খৃীষ্টানরা গীর্জার বৈধতা নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের দাস বানিয়ে ব্যবসা করেছিল সেই বিষয়টা সপষ্ট করার জন্য ওবামা দাসদের রাখবার জন্য ভূগর্ভস্থ বন্দীগৃহের পার্শ্ববর্তী একটি গীর্জার প্রতি দিক নির্দেশও করেছিলেন । এই ধরনের জনপ্রিয় ধারণাগত কাঠামো দাস ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে আমলে নেয় না : (১) কৃষ্ণাঙ্গ দাস ব্যবস্থা ইতিহাসের একমাত্র দাস ব্যবস্থা নয়। আরব, তুর্কী, ভারতীয় এবং এমনকি লক্ষ লক্ষ ইউরোপীয়রা একই সময় অথবা তার আগে থেকেও দাস ব্যবস্থার শিকার হয়েছিল। এই দাস ব্যবস্থার একটি অংশ ছিল যৌন দাসত্ব এবং খোজাকরণ। এবং এই কাজগুলো যারা করত তারা কিন্তু ইউরোপীয় ছিল না, বরং ছিল মুসলমান ।(২) কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের শুধুমাত্র যে নূতন পৃথিবীতে পাঠানো হত তা-ই নয়, বরং তাদের এক বৃহত্তর অংশকে মুসলিম পৃথিবীতে পাঠানো হত।(৩) এমনকি আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়া যে দাস ব্যবসা ছিল সেখানেও মুসলমানদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে নির্মম। ইসলামী ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে, স্বয়ং নবী মুহামমদ দৈব প্রত্যাদেশ দ্বারা (কুরআন ১:৭৬, ৩০:২৮, ১৬৩:৭১, ৭০:২৯-৩০, ২৩:৫-৬, ৩৩:৫০ ইত্যাদি)× বৈধতা প্রাপ্ত হয়ে বহু সংখ্যক আরব উপজাতি (কুরাইযা, খাইবার, মুসতালিক এবং হাওয়াযিন ইত্যাদি)-এর নারী এবং শিশুদেরকে দাস বানিয়ে ইসলামী দাস প্রথার সূচনা ঘটিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ইসলামী ক্ষমতার দ্রুত বিকাশের সঙ্গে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শক্তি ও গতি নিয়ে পৃথিবী পরিসরে দাস ব্যবস্থার বিশাল বিস্তার ঘটে। মুসলমানরা যেখানেই বিজয় লাভ করেছে সেখানেই বিপুল সংখ্যায় নারী এবং শিশুদেরকে দাস বানানো হয়েছে। সেনাপতি মূসা ৬৯৮ খ্রীষ্টাব্দে উত্তর আফ্রিকা জয় করে সেখানে তিন লক্ষ মানুষকে দাস করেছিলেন, এবং ৭১৫ খ্রীষ্টাব্দে তিনি যখন সেপন জয় করে প্রত্যাবর্তন করেন তখন লুটের মালের ভিতর এক-পঞ্চমাংশ হিসাবে খলিফার যে প্রাপ্য ছিল তাতে কেবলমাত্র ভিসিগথ অভিজাত পরিবারসমূহের  শ্বেতাঙ্গ কুমারীদের সংখ্যাই ছিল ৩০,০০০। আর সুলতান মাহমুদ ১০০১-২ খ্রীষ্টাব্দে ভারত আক্রমণ অভিযান শেষে সঙ্গে করে নিয়ে যান ৫ লক্ষ নারী ও শিশুকে দাস হিসাবে। এই বর্ণনাটি ভাসমান হিমশৈলের জলের উপরে অবস্থিত সামান্য অগ্রভাগের চিত্রকেই মাত্র তুলে ধরে। ইউরোপীয়রাও ইসলামী দাস ব্যবস্থার কম শিকার ছিল না। মুহামমদের মৃত্যুর দুই দশকের মধ্যেই ভূ-মধ্যসাগরের দ্বীপগুলি ইসলামী আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়। এই ধারা ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এমনকি তুরস্কের অটোমানরা ১৬৮৩-খ্রীষ্টাব্দে ভিয়েনার দ্বারপ্রান্তে তাদের চূড়ান্ত পরাজয়ের পরে যখন পশ্চাদপসারণ করে তখন তারা পালানোর সময়েও সঙ্গে করে নিয়ে যায় দাস-দাসী হিসাবে ৮০,০০০ শ্বেতাঙ্গ বন্দীকে। আর বার্বারি (উত্তর আফ্রিকান) জলদস্যুরা ১৫৩০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ১৮২০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হানা দিয়ে উত্তর আফ্রিকার উপকূলবর্তী ইউরোপীয় বাণিজ্য জাহাজগুলি থেকে এবং ইউরোপের উপকূলীয় গ্রাম এবং দ্বীপ সমূহ থেকে ১৫ লক্ষ ইউরোপীয়কে দাস হিসাবে বন্দী করেছিল।

এমনকি আমেরিকান বাণিজ্য জাহাজসমূহ এবং এগুলির নাবিকরাও বার্বারিদের ভয়াবহ আক্রমণ, নির্যাতন ও দাসত্বের শিকার হত। আমেরিকার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত যখনই সম্ভব হত ব্রিটেন বিপুল পরিমাণে মুক্তিপণ দিয়ে বন্দী আমেরিকান জাহাজসমূহের নাবিকদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করত। ১৭৭৬ খ্রীষ্টাব্দের পর আমেরিকা তার বাণিজ্য জাহাজসমূহের নিরাপত্তা বিধানের জন্য বার্বারি রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে নিয়মিতভাবে মোটা পরিমাণে অর্থ প্রদানের শর্তে চুক্তি করেছিল। কায়রো বক্তৃতায় মুসলমানদেরকে খুশী করার জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামা ইসলাম এবং আমেরিকার মধ্যে সমমানজনক অতীত সম্পর্কের দৃষ্টান্ত হিসাবে এই চুক্তিকে জাঁকালভাবে তুলে ধরেছিলেন, অথচ এটা ছিল আমেরিকার জন্য অবমাননাকর চুক্তি। এর পরেও আমেরিকার বাণিজ্য জাহাজগুলির নিরাপত্তা রক্ষা হত না। আরও বেশী করে মুক্তিপণের জন্য মার্কিন বাণিজ্য জাহাজসমূহকে আক্রমণ করা হত। উত্তর আফ্রিকায় আমেরিকানদের ভয়াবহ দাসত্ব বন্ধ করার জন্য আমেরিকাকে শেষ পর্যন্ত কঠিন যুদ্ধে জড়াতে হয়েছিল। ১৮৩০ খ্রীষ্টাব্দে ফ্রান্স যে মরক্কোকে দখল করে তার একটি প্রধান কারণ ছিল ইউরোপীয়দেরকে যেভাবে দাস করা হত তার চির অবসান ঘটানো। এটা স্মর্তব্য যে, দাস ব্যবস্থার জন্য ওবামা যে ইউরোপীয়দেরকে নিন্দার একমাত্র লক্ষ্যবস্তু করেছিলেন সেই ইউরোপীয়রাই আট শতাব্দীব্যাপী ছিল নৃশংসতম রূপের ইসলামী দাস ব্যবস্থার শিকার। এরপর তারা নিজেরাই আটলান্টিক পাড়ের ব্যাপকভাবে নিন্দিত দাস ব্যবসা শুরু করে। তা সত্ত্বেও আফ্রিকায় ইউরোপীয় দাস বাণিজ্যে মুসলমানরাই ছিল প্রধান দাস সরবরাহকারী। ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের নিকট ৮০ শতাংশের উপর দাস যোগান দিত মুসলমানরা। ইউরোপীয়রা প্রধানত এই সমস্ত দাস ক্রয় করত এবং আমেরিকায় চালান দিত। আসলে বহু শতাব্দী ব্যাপী দাস শিকার, উৎপাদন, এবং ব্যবসা চালাবার ওস্তাদ বা শিক্ষাগুরু ছিল মুসলমানরা। আফ্রিকায় দাস ব্যবসাটি ছিল মূলত দীর্ঘ কাল ব্যাপী প্রতিষ্ঠিত একটি ইসলামী কারবার। এটাকেই চাঙ্গা করেছিল ইউরোপীয় দাস ব্যবসায়ীরা। আফ্রো-আমেরিকানদের অভিজ্ঞতার অনেকটাই যেখানে যাত্রা শুরু করেছিল সেটা যে ছিল ইউরোপীয় দাস ব্যবসা – এইটুকুই হচ্ছে ঘানায় দাসত্বের অস্তিত্ব সম্পর্কে ওবামা যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তার সত্যতা। দাস ব্যবসার নিষ্ঠুর দিকটা বাদ দিলে এটার এক ধরনের ভাল পরিণতি আছে। সেটা হচ্ছে আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের যে অবস্থা বর্তমানে রয়েছে তার তুলনায় নূতন পৃথিবীর (উত্তর আমেরিকা) কৃষ্ণাঙ্গরা  অনেক ভালো অবস্থায় আছে।

তবে আফ্রিকান দাসত্ব সম্পর্কে যা বলা হল সেটা একটা সত্যের মাত্র অর্ধেক। আফ্রিকান দাসত্বের আরেক ইতিহাস আছে – যার ব্যাপ্তি ছিল বিশালতর এবং স্থায়িত্ব ছিল দীর্ঘতর। সেটা হল খোজাকরণ। এর যাত্রা শুরু হয়েছিল সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীতে আফ্রিকায় আরব মুসলিম আক্রমণ অভিযান দ্বারা। ইসলামী দাসত্বের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ব্যাপক আয়তনে পুরুষ দাসদের খোজাকরণের মাধ্যমে দাস বাজারে বিক্রি করা, যার ফল হচ্ছে বিরাট আয়াতনে মানব জাতির বংশধারার বিলুপ্তি। ইসলামী খোজাকরণের অমানবিকতা দ্বারা অগণিত আফ্রিকান পুরুষদের প্রকৃতি প্রদত্ত সবচেয়ে বড় পরিচিতি এবং দান তথা পুরুষত্বই যে কেড়ে নেওয়া হত শুধু তাই নয়, উপরন্তু এর দ্বারা যে বিপুল সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হত তা ছিল ভয়াবহ। খোজাকরণ প্রক্রিয়ায় মৃত্যুর হার ছিল ৭৫ শতাংশ। ইউরোপীয়রা আফ্রিকান দাসদের আমেরিকায় পরিবহনের সময় এই দাসদের মৃত্যুহার ছিল ১০ শতাংশ, অথচ ইসলামী বিশ্বের গন্তব্যে কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের পৌঁছানো পর্যন্ত এদের মৃত্যুহার ছিল ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। ওবামা ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায় হিসাবে ইউরোপীয় খ্রীষ্টান দাস ব্যবসাকে সেভাবে নিন্দা জানিয়েছিলেন তা প্রশংসনীয়। কিন্তু একই অপরাধের আরও বেশী নিষ্ঠুর অংশীদার ইসলামকে তিনি যে ভাবে বাদ দিয়েছেন সেটা মোটেই প্রশংসনীয় নয়। এর দ্বারা সেই সব দুর্ভাগাদের আত্মার প্রতি নিদারুণ অবিচার করা হয়েছে যারা ইসলামী নৃশংসতার শিকার এবং এদের মধ্যে রয়েছে লক্ষ লক্ষ খৃীষ্টান ইউরোপীয়দের আত্মা, যাদেরকে তিনি সকল নিন্দার একমাত্র লক্ষ্যবস্তু করেছেন। ইউরোপীয়দের দ্বারা কৃত দাস ব্যবস্থাকে সকলেই নিন্দা জানিয়েছেন। ইউরোপীয় হোন আর অন-ইউরোপীয় হোন, খ্রীষ্টান হোন অথবা মুসলমান হোন, পণ্ডিত হোন আর অপণ্ডিত হোন সকলেই তীব্রভাবে এর নিন্দা জানিয়েছেন। বাস্তবতা হচ্ছে এই যে ইউরোপ একাই এই দাস ব্যবস্থার মূলোৎপাটনের জন্য শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিল এবং সেখান থেকে কার্যকরভাবে এই ব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়েছিল। অথচ দাসত্ব বিরোধী প্রচারকরা অনেককাল ধরেই আজকের ইউরোপীয়দেরকে অতীত দাসত্বের জন্য অনেক বেশী দায় স্বীকার করতে বলে, এবং তাদেরকে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নিতে বলে যেমন – ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং দাসত্বের ক্ষতিকর ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে লড়াই। অথচ দাসত্বে যার ভূমিকা অনেক বেশী বড়, অনেক বেশী নিষ্ঠুর এবং অনেক বেশী বেদনাদায়ক সেই ইসলাম সম্পর্কে কোন কথাই বলা হয় না; যেন ইসলাম এবং তার অনুসারীরা দাসত্বের কলঙ্ক থেকে মুক্ত। বস্তুত আজ পর্যন্ত কতকগুলি ইসলামী দেশ (মৌরিতানিয়া, সৌদী আরব, এবং সুদান) দাস ব্যবস্থা বজায় রেখেছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে সুদান দাসত্বকে ব্যাপকতর করেছে। এর জন্য ধন্যবাদ জানাতে হয় অতীতের হোক আর বর্তমানের হোক মুসলমানদের দাস ব্যবস্থার প্রতি সমালোচনার অভাবকে। মৌরিতানিয়ায় প্রায় ছয় লক্ষ মানুষ দাসত্বের অব্যাহত নিগড়ে আবদ্ধ রয়েছে, যাদের মুক্তির কোন আশা নাই। অন্য দিকে ১৯৮৫ সালে ইসলামবাদীরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সুদানে হাজার হাজার ও অযুত অযুত খ্রীষ্টান, প্রকৃতি উপাসক এবং এমনকি মুসলমানরা পর্যন্ত অপহৃত হয়ে দাসে পরিণত হচ্ছে (Khan, Islamic Jihad, p. 347-49)।

দাস প্রথার সমর্থনে কুরআনের যে আয়াতগুলির সংখ্যা বা নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে আগ্রহী পাঠকদের জন্য সেই আয়াতগুলির বাংলা নিম্নে দেওয়া হল। এগুলির উৎস : আল কুরআনুল করীম, প্রকাশক : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ছত্রিশতম মুদ্রণ, ডিসেম্বর ২০০৭ — বঙ্গরাষ্ট্রকুরআন – ১৬ সূরা নাহ্‌ল : আয়াত ৭৬ :আল্লাহ আরও উপমা দিতেছেন অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের, যে কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না এবং এমন এক ব্যক্তির যাহাকে তিনি নিজ হইতে উত্তম রিয্‌ক দান করিয়াছেন এবং সে উহা হইতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; উহারা কি একে অপরের সমান? সকল প্রশংসা আল্লারই প্রাপ্য; অথচ উহাদের অধিকাংশই ইহা জানে না। কুরআন – ১৬ সূরা নাহ্‌ল : আয়াত ৭১ :আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের কাহাকেও কাহারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছেন। যাহাদিগকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হইয়াছে তাহারা তাহাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদিগকে নিজেদের জীবনোপকরণ হইতে এমন কিছু দেয় না যাহাতে উহারা এ বিষয়ে তাহাদের সমান হইয়া যায়। তবে কি উহারা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ অস্বীকার করে?কুরআন – সূরা ২৩ মুমিনূন :আয়াত ৫ : যাহারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখেআয়াত ৬ : নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, ইহাতে তাহারা নিন্দনীয় হইবে না।কুরআন – সূরা ৩৩ আহযাব : আয়াত ৫৫নবী পত্নীদের জন্য তাহাদের পিতৃগণ, পুত্রগণ, ভ্রাতৃগণ, ভ্রাতুষ্পুত্রগণ, ভগ্নীপুত্রগণ, সেবিকাগণ এবং তাহাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীগণের ব্যাপারে উহা (হিজাব বা পর্দা) পালন না করা অপরাধ নহে। হে নবী-পত্নীগণ! আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ্‌ সমস্ত কিছু প্রত্যক্ষ করেন।কুরআন – সূরা ৩০ রূম: আয়াত ২৮:আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করিতেছেন : তোমাদিগকে আমি যে রিয্‌ক দিয়াছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীগণের কেহ কি তাহাতে অংশীদার? ফলে তোমরা কি এই ব্যাপারে সমান? তোমরা কি উহাদিগকে সেইরূপ ভয় কর যেইরূপ তোমরা পরসপরকে কর? এইভাবেই আমি বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের নিকট নিদর্শনাবলী বিবৃত করি।কুরআন – সূরা ৭০ মা’আরিজ :আয়াত ২৯ : এবং যাহারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে,আয়াত-৩০ : তাহাদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত, ইহাতে তাহারা নিন্দনীয় হইবে না

(নিবন্ধটি M. A. Khan-এরCondemning European Slavery Sparing Islam, the Bigger Culprit-এর বাংলায় ভাষান্তর। মূল ইংরাজী নিবন্ধটি “ইসলাম ওয়াচ”(www.islam-watch.org)-এ ২৩ জুলাই ২০০৯ তারিখে প্রকাশিত হয়। এমএ খান ইসলাম ওয়াচের সম্পাদক এবং Islamic Jihad: A Legacy of Forced Conversion, Imperialism and Slavery -এর লেখক)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *